জেনে নিন লিভার সিরোসিস থেকে বাঁচার উপায়ঃ
রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানীয়, মাড়াই আখের রস, ব্যবহার হওয়া বরফ, শরবত, কেটে রাখা ফল ফলারির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ এবং ই-এর সংক্রমণ হয়।
লিভার সিরোসিসে যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে ছোট ছোট গুটি দানা বাঁধে। ক্রমে যকৃৎ স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। বাংলাদেশে লিভার সিরোসিসের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি এবং সি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন অ্যালকোহল গ্রহণ, যকৃতে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি, অতিরিক্ত আয়রন, কপার জমে যাওয়া এবং কিছু অটোইমিউন রোগের (দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে সৃষ্ট) কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত সবার ক্ষেত্রে শুরুতে তেমন উপসর্গ থাকে না। পেটের আল্ট্রাসাউন্ড কিংবা পেটে অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে হঠাৎ এ রোগ নির্ণয় হয় কারও কারও। কোনো কোনো রোগীর শারীরিক দুর্বলতা, অবসাদ, অরুচি, পেটে অস্বস্তি, ওজন কমে যাওয়া, পায়ের পেশিতে অস্বস্তি বা ক্রাম্পের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শারীরিক পরীক্ষায় যকৃৎ এবং কখনো কখনো প্লীহা বড় পাওয়া যায়। লিভার সিরোসিস থেকে লিভার ফেইলিউর হলে পেটে, পায়ে পানি আসে, চোখ ও প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। অনেকের কথা বার্তায় অসংলগ্নতা, অস্বাভাবিক আচরণ, এমনকি চেতনা হারানোর মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। লিভার সিরোসিস থেকে যকৃতের ক্যানসারের ঝুঁকিও কম নয়।
সিরোসিস মানেই কি মৃত্যু?
লিভার সিরোসিস হলেই যে রোগীর মৃত্যু হবে, তা কিন্তু নয়। এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে এবং এর সব কটি বাংলাদেশেই সম্ভব। হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধে রয়েছে কার্যকর ভ্যাকসিন। জন্মের পর পর কিংবা ইপিআই শিডিউলে বাচ্চাদের হেপাটাইটিস বির টিকা দেওয়া হয়। হেপাটাইটিস বির টিকা সারা জীবন ধরে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। হেপাটাইটিস সি প্রতিরোধে কোনো টিকা নেই। তবে অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক পরিহার, একই ক্ষুর বা রেজরে একাধিক ব্যক্তির শেভ না করা, যে কোনো প্রকার মাদকাসক্তি পরিহার, রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে যথাযথ পরীক্ষা, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করে অস্ত্রোপচার, দাঁতের চিকিৎসায় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি এবং সি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।
লিভার সিরোসিস হলে সঠিক চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর জটিলতা রোধ করা যায় এবং একে নিয়েই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা সম্ভব। রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া দূষিত পানীয়, মাড়াই আখের রস, ব্যবহার হওয়া বরফ, শরবত, কেটে রাখা ফল ফলারির মাধ্যমে হেপাটাইটিস এ এবং ই-এর সংক্রমণ হয়। এভাবে জন্ডিসে আক্রান্ত হলে লিভার সিরোসিস আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করা যাবে না।