চুল ভালো রাখার উপায়
চুল পড়া নারীদের একটি অস্বস্তিকর সমস্যা।
পুরুষের যেভাবে টাক পড়ে সেভাবে চুল না ঝরে পড়লেও নারীর চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
আমাদের সমাজে মেয়েদের সুন্দরী বা সুশ্রী বলা হয় না সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল না হলে ।
অল্প বয়সে চুল না ঝরে পড়লেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়ে যাওয়ার সম্মুখীন হন নারীরা।
মেয়েদের চুল পড়তে পারে নানা কারণে ।
হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল পড়া একটি প্রধান সমস্যা।
থাইরয়েড হরমোনের তারতম্যের কারণে চুল পড়ে। এ ছাড়া চুল পড়তে পারে ইস্ট্রো – জেনের কারণেও ।
তবে হরমোন জনিত সমস্যায় চিকিৎসা করালে চুল পড়া বন্ধ হয়।
সন্তান জন্ম দানঃ
সন্তান জন্ম দানের পর তিন মাস নারীর প্রচুর চুল পড়তে পারে। হরমোনের কারণেই এটিও হয়ে থাকে।
তবে প্রাকৃতিক ভাবেই চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায় হরমোন সঠিক মাত্রায় চলে আসার
পর ।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন চুল পড়ে খুব বেশি পাতলা হয়ে গেলে ।
রজঃ নিবৃত্তিঃ
মহিলারা চুলের সমস্যায় বেশি ভোগেন মাসিক বন্ধ হওয়ার পর ।
এ সময় চুল বেশি মাত্রায় ঝরে পড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ মহিলার ।
এ ছাড়া চুল পড়তে পারে হরমোন থেরাপি নেয়ার কারণেও । নানা ধরনের অসুস্থতার পরও চুল ঝরে যেতে পারে।
তবে যে কারণেই চুল ঝরে পড়ুক তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় চুলের নানা ফ্যাশন যেমন রিবন্ডিং, স্ট্রেইট ;
পার্ম, ডাই, ব্লোয়ার ড্রাই ইত্যাদি করার কারণে চুল ঝরে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে প্রয়োজন সতর্ক থাকা । এ জন্য অনেকে কম খান কিংবা পুষ্টিকর খাবার খান না নিজে থেকে ওজন কমানোর জন্য ।
এতে করেও চুলের ক্ষতি হয়।চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ওজন কমাতে খাওয়া বন্ধ না করে ।
নানা কারণ রয়েছে অল্প বয়সে টাক পড়ারঃ
পুরুষের জন্য এন্ডোজেনিক অ্যালোপেসিয়া শুরু হয় কপালের দু’পাশে রগের কাছে।
তারপর ক্রমেই তা বাড়তে বাড়তে সামনে ও চাঁদিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এটা পুরুষ সেক্স হরমোন টেসটোসটেরন জেনেটিক প্রভাবের কারণে হয়।
চুলের বৃদ্ধি অনেকাংশে টেসটোসটেরনের ওপর নির্ভরশীল।
চুলের গোড়ায় কিছু রিসেপ্টার থাকে যারা এ হরমোনের উপস্থিতিতে চুলের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে।
ফলে একই মাত্রায় হরমোন থাকা সত্ত্বেও চুলের তারতম্য হয়।
এ জন্যই পুরুষের ক্ষেত্রে বয়ো সন্ধিকালে সামনের চুল পড়ে যেতে থাকে।
অবশ্য চুল পড়ার জন্য থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, রক্তস্বল্পতা, ওভারির অসুখ, বা অন্য কোনও এন্ডোক্রাইন অসুখও থাকতে পারে।
বর্তমানে চুল পড়া বা টাকের আধুনিক চিকিৎসা এসেছে।
বাজারে প্রচলিত শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনে মোহিত না হয়ে অল্প বয়সে চুল পড়া শুরু হলে ;
সঠিক চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন চিকিৎস – কের শরণাপন্ন হয়ে ।
ত্বক ও চুলের ক্ষতি হচ্ছে রূপচর্চার নামে নানা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করার জন্য ।
পরিবেশ দূষণ, বিভিন্ন কেমিক্যালের ক্ষার ও ইনসেকটিসাইড ব্যবহার ;
পানি দূষণ, বায়ু দূষণ ইত্যাদিও পরোক্ষ ভাবে চুল পড়ার জন্য দায়ী।
আধুনিক জীবন যাত্রা স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর প্রতিকার আছে।
এ চুল পড়া রোধে সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ১ বিলিয়নেরও বেশি ডলার খরচ হয়।
