কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু নিয়ম কানুন !

বিশ্বে বর্তমানে ইন্টারনেট প্রযুক্তির জয় জয়কার অবস্থা।

ইন্টারনেটে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং এর বহুমুখী ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যেখানে তথ্য প্রযুক্তিকে দিন বদলের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করছেন সেখানেও ইন্টারনেটের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি ইস্যু হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি খাতের নিরাপত্তা।

বিশ্বব্যাপী সাইবার অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা আইটি ভিত্তিক নিরাপত্তা জোরদার করতে নানা রকম উদ্যোগ ও আপনার তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর জীবনকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন টিপস্‌ প্রদান করছেন।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু সাধারণ টিপস্‌ নিয়ে এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদন-

তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তির সেবা মানুষের দ্বার গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট।

বর্তমানে শিক্ষা, গবেষণা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনোদন, যোগাযোগ, গণমাধ্যম, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, চিকিৎসাসহ আমাদের সমাজ জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ব্যবহার অনুপস্থিত।

ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে গোটা বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।

‘গ্লোবাল ভিলেজ’ খ্যাত যে ধারণা আমরা পোষণ করে থাকি তা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট সুবিধার ফলে।

ইন্টারনেটের কোটি কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে চ্যাট, গেম, মিউজিক ডাউনলোড, গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যের সমাবেশ, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, শিক্ষা-গবেষণা, বাণিজ্যসহ নানা কার্যক্রমের সমন্বয়ে বর্তমানে ইন্টারনেট শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত।

সবদিক বিবেচনায় ইন্টারনেট বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

যদিও ইন্টারনেট খুবই উপকারী একটি মাধ্যম হিসেবে সর্বজনবিদিত পাশাপাশি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে রক্ষিত ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহও রয়েছে সর্বদা হুমকির মুখে।

তাই কম্পিউটার-ইন্টারনেটকে কেন্দ্র করে সাইবার নিরপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে।

ইন্টারনেট সংযুক্ত কম্পিউটারে ঝুঁকির মাত্রা রয়েছে অধিক।

তবে ঝুঁকির মাত্রা সাধারণত সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এর উপর অনেকটাই নির্ভর করে থাকে।

ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর কিছু কলাকৌশল জানলে আপনি যেমন সাইবার ঝুঁকি থেকে অনেক বেশি নিরাপদ থাকবেন তেমনি ব্রাউজিং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে আপনি প্রতিনিয়তই ঝুঁকির মধ্যে সামিল হবেন।

আপনি মানে আপনার কম্পিউটার, কম্পিউটারে রক্ষিত বিভিন্ন তথ্য সর্বোপরি আপনার অনলাইন নিরাপত্তা।

নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর কলা কৌশল না জেনে অজ্ঞতা নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ম্যালওয়ার আক্রমণে আপনার সিস্টেম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং খুব সহজেই তা হ্যাকারের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু সাধারণ টিপস্‌ এই প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হলো যা ব্যবহারে ইন্টারনেট নিরাপত্তা হুমকি থেকে আপনার কম্পিউটার অধিকতর নিরাপদ থাকবে।

টিপস্‌সমূহ হচ্ছে-

অবাঞ্চিত ইমেইল থেকে কোন অ্যাটাচমেন্ট খুলবেন না।

অনেক সময় অবাঞ্চিত ইমেইল থেকে কিছু মেইল আপনার ইমেইলে আসে যা ক্ষতিকর প্রোগ্রাম ধারণ করতে পারে।

যেমন- ভাইরাস, ম্যালওয়ার এবং ওর্মস। এই ক্ষতিকর প্রোগামগুলো প্রায়ই আপনার সিস্টেমের সার্ভার ধংসের অন্যতম কারণ হতে পারে।

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে উত্তম পন্থা হচ্ছে অবাঞ্চিত ইমেইল রিসিভ করা মাত্রই তাৎক্ষণিকভাবে তা ডিলিট করা।

তবে এ ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, আপনি আপনার কম্পিউটারে একটি এন্টিস্প্যাম সফটওয়্যার ইন্সটল করতে পারেন,

যা আপনার ইমেইল প্রোগ্রামের ইনবক্স থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান করবে এবং আক্রমণকারী ইমেইল প্রতিরোধ করবে।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে বর্তমানে ইন্টারনেটের দৈনন্দিন ব্যবহারিক দিকের বিবেচনায় ইমেইল দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।

তাই নিরাপদ ইমেইল ব্যবহার আপনার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি উল্লেখিত সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে ইমেইল আদান-প্রদান করতে পারেন।

পেয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করাঃ

আপনার সুরক্ষিত ও নিরাপদ নেটওয়ার্ক এর জন্য পেয়ার-টু-পেয়ার নেটওয়ার্ক ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভাল, কারণ তারা ম্যালওয়ার এবং ভাইরাস আক্রমণের সাধারণ বাহন হিসেবে কাজ করে।

সাধারণত যখন আপনি পিটুপি সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন,

তখন আপনার কম্পিউটারের ফাইলে প্রবেশ করতে আপনি অন্যান্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনুমতি প্রদান করবেন। এমনকি তা হ্যাকারও হতে পারে।

প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইট থেকে ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করাঃ

দৈনন্দিন প্রয়োজন ও নানান ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আমরা প্রতিনিয়তই ইন্টারনেট থেকে হরেক রকম ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করে থাকি।

না বুঝে শুনে অনেক সময় আমরা খেয়াল খুশি মত যেনতেন ওয়েব সাইট থেকে ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করে থাকি।

ফলশ্রুতিতে আমাদের কম্পিউটারে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ফ্রি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে প্রসিদ্ধ ওয়েবসাইটসমূহ থেকে সফটওয়্যার ডাউনলোড করা উত্তম।

ইন্টারনেটে ফ্রি সফটওয়্যারের সহজলভ্যতার কারণে যখন আপনি ডাউনলোড করবেন তখন অবশ্যই আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।

ফ্রিওয়্যার অনেক সময়ই ক্ষতিকর প্রোগ্রামের মাধ্যমে লেইস্‌ করতে পারে।

একবার আপনার কম্পিউটারে প্রবেশ করলে এটি আপনার কম্পিউটারের সার্ভার ধ্বংস এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বার চুরির অন্যতম কারণ হতে পারে।

উক্ত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে ফ্রিওয়্যার ডাউনলোড করতে হলে তা প্রসিদ্ধ কোন ওয়েব সাইট থেকে করতে হবে, যা আপনার জন্য ভাইরাস এবং ম্যালওয়ার মুক্ত সফটওয়্যার নিশ্চিত করবে।

অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার এবং ড্রাইভারগুলো আপডেট রাখতে হবেঃ

তথ্য প্রযুক্তি দিন দিন সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হওয়ার পিছনে লক্ষ্যণীয় একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীলতা।

এই দ্রুত পরিবর্তনশীল তথ্য প্রযুক্তির জগতে পূর্ণাঙ্গরূপে মানিয়ে নিতে প্রয়োজন প্রযুক্তির বিষয়গুলো সর্বদায় হালনাগাদ রাখা।

আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কম্পিউটারসহ সহায়ক বিষয়গুলো হালনাগাদ না রাখা মানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে প্রতিনিয়ত পিছিয়ে পড়া।

কম্পিউটার হালনাগাদ না করার ফলে একদিকে আপনার ব্যবহারিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ কম্পিউটার যেমন সাইবার আক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে থাকে তেমনি অন্যদিকে প্রযুক্তির অনেক সুবিধা নিতে ব্যর্থ হতে হয়।

সর্বোপরি আপনার কম্পিউটারকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজন কম্পিউটারের বেশ কিছু জিনিস হালনাগাদের বিষয়ে সচেতনতা। যা আপনার কাজে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি বৃদ্ধি করবে।

নিয়মিতভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বশেষ হটফিক্সেস প্যাচ সহকারে আপনার অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার এবং ড্রাইভারগুলো আপডেট রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কম্পিউটারে ব্যবহৃত প্রোগ্রামগুলোর সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ ভার্সন ব্যবহারে পূর্বের ভার্সনগুলোর চাইতে কম্পিউটারের নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেক হ্রাস করবে।

সর্বশেষ ভার্সন ব্যবহারের ফলশ্রুতিতে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস এবং স্পাইওয়্যার আক্রমণ- জনিত ঝুঁকি অনেক কমবে, সুরক্ষিত থাকবে আপনার কম্পিউটার।

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারঃ

তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর কম্পিউটার-ইন্টারনেটের যুগে আমরা কমবেশি সবাই পাসওয়ার্ড নামক শব্দটির সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত।

পাসওয়ার্ড শব্দটির সাথে কম্পিউটার ও অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে সামনে চলে আসে।

যেহেতু অনলাইন নিরাপত্তা অনেকখানি আপনার পাসওয়ার্ডের উপর নির্ভর করে তাই পাসওয়ার্ড সুরক্ষার বিষয়ে আপনাকে অধিক মনোযোগী হতে হবে।

আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট এবং সিস্টেম ফাইলের জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ডের ব্যবহার আপনার তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

পাসওয়ার্ড হিসেবে আপনি নিজের নাম কিংবা জন্মতারিখ ব্যবহার করবেন না। কারণ তা খুব সহজেই ক্রাক হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনার জানা থাকা আবশ্যক।

আপনি এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন যা হবে আলফানিউমেরিক ক্যারেকটার সমৃদ্ধ এবং এটা নূন্যতম আাট ক্যারেক্টার বিশিষ্ট হতে পারে।

অনেকে নিজের সিস্টেমের মধ্যে পাসওয়ার্ড স্টোর করে রাখে।

যা নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে সাহায্য করে। তাই আপনার সিস্টেমের মধ্যে কখনো পাসওয়ার্ড স্টোর করবেন না।

আপনাকে সবসময় জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

আপনার পাসওয়ার্ড অর্গানাইজ এবং ম্যানেজ করতে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন।

একটি ভাল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার প্রোগ্রাম আপনার সকল পাসওয়ার্ডগুলোকে এ্যানক্রেপট করবে।

কেউ কেউ নিজের পাসওয়ার্ড অন্যের সাথে শেয়ার করে থাকেন।

যা অনেক সময় আপনার অনলাইন নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারে।

এই দিকটি বিবেচনা করে আপনার পাসওয়ার্ড অন্য কারো সঙ্গে কখনোই শেয়ার করবেন না।

ফায়ারওয়াল ইন্সটল এবং ব্যবহারঃ

কম্পিউটার থেকে তথ্যের আদান-প্রদানজনিত কারণে কিছু সতর্কতার অভাবে আপনার কম্পিউটার নিরাপত্তা ঝুঁকির কবলে পড়তে পারে।

এ ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়তি সতকর্তা পূর্ণাঙ্গরূপে আপনার কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

আপনার সিস্টেমে তথ্যের আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে একটি ফায়ালওয়াল ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার সিস্টেমের অথোরাইজড অ্যাকসেস হিসেবে ফায়ারওয়াল প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

ফায়ারওয়াল আপনার ইনকামিং এবং আউটগোয়িং তথ্যের কার্যকরী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *