কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস শিখবেন এবংডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করবেন
ওয়ার্ডপ্রেস শেখার পর আপনার দক্ষতা প্রাকটিক্যাল কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। তাই চলুন ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরির ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক—
স্টেপ ১ – একটি ডোমেইন নেইম কিনুন :
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি বা শেখার সর্বপ্রথম ধাপ হলো একটি টেকি ডোমেইন-নেইম কেনা। আপনার বিজনেস এবং আপনার প্রোডাক্টকে উপস্থাপন করবে এমন একটি ডোমেইনে নেইম কিনুন যা দ্বারা সকলেই আপনাকে খুব সহজে চিনতে এবং জানতে পারবে। কারণ অনলাইন ব্র্যান্ডিয়ের ক্ষেত্রে ডোমেইন নেইমের গুরুত্ব অনেকখানি।
তাই আপনি যদি হঠাৎ কোন কারণ বসত আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন নেইম চেঞ্জ করেন তা আপনার ব্র্যান্ডিং এবং এসইও এর উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
সেজন্য একটি উপযুক্ত ডোমেইন পছন্দ করুন। তবে আপনি যদি আপনার স্কিলকে বিজনেস এর মাধ্যমে প্রচার করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনার বিজনেসের ধরণের সাথে মিল রেখে ডোমেইন নেইম সেট করতে হবে।
আর ডোমেইন নেইম অবশ্যই ডট কম (.com) দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন— যা আপনার ওয়েবসাইটের এসইও করতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন দীর্ঘ ইউআরএল (URL) বা এড্রেস গ্রাহকদের জন্য মনে রাখা কষ্টকর যা বেশ বিপত্তির কারণ হতে পারে। যা আপনার ভালো ক্লায়েন্ট পেতে সমস্যায় ফেলতে পারে।
স্টেপ ২ – কিনে নিন ওয়েব হোস্টিং :
প্রতিটি ওয়েবসাইট একটি ওয়েব সার্ভারে হোস্ট করা থাকে। তাই আপনাকেও আপনার ওয়েবসাইট সার্ভারে লাইভ করতে হবে।
বেশির ভাগ ওয়ার্ডপ্রেস সাইট থার্ডপার্টি কোন ওয়েব হোস্টিং থেকে সার্ভিস গ্রহণ করে। আপনি বাংলাদেশীও অনেক জনপ্রিয় ওয়েব হোস্টিং সেবা পাবেন এখন।
যেমন, SpeedHost Bangladesh খুব কম খরচে রিলায়েবল সেবা নিশ্চিত করে।
আপনি যে হোস্টিং প্রোভাইডার নির্বাচন করবেন তারা সেই সার্ভার পরিচালনা করবে এবং আপনার প্রোভাইডার আপনার সর্বাত্মক সাপোর্ট প্রদান করবে।
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ প্রোভাইডার রয়েছেন যারা হোস্টিংয়ের ধরণের উপর নির্ভর করে গ্রাহকদের জন্য নানান-ধর্মী প্যাকেজ প্রদান করেন।
তাই সেরা হোস্টিং সার্ভিস নিতে আপনাকে কিছুটা বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। এছাড়া সার্ভার ডাউন যে কোনো বিজনেসের জন্য খারাপ।
তাই এ ক্ষেত্রে যাদের দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে একটি ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার হিসেবে মার্কেটে টিকে আছে তাদের থেকেই পর্যাপ্ত সাপোর্ট নেওয়া প্রয়োজন।
এছাড়া সিকিউরিটি যে কোনো ওয়েবসাইটের অন্যতম চিন্তার কারণ। তাই ঠিক কোন সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি ভালো ভাবে মেইনটেইন করতে পারবে সেদিকে নজর দিতে হবে।
এ ছাড়াও পেইজ লোডিং স্পিড আপনার ওয়েবসাইট ব্যবহারের গতিকে তরান্বিত করে। আপনার যখন পর্যাপ্ত ট্রাফিক থাকবে তখন অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট এর গতির দিকে ভালো নজর দিতে হবে।
স্টেপ ৩ – ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করুন :
আপনি যদি ইতিমধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং সার্ভিস গ্রহণ করেন তাহলে ইতিমধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস প্রি-ইন্সটল হয়ে যাওয়ার কথা।
এ ছাড়াও আপনার হোস্টিং প্যাকেজের উপর নির্ভর করে আপনি এই জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস প্রোগ্রামটি ইন্সটল করার সুবিধা পাবেন।
এই স্টেপটি ওয়েবহোস্টিং এর সাথে পুরোপুরি সম্পর্কিত। তাই ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করার জন্য অবশ্যই আপনার হোস্টিং কন্ট্রোল প্যানেলে লগ-ইন করতে হবে।
স্টেপ ৪ – ওয়ার্ডপ্রেস থিম নির্বাচন করুন :
আপনি যখনি কোন ওয়েবসাইট তৈরি করবেন আপনি অটোমেটিকলি কিছু ওয়ার্ডপ্রেস থিম পেয়ে যাবেন।
চাইলে এক্ষেত্রে ফ্রি থিম যেমন ব্যবহার করতে পারেন ঠিক তেমনি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পেইড থিম কিনতে পারেন।
ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটি সমর্থন করে এমন যে কোন থার্ড পার্টি থিম আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এর পরে আসে আপনার প্রয়োজন অনুসারে কাস্টমাইজ করা।
স্টেপ ৫ – ওয়েবসাইট কাস্টমাইজড করুন :
আপনি থিম নির্বাচন করার পর সেই থিম কাস্টমাইজড করার দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মূলত আপনি কিসের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তার উপর নির্ধারণ করে আপনার সাইট কাস্টমাইজড করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান টাইটেল পরিবর্তনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট কাস্টমাইজড শুরু করে।
আপনি যখন ওয়ার্ডপ্রেস শিখবেন তখন আপনার বেশিরভাগ কাজ এই ওয়েবসাইট কাস্টমাইজেশন, থিম বা প্লাগিন বিল্ড করার কাজই থাকবে।
সুতরাং আপনাকে এখানে শিখতে টাইম দিতে হবে। প্রতিটি ফাংশন সম্পর্কে আইডিয়া নিতে হবে।
স্টেপ ৬ – আপনার পেইজ এবং আপনার পোস্ট
ক্রিয়েট করুন :
ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট কিছু মৌলিক পেইজ এবং পোস্ট দিয়ে সাজানো থাকে। তারপর আপনার প্রয়োজন অনুসারে পেজ পোস্ট তৈরি করতে হবে।
পোস্টের মধ্যে অটোমেটিক্যালি আপনার রিসেন্ট কন্টেন্টগুলো ডেট অনুসারে শো করবে। ফ্রন্ট-ইন্ডে একই সাথে ভিজিটর আপনার পূর্বের এবং বর্তমান পোস্টগুলো দেখতে পারবে। ধীরে ধীরে আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইট প্রফেশনাল লুক পাবে।
স্টেপ ৭ – ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন ব্যবহার করুন :
ওয়ার্ডপ্রেস এক্সপেরিয়েন্সকে বহুগুণে বৃদ্ধি করতে প্লাগিনের ভূমিকা অপরিসীম। একটি সাইটে সকল ইমাজিনারি ধারণা বাস্তবায়ন করতে ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিনের বিকল্প নেই।
আপনার বিজনেসের ধরণ এবং কি কি ফাংশন চান তার উপর নির্ভর করে ওয়েবসাইটে ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন তৈরি করতে হবে বা অন্যের তৈরি প্লাগিন ব্যবহার করতে হবে।
সময়ের সাথে সাথে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট বেশ চাহিদা-বহুল হয়ে উঠেছে। তাই ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে জিজ্ঞাসারও অন্ত নেই। একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হওয়ার যাত্রায় প্রয়োজনীয় কিছুর প্রশ্নের উত্তর তাই নিচে তুলে ধরা হলো।
১. ওয়ার্ডপ্রেস শিখে নিজের দক্ষতাকে কি আরও
ভালোভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবো?