নানা উপায়ে আমরা চুল পড়া রোধ করতে চাই। অনেক রকমের ইনফেকশন, বিভিন্ন রোগ ;
ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের বিভিন্নতার কারণে সাধারণতঃ চুল পড়ে যায়।
কিন্তু গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন যে , ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত।
বাবা কিংবা মা অথবা দু’জনের কাছ থেকে আগত জিনই নির্ধারণ করে দেয় কখন আমাদের চুল পড়বে।
এ অবস্থাকে বলা হয় অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া এবং অ্যানড্রোজেন ;
অর্থাৎ পুরুষদের হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী।গবেষকরা বিশ্বাস করেন ;
চুল পড়ার জন্য চুলের গোড়ার বা ফলিকলে একটি এনজাইম তৈরি হয়, যার নাম ফাইভ আলফা রিডাকটেজ।
এ এনজাইম রক্তে বাহিত হরমোন টেসটোস- টেরনকে ডাই হাইড্রোটেসটোটেরনে পরিণত করে।
যার আরেক নাম ডিএইচটি। ডিএইচটি চুলের গোড়ায় আক্রমণ চালায় এবং চুল দুর্বল করে ঝরে পড়তে সাহায্য করে।
পুরুষের চুল সাধারণতঃ সামনের দিকে পড়ে এবং টাকে পরিণত হয়।
আর মহিলাদের পুরো মাথার চুলই একক ভাবে পড়ে এবং পাতলা হয়ে যায়।
মহিলাদের শরীরে অ্যারোমাটেজ নামে এক ধরনের এনজাইম তৈরি হয় যা ডিএইচটিকে ইস্ট্রোজেনে পরিণত করে।
এতে কিছু হলেও মহিলাদের চুল রক্ষা পায়। চুল পড়ার রাসায়নিক কারণ খুবই জটিল।
চুল পড়া রোধে এবং নতুন চুল গজানোর জন্য মাথায় অনেক সময় নানা রকম ;
ভিটামিন ও ভেষজ নির্যাস যুক্ত তেল দেয়া হয়। এ ছাড়া ড্রাকোনিয়ান পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়।
এ পদ্ধতিতে চুলের গোড়ায় মৃদু ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়।
এতে আবার চুল গজাতে শুরু করে। কিছু কিছু শ্যাম্পু ও জেল ব্যহারে চুল ঘন দেখায়।
নানা ভেষজ গুণ সম্পন্ন এসব দ্রব্য চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে।
চুলের জন্য ব্যয় বহুল চিকিৎসা গ্রহণের আগেই চুলের যত্নের ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।
প্রতি এক দিন অন্তর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলা দরকার। অবশ্যই সেই শ্যাম্পু দিয়ে যা আপনার চুলের জন্য উপযোগী।
বন্ধু-বান্ধবের কথায় বা চটকদার বিজ্ঞাপনে মুগ্ধ না হয়ে নিজের উপযোগী শ্যাম্পু নিজের পছন্দ করাই ভালো।
গবেষকরা জানান, ঘন ঘন শ্যাম্পু করার ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা সাবান ও তৈলাক্ত পদার্থের মাধ্যমে ডিএইচটি ধুয়ে যায়।
আগেই বলা হয়েছে, চুল ঝরে পড়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে ডিএইচটি ।
আবার এভাবে চুল ধোয়ার পর প্রথম দিকে আপনার মনে হতে পারে, চুল বোধ হয় আগের তুলনায় বেশি ঝরে যাচ্ছে।
কিন্তু না, শুধু সেই চুল গুলো ঝরে যাচ্ছে, যার গোড়া আলগা হয়ে আছে এবং দুই-এক দিনের মধ্যেই ঝরে পড়ত।
চুল বেশি পড়তে পারে ভেজা চুল বেশি আঁচড়ানো এবং ঘষাঘষির কারণেও । এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া প্রয়োজন ।
চুলের স্বাস্থ্যের সঙ্গে শরীর ও মনের স্বাস্থ্যও অনেকাংশে জড়িত।
আপনার চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে আপনি কেমন খাবার গ্রহণ করেছন, তার ওপরে ।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমাণ মতো শাক সবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে।
অর্থাৎ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত ডায়েট কন্ট্রোল চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
এ ক্ষেত্রে নিউট্রিশনিস্ট কিংবা ডায়েটি – শিয়ানের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া মানসিক চাপ এবং অন্যান্য ওষুধ গ্রহণের ফলে চুল ঝরে যাচ্ছে কি না ;
এ ব্যাপারে লক্ষ্য রেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া উচিত।