দাঁতের ব্যথা
সারা বিশ্বে দন্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি অতি সাধারণ পরিস্থিতি।
দাঁত ব্যথা একটি অপ্রীতিকর মানসিক অভিজ্ঞতা।
কোন একটি উদ্দীপক বস্তুর সংস্পর্শে এসে ব্যথা শুরু হয় আর তার পরে কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইহা বেশি বা কম অস্বস্তিকর দুর্দশা এবং যন্ত্রণার একটি সংবেদন।
দাঁতের ব্যথার কারণ হল দাঁতের রোগ দাঁতে গর্ত অথবা দাঁতে আঘাত লাগা। দাঁতের চিকিৎসার দুটি পর্যায় আছে প্রথমটি হল কারণ নির্ণয় এবং দ্বিতীয়টি হল এর চিকিৎসা।
সঠিক ভাবে দাঁতের স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করলে চিকিৎসা এবং ঔষধ পেলে দাঁতের ব্যথা সাধারণতঃ ২ / ৩ দিনে সেরে যায়।
দাঁতের ব্যথা হওয়ার কারণ – Causes of Toothache in Bengali:
দাঁতের ব্যথার অনেকগুলি কারণ আছে যেমন গর্ত হওয়ার জন্য ব্যথা হতে পারে
আঘাত, দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে গেলে, দাঁতের গ্রাইন্ডিং, দাঁতের এবসেস, দাঁতের সংবেদন শীলতা, দাঁত ফেটে যাওয়া, ফিলিং ক্ষতি গ্রস্ত হওয়া এবং মাড়ির রোগ।
নিজে নিজে রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎ – সকের পরামর্শ নিয়ে আপনার দাঁতের ব্যথার আসল কারণ জানুন।
পুলপাল দাঁতের ব্যথাঃ
পুলপাল টিস্যু যখন লালা বা বাতাসের সংস্পর্শে আসে তখন এই ব্যথা হয়।
এর কারণ হল – গভীর ক্যারিস, ক্ষয়, ফেটে যাওয়া বা দাঁতে ভাগ হয়ে যাওয়া। পুলপাল দাঁতের ব্যথার তীব্রতা অল্প সময়ের জন্য হতে পারে যেমন মিষ্টি গরম বা ঠাণ্ডার প্রতি অতি সংবেদন শীলতা থাকলে অথবা অসহ্য সুতীব্র ব্যথাও হতে পারে।
পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথাঃ
দাঁতের আশে পাশে আঘাত লাগা দাঁতের ব্যথার মূল কারণ। এতে ট্রমা হতে পারে, অক্লুসাল চাপ হতে পারে পাশের দাঁতের সাথে ঘর্ষণ হতে পারে।
অন্যান্য কারণ হল দাঁতের চিকিৎসা যেমন – দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁতের ইন্টারফিয়ারেন্স
উঁচু ফিলিং বা গভীর ফিলিং, দাঁতের স্পর্শের এলাকার ভিতরে ফাঁক ইত্যাদি।
দাঁতের আশে পাশের এলাকার সংক্রমণ কিম্বা পাশের দাঁতের সরাসরি ফুলে যাওয়া
সাইনাসের গর্ত এবং ছড়িয়ে পড়া হাড়ের সংক্রমণ।
যখন দেখা যায় যে পেরিয়োডন্টাল দাঁতের ব্যথায় বেশ কয়েকটি দাঁত প্রভাবিত হয়েছে
তখন ব্রাসিজম বা নাইট বাইটিং বা ক্লেঞ্চিংকে কারণ বলে মনে করা হয়।
হাড়ের বিকৃতির জন্য পিছনের দাঁতে অত্যধিক চাপ পড়ে এবং টি-এম-জে’তে ক্ষয়ের কারণে পরিবর্তন আসতে পারে ।
টি-এম-জে হল টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্টস যা নিচের চোয়ালকে মুখের বাকি অংশের সাথে জুড়ে রাখে। টি-এম-জে’তে আঘাত লাগলেও দাঁতের ব্যথা হতে পারে।
ফাঁটা দাঁতঃ
ফাটল দাঁতের সব ক’টি স্তর ভেদ করতে পারে। স্তরগুলি হল এনামেল, ডেন্টিন বা পাল্প। উপ সর্গগুলিও সেই অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
