কোলেস্টে-রলের মাত্রা বেড়ে গেলে

কারও রক্তে কোলেস্টে-রলের মাত্রা অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়ে গেলে,

তা আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক নিয়মে ও,

লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাভাবিক মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারি।

প্রাকৃতিক উপায়ে কোলেস্টে-রল কমানোর পরিবর্তে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক,

ক্ষতিকর ঔষধ খেয়ে আমরা নিজেদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই করি বেশি।

আমরা অনেক সময় অসুস্থ হয়ে থাকি স্বাস্থ্য সচেতন-তার অভাবে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ন্যূনতম যে সাধারণ জ্ঞান টুকু থাকার দরকার,

তা অর্জন করতেও আমাদের প্রচণ্ড অনীহা। স্বেচ্ছা চারিতা বা বাড়া বাড়ির কারণে,

আমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সুস্থ হওয়া বা সুস্থ থাকার জন্য,

আমরা অতি মাত্রায় আত্ম সচেতন হয়ে পড়ি।

অমূলক ভয় ভীতির কারণে জীবন যাপন বা,

খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে এমন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করি,

যা আবার বাড়া বাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। সুখী ও সুস্থ জীবনের জন্য,

সব সময় মধ্য পন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
আমাদের ধারণা,

কোলেস্টে-রল সমৃদ্ধ খাবার খেলেই শুধু রক্তে কোলেস্টে-রলের মাত্রা বেড়ে যায়।

কোলেস্টে-রল সমৃদ্ধ খাবার যেমন খাসি-গরুর মাংস,

ডিম, দুধ, যকৃত, মগজ প্রভৃতি খেলে রক্তে যে পরিমাণে কোলেস্টে-রল বাড়ে,

তার চেয়ে বেশি কোলেস্টে-রল তৈরি হয় মাত্রাধিক চিনি,

ভাত, রুটি জাতীয় খাবার থেকে। অসংখ্য তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়ে থাকে,

কোলেস্টে-রল সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের কোলেস্টে-রলের মাত্রায়,

তেমন কোনো হেরফের হয় না। এসব খাবার খেলে কোলেস্টে-রলের মাত্রা কিছু বাড়লেও

তা শরীরে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। এর প্রধান কারণ,

শরীরের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কোলেস্টে- রল তৈরি হয়,

শর্করা জাতীয় খাবার থেকে উৎপন্ন গ্লুকোজ থেকে। বাকি মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ,

কোলে- স্টেরল আসে কোলেস্টে-রল সমৃদ্ধ খাবার থেকে।

বিশ্বায়নের কারণে আমাদের খাদ্যাভ্যাস অতি দ্রুত পালটে যাচ্ছে।

শুধু ছোটরা নয়, বয়স্করাও আজ কাল জাঙ্কফুডে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরের অলি গলির যেদিকে তাকাই শুধু,

রং বেরঙের ফাস্ট ফুডের দোকান দেখি। এসব দোকানে যেসব খাবার বিক্রি হয়,

তাতে প্রচুর লবণ, ক্ষতিকর কোলেস্টে-রল ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে।

এ ছাড়া থাকে মাত্রা-তিরিক্ত চিনি সমৃদ্ধ ফলের রস ও কোমল পানীয়।

উল্লেখিত সব খাবারই বয়স্কদের স্ট্রোক ও হৃদ রোগের ঝুঁকি বহু লাংশে বাড়িয়ে দেয়।

উচ্চ তাপে তেলে বা ট্রান্সফ্যাটে পোড়া সব খাবারই স্ট্রোক ও হৃদ রোগের মূল কারণ।

যুক্ত রাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যারো-লাইনার বয়স্ক মানুষের ওপর পরিচালিত,

এক বৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে-পনির, বাটার, সম্পূর্ণ দুধ, ডিম,

প্রাণিজ চর্বি, লাল গোশত জাতীয় তথা- কথিত খাদ্যা-ভ্যাসের সঙ্গে,

শরীরের কোলেস্টে-রল মাত্রার কোনো সম্পর্ক নেই।

প্রতি দিন একটি করে ডিম খেলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা,

বাড়ে না বা থাকে না। বলা হচ্ছে, প্রতি দিন দুটি করে ডিম খেলেও,

সুস্থ মানুষের হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়ে না। অথচ বছরের পর বছর ডিমের সাদা অংশ,

খেতে খেতে আমরা আসল ডিমের স্বাদই ভুলে গেছি।

অনুন্নত বিশ্বে স্ট্রোক ও হৃদ রোগের ভয়ে মানুষ মাখন খায় না।

অথচ মাখন শরীরের জন্য অতি দরকারি ও উপকারী একটি খাবার।

মাখনে রয়েছে ভিটামিন-ই, ভিটামিন কে-২ ও ভিটামিন-এ।

এ ছাড়া রয়েছে দরকারি খনিজ পদার্থ, স্বাস্থ্য সম্মত চর্বি, আয়োডিন,

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ক্যানসার নিরোধক উচ্চ মানের লিনোলিক অ্যাসিড।

ডিম সম্পর্কেও আমাদের রয়েছে ভ্রান্ত ধারণা।

অথচ ডিম হলো দুধের মতো একটি অত্যাবশ্যকীয় সুষম খাবার।

ডিমে রয়েছে প্রোটিন বা আমিষ, চর্বি, কোলিন, সেলেনিয়াম, বায়োটিন,

বি-ভিটামিন, ফসফরাস, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লিউটিন ও জিয়াজেন্থিন।

কোলেস্টে-রলের ভয়ে আমরা এত গুরুত্ব পূর্ণ,

উপাদান বর্জন করে চলেছি বছরের পর বছর।

ডিম কোলেস্টে-রলের মাত্রা বাড়ায় এবং এই কোলেস্টে-রল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের জন্য,

দায়ী-এ কথার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

বহু মানুষ দুধ খায় না চর্বির ভয়ে। বাজারে যে সব দুধ পাওয়া যায়,

তার অধিকাংশ চর্বি মুক্ত বা এক থেকে ১.৫ শতাংশ,

চর্বি রয়েছে বলে বিজ্ঞাপনে প্রচার করা হয়। দুধে শতকরা ১ বা ১.৫ শতাংশ,

চর্বির পরিবর্তে ৫ শতাংশ চর্বি থাকলে সেই দুধ স্বাস্থ্য সম্মত নয়,

এমনটি ভাবার কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ নেই। তার পরও ডিম,

দুধ ও মাখন খাওয়ার ব্যাপারে আমরা অতি মাত্রায় রক্ষণ শীল হয়ে পড়েছি।

সমীক্ষার ফল এটাই সমর্থন করে যে, আমরা অতীতে যা ভাবতাম,

খাদ্য থেকে প্রাপ্ত কোলেস্টে-রল তার চেয়ে অনেক কম ক্ষতিকর।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *