গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়

সাধারণত: গ্রাফিক্স ডিজাইনিং আমরা যারা প্রথম অবস্থায় শিখতে চাই তাদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠে। কেননা কাজটি বাইরের দিক থেকে সহজ মনে হলেও অতটা সহজ কিন্তু নয়।

এ ক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট চালনায় দক্ষতা থাকার পাশাপাশি থাকতে হবে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে পরিপূর্ণ গাইডলাইন৷

আর আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সম্পর্কিত গাইডলাইন প্রদান করার উদেশ্যেই তৈরি করা হচ্ছে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?

মার্কেটিং কিংবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে চিত্র দ্বারা নকশা তৈরি করাই হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং।

জার্মান থেকে আসা এই শব্দটি বর্তমানে কম্পিউটার সফ্টওয়্যার এর মাধ্যমে কল্পনা, তথ্য এবং গ্রাহকদের ধারণা গুলির সাথে যোগাযোগ করার জন্য দৃশ্যমান ডিজিটাল ডিজাইন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরে দক্ষ হতে হলে প্রয়োজন পড়ে নিজের আইডিয়া, কর্ম দক্ষতা এবং ইউনিক কিছু ডিজাইন, সহজ কিন্তু সিক্রেট কিছু টিপসের।

যার সাহায্যে ইজিলি যে কেউ ডিজাইনিং সেক্টরে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিতে পারে। যা আপনার পেশার মূল্যবোধকে পূর্বের চাইতে আরো দ্বিগুণ করে দিতে সক্ষম।

এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরে আবার কাজেরও কিন্তু শেষ নেই। ফটো এডিটিং, লোগো ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডিজাইন, ওয়েবসাইটের ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে কি করা যায়?

সোজা কথায় গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখে ভালো পরিমাণের ইনকাম জেনারেট করা যায়। বিভিন্ন গ্রাফিকাল কাজ করে অনেক কোম্পানিতে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরে জব করা যায়।

নিজের ক্রিয়েটিভিটিকে প্রফেশনে বদলে দিতে হলে আপনার প্রথম পছন্দ হতে পারে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং নামক জনপ্রিয় সেক্টরটি।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি চাইলে খবরের কাগজ এবং টেলিভিশনেও জব করতে পারেন। কেননা এসব মিডিয়াতে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর চাহিদা অনেকাংশে বেড়েছে।

সুতরাং গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি যাদের আগ্রহের কমতি নেই তাদের একে বারেই জব নিয়ে ভাবতে হবে না। যেহেতু সময়টা ডিজিটাল সময়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে সেহেতু গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কাজের চাহিদা যেমন কমবে না তেমন গ্রাফিক্স ডিজাইনারেরও চাহিদা কমবে না।

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কত প্রকার?

গ্রাফিক্স ডিজাইনের একক কোনো প্রকারভেদ নেই। প্রিন্ট এবং ওয়েব ডিজাইন থেকে শুরু করে অ্যানিমেশন এবং মোশন গ্রাফিক্সসহ অনেক ধরণের হতে পারে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং।

আজকাল গ্রাফিক্স ডিজাইনিং আর ম্যাগাজিন, মুভি পোস্টার এবং বিজ্ঞাপনগুলির মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। প্রধানতভাবে এই গ্রাফিক্স সাধারণ দুই ধরণের হয়ে থাকে।

এগুলি হলোঃ-

মোশান গ্রাফিক্স ,

স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স।

মোশান গ্রাফিক্স :

মোশন গ্রাফিক্স হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটা সাবসেট। এক ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর Element গুলোকে অনেক সময় Animation এর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বলে সেই গ্রাফিক্স ডিজাইনিংকে মোশন গ্রাফিক্স বলা হয়।

মোশন গ্রাফিক্স শেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট হলো Adobe after-effects introduction, Tools intro on AE, Composition, What are effects and a green screen example,Typography animation in 3d space, Title fx with a camera, 3d text and 3d Rotation এবং How to export video and image। যা আপনাকে মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করতে হলে শিখতেই হবে।

স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স :

2D কোন ইমেজ বা ছবি ডিজাইনকে বুঝানো হয় এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করাকে। যে কোনো ধরণের ইমেজ কাগজে প্রিন্ট করলেও যখন ডিজাইনটি নিজ থেকে নড়াচড়া করার ক্ষমতা রাখে না সেই ডিজাইনকে স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনিং বলা হয়।

পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ফেস্টুন ডিজাইন ইত্যাদি হলো এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সবচেয়ে সেরা উদাহরণ।

আজকাল বিভিন্ন প্রোগ্রামে এই স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন প্রোগ্রামে পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, ফেস্টুনসহ বিভিন্ন স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের প্রয়োজন পড়ে।

এদিক দিয়ে একজন স্টিল ইমেজ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের চাহিদা সব সময়ই বহাল তবিয়তে থাকবে!

গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট কি কি?

