গুটি বসন্ত
গুটি বসন্ত – এক ভয়াবহ রোগ৷ ১৯৭৯ সালের আগে একাধিকবার মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল এই রোগ, যাতে মৃত্যু ছিল প্রায় অবধারিত ৷ প্রায় ৩৫ বছর পর, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা আবারো এই রোগের জীবাণু সন্ধান পেয়েছেন৷
সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি-এর প্রধান মার্কিন কংগ্রেসে ইহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ৷ আর সিডিসি পরিচালক টম ফ্রিডেন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এর নিরাপত্তা ও প্রতি- রোধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ৷
কিছু দিন পূর্বে মেরিল্যান্ডে ‘খাদ্য ও মাদক প্রশাসন’ এফডিএ-এর একটি গুদাম ঘর পরিষ্কারের সময় কর্মীরা কয়েকটি শিশি খুঁজে পান ৷ ঐ শিশি গুলোতে গুটি বসন্তের জীবাণু কথা লেখা ছিল ৷ শিশিতে লেখা তারিখ থেকে জানা গেছে যে, ৫০-এর দশকে সেই সব শিশিতে ঐ জীবানু রাখা হয়েছিল ৷
অনুবীক্ষণ যন্ত্রে গুটি বসন্তের জীবাণুছবি:
আটলান্টায় সিডিসি-র কেন্দ্রীয় গবেষণা- গারে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাখা হয়েছে শিশি গুলো ৷ সিডিসি জানায়, ‘‘আমাদের জানা মতে কোনো শিশি ভাঙেনি, তাই জীবানু ছড়িয়ে পড়ার ভয় নেই ৷”
এমনকি এখনো পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন কর্মী বা গবেষণাগারের কর্মীরা কেউ কোনো সংক্রমণের শিকার হননি বলেও জানান তারা ৷
বর্তমানে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা ৷ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নমুনা গুলো ধ্বংস করে ফেলা হবে বলে জানান তাঁরা ৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে ৷ নমুনা গুলো যাতে ঠিকমত ধ্বংস করা হয় তা তদারকি করবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি ৷
গুটি বসন্ত ১৯৭৯ সালে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিল ৷ সাধারণতঃ গুটি বসন্ত একজন মানুষের সমস্ত শরীরে হয় এবং ইহা শরীরে পুঁজ বা ক্ষত সৃষ্টি করে ৷
এর অসহ্য ব্যথা মানুষের সহ্যের প্রায় বাইরে চলে যায় ৷ এ রোগে মৃত্যুর হারও খুব বেশি৷
গুটি বসন্তের ‘জ্যান্ত ভাইরাস’
তবে গুটি বসন্তের ‘জ্যান্ত ভাইরাস’-এর যেসব নমুনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে সে গুলো পুরো পুরি ধ্বংস নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত৷
ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মারণ ব্যাধির একটি গুটি বসন্ত ৷ বিংশ শতকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩০ কোটির বেশি মানুষ ৷ এই ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে তাই বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৷
গুটি বসন্তের টিকার ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এই ভাইরাস নির্মূলও সম্ভব হয়৷ ৩০ বছরের বেশি সময় আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুটি বসন্ত পুরোপুরি নির্মূল করা হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণার তাগিদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার দু’টি ল্যাবরেটরিতে কিছু ভাইরাস জ্যান্ত নমুনা হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ৷
দাবি উঠেছে, এ সব জ্যান্ত নমুনাও পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়ার ৷ যাঁরা ধ্বংসের পক্ষে তাঁদের যুক্তি হচ্ছে যেহেতু এই রোগ আর পৃথিবীতে নেই , সেহেতু এ সবের নমুনা আর রাখার কোনো দরকার নেই ৷
অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল সদস্য দেশ এমনটা মনে করে না ৷ সংস্থাটির গুটি বসন্ত কর্মসূচির প্রধান ড. আলেজান্ড্রো কোস্টা বলেন, ‘‘নমুনা ধ্বংস নিয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে৷”
গুটি বসন্তের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩০ কোটির বেশি মানুষছবি: Getty Images
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার যে ল্যাবরেটরিতে গুটি বসন্তের নমুনা রয়েছে, সেই ল্যাবরেটরির প্রধান ড. ইঙ্গার ডেমন মনে করেন, গুটি বসন্ত নিয়ে গবেষণায় এখনো কিছু ফাঁক রয়ে গেছে ৷ একটি সায়েন্স জার্নালে এই বিষয়ে মন্তব্য প্রতিবেদনও লিখেছেন ড. ডেমন ৷
তিনি চান, গবেষণার স্বার্থে গুটি বসন্তের জ্যান্ত নমুনা আরো কিছুকাল সংরক্ষণ করা হোক৷ গবেষকদের আরেকটি শঙ্কা হচ্ছে, ভবিষ্যতে জীবানু অস্ত্র হিসেবেও গুটিবসন্ত ব্যবহার হতে পারে ৷ কেননা গত শতকের সত্তরের দেশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এ রকম অস্ত্র তৈরি করেছিল ৷
১৯৯০-এর দশকে আবার সে সব ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে তখন ৷ কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার সময় এ সব অস্ত্র যে কিছুটা হলেও বেহাত হয়নি সে নিশ্চয়তা পুরো পুরি কেউ দিতে পারছে না ৷
গুটি বসন্তের জীবন্ত নমুনা ধ্বংসের বিষয়টি তাই এখনো এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয় ৷