নিয়মিত ব্যায়ামে অসাধারণ ফল

জিম বা যোগ ব্যায়ামের ক্লাসে যেতে না পারলেও হবে, রোজ অন্তত ঘণ্টা খানেক সময় হাঁটার জন্য বরাদ্দ রাখুন। অথবা সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করুন টানা আধ ঘণ্টা –  সেটাও কাজে দেয়।

আসল কথা হচ্ছে, আপনি যা খাচ্ছেন এবং যতটা ক্যালোরি দিনের কাজ কর্মে খরচ করছেন তার মধ্যে একটা ব্যালান্স রাখতে হবে। এক মাত্র তাতেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

তা ছাড়াও নিয়মিত ব্যায়ামের আরও কয়েকটি বিশেষ গুণ আছে।

ব্যায়াম আপনার মুড ভালো রাখেঃ

নিয়মিত ব্যায়াম মুড ভালো রাখতে ও অ্যাংজ়াইটি কমাতে দারুণ কার্যকর। ব্যায়াম করলে এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়, তা ছাড়া সেরোটনিন হরমোনের প্রতি মস্তিষ্কের সংবেদন শীলতাও বাড়ে।

সব চেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, আপনি ঠিক কতক্ষণ সময় নিয়ে কত জটিল ব্যায়াম করছেন, সেটা মন ভালো করার জন্য মোটেই বিচার্য হয় না। আধ ঘণ্টা হাঁটলেও এই হরমোনগুলি নিঃসৃত হবে।

এনার্জি বাড়াতে ব্যায়াম দারুণ কার্যকরঃ
 অফিসের মাঝ পথে গিয়েই যাঁদের চোখ টেনে আসে আর কাপের পর কাপ কফি খেয়ে মিটিংয়ে গভীর মনোযোগে বসের কথা শোনার ভান করতে হয়, তাঁরা অতি গুরুত্ত সহ অবশ্যই ব্যায়াম করতে আরম্ভ করুন।

প্রথম দিকে ক্লান্তি আসবে – সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুদিন পর শরীর মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে গেলেই বুঝবেন যে, ব্যায়াম করলে কতটা বাড়তি এনার্জি মেলে।

যাঁদের ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে তো অন্য চিকিৎসা বা ওষুধপত্রের চেয়ে ব্যায়াম ও স্ট্রেচিংই বেশি কার্যকর হয়ে দাঁড়ায়।

ভালো রাখে ত্বকঃ

আমাদের শরীরে যে ফ্রি র‍্যাডিকালস থাকে, তা কোষের নানা ক্ষতি করে। তার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্যই তাজা ফল ও শাকসবজি থেকে অ্যান্টি অক্সিডান্টের প্রয়োজন হয়। সব সময় যে তাতেই ষোলো আনা ফল মেলে, তা নয়।

যেটুকু ক্ষতি রোজ হয়, তার কারণেই বাড়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা । আর অক্সি- ডেটিভ স্ট্রেসের ফলে ক্রমশঃ খারাপ হতে থাকে আপনার ত্বক।

যাঁরা রোজ খানিকটা হলেও ব্যায়াম করেন, তাঁদের শরীরে প্রাকৃতিক ভাবেই অ্যান্টি- অক্সিডান্ট তৈরি হয়, বাড়ে রক্ত চলাচলের পরিমাণও। আর এই দুইয়ে মিলে ক্রমশঃ ঝল মলিয়ে উঠতে আরম্ভ করে আপনার ত্বক।

ঘুম ভালো হয়ঃ

ব্যায়ামের ফলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। যখন আপনি বিশ্রাম নেবেন বা ঘুমোতে যাবেন, তখন শরীরের তাপমাত্রা ঠিক সেভাবেই কমতেও আরম্ভ করবে। তাতে গভীর নিদ্রা সুনিশ্চিত হয়।

বিশেষ করে, একটু বেশি বয়সে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হতে দেখা যায়। তাঁরা মডারেট ফিজ়িকাল এক্সার সাইজ়ের সাহায্য নিয়ে নিশ্চিত ভাবেই উপকৃত হবেন।

উন্নত হয় যৌন জীবনঃ

নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আপনার স্ট্রেস কমবে, বাড়বে ফ্লেক্সিবিলিটি, শক্তিশালী
হবে কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম । রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, টোনড হয় প্রতিটি পেশি ও হাড়।

এর- মিলিত ফল হিসেবে যৌন সক্রিয়তা বাড়ে। পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের কারণে যাঁদের যৌন মিলনে আগ্রহ কমে যায়, তাঁরাও নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

নানা ক্রনিক সমস্যা কাটায় ব্যায়ামঃ 

ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, হরমোনের ইমব্যালান্সের মতো ক্রনিক সমস্যায় ভুগছেন? সেক্ষেত্রেও আপনার রুটিনে পরিবর্তন আনতে পারে নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যেস।

ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ

এ বিষয়ে বিশদে আর কিছুই বলার নেই। ব্যায়াম করলে যে শরীর টোনড হয় আর ওজন কমে, তা মোটামুটি সবাই জানেন।

কথায় বলে ‘শরীর ফিট তো আপনি হিট’। আর তাই শরীরটাকে ফিট রাখতে দরকার শরীর চর্চার। সুস্থভাবে বাঁচার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করা উচিত।

তবে কখন করতে হবে আর কখন করা যাবে না, অনেকেই জানেন না। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা জরুরি। তবে ব্যায়ামের সময় নিয়ে অনেকেই পড়েন বিপত্তিতে। কেউ হয়তো ইচ্ছা থাকলেও সময় করে উঠতে পারেন না।

আবার যখন সময় পান তখন ব্যায়াম করা ঠিক হবে কি না বুঝে উঠতে পারেন না। শুধু নিয়মিত ব্যায়াম করলেই যে শরীর সুস্থ থাকবে, সেটাও না।’

কখন ব্যায়াম করা ভালো, আর কখন ব্যায়াম করা ঠিক নয়ঃ

  • সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ঘুমের পর সকালে ব্যায়াম সারা দিন ফুর ফুরে রাখতে পারে।
  • এ ছাড়া সন্ধ্যার আগে বিকেলটাও ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত সময়। যেহেতু ব্যায়াম করলে শরীরের ঘাম ঝরে, তাই নরম আব হাওয়াতেই ব্যায়াম করা ভালো।
  • দুপুর বেলা বা বেশি গরমে ব্যায়াম করলে সহজেই ক্লান্ত মনে হতে পারে। তাই এ সময়ে ব্যায়াম না করাই ভালো।
  • অনেকে ব্যস্ততার জন্য সারা দিন সময় করে উঠতে পারেন না, তাঁরা রাতে ব্যায়াম করেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।
  • যাঁরা সারা দিন বাসায় থাকেন, তাঁরা চাইলে যে কোনো সময় ব্যায়াম করতে পারেন।
  • ব্যায়ামের সময় অনেক বেশি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। হালকা খাবার যেমন, একটা কলা বা বিস্কুট খেয়ে ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে।
  • সকালে ব্যায়াম করতে গিয়ে অনেকে ব্যায়াম শেষে পেট ভরে খেয়ে বাসায় ফেরেন। এতে ব্যায়ামের কোনো উপকারিতা থাকে না।
  • যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁরা বেশি দিনের অবসর কাটালে বা কোথাও ঘুরতে গেলে খাবারের দিকে নজর রাখা উচিত। ঘুরতে গিয়ে বেশি দিন থাকার পরিকল্পনা করলে সুযোগ থাকলে টুক টাক ব্যায়াম
    করা যেতে পারে।
  • ব্যায়াম করার আগে বা পর পরই বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া ঠিক নয়। ব্যায়ামের পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর পানি খেতে পারেন ।
  • খাবারের মেন্যু থেকে যতটা সম্ভব মিষ্টি, কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাবার বাদ রাখাই ভালো। কারণ, এসব খাবার খেলে আপনার ব্যায়াম করা বৃথা হয়ে পড়বে।
  • নিজে অসুস্থ থাকলে ব্যায়াম করার দরকার নেই। বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যায়াম করা উচিত নয়।
  • যেকোনো ধরনের ব্যায়াম বা ডায়েট পরিকল্পনার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *