ইন্টারনেট যেভাবে আমাদের হাতে পৌঁছায়!

ইন্টারনেট ছাড়া আমাদের একটি মুহূর্তও চলে না। আমরা সারাদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করি কিন্তু আমরা কি জানি এই ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

এই ইন্টারনেটের মালিক কে? এই ইন্টারনেট ব্যবহারে আসলে খরচই বা কতো? কে-ই বা পরিচালনা করে ইন্টারনেট?

চলুন জেনে নেই ইন্টারনেট সম্পর্কিত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর-

পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন কিভাবে এই ইন্টারনেট আমাদের কাছে পৌঁছায়।

সাধারণভাবে আমরা সকলেই মনে করি যে, ইন্টারনেট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। কিন্তু বাস্তবতা পুরোপুরি ভিন্ন।

শতকরা ৯৮ ভাগ ইন্টারনেট কাজ করে অপটিক্যাল ফাইবারের সাহায্যে।

এই অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে অত্যন্ত সরু কাঁচের তন্তু বিশেষ। এটি চুলের চেয়েও পাতলা এবং সরু।

আমাদের মনে এই প্রশ্নটা সাধারণত জেগে উঠে যে, মোবাইল ব্যবহারের সময় তো কোনো ক্যাবল যুক্ত থাকে না, তাহলে কেন-ই বা অপটিক্যাল ফাইবার নামক ক্যাবলের কথা বলা হচ্ছে।

সাধারণত নিকটবর্তী টাওয়ার থেকে আমাদের মোবাইলে ইন্টারনেট আসে।

আর সেই টাওয়ার থেকেই আমরা যে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করতে চাই সেখানকার সার্ভার পর্যন্ত ক্যাবল বিছানো থাকে।

ইন্টারনেট মূলত আমাদের কাছে আসে ৩ ভিন্ন ভিন্ন স্তরের মাধ্যমে। এই তিনটি স্তরকে বলা হয় টিয়ার-১, টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩।

টিয়ার ওয়ানের মধ্যে যেসব কোম্পানিগুলো রয়েছে তারা নিজেদের অর্থায়নে সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে জালের মতো অপটিক্যাল ফাইবার বিছিয়ে রেখেছে।

আর এভাবেই একটি দেশ বাকি অন্য দেশগুলোর সাথে ক্যাবলের সাথে যুক্ত হয় তারপর এক দেশ থেকে সেই দেশের বিভিন্ন প্রদেশে, জেলায় এবং গ্রামে এই অপটিক্যাল ফাইবারগুলো বিভক্ত হয়ে যায়।

তারপর সর্বশেষে তৃণমূলের টাওয়ারে সেই সংযোগ পৌঁছায় এবং সেখান থেকেই আমরা ক্যাবলবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ পেয়ে থাকি।

তিনটি উপায়ে ইন্টারনেট আমাদের কাছে পৌঁছায় :

অপটিক্যাল ফাইবারগুলো খুব সরু হলেও এগুলোর ডাটা ট্রান্সফার ক্ষমতা ৬ জিবিপিস পর্যন্ত।

সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার বিছানোর কাজগুলো যে কোম্পানি করে থাকে তাদেরকে টিয়ার-১ কোম্পানি বলা হয়।

টিয়ার-১ কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব খরচে অপটিক্যাল ফাইবার বিছিয়ে থাকে।

বাংলাদেশে এমনই একটি টিয়ার-১ কোম্পানি হলো বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানী লিমিটেড।

টিয়ার-২ কোম্পানিগুলো হলো প্রত্যেক দেশের সিম অপারেটররা।

তেমনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সিম অপারেটর যেমন রবি, গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, টেলিটক ইত্যাদি হলো টিয়ার-২ কোম্পানি।

ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে তথ্য নিয়ে সেগুলো গ্রাহকের মোবাইল ফোনের সার্ভারে পৌঁছে দেয়াই হলো টিয়ার-২ এর কাজ।

টিয়ার-২ কোম্পানিগুলো প্রতি জিবিতে একটি নির্দিষ্ট টাকা হিসেব করে টিয়ার-১ কোম্পানিগুলোকে দেয়।

এছাড়াও বিভিন্ন লোকাল পর্যায়ে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা আইএসপি রয়েছে যারা মূলত টিয়ার-৩ কোম্পানি।

প্রকৃতপক্ষে টিয়ার ওয়ান, টিয়ার টু এবং টিয়ার থ্রি এই তিন স্তরের মাধ্যমে ইন্টারনেট আমাদের হাত পর্যন্ত আসে।

একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায় ইন্টারনেটের জন্য আসলে কোনো খরচ নেই! আমরা যা অর্থ খরচ করি তা শুধুমাত্র সমুদ্রের নিচে ক্যাবল বিছানো বা স্থাপন ও মেরামত করার জন্য।

আর এতো কিছু জানার পর আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে এখানে স্যাটেলাইটের কোনো কাজ নেই।

কিন্তু আমাদের মনে সহজেই একটা প্রশ্ন জাগে যে, আমরা কোনো ওয়েবসাইটে সার্চ করলে সেটি কোন কোন চ্যানেল বা জায়গা অতিক্রম করে সার্ভার পর্যন্ত পৌঁছে।

প্রকৃতপক্ষে আমদের সার্চ করা বিষয়গুলো বিভিন্ন ট্রাফিক অতিক্রম করে মেইন সার্ভারে যায়৷

এখানে ট্রাফিক বলতে নির্দিষ্ট কোনো এলাকাও হতে পারে।

আর এভাবেই ইন্টারনেট ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ট্রাফিক স্টেশন পার হয়ে লোকাল টাওয়ার হয়ে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *