কোন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস আপনার জন্য: আপওয়ার্ক নাকি ফাইভার?
Joyeta Banerjee
July 27, 2022
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে যাদের সামান্য ধারণা আছে তারা নিশ্চয়ই আপওয়ার্ক, ফাইভার ও ফ্রিল্যান্সার ডট কমের মতো জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস -গুলোর নাম শুনেছেন।
মার্কেটপ্লেস নামক এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর কল্যাণে প্রতিদিন লাখ লাখ স্কিল্ড মানুষ নিজ যোগ্যতায় কাজ পাচ্ছে ও স্বাবলম্বী হচ্ছে ।
এই ব্লগে আমরা মূলত আলোচনা করবো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) কি, আপওয়ার্ক ও fiverr এ কি কি কাজ পাওয়া যায়।
অন্যান্য কী কী ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে ও এই ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে কীভাবে নিজের মার্কেটিং করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) কি?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) বলতে কিছু অনলাইন ওয়েবসাইট বোঝায় যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড হতে পারেন।
একজন ফ্রিল্যান্সার নিজেদের কাজের স্যাম্পল দিয়ে প্রােফাইল তৈরি করেন, ক্লায়েন্টরা চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকেন।
এসব বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি কাজ পান।
যে কোনাে দেশ থেকে ক্লায়েন্ট পেমেন্ট করে দিতে পারেন এবং একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারেন।
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট -গুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্লায়েন্টরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজটি করানোর জন্য ঐ কাজটিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খোঁজ করে থাকেন।
অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য কোনো একজন ক্লায়েন্ট জব পোস্ট করে থাকেন।
সেই কাজটি করতে আগ্রহী বিশ্বের নানা দেশের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে থেকে তার কাজটি করার জন্য যোগ্য ফ্রিল্যান্সারকে খুঁজে তাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেন।
আবার অনেক সময় ক্লায়েন্টরা পোস্ট না দিয়ে এমনিই ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল ঘেঁটে তাদের কাজ দেন৷
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস -কে বলা চলে ক্লায়েন্ট ও ফ্রিল্যান্সারের মিলন মেলা।
নিচের ইনফোগ্রাফিকের মাধ্যমে পরিচিত হই, আমাদের বহুল পরিচিত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলাের সাথে।
ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রত্যেকে একটি বড় সময় নষ্ট হয় কোথায় শিখবে, কী শিখবে এসব ভেবে।
অথচ যদি শুরুতেই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট বা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রিসার্চ করা যায় তাহলে অনেক কম সময় ব্যয় হয়।
ঘরে বসে Freelancing কোর্সটি করে যা শিখবেন:
একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত গাইডলাইন।
আন্তজার্তিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (যেমন: Upwork, Fiverr) এ নিজের প্রোফাইল তৈরি এবং কাজ পাবার উপায়।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) প্লাটফর্মের মধ্যে রয়েছে :
আপওয়ার্ক (Upwork)
ফাইভার (Fiverr)
ফ্রিল্যান্সার ডট কম (Freelancer.com)
পিপল পার আওয়ার (People Per Hour)
নাইনটি নাইন ডিজাইনস (99designs)
গুরু ডটকম (Guru.com)
বিল্যান্সার (Belancer)
এছাড়াও আরাে অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস (Freelancing Marketplace) রয়েছে যেখানে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করেন।
প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মের কাজের ধরন আলাদা এবং একেক প্ল্যাটফর্মে কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররাও একেকরকম।
আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন, “আপু, আপনি আপওয়ার্ক -এ (Upwork) কেন কাজ করেন?”, “fiverr এ কি কি কাজ পাওয়া যায়?”, আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস -এ কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করবেন এবং যেটা আপনার কাছে সহজ লাগবে, সেই মার্কেটপ্লেস -এই কাজ করা দরকার আপনার।
আমার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার।
আমার আপওয়ার্ক ভালাে লাগে, তাই এখানেই কাজ করি।
আজকের এই ব্লগে আমরা মূলত আপওয়ার্ক ও ফাইভার -এর মতো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইট কিংবা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস ১: আপওয়ার্ক (Upwork)
প্রায় ১২ মিলিয়নেরও অধিক নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক।
এখানকার জব পোস্টিং ফিড অনেক দ্রুত আপডেট হয়।
মাইক্রোসফট, অটোম্যাটি, ড্রপবক্সের মতন বড় বড় প্রতিষ্ঠানও এখানকার ক্লায়েন্ট।
আপওয়ার্ক ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ের জন্যই একে অপরকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা সহজ করে দেয়।
প্রতিটি ফ্রিল্যান্সারকে প্রাথমিকভাবে তাদের পারিশ্রমিকের ২০% ফিও আপওয়ার্ক -এর সাথে ভাগ করে নিতে হয়।
একই ক্লায়েন্টের সাথে বারবার কাজ করলে সেই ফি হ্রাস পায়৷
আমার মতে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন প্ল্যাটফর্ম হলো আপওয়ার্ক এবং এখানে কাজ করার জন্য প্রফেশনালিজম খুব জরুরি।
একটি স্কিলের ৪০% জেনে আপনার মােটেও আপওয়ার্ক -এ কাজ করার জন্য প্রোফাইল বানানো উচিত হবে না।
এখানে কাজ করার আগে আপনাকে কয়েকটি ধাপ পার করতে হবে এবং সেই ধাপ পার করলেই আপনার এখানে প্রােফাইল করা ঠিক হবে।
আপওয়ার্ক -এ প্রােফাইল বানানাের আগে কী কী করতে হবে?
