কিডনি কীভাবে সুস্থ রাখবেন
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। নীরবে কারও কিডনি বিকল হতে থাকলেও ;
তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা অনুভব করা যায় না।
যখন অনুভব করা যায়, তখন হয়তো রোগটি জটিল অবস্থায় চলে গেছে।
তাই যেকোনো সুস্থ মানুষকেও জানতে হবে কিডনি ভালো রাখার উপায়, প্রতিরোধ করতে হবে কিডনি বৈকল্যকে।
কিডনি সুস্থ রাখতে রোজ অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
কিডনি ভালো রাখতে কী করবেনঃ
- কিডনি ভালো রাখতে সবারই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। এই পানি অবশ্যই হতে হবে নিরাপদ।
অসুস্থতায় (জ্বর, ডায়রিয়া, বমি প্রভৃতি) এবং ব্যায়ামের পর পানির চাহিদা বাড়ে।
বিশেষতঃ ডায়রিয়া বা বমি হলে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে অবশ্যই।
গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়ের জন্যও পানির চাহিদা বেশি।
আবহাওয়ার পরিবর্তনে পানির চাহিদা কমবেশি হয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- রোজ অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন (রোজ না পারলেও সপ্তাহের অধিকাংশ দিন)।
হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম ভালো।
- ধূমপান, পান-জর্দা, অ্যালকোহল বর্জনীয়। ধূমপায়ীর কিডনিতে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়।
কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যায়। ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
- পর্যাপ্ত ঘুম চাই রোজ। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করাই ভালো
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করাই ভালো।
বিশেষতঃ ব্যথানাশক সেবন করা একে বারেই উচিত নয়।
- ৪০ বছর বয়স পেরোনোর পর কোনো সমস্যা না থাকলেও সবারই বছরে একবার;
রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি এবং প্রস্রাবের প্রোটিন পরীক্ষা করানো উচিত (প্রস্রাবে প্রোটিন এবং সুগারের উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য)।
এ ছাড়া কিডনির কর্ম ক্ষমতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত রোগীদের ৩২ শতাংশ জানেনই না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
আবার জানা থাকার পরও নিয়ন্ত্রণে নেই অর্ধেক মানুষেরই রক্ত চাপ ।
শেষ পর্যন্ত মোট রোগীর মাত্র ২৫ শতাংশ পারছেন রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে।
একই ধরনের কথা ডায়াবেটিসের জন্যও প্রযোজ্য। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
কিন্তু এই রোগ গুলো থাকার কারণে রোগীর কিডনি ধীরে ধীরে কর্ম ক্ষমতা হারাচ্ছে নীরবে।
- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকলে কিংবা রক্তের চর্বি বেড়ে থাকলে ;
অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিডনি বিকলের প্রধান কারণ এগুলোই।
- কিডনির রোগের লক্ষণ গুলোকে জানুন। ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, প্রস্রাব কম হওয়া ;
পায়ে পানি আসা প্রভৃতি হতে পারে কিডনি রোগের লক্ষণ। লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসা নিন।
*যে কোনো দীর্ঘ মেয়াদি রোগের ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় বিষয় গুলো ;
এবং রোগের জটিলতার লক্ষণ সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন।
*রোগীর পরিবার কিংবা রোগীর সেবা দেন যিনি, তাঁদেরও বিষয় গুলো জানতে হবে।
- মাত্রা তিরিক্ত লবণ কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কিছু কথা
মাত্রাতিরিক্ত লবণ কিডনির জন্য ক্ষতিকর। একজন সুস্থ ব্যক্তি দৈনিক ৫-৬ গ্রাম লবণ গ্রহণ করতে পারবেন।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, রান্নায় অনেকটা লবণ দেওয়াই আছে।
তাই পাতে বাড়তি লবণ নেবেন না। সালাদ বা ফলের সঙ্গেও নয়।
রান্না সুস্বাদু করতে বেশি লবণ ব্যবহার না করে বিভিন্ন রকম মসলা ব্যবহার করতে পারেন।
- ভাজা খাবারের চেয়ে সেদ্ধ খাবার ভালো। বেকড খাবার খেতে পারেন। বাড়তি তেল- চর্বি এড়িয়ে চলুন।
- ট্রান্স ফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন।
ননি বিহীন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন। পনির, মেয়োনেজ কম খাওয়াই ভালো।
পিৎজা যদি খেতেই চান মাঝে মধ্যে, কম পনিরের পিৎজা খান, টপিংয়ে বেছে নিন সবজি।
- চিনি ছাড়া বা কম চিনি দেওয়া খাবার গ্রহণ করুন।
- পরিশোধিত (রিফাইনড) খাবার এড়িয়ে চলুন। গোটা শস্যের বা হোল গ্রেইন খাদ্য শস্য বেছে নিন।
- ধীরে ধীরে সময় নিয়ে খান।
জানতে হবে কিডনি রোগের সাধারণ লক্ষণ, জটিলতা সম্পর্কে প্রত্যেককেই জানতে হবে।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই এই বিষয়গুলো জানেন না।
সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা কম, এমনকি জানার আগ্রহও কম।
অনেক সময় ভুল জানার হার বেশি।
চিকিৎসক, নার্স সহ সব স্বাস্থ্য কর্মী ;
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ;
রাজ নৈতিক নীতি নির্ধারক পর্যন্ত সবারই কিডনির সুস্থতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
সুস্থতার জন্য যাঁর যাঁর জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
সুস্থ কিডনির জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজঃ
কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম।
মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে।
বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
প্রতি বছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যু বরণ করে।
এই ধরণের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।
আসুন জেনে নেয়া যাক কিডনি ভালো রাখার উপায়ঃ
লবণ কম খানঃ
খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে।
তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খান প্রতি দিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত।
তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয়না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।
অতিরিক্ত প্রানীজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
এমনকি চিপস, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডুলস ;
এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে ;
এবং কিডনির দূর্বল কোষ গুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই প্রানীজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন খাবার তালিকায়।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুনঃ
রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্ত চাপ সব সময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।
রক্ত চাপ কমিয়ে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুনঃ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান।
সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন।
কম বেশি প্রায় সব ঔষধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
বিশেষ করে ব্যথা নাশক ওষুধ গুলো কিডনির জন্য একে বারেই ভালো নয়।
নিয়ম না জেনে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে ;
আপনার অজান্তেই কিডনির বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে।
তাই যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিন।
প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলি গ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই।
নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।
কোমল পানীয় ত্যাগ করুনঃ
অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন।
এ ধরণের পানীয় গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুনঃ
ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে ;
এবং এর ফলে কিডনির কর্ম ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি এক পর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।
কিডনীর পরীক্ষা করানঃ
উচ্চ রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো ;
কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে।
যাদের কিডনি রোগের ঝুকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।