গুগল থেকে আয় করার ৬টি সহজ উপায়
গুগল থেকে আয় করার জন্য গুগলে চাকরি করতে হবে, বিষয়টি এমন নয়।
মানুষ আজকাল অনলাইন প্রিয়। প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়ে সবাই আমরা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল।
যে কোন কিছু জানার জন্য আমদের ভরসা এখন ইন্টারনেট।
গুগল হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি সেবাদান প্রতিষ্ঠান। গুগলের বিভিন্ন সেবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি ব্যবহৃত হয়, সেটি হলো গুগল সার্চ।
বেশি ব্যবহার হোক কিংবা কম ব্যবহার। আমাদের কথা হলো, আমরা কি এই গুগলকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করতে পারবো?
হ্যাঁ, আপনাদের জন্য আনন্দের সংবাদ হলো, গুগল থেকে আয় করার সহজ কিছু পদ্ধতি আছে।
যারা বাসায় বসে সময়কে কাজে লাগাতে চান, তারা অনায়াসেই গুগল থেকে আয় করতে পারেন।
আজ আমরা জানব কিভাবে গুগল থেকে আয় করা যায়। চলুন জেনে নিই।
গুগল থেকে আয়
০১. ইউটিউব থেকে টাকা আয় :
ভিডিও দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট হলো, ইউটিউব। এই ইউটিউব থেকেও টাকা আয় করা যায়।
ইউটিউবে সুন্দর সুন্দর ভিডিও আপলোড করে টাকা ইনকাম করা যায়। তবে, ভিডিও হতে হবে নিজস্ব। কোন প্রকার কপি করা যাবেনা।
এখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও শেয়ার করা যাবে। বিভিন্ন রান্নার ভিডিও, পড়াশুনা বিষয়ক ভিডিও, কোন অনলাইন কোর্স, শিক্ষামূলক কোন ভিডিও, ভ্রমন বিষয়ক কোন ভিডিও।
ভিডিও থেকে যেন মানুষ কিছু শিখতে পারে বা জানতে পারে বা ভিডিওটি যেন মানুষকে আনন্দ দেয়, এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া, ইউটিউবে নিজের পণ্যের ভিডিও তৈরি করে, সেখান থেকে প্রচার করতে পারেন এবং পণ্য বিক্রি করতে পারেন।
ইউটিউবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে বা বিভিন্ন স্পনসরশিপ নিয়ে ইনকাম করা যায়।
স্পনসরশিপ এ কাজ করলে, তখন গুগল থেকে আয় করার পাশাপাশি সেই কোম্পানি থেকেও একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ইনকাম হয়।
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য প্রথমে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে।
তারপর সেখানে আস্তে আস্তে ভিডিও আপলোড করতে হবে। ভিউয়ার্স বাড়ার সাথে সাথে ইনকাম ও বাড়বে।
০২. গুগল এডসেন্স থেকে টাকা আয়:
গুগল এডসেন্স হচ্ছে এক ধরনের মধ্যস্থতাকারী ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে বিভিন্ন এড দেখানো হয়ে থাকে।
ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে এই এড দেখানোর মাধ্যমে গুগল আমাদের টাকা দেয়।
গুগল এডসেন্স কীভাবে কাজ করে :
গুগল অ্যাডসেন্স বিভিন্ন কোম্পানির থেকে টাকার বিনিময়ে অ্যাড নেয়।
এখন কথা হলো, এই অ্যাড দেখাবে কোথায়? বাংলাদেশে টেলিভিশনে তো আর দেখানো সম্ভব না, তাই না?
তো, তারা এই অ্যাড যথাক্রমে ইউটিউব এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখায়।
আমাদের ওয়েবসাইটে যে অ্যাড দেখছেন। এটা কিন্তু গুগল থেকে দেখানো এড।
গুগল এডসেন্সে আয় কেমন :
আয় নির্ভর করে আপনার ভিজিটর বা ভিউ এর উপর।
গুগল অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইট মালিকদের দেয় ৬৮% এবং ইউটিউবারদের দেয় ৫১%।
ধরেন, একটা অ্যাড দেয়া কোম্পানির থেকে গুগল যদি ১০০ টাকা নেয় তাহলে, গুগল ৪৯ টাকা নিজে রেখে। ইউটিউবারকে বাকি টাকা দিয়ে দেয়।
আপনার ওয়েবসাইট, ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেলটি যখন পপুলার হয়ে যাবে, তখন আপনি সেখানে গুগল এডসেন্স যুক্ত করে দিবেন।
সেখানে গুগল তাদের এড দেখাবে। এই এড যখন কেউ দেখবে ও ক্লিক করবে তখন গুগল টাকা দিবে।
এর জন্য গুগল এডসেন্স এর ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেলটি যু্ক্ত করতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট পরিমান এমাউন্ট একাউন্টে জমা হলে এডসেন্স কোড ভেরিফাই করতে হবে। তারপর আস্তে আস্তে গুগল থেকে আয় হতে থাকবে।
০৩. ব্লগিং করে টাকা আয় :
ব্লগিং করে গুগল থেকে টাকা আয় করা যায়। আপনি যদি খুব ভালো ব্লগার হয়ে থাকেন তাহলে, এই সুযোগটি আপনার জন্য।
Blogger হলো গুগলের একটা সার্ভিস। ব্লগে বিভিন্ন লেখা দেয়ার মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়।
বিভিন্ন টপিক নিয়ে ব্লগে লেখা যায়। সেই টপিক সম্পর্কিত কিছু যখন মানুষ গুগলে সার্চ করবে, তখন আপনার লেখা সবাই দেখতে পাবে। এক্ষেত্রে, লেখার মান ভালো হতে হবে।
ব্লগিং বাংলা অথবা ইংলিশ দুটোই হতে পারে। যে কোন বিষয়ে লেখার জন্য আগেই সে বিষয়টি নিয়ে রিসার্চ করতে হবে।
লেখাটি যেন খুব সুন্দর হয় ও তথ্যবহুল হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একের অধিক ব্লগ থেকেও আপনি আয় করতে পারেন।
ব্লগিং করার জন্য আপনার যেসব যোগ্যতা থাকা লাগবে :
একটি ডোমেইন ও ওয়েবসাইট।
এসইও সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান।
নিজে লেখালিখি করা কিংবা অন্যকে দিয়ে লেখানোর মতো টাকা পয়সা।
ব্লগিং করে আয় করার জন্য আপনাকে blogger.com কম থেকে একটি ব্লগ খুলতে হবে।
অন্য জায়গা থেকেও খুলতে পারবেন। যাইহোক, তারপর ব্লগের জন্য সুন্দর একটি নাম বাছাই করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ডোমেইন নিতে হবে।
আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরি করতে না পারেন, তাহলে, Omar Faruk এই ওয়েব ডেভোলপারের নিকট থেকে কম খরচে তৈরি করে নিতে পারেন।
তারপর এই ব্লগ সাইট টি সাবমিট করতে হবে Google search Console এ। এরপর ব্লগে বিভিন্ন লেখালেখি শুরু করতে হবে।
আস্তে আস্তে ব্লগে কন্টন্টে ও ভিজিটর বাড়লে অ্যাডসেন্সে আবেদন করতে হবে। অ্যাডসেন্সে আবেদন করার পর শুরু হবে গুগল থেকে আয় করার পালা।
প্রতি মাসে যদি ১০০ ডলার হয়, তাহলে গুগল সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিবে।
০৪. গুগল এডমোব থেকে টাকা আয় :
এডমোব হলো এক ধরনের মোবাইল এডভারটাইজিং সার্ভিস।
এর কাজ হলো মোবাইলের বিভিন্ন এপসের মধ্যে এড দেখানো। বলতে পারেন গুগল অ্যাডসেন্সের মামাতো ভাই। গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ওয়েবসাইটে অ্যাড দেখানো হয়।
আর গুগল এডমোবের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপসে অ্যাড দেখানো হয়।
গুগল এডমোব থেকে কেমন আয় হয়?
Balloon Island – এই কোম্পানি সেই ২০১৬ সালেই অ্যাপ বানিয়ে প্রতিদিন ২০০০ ডলার গুগল থেকে আয় করেছে।
গুগল কোম্পানি নিজেই তাদের এই লেখাতে বিস্তারিত বলছে।
এরকম অসংখ্য নজির আছে, যা দেখাতে গেলে কয়েক হাজার পেজের বই হয়ে যাবে।
আপনি যদি কোন মোবাইল এপস তৈরি করে থাকেন তাহলে, সেখানে এড দেখিয়ে আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
মোবাইলে আমরা বিভিন্ন ধরনের এপস ডাউনলোড করে থাকি প্রতিনিয়ত।
এইসব এপস ব্যবহার করার সময় বিভিন্ন ধরনের এড দেখে থাকি। এই এড দেখানোর মাধ্যমেই এপস এর প্রতিষ্ঠাতা টাকা পেয়ে থাকেন।
তবে, এপস বানানোর পর অবশ্যই তা গুগল প্লে স্টোরে পাব্লিশ করতে হবে।
প্লে স্টোরে পাব্লিশ না করলে তা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে না।
মনে রাখতে হবে এপস যত বেশি মানুষ ব্যবহার করবে ইনকামও তত বেশি হবে।
এই কাজের জন্য প্রথমে এডমোব ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের একটি আইডি খুলতে হবে।
তারপর সেখানে নিজের তৈরি এপস টি দিয়ে প্লে স্টোর পাব্লিশ অপশন ওপেন করে এড অপশনটি ক্লিক করতে হবে।
০৫. গুগল এডওয়ার্ড থেকে টাকা আয় :
গুগল এডওয়ার্ড হলো এড দেয়ার একটি মাধ্যম। এটি এমন একটি এপ্লিকেশন যেখানে আপনি আপনার বিভিন্ন প্রোডাক্ট এর এড দেখাতে পারেন এবং এখান থেকে বিক্রি ও করতে পারেন।
এই এডওয়ার্ড এর মাধ্যমে বিজনেস পেইজ বা ওয়েবসাইটকে সবার সামনে নিয়ে আসা যায় এবং বিক্রি করা যায়।
তবে, এড দেখানোর জন্য কিছু পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হবে। অ্যাফিলিয়েট করা পণ্য এই এডওয়ার্ডের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন।
ধরুন, একটি পণ্যের দাম ২০,০০০ টাকা। এই পণ্যটি বিক্রি করলে আপনি পাবেন, ২,০০০ টাকা। তো, ১,০০০ টাকা এডওয়ার্ডে খরচ করলেও ক্ষতি কি?
গুগল এডওয়ার্ড থেকে টাকা আয় করতে হলে, প্রথমেই এডওয়ার্ড ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি একাউন্ট খুলতে হবে।
তারপর যেখানে এড দেখাতে হবে সেটি সিলেক্ট করে এডস অপশন চালু করতে হবে। এরপর এড দেখানোর মাধ্যমে গুগল থেকে আয় করা যাবে।
০৬. গুগল পে বা Gpay থেকে টাকা আয় :
গুগল পে হচ্ছে এক ধরনের পেমেন্ট এপস। এই এপস ব্যবহার করে অনলাইন পেমেন্ট করা যায়।
এই এপস ব্যবহার করার মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়। paypal, paytm এর মতো Gpay ও একটি এপস।
এখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়। সেই অফার মতো কাজ করলে টাকা আয় হয়।
এই এপস ব্যবহার করে মোবাইল রিচার্জ, ইলেকট্রিক বিল, ব্যালেন্স ট্রান্সফার সহ বিভিন্ন কাজ করা যাবে।
কটি নির্দিষ্ট পরিমান ব্যালেন্স ট্রান্সফার করে বিভিন্ন স্ক্র্যাচ কার্ড পাওয়া যায় যা অনেকটা লটারির মতো।
এখানে বন্ধুদের ইনভাইট করেও আয় করা যায়। ইনভাইট করলে কি পরিমান টাকা দেওয়া হবে, তা হোম পেইজে লিখা থাকবে।
আয় করার ধাপ সূমহ:
অ্যাপটি ইন্সটল করুন।
রেজিস্ট্রেশন করুন এবং আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করুন।
UPI PIN তৈরি হবে। এই পিনের মাধ্যমে পরবর্তীতে পেমেন্ট করতে পারবেন।
তারপর আপনার বন্ধুদের ইনভাইট করুন। ইনভাইট করার মাধ্যমে গুগল থেকে আয় করুন।
উপসংহার :
এই ছিল গুগল থেকে আয় করার ৬টি উপায়। বলে রাখা ভাল, ৬ নাম্বার পয়েন্টের কাজটি গুগলের উপর নির্ভর করে।
তারা যে কোন সময়ে তাদের অফার পরিবর্তন করতে পারে।
বাদ-বাকী অনান্য উপায়গুলোর মাধ্যমে বর্তমানে অনেকেই কোটি পতি হয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায় যে গুগলকে ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ভাবে আয় করতে পারি।
অকারণে সময় নষ্ট না করে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করলে আমরা ঘরে বসেই প্রতিনিয়ত কিছু টাকা আয় করতে পারব।