প্রােফাইল বানানাের আগে নিচের বক্সে থাকা ডিটেলসগুলাে আমাদের আছে কি না তা চেক করতে হবে:
হ্যাঁনাপাের্টফলিও আছে?ভােটার আইডি অথবা পাসপাের্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে? (ভেরিফিকেশনের জন্য)যে বিষয়ে কাজ চাইছি, সে কাজের সম্পর্কে ওভারভিউ লেখা আছে?
প্রোফাইল টাইটেল সিলেকশন হয়ে গেছে?প্রােফাইল পিকচার তোলা আছে?স্কিল সর্টিং করা আছে?
এই সব কিছু রেডি হলেই আপনি আপওয়ার্ক -এ প্রােফাইল বানানাের জন্য তৈরি।
সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার প্রােফাইল তারা অ্যাপ্রুভ করে দেবে ।
আপওয়ার্ক -এ কাজ করতে হলে আপনার প্রােফাইল অবশ্যই অ্যাপ্রুভড হতে হবে। না হলে আপনি কাজ করতে পারবেন না।
প্রোফাইল প্রফেশনাল না হলে অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রুভাল নাও পেতে পারে।
কারণ তাদের প্রােফাইলে প্রফেশনালিজম থাকে না। আপনি একজন প্রফেশনাল, এটি আপনার প্রােফাইল দেখে আমাকে বুঝতে হবে।
আপওয়ার্ক -এর কানেক্ট কী? কীভাবে ব্যবহার করবেন?
কানেক্ট হচ্ছে আপওয়ার্ক -এ আবেদন করার কারেন্সি।
যখন আপনি জবের জন্য অ্যাপ্লাই করবেন তখন এই কারেন্সি কেটে নেয়া হবে।
একদম শুরুতে আপনাকে ২০টি কানেক্ট পাবেন। কোনাে কোনো জবে আপনার ৬টি কানেক্ট প্রয়োজন হবে, আবার কোনাে জবে ৪ বা ২টি।
কিছু ক্ষেত্রে আপনি জবটি না পেলে আবেদনের কারেন্সি ফেরত দেয়া হয়।
কিন্তু আবেদন করার সময় অনেক সচেতন হয়ে আবেদন করা উচিত, যাতে আপনার সীমিত কারেন্সি নষ্ট না হয়।
তাছাড়া আপওয়ার্ক -এ এখন ডিরেক্ট কনট্যাক্ট অপশন আছে যার মাধ্যমে আপনি বাইরে থেকে ক্লায়েন্ট এনে কাজ নিয়ে সেই পেমেন্ট নিতে পারবেন।
এর জন্য আপনার হয়তাে ৩% অতিরিক্ত চার্জ প্রয়োজন হবে, কিন্তু আপওয়ার্ক -এর মাধ্যমে কাজ করলে আপনার পেমেন্ট নিরাপদ থাকবে।
আপওয়ার্ক -এ এখন বর্তমানে প্রত্যেক পেমেন্টের ২০% টাকা কেটে রাখে।
আপওয়ার্ক (Upwork) -এ কাজের ধরন:
এখানে আপনি ২ ধরনের জব করতে পারবেন:
আপওয়ার্ক -এ ঘণ্টা ভিত্তিক(Hourly)
কাজ:
যদি আপনি ঘণ্টা ভিত্তিক কাজ করেন তার মানে প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য আপনি পেমেন্ট পাবেন এবং এই পেমেন্ট ট্র্যাক করা হয় টাইম ট্র্যাকার দিয়ে।
টাইম ট্র্যাকার প্রতি ১৫ মিনিট পরপর স্ক্রিন ক্যাপচার করে এবং আপনি কাজ করছেন কি না তা ট্র্যাক করে।
এতে আপনার টাইপিং স্পিড এবং অ্যাকটিভিটি মনিটর করা যায়, যার দ্বারা আপনার কাজের গতি বুঝতে ক্লায়েন্টের সুবিধা হয়।
প্রতি রবিবার এই ট্র্যাকিং শেষ হয় এবং বুধবারের মধ্যে বিলিং হয়। আপনি পরবর্তী শুক্রবার টাকা তুলতে পারবেন।
আপওয়ার্ক -এ ফিক্সড প্রাইস (Fixed Price) কাজ:
ফিক্সড প্রজেক্টের জন্য আপনি নিজের সুবিধামতো কাজ করে থাকেন।
ক্লায়েন্ট আপনার জন্য মাইলস্টোন সেট করে দেবেন, সেই ডেডলাইন ধরে কাজ জমা দিতে হবে।
ফিক্সড প্রাইসের কাজে পেমেন্ট পেতে ১৪ দিন সময় লাগে যাতে ক্লায়েন্ট আপনার কাজ চেক করে বুঝে নিতে পারেন।