অনলাইনে ডিজাইনারের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলার ফলে আজকাল গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার বিভিন্ন ওয়েবসাইট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অনলাইনে ভালো মানের ডিজাইনারদের খুঁজে পেতে বিভিন্ন বাজেট নিয়ে মাঠে নামে বায়ারেরা। এ ক্ষেত্রে বায়ার এবং সেলারের মাঝে মিডিয়া হিসেবে কাজ করে কিছু অনলাইন মার্কেটপ্লেস।

চলুন এই পর্বে জেনে নিই কয়েকটি গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট সম্পর্কে।

পিএসডি টুটস :

কেউ যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং রিলেটেড ফটোশপ ভিত্তিক সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট খুঁজে থাকেন তবে পিএসডি টুটস হতে পারে আপনার কাজের সেরা মার্কেটপ্লেস।

সম্পূর্ণ ওয়েবসাইটটি ফটোশপ রিলেটেড সেলার এবং বায়ারের জন্য পারফেক্ট বলে আমি মনে করি।

সিক্স রিভিশনস :

সিক্স রিভিশনস হলো আরেকটি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং রিলেটেড অনলাইন মার্কেটপ্লেস। স্ম্যাশিং ম্যাগাজিনের মতই এই ওয়েবসাইটটি মূলত স্ম্যাশিং নেটওয়ার্কেরই আওতাভুক্ত একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস।

ফটোশপ স্টার :

ফটোশপ রিলেটেড এই ফটোশপ স্টার অনলাইন মার্কেটপ্লেসটি অনেক আগের৷ ১৭ বছর ধরে সফল ভাবে কাজ করে আসা এই অনলাইন মার্কেটপ্লেসটি ডিজাইনাদের জন্য গুরুত্ব পূর্ণ অনেক কিছু দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে।

আপাতত এই কয়েকটি মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে একজন নতুন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনার জেনে রাখা উচিত। কেননা এসব মার্কেটপ্লেস নতুনদের জন্য অনেক হেল্পফুল।

কিভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখব?

অনলাইন জগতের এক বিশাল সম্ভাবনাময় ভান্ডার হয়ে উঠা আপনি চাইলে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শিখেও আর্ন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে জানতে হবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কিভাবে শিখতে হয়।

তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম এবং সাধনা করার মন-মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। চলুন জেনে নিই কিভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা যায় বা গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখার ধাপগুলি কি কি!

স্কেচ :

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং শেখার প্রথম ধাপ স্কেচ সম্পর্কে ধারণা রাখা। যারা ড্রয়িং পারেন না তারা যদি চেষ্টা করেন এবং প্রচুর পরিমাণ প্র্যাকটিস করেন তাহলে স্কেচ বিষয়টিকে বেশ ভালোভাবেই আয়ত্ত করে ফেলতে পারবেন। কয়েকজনের ড্রয়িং ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিজেই আঁকার চেষ্টা করুন।

ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা :

কোম্পানির ব্র্যান্ড সম্পর্কে ধারণা না রেখে সেই কোম্পানির জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইনিং করাটা বোকামি এবং কঠিন, অর্থহীন।

টেকনিক্যালি ক্লাইন্ট এবং তার আইডিয়া এবং পছন্দ জেনে নিয়ে তবেই ডিজাইনিংয়ের কাজ শুরু করতে পারেন।

মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে করবো?

অনলাইন ইনকাম জগতের অন্যতম এই গ্রাফিক্স ডিজাইনিং আপনি চাইলে হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়েও করতে পারেন।

এ ক্ষেত্রে আপনি Canva -Graphics Design অ্যাপের সাহায্য নিতে পারেন। নানান প্রফেশনাল ডিজাইন করতে এই অ্যাপটির ব্যবহার মোবাইলের সাহায্যেই করা যায়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কতদিন লাগবে?

গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে কতদিন সময় লাগে সেটি কেউই সঠিকভাবে বলতে পারবে না। কেননা একেক জনের নতুন কিছু ক্যাচ করার ক্ষমতা একেক রকম।

তবে বর্তমানে বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টার সাধারণত 3 মাস, 6 মাস এবং 12 মাসের কোর্সের আয়োজন করে থাকে।

সুতরাং গ্রাফিক্স ডিজাইনের কোর্স সমাপ্ত করতে ৩ মাসে লো লেভেল, ৬ মাসে মিডিয়াম লেভেল এবং ১২ মাসে এডভান্স লেভেলের ব্যাপারটিকে ধরে নিতে পারেন।

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায়?

গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায় তা নির্ভর করবে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরের কোন কোনো সাব-সেক্টরে কাজ করছেন সেটার উপর।

তবে দক্ষতা অনুযায়ী একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি প্রতিমাসে বাংলাদেশের রেইট অনুযায়ী ৪০+ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেস গুলোতে কাজের পরিমাণ বেশি থাকলে ইনকামও বেশি আসবে।

ইতি কথা:

বর্তমানে আমরা যেহেতু ডিজিটাল যুগে বসবাস করছি সেহেতু আমাদের উচিত আমাদের ইনকাম সোর্সটাকেও কিছুটা মডিফাইড করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা।

কেননা এই সেক্টরের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে। সেদিক দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কিন্তু কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *