থ্যালাসেমিয়া কেন হয়
বাবা ও মা দুজনই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
জেনেটিক কারণেও থ্যালাসেমিয়া হতে পারে
মানবদেহে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। প্রতি জোড়ার অর্ধেক মায়ের আর বাকি অর্ধেক বাবার থেকে আসে। ১৬নং ক্রোমোজোমে থাকে আলফা জিন আর ১১নং ক্রোমোজোমে থাকে বিটা জিন। আলফা ও বিটা জিনদ্বয় আলফা ও বিটা গ্লোবিন নামক প্রোটিন তৈরি করে যা অনেকগুলো এমাইনো এসিডের সমষ্টি ।
জন্ম গতভাবে ১৬ অথবা ১১নং ক্রোমোজো- মের আলফা অথবা বিটা জিন সঠিকভাবে এমাইনো এসিড তৈরি করতে পারে না।
ফলে আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন নামক প্রোটিন ত্রুটি পূর্ণ হয়। আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন চেইন ত্রুটি পূর্ণ থাকায় হিমোগ্লোবিন ত্রুটি পূর্ণ হয়।
স্বাভাবিক মানুষের লোহিত রক্ত কণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন হলেও থ্যালাসেমিয়া রোগীর ত্রুটি পূর্ণ গ্লোবিনের কারণে লোহিত রক্ত কণিকার গড় আয়ু মাত্র ২০ থেকে ৬০ দিন। অপরিপক্ব অবস্থায় লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙ্গে যায় বা মারা যায় তাই রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।
বাংলাদেশে এর চিকিৎসায় সমস্যা কোথায়
থ্যালাসেমিয়া স্ক্রেনিং প্রোগ্রাম না থাকায়, অনেকেই জানেন না তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা। তাই অজান্তেই থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হচ্ছে এবং দিন দিন থ্যালাসেমিয়া রোগী বাড়ছেই ।
বাবা-মা উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে প্রতিটি সন্তান জন্ম দানে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ২৫ ভাগ, বাহক হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ আর সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা শতকরা ২৫ ভাগ।
বাবা-মা যে কোনো এক জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক হলে প্রতিটি সন্তান জন্ম দানে থ্যালা- সেমিয়া বাহক হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ, সুস্থ হওয়ার সম্ভবনা শত করা ৫০ ভাগ, তবে থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার আশঙ্কা নেই ।
এ ছাড়া চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে হলে থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
করণীয়ঃ
- দু জন বাহকের মধ্যে বিয়ে না হওয়া বা বন্ধ করা। এক জন সুস্থ মানুষ যে কাউকে (বাহক বা রোগীকে) বিয়ে করতে পারবে। কারণ তাদের সন্তান রোগী হওয়ার সম্ভবনা নেই। তবে এক জন বাহক আরেক জন বাহককে বিয়ে করতে পারবে না।
কারণ সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। - দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে যদি বিয়ে হয়েই যায় বা স্বামী-স্ত্রী দু জনই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়, তবে বাচ্চা পেটে আসার আট থেকে চৌদ্দ সপ্তাহের মধ্যে ক্রওনিক ভিলাস স্যাম্পল বা এমনিওসেন্টে- সিস করে বাচ্চার অবস্থা জানা যায়। পেটের বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ার রোগী হলে কাউন্সিলিং করতে হবে যাতে এক জন নতুন থ্যালাসে- মিয়া রোগীর জন্ম না হয় ।
তাই বিয়ের আগেই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রত্যেককে জানতে হবে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা ।
দু জন থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করা গেলেই থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কীভাবে জানবেন আপনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না?
হেমাটোলজি অটো এনালাইজার মেশিনে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় থ্যালাসেমিয়া বাহকের ধারণা পাওয়া যায়। এর পর হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফরেসিস পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ডিএনএ এনালাই- সিস পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (হেমাটোলজি), স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।