ওয়ার্ডপ্রেস শেখার মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করা শিখবেন তা কিন্তু নয় বরং আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট সিস্টেমকে কাজে লাগিয়ে ই-কমার্স, বুকিং, ইলার্নিংসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইট ডেভেলপ করে অবশ্যই নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর পরিপূর্ণ সুযোগ পাবেন।
এছাড়াও আপনি নিজের প্লাগিন এবং থিম ডেভেলপমেন্ট করতে পারবেন—যা থেকে ইনকামও করা যায় পর্যাপ্ত। পাশাপাশি আপনি ফন্ট-এন্ড ডেভেলপার হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
২. ওয়ার্ডপ্রেস থিম বলতে কি বুঝায় ?
ওয়ার্ডপ্রেস থিম হল প্রি-এক্সিস্টিং টেম্পলেট যা আপনি ওয়ার্প্রেস সাইট তৈরি করার সময় কাস্টমাইজড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
এর মাধ্যমে আপনি ফন্ট-এন্ড ডেভেলপমেন্টের সময় বিভিন্ন ইউনিক ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেসে কয়েক হাজার জনপ্রিয় টেম্পলেট আছে।
৩. নতুনরা কতো দ্রুত ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারে?
কোন কিছু শেখার জন্য তা সম্পর্কে বেসিক ধারণা থাকা বেশ আবশ্যক। তাই আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান সেক্ষেত্রে আপনার পূর্বে কোডিং এক্সপেরিয়েন্স থাকলে বেশ সহায়ক হবে।
সাধারণত আপনি যদি নতুন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান আপনাকে এইচটিএমএল (HTML), সিএসএস (CSS) এবং জাভাস্কিপ্ট (JavaScript), PHP শিখে ওয়ার্ডপ্রেস শিখলে বেশি ভালো করতে পারবেন।
৪. অনলাইনে ওয়ার্ডপ্রেস শিখে আমি কি মোবাইলের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারব?
আপনি যেখান থেকেই ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শেখেন না কেন আপনি খুব সহজে আপনার শেখার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মোবাইলের মাধ্যমেও পরিপূর্ণ ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।
তবে আপনি ওয়েব ডেভলপার হতে চাইলে কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক।
৫. ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটি থেকে কিভাবে সাহায্য
নিবো?
যারা ওয়ার্ডপ্রেস শেখার কথা ভাবছেন বা ইতিমধ্যে কাজ করছেন তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স সেন্টার হলো ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটি।
ওয়ার্ডপ্রেস কমিউনিটির মাধ্যমে খুব সহজে আপনার শেখা বিষয়গুলো চর্চা করতে পারবেন এবং সমস্যার সমাধান নিতে পারবেন।
সেই সাথে আপনি নিয়মিত কমিউনিটিতে সময় দিলে অজানা বিষয়গুলো সম্পর্কেও বেশ ভালো ধারণা পাবেন।
শেষ কথা :
বর্তমান সময়ে ব্লগার, কন্টেন্ট ম্যানেজার এবং যারা স্বল্প বাজেটে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চায় তাদের কাছে ওয়ার্ডপ্রেস বেশ জনপ্রিয়।
ওয়ার্ডপ্রেস বেশ সহজবোধ্য হবার কারণে সকলেই এদিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও এর বেশ কিছু অসাধারণ প্লাগিন, থিম এবং ফ্রি রিসোর্স রয়েছে বিধায় এর জন্য অতিরিক্ত অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়ে না। এজন্য দিন দিন ওয়ার্ডপ্রেসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তাই আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শিখে জব মার্কেটে নিজের আধিপত্য জানান দিতে পারেন। তবে অবশ্যই নিজেকে এই প্রতিযোগিতার যুগে জব মার্কেটের সাথে নিজেকে এগিয়ে রাখতে প্রথমে শিখে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আশা করি, আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে না।