কিডনি সুস্থ রাখার উপায়
শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি অঙ্গ—কিডনি।
নিরন্তর কিডনির মধ্য দিয়ে শরীরের রক্ত প্রবাহিত হয় ও,
তার মধ্য থেকে বর্জ্য পদার্থ পৃথক করে প্রস্রাবের মাধ্যমে,
বের করে দেওয়া হলো কিডনির অন্যতম কাজ।
কিন্তু নানা রোগে ও সমস্যায় কিডনি ক্ষতি গ্রস্ত হয়,
ও কখনো কখনো বিকলও হয়ে পড়ে। নানা কারণে,
দিনে দিনে কিডনি রোগের প্রকোপ বেড়ে চলছে।
অথচ একটু সচেতন হলে আমরা কিডনি সুস্থ রাখতে পারি।
কিডনি রোগীদের প্রধান অংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ ধরা পড়ার সময় থেকেই,
সচেতন হতে হবে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে,
কিডনি জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এর সঙ্গে দরকার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ।
কিডনি জটিলতা হচ্ছে কি না, তা বুঝতে রক্তে সেরাম,
ক্রিয়েটিনিন ও প্রস্রাবের আমিষ পরীক্ষা (৬ মাস, বা অন্তত বছরে এক বার)
করে যেতে হবে। মনে রাখা উচিত, কিডনি অনেকটা বিকল হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত,
তেমন কোনো উপসর্গ হয় না। যখন উপসর্গ হয়,
তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। নিয়মিত প্রস্রাবের,
মাইক্রো-এল-বুমিন,ও আমিষ পরীক্ষার মাধ্যমে এটি বোঝা যায়।
অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ।
উচ্চ রক্ত চাপ কিডনি রোগের দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
উচ্চ রক্ত চাপও ডায়াবেটিসের মতোই নীরব ঘাতক।
নীরবে নিঃশব্দে কিডনির ক্ষতি সাধন করতে থাকে।
একই ভাবে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা এ–সংক্রান্ত,
কিডনি জটিলতা ঠেকানোর প্রধান উপায়। আর,
উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদেরও নিয়মিত ভাবে কিডনি পরীক্ষা করতে হবে।
যদি রক্তের ক্রিয়েটি-নিনের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়,
তাহলে কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
কিডনির নিজস্ব কিছু রোগ, যেমন গ্লোমে-রুলো-নেফ্রাই-টিস,
পলিসি-স্টিক কিডনি ডিজিজের কারণে ও উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।
ফলে এমনটি সম্ভব যে উচ্চ রক্ত চাপের কারণ খুঁজতে গিয়ে,
অন্তর্নিহিত কিডনির আরেকটি রোগ ধরা পড়ল।
যে কোনো ক্রনিক রোগ শুরুতে ধরা পড়লে তার বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হয়।
তার মানে ঝুঁকি পূর্ণ জন গোষ্ঠী, যেমন যাদের ডায়াবেটিস আছে,
উচ্চ রক্ত চাপ আছে, পরিবারে কিডনি রোগ আছে,
কিডনিতে পাথর আছে, প্রোস্টেটের সমস্যা আছে বা বার বার প্রস্রাবে সংক্রমণ হয়,
তাদের নিয়মিত কিডনির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
আকস্মিক পানি শূন্যতা হলে হঠাৎ কিডনি বিকল হতে পারে।
ডায়রিয়া বা বমি পানি শূন্যতার অন্যতম কারণ।
এ ছাড়া অতিরিক্ত গরম, পুড়ে যাওয়া, দুর্ঘটনায়,
অতিরিক্ত রক্তপাত হলে শরীর থেকে অনেক লবণ পানি বের হয়ে যায়।
এ সময় দ্রুত সেই পানি শূন্যতা রোধ করা সব চেয়ে,
কার্যকর উপায় কিডনি বিকল রোধের। পানি শূন্যতা,
বোঝার উপায় হলো প্রস্রাবের রং দেখা। পানি শূন্যতা হলে,
প্রস্রাবের রং গাঢ় হয়ে যায়। ডায়রিয়া বা বমি হলে,
প্রথমে মুখে ওরস্যালাইন খেতে হবে বার বার।
পানি শূন্যতা তীব্র হলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।
কিডনি সুস্থ রাখতে –
স্বাস্থ্য কর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। খাবারের তালিকায় প্রচুর শাক সবজি রাখুন।
চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করুন ও কম লবণে রান্না করুন।
সুষম খাদ্যাভ্যাস সব চেয়ে ভালো। মানে শর্করা,
আমিষ, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজের সুষম অনুপাত যেন থাকে।
বিশেষ ধরনের ক্র্যাশ ডায়েট চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না করাই ভালো।
কারণ, এ ধরনের অনেক ডায়েটে অতিরিক্ত প্রোটিন ব্যবহার করা হয়,
যা সবার জন্য ভালো না ও হতে পারে।
রক্তের শর্করা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
সুগার বা রক্ত চাপ একটু বেশি থাকলেও তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে না,
বলে অনেকে একে পাত্তা দিতে চান না। কিন্তু,
এ গুলো নীরবে আপনার কিডনিকে ক্ষতি গ্রস্ত করতে থাকবে।
যখন সমস্যা হবে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ধূমপান কিডনির জন্য ক্ষতিকর, তা গবেষণায় প্রমাণিত।
কিডনি সুস্থ রাখতে হলে ধূমপান বর্জন করতে হবে।
স্থূলতার সঙ্গেও কিডনি রোগের সম্পর্ক আছে।
অতিরিক্ত মেদ-ভুঁড়ি থাকলে তো পুষ্টিবিদ বা ডায়ে-টিশিয়া-নের পরামর্শে কমাতে হবে।
নিজে নিজে কোনো ঔষধ খাবেন না। অনেক ঔষধ,
হারবাল পণ্য, ভেষজ উপাদান কিডনির জন্য, ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করবেন না।
নিয়মিত কিডনির পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যারা ঝুঁকি পূর্ণ।