ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা এবং বর্জনীয় সমূহ

রাজধানী ঢাকার একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাশেদ। ছবি আঁকতে তার ভীষণ ভালো লাগে।

গত কিছুদিন ধরে মায়ের কাছে বায়না ধরেছে একটি আর্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার জন্য।

রাশেদের মা তার ছেলের এই ইচ্ছা পূরণ করতে
আগ্রহী।

কিন্তু, সমস্যা হলো, কর্মজীবি মায়ের পক্ষে রাশেদকে নিয়মিত আর্ট স্কুলে পৌঁছে দেওয়া কষ্টকর।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাশেদের মা তাকে একটিঅনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন যারা
দক্ষতার সাথে চারুকলা ও চিত্রাঙ্কন প্রশিক্ষণ দেয়।

অনলাইন ক্লাস গুলোতে অংশ নেওয়া, ক্লাস সম্পর্কতবিভিন্ন তথ্য জানা এবং বাড়ির কাজ জমা দেওয়ার জন্য রাশেদকে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে সংযুক্ত হতে হবে।

যেমন :
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অ্যাকাউন্টে সংযুক্ত হয়ে
পূর্বধারণকৃত বিভিন্ন আর্ট ক্লাস দেখতে পাবে, জুম
ব্যবহার করে নিয়মিত ক্লাসে অংশ নিতে পারবে,
গুগল ক্লাসরুমের সাহায্যে বাড়ির কাজ জমা দিবে
এবং হোয়াটস অ্যাপের সাহায্যে ক্লাস সংক্রান্ত
যোগাযোগ রক্ষা করবে।

অর্থাৎ এই আর্ট ক্লাসে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাসেলকে নিয়মিত ইন্টারনেট ভিত্তিক সেবা সমূহ ব্যবহার করতে হবে।

যেহেতু রাসেল আগে কখনোই ইন্টারনেট ভিত্তিক পরিষেবা গ্রহণ করেনি, তাই রাসেলের মা তাকে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন
করতে এবং কিছু কাজ বর্জনের জন্য পরামর্শ দেন ।

যেমন-

০১ ব্যক্তিগত তথ্য সীমিত ও নিরাপদ রাখা:

রাশেদের মা তাঁকে অপরিচিত কারো সাথে
যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ছবি, ভিডিও, বাড়ির ঠিকানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পারিবারিক আয়, ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রদান করতে নিষেধ করেন ।

০২। প্রাইভেসি সেটিংস চালু রাখা:

রাশেদ যেহেতু হোয়াটস অ্যাপ, ইমেইল এর মতো যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করবে তাই মা রাশেদকে প্রাইভেসি সেটিংস চালু রাখতে পরামর্শ দেন ।

প্রাইভেসি সেটিংস চালু রাখলে অপরিচিতদের কাছে ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রাইভেসি সেটিংস চালু করার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে মা তাকে সাহায্য করেন এবং বলেন প্রয়োজনে
অভিজ্ঞ শিক্ষক, অভিভাবক বা নিকটজনদের সাহায্যনিতে হবে।

০৩। নিরাপদ ব্রাউজিং: বিভিন্ন সময়ে অপরিচিত
উৎস থেকে অনেক ধরনের লোভনীয় অফার (প্রস্তাব) আসে ।

এগুলো অনেক সময় ফাঁদে পরিণত হয়। যেমন – হ্যাকাররা বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে মানুষকে
ক্ষতিকর লিঙ্কে ক্লিক করতে উৎসাহিত করে থাকে।

তাই, নিরাপদ ব্রাউজিং নিশ্চিত করতে অপরিচিত
উৎসের কোনো লিঙ্কে ক্লিক করা যাবে না।

০৪। কোনো কিছু ডাউনলোড করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা:

অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন কাজের জন্য রাশেদকে
প্রয়োজনানুসারে অ্যাপ, তথ্য, ছবি, ভিডিও ডাউন-লোড করতে হতে পারে।

কোনো কিছু ডাউনলোড করার আগে রাশেদের
অবশ্যই সেটি সম্পর্কে রিভিউ পড়ে নেওয়া জরুরি।

প্রয়োজনে রাশেদ তাঁর শিক্ষক, পিতামাতা অথবা
পরিবারের কারো সাহায্য নিতে পারে।

০৫। কিছু শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্কতা:

কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে রাশেদের উচিৎ
হবে প্রথমে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা এবং তথ্যের
উৎস সঠিক ও নির্ভরযোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখা।

০৬। অপরিচিত কারো সাথে মেশার ক্ষেত্রে সতর্কতা:

অপরিচিত বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসার সবচেয়েসহজ মাধ্যম হলো ইন্টারনেট।

দুষ্টু মানুষেরা তাই ইন্টারনেটে নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতে রাখে।

ইন্টারনেটে কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসলে
ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির আগে তাই প্রথমে মানুষটির
নির্ভরযোগ্যতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাশেদকে নিশ্চিত হতে হবে।

০৭। এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা:

বিভিন্ন ইন্টারনেট ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে রাশেদের অবশ্যই একটি এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।

উল্লেখিত সতর্কতা পরামর্শের আলোকে রাশেদের
জন্য বর্জনীয় কাজ গুলো হলো –

০১। ব্যক্তিগত তথ্য পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে
কাউকেই অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রদান করা।

২। নিজের ব্যক্তিগত তথ্য সর্বসাধারণের অনুপ্রবেশ
আছে এমন স্থানে শেয়ার করা।

৩। অনিরাপদ উৎস থেকে আসা কোনো লোভনীয়
ফাঁদে পা দেওয়া।

বিশেষ করে অনিরাপদ লিঙ্ক ও অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক
করা।

০৪। অপরিচিত, রেজিস্ট্রেশন বিহীন এবং
সন্দেহজনক উৎস থেকে তথ্য, ছবি, ভিডিও বা
অ্যাপ ডাউনলোড করা।

০৫। কোনো কিছু শেয়ার করার আগে তথ্যের সত্যতা
এবং উৎসের যথার্থতা যাচাই না করা।

০৬। অনলাইনে অবাধ মেলামেশা/যোগাযোগ বা বন্ধুত্ব করা, অপরিচিতদের সাথে ঘনিষ্ঠতা রাখা,
ইত্যাদি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *