গুরুত্বপূর্ণ হরমোন (টেস্টোস্টেরন) সমস্যা ও সমাধান

পুরুষের দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হরমোন হলো টেস্টো-স্টেরন।

এই হরমোনের ওপরই নির্ভর করে পুরুষের শারীরিক উর্বরতা।

নারী দেহেও সামান্য পরিমাণে এই হরমোন দেখা যায়।

পুরুষের শরীরে এই হরমোন কমে গেলে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়—

১. অবসাদঃ

দুপুরের খাবারের পর অনেকেরই দুর্বল ভাব চলে আসে।

অফিসের টেবিলে প্রায়ই উদ্দীপনা হারিয়ে যায়।

যে কোনো উদ্যমী কাজে উৎসাহ মেলে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

এমন ঘটলে টেস্টো-স্টেরন হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।

২. শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত
যৌন অঙ্গের পূর্ণতা প্রদান করা,

বিশেষ করে শুক্র থলি তৈরি এবং জন্মের পরে (বয়ঃ-সন্ধি-কালে) কণ্ঠ-স্বর গাঢ় হওয়া,

দাঁড়ি এবং বগলের চুল বৃদ্ধি- এসব এন্ড্রো-জেনিক কাজ।

এসবের অনেক কিছুই পুরুষের সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য।

তখন হরমোনের সমস্যা হলে অনেক সময় শারীরিক বৃদ্ধিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

৩. ঘুমে ব্যাঘাতঃ

যে পুরুষের এই হরমোনের ঘাটতি আছে তার সাধারণতঃ নিয়মিত ঘুম হয় না।

এই ঘুম না হওয়া আবার হৃদরোগ, মেজাজ বিগড়ে যাওয়া,

এবং স্মৃতিশক্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৪. বিষণ্নতাঃ

‘জার্নাল অব সেক্সুয়াল স্টাডি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে,

টেস্টো-স্টের-নের অভাব রয়েছে—এমন ৫৬ শতাংশ পুরুষ বিষণ্নতায় ভোগে।

৫. অস্বস্তি ও ব্যথাঃ

এই হরমোনের অভাবে প্রতিনিয়ত অস্বস্তি বোধ হতে পারে।

এ ছাড়া পেশি তার শক্তি হারায় এবং হাড়ের সংযোগ স্থলে ব্যথা অনভূত হয়।

এর প্রভাবে পরবর্তী সময়ে বড় ধরনের আঘাতের সম্মুখীন হয় মানুষ।

৬. হাড়ের সমস্যাঃ

ধারণা করা হয়, এই সমস্যা কেবল নারীদেরই দেখা দেয়।

কিন্তু, যে সকল পুরুষদের টেস্টো-স্টেরন হরমোন কমে যায়,

তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে।

কারণ এ হরমোনের অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়।

৭. স্তনের আকার বৃদ্ধিঃ

এ হরমোন কম থাকলে দেহে ইস্ট্রো-জেন ও টেস্টো-স্টের-নের ভার-সাম্য নষ্ট হয়।

এতে পুরুষের স্তনের আকার বেড়ে যেতে পারে।

এ সমস্যাকে বলা হয় ‘গাইনে-কোমা-স্টিয়া’।

৮. মনো-যোগের অভাবঃ

মস্তিষ্ক ‘ঘোলাটে’ করে দেয় এই হরমোনের অভাব।

এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। স্মৃতি শক্তিও কমে আসে ধীরে ধীরে।

৯.  বাড়তি ওজনঃ

দেহের বাড়তি ওজনের কারণে টেস্টো-স্টেরন হরমোনের অভাব দেখা দেয়।

কারণ ফ্যাট সেল তখন টেস্টো-স্টেরনকে ইস্ট্রো-জেনে রূপান্তর করে।

স্থূলকায় মানুষের দেহে এমনিতেই এই হরমোনের ঘাটতি থাকতে পারে।

স্বাস্থ্য কর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণের,

মাধ্যমে এ অভাব থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

পুরুষত্বের স্থায়িত্ব কে না চায়।  হরমোনের তার-তম্যের কারণে,

অনেক সময় পুরুষের গোপন ক্ষমতা কম বেশি হয়। 

পুরুষত্বের জন্য দায়ী মূল হরমোন হচ্ছে টেস্টো-স্টেরন।  

পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে, টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা কমতে থাকে।

টেস্টো-স্টেরন শরীরে কমে যাওয়ার কারণে অ্যান্ড্রো-পজ হয়। 

টেস্টো-স্টেরন হরমোন কমে গেলে পুরুষদের যেসব সমস্যা দেখা দেয়,

সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন চিকিৎসক গণ। 

পুরুষদের বেলায় পুরুষত্বের জন্য দায়ী হরমোনের মাত্রা হঠাৎ কমে যায় না।

কিন্তু ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমতে থাকে এবং এই পরিবর্তন কয়েক বছর ধরে চলে।  

এক পর্যায়ে পুরুষত্বের অনেক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়।  

অধিকাংশ চিকিৎসা বিজ্ঞানীই পুরুষত্বের বৈশিষ্ট্য সমূহ,

লোপ পাওয়াকে অ্যান্ড্রো-পজ বলে থাকেন।

টেস্টো-স্টেরন হরমোনের অভাবে পুরুষের যৌন চাহিদা,

মানসিক শক্তি ইত্যাদি ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে।  

গড়ে ৩০ বছর বয়স হওয়ার পরে এর মাত্রা প্রতি বছর ১% করে কমে;

সাধারণতঃ ৭০ বছর বয়স্ক পুরুষের শরীরে এর মাত্রা,

স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। কারও কারও এ মাত্রা আরও কমে যেতে পারে।

টেস্টো-স্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে গেলে নানা রকম লক্ষণ-উপসর্গ দেখা যায়।

যেমন-

  • পুরুষের স্বাভাবিক যৌনা-চরণের পরিবর্তন।  

অনেকের অণ্ড কোষ দুটি আকারে-
আকৃতিতে,

ছোট হয়ে যায় এবং যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়।

  • মানসিক পরিবর্তন – কর্ম স্পৃহা অনেক কমে যায়।  

কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার পাশা পাশি,

অনেকে আত্ম বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।  
যৌবনের যে,

উৎসাহ-উদ্দীপনা, মনের জোর, সব জয় করার এক উদগ্র (তীব্র) বাসনা ;

টেস্টো-স্টের-নের পরিমাণ কমার ফলে তা কোথায় যেন উবে (পালিয়ে) যায়।

অনেকে কোনো কাজে এক ভাবে মনঃ সংযোগ করতে পারেন না,

স্মৃতি শক্তি ক্ষীণ হয়ে আসে; এমনকি অনেকে,

বিভিন্ন মাত্রার বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন।
অনেক সময় অন্যান্য,

শারীরিক অসুখ যেমন- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা,

বিষণ্ণতা রোগ, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি কিংবা,

ঔষধ সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবেও এ রকম হতে পারে।

সুতরাং একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-

নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তি
সঙ্গত।

  • পুরুষের পরিণত বয়সে টেস্টো-স্টেরন কমে যাওয়ার ফলে,

পুরুষত্বের ইতি বা অ্যান্ড্রো-পজও কোনো অসুখ নয়।

এটি জীবনের একটি পরি বর্তিত ধাপ বা পর্যায় মাত্র।

এটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে জীবনের এই নতুন পর্যায়টিকে উপভোগ করা,

এবং আনন্দ মুখর করে তোলা লক্ষ্য হওয়া উচিত।

শেষ বয়সে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পুনরায় টেস্টো-স্টেরন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে কত গুলো বিষয় খেয়াল রাখা উপকারী-

  • চিকিৎসকের সঙ্গে,

এ বিষয়ে সরা সরি কথা বলা উত্তম।  সমস্যা গুলো যদি বয়স বাড়ার কারণে,

না হয়ে অন্য কোনো অসুখ-বিসুখ কিংবা ঔষধের পার্শ্ব-প্রতি ক্রিয়ার কারণে হয়,

তাহলে তার সমাধান করা যেতে পারে।

  • জীবনা-চরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

যেমন- স্বাস্থ্য-কর এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীর চর্চা করা ইত্যাদি।

সুস্থ জীবনা-চরণ শারীরিক শক্তি ও মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।

  • বিষণ্ণতার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।  

টেস্টো-স্টেরনের মাত্রা কমে গেলে পুরুষের কর্ম স্পৃহা,

মানসিক উৎসাহ-উদ্দীপনা হ্রাস পায়। বিষণ্ণ-তার কারণে,

অনেকের মেজাজ খিট খিটে হয়ে যায়, নিঃসঙ্গ থাকতে পছন্দ করেন,

এবং সামাজিক কর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।

অনেক সময় মাত্রা-তিরিক্ত কাজ করার প্রবণতা,

অতিরিক্ত নেশা করা কিংবা বিপজ্জনক কাজ কর্ম করাও বিষণ্ণতার কারণে হতে পারে।

  • টেস্টো-স্টেরন প্রতিস্থাপন চিকিৎসায় অনেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।

তবে এর কার্য-কারিতা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।

যে ৮টি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন আপনার টেস্টো-স্টেরন হরমোনের অভাব রয়েছে।

আপনি যদি পুরুষ হয়ে থাকেন এবং আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়ে থাকে,

তবে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, টেস্টো- স্টেরন,

হরমোন জনিত সমস্যায় ভুগছেন আপনি।

টেস্টো-স্টেরণ কে আমরা পুরুষ হরমোন বললেও,

নারী ও পুরুষ উভয়েই এই হরমোন উৎপন্ন করে থাকে।

এক জন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দেহে টেস্টো-স্টের-নের মাত্রা,

প্রতি ডেসি-লিটার রক্তে ২৭০ থেকে ১০৭০ ন্যানো গ্রাম।

পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্টো-স্টেরন পুরুষ দেহে না থাকলে,

সেই পুরুষের বন্ধ্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

টেস্টো-স্টরন হরমোনের অভাবে পুরুষের যৌন চাহিদা,

মানসিক শক্তি পরিবর্তিত হতে থাকে।
টেস্টো-স্টের-নের,

ঘাটতির কারণ সমূহের মধ্যে মানসিক অবসাদ, অলসতা উল্লেখ যোগ্য।

কিশোর-দের বয়ঃসন্ধি দেরী হওয়ার অন্যতম কারণ,

হচ্ছে টেস্টো-স্টর-নের পরিমাণ কম হওয়া।
বয়ঃসন্ধির সময়,

টেস্টো-স্টের-নের উৎপাদন উল্লেখ যোগ্য ভাবে,

বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং ৩০ বা তার বেশি বয়সের পরে এটি হ্রাস পেতে শুরু করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *