ইউটিউব শর্টস থেকে ইনকাম করার নতুন উপায় গুলো
প্রিয় পাঠক, এখন বর্তমান সময়ে ইউটিউব শর্টস থেকে টাকা ইনকাম করাটা এমন একটা কঠিন কাজ নয়।
অনেক বড় বড় ইউটিউব ভিডিও গুলোর থেকে এই ইউটিউব শর্ট ভিডিও গুলো সম্পূর্ণ আলাদা।
তবে চিন্তা করার কিছু নেই, আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের ইউটিউব শর্টস থেকে আয় করার উপায় গুলো স্টেপ বাই স্টেপ বিস্তারিত আলোচনা করবো। How to earn money from YouTube shorts.
টেকনোলজি উন্নত হওয়ার কারণে, একটি সাধারণ ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করার অনেক উপায় রয়েছে।
যেমন –
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম,
ভিডিওর জন্যে মনিটাইজ চালু করে,
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে,
স্পনসর্শিপ, ইত্যাদি।
তবে, ইউটিউব এর লম্বা ভিডিও গুলোর থেকে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে ইউটিউব রুলস মোতাবেক সাধারণত ৪টি স্টেপ সম্পূর্ণ করতে হয়।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে জয়েন করতে হয়,
ইউটিউব এর জন্য নিয়মিত লম্বা ভিডিও তৈরি করে পাবলিশ করা,
ভিডিওর জন্যে মনিটাইজ চালু করা,
শেষে, advertising revenue সংগ্রহ করুন।
তবে, ইউটিউব শর্টস বলতে যেমন ( যেখানে ৫০থেকে ৬০ সেকেন্ড বা তার থেকে আরো কম সময়ের ছোট ইউটিউব ভিডিও বানানো হয়) এর কোনো সোজা বা Traditional Monetization Program নেই।
এখন বর্তমান সময়ে, ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে আপনি নিজের ইউটিউবে শর্ট ভিডিও গুলোতে সরাসরি বিজ্ঞাপন (ads) দেখাতে পারবেন না।
এর মানে হলো, যখন অন্য লোকেরা আপনার ইউটিউব শর্টস গুলো দেখবে, তখন গুগল এডসেন্স দ্বারা সেখানে কোনো ধরণের আপনার ইউটিউব শর্টস ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে না।
তাহলে এখন আমাদের সবার মনে বা সবার কাছে সব থেকে বড় প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে, সেটা হল “YouTube shorts থেকে উপার্জন আমরা কিভাবে করা করব“
বা আরো এভাবেও বলা যেতে পারে যে, একজন YouTube shorts ক্রিয়েটর হিসেবে কি কি মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা যাবে ?
চলুন, তাহলে আমরা দেরি না করে নিচে সব একে একে জেনে নেই কিভাবে YouTube shorts video বানিয়ে টাকা ইনকাম যায়।
ইউটিউব শর্টস কি ?
ইউটিউব শর্টস থেকে টাকা ইনকাম করার উপায় গুলো আমরা নিচে অবশই স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করবো, তবে আসলে এই shorts কি, সেটা আগে আমরা ভালোভাবে বুঝে নেই।
YouTube shorts হলো ইউটিউব এর তরফ থেকে নিয়ে আনা এক একটি প্লাটফর্ম, যেখানে আপনি ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করতে পারেন, আবার আপনি চাইলে শর্ট ভিডিও গুলোকে তৈরি ও ভালোভাবে এডিট করতে পারবেন।
আপনি এখানে ৫০ থেকে ৬০ সেকেন্ড বা তার থেকেও আরো ছোট ছোট সময়ের ভিডিও বানাতে পারবেন।
শর্ট ভিডিও বলতে যেমন, যে কোনো ড্যান্স ভিডিও, ছোট গল্প, ছোট কবিতা, ছোট বাক্য, ছোট করে গান গাওয়া, জ্ঞান মূলক কথা বলা, কোনো মেসেজ, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি যেকোনো ধরণের ছোট ছোট ভিডিও আপনি তৈরি করতে পারবেন।
আপনি শুধুমাত্র মাত্র আপনার নিজের স্মার্টফোন (smartphone) দিয়েই এই শট ভিডিও তৈরি করতে পারবেন।
একটি শট ভিডিও তৈরি করার পর সেটাকে আপনি অধিক আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেটিং, ফিল্টার, ক্যাপশন ইত্যাদি ভালোভাবে যোগ করতে পারবেন।
মিউজিক এবং অডিও – এর মাধ্যমে শর্ট ভিডিও গুলো আরো দারুন করে নিতে পারবেন।
আপনারা ইউটিউব লাইব্রারি – এর থেকে ফ্রী গান বা অডিও ক্লিপস গুলো নিজেদের ইউটিউব শর্ট ভিডিও গুলোতে যোগ (add) করতে পারবেন।
ইউটিউবের মধ্যে shorts video তৈরি করাটা অনেক সহজ।
তাহলে আপনি এখন বুঝতে পেরেছেন তো, YouTube shorts কি ?
YouTube shorts থেকে ইনকাম করার উপায়
চলুন, এখন আমরা জেনে নেই ইউটিউব শর্টস থেকে অনলাইন ইনকাম করার সেরা ৪টি উপায়।
১। YouTube Shorts Fund
যদি আপনারা কেউ ইউটিউবের শর্টস ভিডিও বানিয়ে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করার কথা ভাবছেন, তাহলে এর একটি দারুন উপায় হলো, “$100 million Shorts Fund“.
এটা এমন একটি টাকা ইনকাম করার উপায় যেটাকে ইউটিউবের দ্বারা ২০২১ সালে লঞ্চ করা হয়েছিল।
এই platform দ্বারা creators দের পুরস্কার হিসেবে monthly “bonus” দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বোনাস এর পরিমান হিসেবে দেওয়া হয় $১০০ থেকে $১০,০০০ তবে আপনাকে কত দেওয়া হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার বিগত মাসের শর্টস পারফরমেন্স এর ওপর।
বোনাস সংগ্রহ করার জন্যে, ইউটিউব শর্টস এর থেকে টাকা ইনকাম করার প্রয়োজনীয়তা গুলো এখানে দেওয়া হল ভালোভাবে লক্ষ্য করুন,
প্রত্যেক ১৮০ দিনের মধ্যে একটি অরজিনাল ইউটিউব শর্ট পোস্ট করুন।
আপনার বয়েস কমেও ১৩ বছর হতে হবে বা আপনাকে আপনার দেশের পরিপক্কতার বয়েস প্রাপ্ত করতে হবে।
YouTube’s Community Guidelines এবং monetization policies অনুসরণ করতে হবে।
একবার যখন আপনার দ্বারা এই requirements গুলো প্রাপ্ত বা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে, আপনিও এই শর্ট বোনাস প্রাপ্ত করার দৌড়ে যোগ হয়ে যাবেন।
যদি আপনাকে সিলেক্ট করা হয়, তাহলে ইউটিউব এর দ্বারা আপনাকে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে যোগাযোগ করা হবে।
আপনার কাছে বোনাস এর দাবি জানানোর জন্যে সেই একি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত সময় থাকবে।
এমনিতে, বোনাস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রচুর ভিডিও ভিউ এর প্রয়োজন হয়ে থাকে।
ইউটিউব থেকে অনলাইনে আয় করতে গেলে যেগুলো বিষয় জানা প্রয়োজন :
এ ক্ষেত্রে hundreds of dollars ইনকাম করার ক্ষেত্রে আপনাকে ইউটিউব শর্ট ভিডিও ভাইরাল হতে হবে।
এই ব্যাপারটা আবার অনেকের জন্যে কিছুটা হতাশা জনক।
তবে এখানেও আপনার জন্য একটি ভালো খবর আছে, বর্তমান সময়ে ইউটিউব অধিক থেকে অধিক creators দের shorts bonus দিয়ে চলেছে।
অধিক সংখ্যায় ক্রিয়েটর্সরা $১০০ এর মধ্যে পেমেন্ট পাবেন এবং সর্বোচ্চ $১০,০০০ এর পেমেন্ট প্রাপ্ত করবেন।
২। স্পনসর্শিপ (Sponsorship)
YouTube shorts বানিয়ে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করাটা তেমন সোজা কাজ না।
কেননা, monthly reward গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপনাকে হাজার হাজার creators দের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়।
চিন্তা নেই, আপনাকে শর্টস থেকে ইনকাম করার জন্যে প্রতিযোগিতায় আর শামিল হতে হবে না।
আপনারা অন্যান্য বিভিন্ন মাধ্যমে ইউটিউব শর্টস থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
আর এই বিভিন্ন শর্ট ভিডিও বানিয়ে ইনকাম করার উপায় বা মাধ্যম গুলোর মধ্যে একটি দারুন ও লাভজনক উপায় হলো “brand sponsorships”.
যখন একটি brand / company আপনাকে স্পনসর করে থাকে,
তখন তারা আপনাকে টাকা দিয়ে থাকে তাদের প্রডাক্ট বা সার্ভিস গুলোকে আপনার ইউটিউব শর্টস ভিডিও গুলোর মাধ্যমে প্রচার করার ক্ষেত্রে।
তবে কোম্পানির প্রডাক্ট যে কোনো ধরণের হতে পারে যেমন, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, কোনো অনলাইন কোর্স, ক্যামেরা, মোবাইল, মেকআপ বা বিউটি প্রোডাক্ট ইত্যাদি।
এই মাধ্যমে হাজার হাজার লোকেরা বিশ্ব জুড়ে নিজের বানানো ইউটিউব শর্ট ভিডিও গুলোর থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করছে।
Brand sponsorship এবং deals পাওয়ার জন্যে আপনার কাছে আপনার ইউটিউবে লক্ষ লক্ষ subscribers এবং views থাকতে হবে বলে এমন কোনো প্রয়োজন নেই।
তবে, আপনার একটি targeted audience এবং strong YouTube resume থাকাটা অবশই অবশ্যই জরুরি।
৩। এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
বর্তমান সময়ে আমরা প্রত্যেকেই জানি Affiliate Marketing হলো অনলাইনে ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার সব থেকে লাভজনক ও দারুন একটি উপায়।
ব্লগ মানে কি ? ব্লগ থেকে কিভাবে অনলাইনে টাকা আয় করবেন।
আপনারা শর্ট ভিডিওর description এর মধ্যে Affiliate লিংক যোগ করে সেখান থেকে ভালো পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আমরা আগেই Affiliate Marketing কি এবং কিভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হয়, এই বিষয়ে আপনাদের সাথে এর আগেও আলোচনা করেছি।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে অন্যান্য কোম্পানি গুলোর পণ্য এবং সার্ভিস গুলোকে নিজের ইউটিউব ভিডিও ডেসক্রিপশন এর মধ্যে এফিলিয়েট link এর সাহায্যে প্রচার করতে হয়।
যদি কোনো ইউজার আপনার দিয়ে দেওয়া এফিলিয়েট লিংক এর মধ্যে ক্লিক করে সেই প্রডাক্ট কিনেন,
তাহলে আপনাকে সেই বিক্রির প্রডাক্ট এর জন্যে কোম্পানির তরফ থেকে আপনাকে কিছু কমিশন দিয়ে দেওয়া হয়।
৪। Advertising Revenue from YouTube Shorts
বর্তমান সময়ে ইউটিউব এর মনিটাইজ প্রোগ্রাম এর মধ্যে শর্ট ভিডিও গুলোকে যুক্ত করা হয়নি।
আপনাকে ইউটিউবে লম্বা লম্বা ভিডিও বানিয়ে সেগুলো আপলোড করে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম এর নিয়ম মেনে, তারপর আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর জন্যে এপ্লাই করতে পারবেন।
একজন Shorts creator হিসেবে আপনি ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর সাথে যুক্ত হতে পারবেন না।
এছাড়া, শর্ট ভিডিও এবং ভাইরাল ভিডিও বা ভাইরাল কন্টেন্ট এর সাহায্যে advertising revenue সংগ্রহ করারও কোনো অন্য উপায় নেই।
তবে ইউটিউব এখন এর পুরোনো কিছু নিয়ম এর মধ্যে আপডেট নিয়ে এসেছে।
ইউটিউব ২০২৩ এর শুরুতেই, যেসব creators দের ৯০ দিনের মধ্যে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং 10 million Shorts views হয়ে যাবে,
সেই creators-রা ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম এর জন্যে এপ্লাই করতে পারবেন।
এভাবে আপনারা কেবল ইউটিউবে শর্ট ভিডিও বানিয়েও ইউটিউব মনিটাইজেশন প্রোগ্রাম এর জন্যে এপ্লাই করতে পারছেন।
ইউটিউব এর অন্যান্য মনিটাইজেশন টুলস গুলোও আপনারা পাবেন যেমন, ad revenue on long-form videos, Super Thanks, Super Chats, Channel Memberships ইত্যাদি।
ইউটিউব এর অন্যান্য ইনকাম করার মাধ্যম গুলোর মতোই শর্ট অবশই revenue-sharing model হিসেবেই ইনকাম করার সুযোগ দিবে।
Creators দের তাদের কনটেন্ট দ্বারা উৎপন্ন হওয়া advertising revenue এর ৪৫% দেওয়া হবে।
সাধারণত অন্যান্য লং কনটেন্ট এর ক্ষেত্রে ৫৫% দেওয়া হয়, যদিও কিছু না পাওয়ার থেকে ৪৫% কিন্তু অনেক বেশি।
শেষ কথা,,
তাহলে, YouTube Shorts থেকে টাকা ইনকাম করার যদি সোজা ও সরাসরি উপায় গুলোর কথা বলা হয়, তাহলে সেগুলো হবে, YouTube Shorts fund এর দ্বারা bonus প্রাপ্ত করা,
একটি brand deal বা sponsorship এর দ্বারা,
ইউটিউব শর্টস এর ভিউ থেকে অ্যাড রেভিনিউ গ্রহণ করা। ২০২৩ সাল থেকে চালু হচ্ছে,
আমার হিসেবে YouTube Shorts থেকে অর্থ উপার্জন করার সব থেকে দারুন উপায় হলো শেষের উপায়টি।
কারণ, ad revenue এর মাধ্যমে বিগত অনেক বছর থেকেই লং ভিডিও তৈরি করা creators-রা নিয়মিত লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেই চলেছেন।
এছাড়া, আপনি যদি ইউটিউবে বড় বড় ভিডিও তৈরি করতে এতটা পছন্দ করেন না,
তাহলে এই ছোট ছোট হটস ভিডিও এবং vertical videos গুলো বানিয়ে সেগুলোতে বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে আপনি আরামে ইনকাম করতে পারবেন।
তাহলে আশা করছি YouTube Shorts ভিডিও বানিয়ে কিভাবে টাকা আয় করবেন, এই বিষয়ে আপনি সম্পূর্ণটা ভালোভাবে বুঝতেই পেরেছেন।