চোখের সাদা অংশটিতে রক্ত

সাদা অংশে রক্তের ছোপ সাধারণতঃ ক্ষতি করে না। কোন ভারী কিছু উঠানোর পর জোরে কাশি দিলে, বা চোখে সামান্য আঘাত লাগলে মাঝে মাঝেই চোখের সাদা অংশে রক্ত দেখা যায়। 

ইহা ছোট রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণে ঘটে থাকে। একটি কালশিটে দাগ যেমন কোন ক্ষতি করে না, ঠিক তেমন ইহাও কোন ক্ষতি করে না এবং ২ সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজেই চলে যাবে। কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

যদিও, চোখের রঙিন অংশটিতে যদি রক্ত থাকে (কনীনিকায়) তবে তা সঙ্কট জনক।

শুষ্ক চোখ এবং খর খরে চোখের পাতাঃ

শুষ্ক জল বায়ু, বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া, বায়ুতে ধূয়া, এবং কোন কোন ঔষধের কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের পাতা খর খরে হয় যদি ময়লা বা চোখ থেকে নিংসৃত রস আদ্রতা ও অশ্রু বের হওয়া রোধ করে একে শুষ্ক করে ও চুলকানির সৃষ্টি করে। 

ব্যক্তিটির হয়তো চোখের পাতার সংক্রামণ হতে পারে (নীচে দেখুন) বা চোখের পাতা

খর খরে হতে পারে বা এর উপর দিয়ে খুশকির মতো আশ উঠতে পারে। 

চোখের পাতা এবং চোখের চার পাশে মুখ যদি পরিষ্কার থাকে তবে অশ্রু ও চোখের 

স্বাভাবিক আদ্রতা এ গুলোকে স্বাস্থ্য বান রাখতে পারে।

চিকিৎসাঃ

শুষ্ক চোখের জন্য, আপনার চোখকে বিশ্রাম দেবার জন্য মাঝে মাঝেই বন্ধ রাখুন।

আপনার চোখ গুলো যদি শুষ্ক থাকে তবে আপনি চোখের স্বাভাবিক আদ্রতা বৃদ্ধি করতে দিনে ১ থেকে ২ বার ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য গরম ভাপ দেবার চেষ্টা করতে পারেন। 

পিচ্ছিল চোখের ড্রপও সাহায্য করতে পারে 

খরখরে চোখের পাতার জন্য দিনে ২ থেকে ৪ বার গরম ভাপ দিন ও তার পর ধীরে ধীরে চোখের পাতা ধৌত করুন। 

এতে যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে হয়তো এটি কোন ব্যাক্টেরিয়া জনিত সংক্রামণ হতে পারে এবং আপনি দিনে ২ বার করে  ৭ দিনের জন্য  এরিথ্রোমাইসিন জীবাণুনাশক চোখের মলম ব্যবহার করতে পারেন।

চোখের পাতার উপর গোটা ও ফুলে ওঠাঃ

চোখের পাতার উপর একটি লাল হয়ে ফুলে ওঠা গোটা সাধারণতঃ  হয় —

একটি আঞ্জনি হবে, যা চোখের পাপড়ির চার পাশের সংক্রামণের কারণে সৃষ্টি হয়েছে; 

নতুবা একটি তেলাঙ্গি হবে, যা হয়তো চোখের পাতার ভিতরে কিছু আটকে থাকার কারণে সৃষ্টি হওয়া একটি বেদনাহীন গোটা।

কোন কোন সময় একটি পাপড়ির চারপাশে শুরু হওয়া সংক্রামণ চোখের পাতার

ভিতরের দিক পর্যন্ত ছড়াতে পারে। দিনে ৪ বার করে প্রতি বার ১৫ বা ২০ মিনিট গরম সেক দেয়ার মাধ্যমে উভয়েরই চিকিৎসা করা যায়। 

ব্যবহার করার সময় কাপড়টিকে বেশ কয়েক বার পুনরায় এমন ভাবে গরম করুন, 

যাতে ইহাকে পোড়া না লাগিয়ে যত খানি সম্ভব গরম রাখা যায়। 

এই গোটা টিকে চাপ দেবেন না বা ফুটো করবেন না তাহলে সমস্যাটি আরও খারাপ আকার ধারণ করবে।

ফোলা যদি কয়েক দিনের মধ্যে কমে না যায় তবে চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করুন।

চোখের পাপড়ির চার পাশে সৃষ্ট বেদনা দায়ক একটি সংক্রামণ হচ্ছে আঞ্জনি।

চোখের পাতার নীচে বেদনাহীন গোটা হয়তো একটি তেলাঙ্গি হতে পারে।

ফ্লোটার্স (ছোট ছোট দাগ দেখা):

উজ্জ্বল পৃষ্ঠের দিকে (যেমন মেঝে বা আকাশ) তাকালে মাঝে মাঝে ফ্লোটার্স বা ছোট ছোট চলমান দাগ দেখা যায়। চোখ সরলে দাগ গুলোও সরতে থাকে এবং ছোট মাছির মতো দেখায়। এই দাগগুলো সচরাচর দেখা যায় এবং সাধারণতঃ কোন ক্ষতি করে না।

যদি হঠাৎ করে অনেক সংখ্যক ফ্লোটার্স দেখা যায় এবং এক চোখের দৃষ্টি হানি হতে থাকে বা আপনি আলোর ঝলকানি দেখতে থাকেন ইহা হয়তো বিছিন্ন অক্ষিপট নামের একটি অবস্থার একটি লক্ষণ হতে পারে। 

অক্ষিপট পুনরায় সংযুক্ত করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চক্ষু হাসপাতালে একটি অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হবে। ভিটামিন এ ঘাটতি (রাত কানা,যেরো- পথালমিয়া) ভিটামিন এ-এর অভাবে এক ধরনের অপুষ্টি যা শিশুদের চোখের ক্ষতি করে অন্ধত্ব ঘটাতে পারে। ইহা প্রতিরোধ- যোগ্য। ছোট শিশুদের চোখ রক্ষা করতে তারা যেন কমলা লেবু, গাজর,আম, এবং পেপে, এবং সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, মাছ, এবং ডিমের মতো ভিটামিন এ যুক্ত খাবার খায় তা নিশ্চিত করুন। বুকের দুধ খাওয়ানো শিশুর চোখকে ভিটামিন এ- এর ঘাটতি থেকে  রক্ষা করার সাথে সাথে শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অন্যান্য অনেক সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেখানে এই ধরনের অপুষ্টি সচরাচর দেখা যায় । সেখানে মাঝে মাঝে সকল শিশুদেরকে প্রতি ৬ মাস পরপর ভিটামিন এ সম্পূরক খাওয়ান। 

চিহ্নঃ

প্রথমে চোখ গুলো শুকনো হয়ে ওঠে এবং কম পরিমাণে অশ্রু সৃষ্টি করে। তার পর অল্প আলোয় দেখা আরও বেশী কঠিন হয়। 

চোখের সাদা অংশটি এর ঔজ্জ্বল্য হারায় এবং কুচকাতে শুরু করে। পরিশেষে চোখ গুলো আরও বেশী ক্ষতি গ্রস্ত হয় এবং শিশুটি হয়তো অন্ধ হয়েও যেতে পারে।

চিকিৎসাঃ

যদি একটি শিশু বিকেল বেলায় ভাল করে দেখতে না পায় বা শিশুটির হাম হয়, তবে শিশু টিকে ভিটামিন এ খাওয়ান।

ট্যারা চোখ (স্ট্রাবিমাস):

যদি একটি কোলের শিশু বা একটি বাড়ন্ত শিশু সোজা ভাবে না তাকায় তবে এই অবস্থা থেকে ট্যারা চোখের দৃষ্টিহানি ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। শিশুটিকে একটি চোখ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। ইহা কোন জরুরী অবস্থা নয়, তবে শিশুটির যত ছোট অবস্থাতে সম্ভব ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত যাতে সে তার দৃষ্টি সংশোধন করার সব থেকে ভাল সুযোগ পায়।

চিকিৎসাঃ

চোখের ডাক্তার হয়তো ট্যারা চোখটির ভাল ভাবে কাজ করার জন্য ভাল চোখ টিকে

ঢেকে দিতে পারে বা সাহায্যের জন্য বিশেষ চশমার ব্যবস্থা পত্র দিতে পারে। একটি অস্ত্রো পচার চোখটিকে সোজা করতে পারে কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই তার প্রয়োজন হয় না।

কোন কোন সময় ভাল চোখ টিকে পট্টি দিয়ে বেঁধে দিলে ট্যারা চোখটি সোজা হয়ে যেতে পারে এবং তা দিয়ে আরও ভাল দেখা যেতে পারে। কোন কোন শিশুর এই পট্টিটি দিনে কয়েক ঘন্টার জন্য লাগতে পারে এবং কোন কোন শিশুর ইহা সারা দিন পরে থাকতে হতে পারে।

গর্ভধারণ ও দৃষ্টিঃ

হরমোন পরিবর্তনের কারণে একজন নারীর দৃষ্টি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে কিন্তু সাধারণতঃ সন্তান জন্মানোর পর তার দৃষ্টি আগে যা ছিল আবারও সেই অবস্থাতেই ফিরে  যায়।

গর্ভবতী নারী যার দৃষ্টি হঠাৎ করেই ঝাপসা হয়ে গেছে বিভিন্ন দাগ দেখতে পায়, এক চোখে দৃষ্টি হানি হয়েছে, বা দ্বৈত দৃষ্টি হানি দেখা দিয়েছে, তার হয়তো প্রি-একলাম শিয়ার মতো একটি সঙ্কটা পূর্ণ অবস্থার বিপদ চিহ্ন গুলো দেখা দিতে শুরু করেছে। 

প্রি-একলাম শিয়ার কারণে মাথা ব্যথা ও উচ্চ-রক্ত চাপও (১৪০/৯০ বা তার বেশী) দেখা দেয়। ততক্ষণাৎ সাহায্য গ্রহণ করুন।  গর্ভবতী নারীদের গনোরিয়া ও ক্ল্যামেডিয়া পরীক্ষা করতে এবং যদি প্রয়োজন হয় তবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে সাহায্য করুন। 

নারীরা নিজেদের অজান্তেই এই দু’ধরনের অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত হতে পারে যা যৌন ক্রিয়ার সময় বাহিত হয়। এই জীবাণু গুলো যদি জন্মের সময় শিশুর চোখে ছড়িয়ে যায় তবে শিশুটির দৃষ্টি হানি হতে পারে।

গর্ভবতী নারীদেরকে রুবেলা ও জিকা থেকে সুরক্ষা করুন এই অসুস্থ্যতা গুলো শিশুদের চোখের সঙ্কট জনক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

রুবেলা (জার্মান হাম) টীকা দ্বারা রোধ করা যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *