ইন্টারনেট কী ? কত প্রকার ও কী কী এবং ইন্টারনেট এর সাথে সম্পর্কিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদিঃ
ভূমিকাঃ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না বর্তমানে এমন লোক খুব কমই রয়েছে।
কিন্তু ইন্টারনেট কী কত প্রকার ও কী কী এবং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না।
যারা জানেন না তাদের জন্য আজকের এই ভিডিওটি।
হ্যা, বন্ধুরা আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো ইন্টারনেট কী ?
কত প্রকার ও কী কী এবং ইন্টারনেট এর সাথে সম্পর্কিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ইন্টারনেটঃ
অন্তর্জাল বা ইন্টারনেট হলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়।
অর্থাৎ ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী ছড়ানো অসংখ্য কম্পিউটারের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।
ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। যা আমি পরবর্তীতে আলোচনা করেছি।
ইন্টারনেটের ইতহাসঃ
এই বিশাল নেটওয়ার্ক এর অন্তর্জাল ‘ইন্টারনেট’ একদিনে তৈরী হয়নি।
অগণিত লোক রাত-দিন কাজ করে ইন্টারনেটকে আজকের এই অবস্থানে এনেছেন।
ইন্টারনেট আবিষ্কারের কথা বলতে গেলে সবার আগে দুইজন ব্যক্তির নাম আসে।
তারা হলেন- রবার্ট ই কান এবং ভিনটন জি কার্ফ। তারা দুজন Transmission Control Protocol (TCP) and the Internet Protocol (IP) এই দুটি প্রটোকল আবিষ্কার করেন যা ইন্টারনেট আবিষ্কারের যাত্রাকে সহজ করে তুলেছে ।
১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET) নামে পরিচিত ছিল।
ইন্টারনেট ১৯৮৯ সালে আইএসপি দ্বারা সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
১৯৯০ এর মাঝামাঝি থেকে ১৯৯০ এর পরবর্তী সময়ের দিকে পশ্চিমাবিশ্বে ইন্টারনেট ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হতে থাকে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের আগমনঃ
১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইল-এর মাধ্যমে প্রথম এদেশে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়।
১৯৯৬ সালে দেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট স্থাপন করা হয় এবং আই.এস.এন নামক একটি আইএসপি-র মাধ্যমে অনলাইন ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তৃতি ঘটতে শুরু করে।
শুরুতে এই আইএসপি গুলো ছিল শুধু বিটিটিবি-ই সরকারি মালিকানাধীন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের কল্যাণে ২০০৫ সাল নাগাদ ১৫০ এর অধিক আইএসপি-র নিবন্ধন দেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে সরকারের টেলিযোগাযোগ আইনের আওতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই আইএসপি সমুহ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছে।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদঃ
ইন্টারনেটকে মূলত ৬ টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ-
০১. ডায়াল -আপ
০২. ডিএসএল
০৩. স্যাটেলাইট
০৪. ক্যাবল
০৫. ওয়ারলেস
০৬. সেলুলার।
০১. ডায়াল আপ :
সাধারণত স্ট্যান্ডার্ড ফোন লাইন থেকে যে ধরণের ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যায়, তাকে ডায়াল- আপ বলে।
এই প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশান শুরু হয়ে যায়।
০২. ডিএসএলঃ
ডায়াল আপ এর ধীর গতির জন্য এই সার্ভিসটি বাদ পড়ার কারণে বাজারে এসেছে ডিএসএল।
ডিএসএল মূলত একটি ক্যাবল কানেকশান যা ডায়াল আপ থেকে ১০০ গুণ গতিসম্পন্ন।
০৩. স্যাটেলাইটঃ
দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিসেবার অন্যতম এক উদাহরণ হলো স্যাটেলাইট।
স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ তারহীন ইন্টারনেট পরিসেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
০৪. ক্যাবল:
ক্যাবল এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ডের সংযোগের ফলে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপের মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়ে থাকে।
এটি খুবই জনপ্রিয়। অন্যান্য সকল মাধ্যম থেকে খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি মাধ্যম।
০৫. ওয়ারলেসঃ
দুটো মাধ্যম পরস্পর কাছাকাছি দুরুত্বের যে মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে তা হলো ওয়ারলেস।
০৬. সেলুলারঃ
মোবাইল ফোনে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় তা হলো সেলুলার।বর্তমানে এটি খুবই জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কঃ
দুই বা ততোধিক কম্পিউটার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হয়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
পরস্পরের সাথে ফাইল আদান-প্রদান, রিসোর্স শেয়ারিং, সরাসরি যোগাযোগসহ বিভিন্ন কাজ করার জন্য কম্পিউটার নেটওয়ার্ক তৈরী হয়।
প্রকারভেদঃ
ভৌগোলিক বিস্তৃতি বা আকার আকৃতি ও বিস্তৃতির ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে প্রধানত ‘চার’ ভাগে ভাগ করা যায়।
যথাঃ-
০১. Personal Area Network (PAN): নিকটবর্তী বিভিন্ন আইটি ডিভাইসের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের নেটওয়ার্ক সিস্টেমকে Personal Area Network (PAN)বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
এর পরিসীমা সাধারণত ১ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
খুব সহজে যে কোন জায়গায় তৈরী করা যায়।
খরচ কম।
দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।
নয়েজ দ্বারা প্রভাবিত হয়না।
০২. Local Area Network (LAN): একই ভবন বা পাশাপাশি ভবন কিংবা একই ক্যাম্পাসের দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাকে Local Area Network (LAN)বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
LAN উচ্চতর গতির হয়।
সাধারণত ১০mbps গতি সম্পন্ন হয়।
অনেক ডিভাইসে এ্যাকসেস পাওয়া যায়।
ছোট এলাকায় যেমন-একই ভবনের মধ্যে ব্যবহার করা যায়।
০৩. Metropolitan Area Network (MAN): দুই বা ততোধিক Local Area Network এর সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ককে Metropolitan Area Network (MAN)বলা হয়।
বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
Metropolitan Area Network (MAN)একটি শহর বা এর আশপাশ নিয়ে বিস্তৃত থাকে।
এটি বেশ উচ্চগতির নেটওয়ার্ক।
৫০-৭০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
Metropolitan Area Network (MAN)এ একাধিক LAN এর সাথে সংযোগ তৈরী হয়।
০৪. Wide Area Network (WAN): বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত একাধিক LAN ও MAN কে নিয়ে গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ককে Wide Area Network (WAN) বলা হয়।
এ ধরণের নেটওয়ার্ক টেলিফোন কোম্পানীর ক্যাবল ব্যবহার করে গড়ে ওঠে বিধায় এটি ধীরগতির হয়।
বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
Wide Area Network এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।
এটি বিশ্বব্যাপীও হতে পারে।
LAN এর চেয়ে ধীর গতির হয়।
ইন্টারনেট Wide Area Network (WAN)এর অংশ।
Wide Area Network (WAN) অবশ্যই ইন্টারনেট ওয়ার্কিং ডিভাইস যেমন- মডেম, রাউটার, ওয়ান সুইচ ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
মোঃ রবিউল ইসলাম
তেরখাদা, খুলনা।