দাঁতের ব্যথা
দাঁতের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। শীতে ঠাণ্ডার কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বাড়ে।
এ সময় ঠাণ্ডার কারণে অনেকের দাঁতের ব্যথাও হয়ে থাকে।
ব্যথা তীব্র হওয়ার কারণঃ
দাঁতে কোনো গর্ত বা ক্যারিজ হলে, দাঁতের ফিলিং খুলে গেলে, দাঁত ভেঙে গেলে,
দাঁতের শ্বাস বা পালপ যে কোনো কারণেই আক্রান্ত হলে,
মাড়ির প্রদাহের কারণে ও দাঁতের পালপ আক্রান্ত হলে।
গরম বা ঠাণ্ডা খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পর্যন্ত দাঁতের ব্যথা স্থায়ী হলে,
ধারণা করা যায় দাঁতের পালপ বা শ্বাস আক্রান্ত হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে স্নায়ু নষ্ট হতে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে ১২ ঘণ্টা পর ব্যথা কমে যায়।
আবার ব্যথা শুরু হলে বুঝতে হবে নষ্ট কোষ আবার সংক্রমিত হয়েছে বা পুঁজ তৈরি হয়েছে।
কী করবেনঃ
১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে মুখে নিয়ে ১ মিনিট রাখুন।
এভাবে দিনে ৩ বার করে কুলি করুন ব্যথা কমে যায়।
এ ছাড়াও ১ টেবিল চামচ লবণ অল্প সরিষার তেলের সঙ্গে,
অথবা লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মাড়িতে ম্যাসাজ করুন কয়েক মিনিট।
তারপর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করে নিন। এভাবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে।
লবণে অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে।
এটি মুখের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ব্যাহত করে প্রদাহ কমায়।
ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার আগে- ভরা পেটে দুটি অ্যাস পিরিন,
বা একটি আইবু প্রুফেন ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে,
ক্লোভ ওয়েল/ লবণ তেল দাঁতে মাজা যেতে পারে।
মাড়িতে লাগলে মাড়ি জ্বালা করবে। এটি দাঁতের স্নায়ু অবস করে সাময়িক ভাবে ব্যথা কমায়।
ব্যথা যুক্ত দাঁতে বরফ কুচি কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখা যেতে পারে,
গরম পানি দিয়ে কুল কুচি দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাদ্য কণা সরিয়ে ব্যথা কমাবে।
দাঁতের ব্যথার জন্য যত শিগগিরই ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
দাঁতের ব্যথায় করনীয় এবং দাঁত ব্যথার ঔষধ বা ট্যাবলেট এর নামঃ
দাঁতের ব্যথা একটা যন্ত্রণা দায়ক অবস্থার সৃষ্টি করে।
আমাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে দাঁত ব্যথায় ভুগে থাকি।
দাঁত ব্যথার অনূভুতি ভিন্ন ধরনের হতে পারে কারন ,
ব্যথার প্রকৃতি ব্যথার কারণ ও স্থানের উপর নির্ভর করে।
আবার দাঁত ব্যথা হালকা,মাঝারী থেকে তীব্র হতে পারে।
কখনো কখনো এই ব্যথা এতই তীব্র হয় যে, দিনের কাজ ও রতের ঘুম পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।
মুখের ও দাঁতের ব্যথা বা যে কোন সমস্যায় অবশ্যই এক জন দাঁতের ডাক্তার দেখানো উচিৎ।
দাঁতের ডাক্তার না দেখানো পর্যন্ত দাঁতের ব্যথা উপ শম করতে,
নিচের যেকোন একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে।
দাঁতের ব্যথার কারণঃ
বিভিন্ন কারণে দাঁত ব্যথা হয়ঃ
যেমনঃ দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া,
দাঁতের মধ্যে খাদ্য আটকে থাকা, দাঁত অপসারণ, মাড়িতে ফোঁড়া,
দাঁত বা মাড়িতে ইনফেকশন ইত্যাদি কারনে দাঁত ব্যথা হয়।
তবে সব চেয়ে কমন কারন হলো দাঁতের নিচের স্নায়ু অর্থাৎ মাড়িতে জ্বালা পোড়া করা।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাড়িতে জীবাণুর সংক্রমনের কারণে এই সমস্যাটি হয়।
দাঁতের আরো একটি কমন সমস্যা হলো দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া।
দাঁত ক্ষয় হতে হতে মাড়ির সাথে লেগে যায়।
আবার কারো কারো ঠান্ডা বা গরমের প্রতি সংবেদন শীলতা থাকতে পারে ,
অর্থাৎ দাঁতে ঠান্ডা বা গরম লাগলে অসহ্য খারাপ লাগে, কখনো কখনো ব্যথা শুরু হয়।
এই সমস্যা গুলি সমাধান করতে একজন ডেনটিস্ট,
(দাঁতের ডাক্তার) এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
যাই হোক, কত গুলো ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যে গুলো প্রয়োগ করে আমরা,
দাঁতের ব্যথা কমানোর পাশা পাশি দাঁত ও মাড়ির ইনফেকশন রোধ করতে সাহায্যে করে।
আসুন দাঁত ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার গুলো জেনে নেই।
মাথা উঁচু রাখাঃ
দাঁতের ব্যথায় কখনো মাথা নিচু করে রাখবেন না, এতে ব্যথা আরো বেড়ে যায়।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন যে, ঘুমানোর সময় বা শুয়ে থাকলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
এর কারণ হলো ঘুমানোর সময় আমাদের শরীর সম তল অবস্থায় থাকে,
তাই এই সময়ে আমাদের মাথার রক্ত চাপ বেড়ে যায়।
এজন্য ঘুমানোর সময় আমাদের দাঁত ব্যথাও বেড়ে যায়।
ঘুমানোর সময় দাঁত ব্যথা কমাতে যথা সম্ভব উঁচু বালিশে ঘুমাতে হবে।
লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে গার্গল: দাঁতের ব্যথা কমানোর,
সব চেয়ে সহজ উপায় হল লবণ পানির মিশ্রণ দিয়ে কুলি করা।
কুলি করার ফলে দাঁতের মধ্যে আটকে থাকা খাবার সরে যায়।
যেহেতু লবণ একটি প্রাকৃতিক জীবানু নাশক তাই ব্যথা,
কমানোর পাশা পাশি এটি সংক্রমণ প্রতি রোধে সাহায্য করে।
আধা চা-চামচ লবণ এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ,
মিশিয়ে গার্গল করলে দাঁত ব্যথায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে গার্গলঃ
হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাঁতের যে কোন জীবানু সংক্রমণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী।
তাই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পানির সাথে মিশিয়ে গার্গল করলে ,
দাঁতের ব্যথা কমবে পাশা পাশি সংক্রমণও দূর হবে।
তবে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড কখনো গিলে ফেলবেন না।
রসুন পেস্টঃ
রসুন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করে পাশা পাশি দাঁতের ব্যথাও উপশম করে।
রসুন পিষে পেস্ট বানিয়ে এই পেস্ট ব্যথা যুক্ত দাঁতে লাগালে ব্যথা অনেকটা উপশম হবে।
এছাড়াও রসুনের রসে তুলা ভিজিয়ে লাগানো যায়।
লবঙ্গ তেলঃ
রসুন ও লবঙ্গ দুটোই মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
রসুন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে ভালো কাজ করে আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি।
লবঙ্গও অ্যান্টিসেপটিক গুন রয়েছে। তাই দাঁতের ইনফেকশন রোধে ,
ও ব্যথা কমাতে লবঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে।
দাঁত ব্যথা উপশম করতে লবঙ্গ পিষে-এর তেল বা রস বের করতে হবে।
এই রস বা তেলে তুলা ভিজিয়ে ব্যথা যুক্ত দাঁতে লাগালে ব্যথা অনেকটা উপশম হবে।
তাছাড়া এক গ্লাস পানিতে কয়েক ফোঁটা লবঙ্গের রস মিশিয়ে,
মাউথ ওয়াশ বানিয়ে গার্গল করলে মুখের জীবাণু ধ্বংস হবে এবং দাঁত ব্যথাও উপশম হবে।
পেয়ারা পাতাঃ
পেয়ারা পাতায় প্রদাহ রোধী ও অ্যান্টি মাইক্রো বিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে,
যা দাঁত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতা পানির সাথে মিশিয়ে সিদ্ধ করে,
সেই পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁত ব্যথায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
দাঁত ব্যথায় ব্যথা নাশক ঔষধঃ
দাঁত ব্যথা কমাতে ব্যথা নাশক ঔষধ ব্যাবহার করা যেতে পারে।
এজন্য একজন ডেনটিস্টের সাথে যোগা – যোগ করতে হবে।
ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া,
কোনো ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়।
দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করলে ,
নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিঃ দ্রঃ এই ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে শুধু সাময়িক ভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়।
দাঁতের সমস্যা স্থায়ী ভাবে দূর করতে একজন ডেনটিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
দাঁতের সুরক্ষা ও যত্ন নিশ্চিত করতে তার নির্দেশ মেনে চলুন।