ডেন্টিনের ভিতরে রয়েছে ডেন্টিনাল ট্যুবুল, আর তার ভিতরে যে তরল পদার্থ আছে
তার চলা চলের ফলে দাঁত ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
আমরা যখন দাঁত দিয়ে খাবার চিবাই তখন চাপ সৃষ্টি হয় ফলে তরলের চলা চল শুরু হয়।
দাঁতের ব্যথা এর প্রতিরোধ –
ডেন্টাল ক্যারিস, পুলপাল, পেরিয়োডন্টাল ইত্যাদি রোগ হ্রাস করতে পারলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যায়ঃ
দৈনন্দিন খাদ্যে সুক্রোজ’এর (চিনি) পরিমাণ সীমাবদ্ধ রাখুন। হাল্কা এবং ভারি ভোজনের মধ্যের সময় সীমা হ্রাস করুন।
দিনে দু’বার দাঁত ব্রাশ করুন।
ক্লোর হেক্সিডিন-এর মত ব্যাকটেরিয়া নাশক মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন।
ফ্লোরাইড-যুক্ত টুথ পেস্ট এবং জেল ব্যবহার করুন।
ছিবড়ে-যুক্ত খাদ্য খান।
খাবার গিলবার আগে ভাল করে চিবিয়ে নিন।
চিনি-বিহীন চুইংগাম ব্যবহার করুন।
দাঁতের পৃষ্ঠতল মসৃণ করুন।
সমস্ত ক্যাভিটি ফিল করুন।
দাঁতের ব্যথা এর চিকিৎসা –
দাঁতের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে নির্ণয়ের উপরে।
দাঁত ব্যথার কারণ জানার পর ডেন্টিস্ট এই পদ্ধতি গুলি অনুসরণ করেনঃ
পুঁজ বের করাঃ
ডেন্টিস্ট পুঁজ এবং রস বের করে দেবেন।
সরাসরি পাল্পের ক্যাপিংঃ
আরাম দেওয়ার জন্য সাধারণতঃ ক্যাল – সিয়ামের একটি দ্রবণ লাগান হয় যাতে পাল্পের পুনঃ রুদ্ধার হয়। সাধারণতঃ আয়োডোফর্ম ক্যালসিয়াম পেস্ট এই কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।
রুট ক্যানাল চিকিৎসাঃ
ইহা খুবই সাধারণ এবং পরিচিত একটি পদ্ধতি। রুট ক্যানাল চিকিৎসা অথবা আর-সি-টি পদ্ধতিতে ক্ষতি গ্রস্ত এবং সংক্রামিত পাল্পকে বের করে নেওয়া হয়।
গর্তটি ভর্তি হয়ে গেলে এর উপরে ক্যাপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে এটিই দাঁত বাঁচিয়ে রাখার সব চেয়ে ভাল পদ্ধতি এবং ডেন্টিস্টরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
দাঁত নিষ্কাশনঃ
দাঁত তুলে ফেলা হল সব চেয়ে কম পছন্দের চিকিৎসা।
ডেন্টিস্টদের মতে, দাঁত বাঁচানোর সব চিকিৎসা বিফল হলে তবেই দাঁত তুলে ফেলার কথা ভাববেন। মানুষের দেহের প্রতিটি অঙ্গেরই নিজস্ব গুরুত্ব আছে।
অতএব, মুখের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলবেন। যদি দাঁত তুলে ফেলতেই হয় দুশ্চিন্তা করবেন না। দাঁতের আধুনিক পদ্ধতিতে দাঁত তুলে ফেলা খুবই সহজ এবং কোন ব্যথা লাগে না।
ঔষধঃ
যদি দাঁতের ব্যথা না যায়, তাহলে বেদনা- নাশক ঔষধ দেওয়া হয়। যেমন ডাইক্লো- ফেনাক সোডিয়াম (ডাইভন), ইবুপ্রোফেন, ইত্যাদি। কয়েকটি ক্ষেত্রে এমোক্সিসিলিন এবং অগমেনটিন-এর মত এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
শল্য চিকিৎসাঃ
কিছু ক্ষেত্রে জিঞ্জিভেক্টমি এবং জিঞ্জিভোপ্লাস্টি ফ্ল্যাপ অস্ত্রোপচার এবং গ্র্যাফট স্থাপন করতে হয়।