ফাইবার মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সিং জগতে কেন এত জনপ্রিয় ?

Created by UY LABin Earn Money30 Sep 2023

ফাইবার মার্কেটপ্লেস বিশ্বজুড়ে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য জনপ্রিয় একটি নাম।

ফ্রিল্যান্সিং পেশার সাথে সম্পৃক্ত প্রায় প্রতিটি ফ্রিল্যান্সার এখানে কাজ করতে চায়। এটি একটি সবার জন্য উন্মুক্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস।

যে কেউ তার যে কোনো কম্পিউটার স্কিল ডেভেলপ করে বা অন্য কোনো ভালো স্কিল থাকলে যেমন গান গাওয়া ,কমেডি করা ইত্যাদি স্কিল থাকলেও আপনি এই মার্কেটপ্লেস এ এসে কাজ করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচুর ফ্রিল্যান্সার সফলতার সাথে এই মার্কেটপ্লেস এ কাজ করে যাচ্ছে। আজ আমরা ফাইবার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানবো। 

ফাইবার কি?

ফাইবার হচ্ছে মূলত একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেটি সবার জন্য উন্মুক্ত।

এখানে আপনি অনেকগুলো স্কিল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন এর মধ্যে যে কোনো একটি স্কিল শিখে কাজ করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস রয়েছে যার মধ্যে ফাইবার উপরের দিকেই রয়েছে।

হাজার হাজার মানুষ ফাইবারে কাজ করে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা ইনকাম করছে। 

২০১০ সালে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের ইয়াফোতে এটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে এটি অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

বর্তমানে এটির নিট মূল্য ১.১০ বিলিয়ন ডলারেও বেশি। যা অদূর ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফাইবার তাদের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন ফলো করার ফলে আজ তারা বহির্বিশ্বের সব থেকে সফল একটি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।

প্রতি বছর ফাইবারে ৬৯৯.৩ মিলিয়ন ডলারের উপরে লেনদেন হয়।

এ থেকেই বোঝা যায় যে এই মার্কেটপ্লেসে কত পরিমাণে অর্ডার পাওয়া সম্ভব একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য। 

ফাইবার ব্যবহার আজকাল সব ফ্রিল্যান্সারের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা অনেক সহজেই তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরী করে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারছে।

আজকাল ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির ফলে ফাইবারে সুস্থ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে যার মাধ্যমে কাস্টমাররাও তাদের কাজ স্বল্পমূল্যে এবং নিজেদের চাহিদামতো করিয়ে নিতে পারছে। 

ফাইবার মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খোলা কেন জরুরি ?

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে জগতে ফাইবার এমন একটি নাম যা অনলাইন এ কাজ করা প্রত্যেকটি মানুষ জানে এবং এখানে কাজ করতে চায়।

ফাইবার এতটাই জনপ্রিয় যে কিছু মানুষ ফাইবার ছাড়া অন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো যেমন :freelancer.com, upwork, 99designs, peopleperhour এসব সম্পর্কে  জানেই না। 

ফাইবারের এই জনপ্রিয়তার মূল কারণ হচ্ছে এটির নিয়ম কানুন। একজন মানুষ ফাইবারে একটির বেশি একাউন্ট খুলতে পারবেন না।

আর তাই অনেক মানুষের এই প্লাটফর্মে কাজ করার সুযোগ আছে যার ফলে বিভিন্ন মানুষের থেকে একজন কাস্টমার বিভিন্ন রকমের বিভিন্ন দামের সার্ভিস নিতে পারে।

আর তাই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সফল হতে হলে একজন ফ্রিল্যান্সারকে অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর পাশাপাশি ফাইবারেও একাউন্ট খোলা উচিত।

ফাইবারে একাউন্ট খোলার পরে আপনি যে কাজটি পারেন সে সম্পর্কিত একটি পোর্টফোলিও তৈরি করে কাজের জন্য নিজেকে উন্মুক্ত করে দিতে পারেন ।

যদি আপনি একটি ভালো মানের পোর্টফোলিও তৈরি করতে পারেন তাহলে একটা না একটা সময় আপনার জন্য কাজের অর্ডার আসবে এবং আপনি কাজ করে সেখান থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা ইনকাম হয়ে গেলে আপনি সেখান থেকে টাকা উত্তোলন করে নিজের ব্যাংক একাউন্ট এ নিয়ে আসতে করতে পারবেন। 

তাই আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত কোনো স্কিল শিখে থাকেন তবে অবশ্যই প্রথমেই আপনার ফাইবারে একাউন্ট তৈরি করে পোর্টফোলিও দেয়া উচিত।

যাতে করে ফ্রিল্যান্সিং জগতে আপনি ভালো কিছু করতে পারেন।    

ফাইবার কারা ব্যবহার করে ?

ফাইবার এমন একটি প্লাটফর্ম যা ফ্রিল্যান্সার , উদ্যোক্তা , ব্যবসায়ীদের এক সাথে সংযুক্ত করে যার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা টাকা ইনকাম করতে পারে ও উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীরাও নিজেদের ব্যবসা বা সেবাকে উন্নতি করতে পারে এখানে লেখা এবং অনুবাদ , গ্রাফিক্স ডিজাইন , ডিজিটাল মার্কেটিং , ভিডিও ,অডিও ,প্রোগ্রামিং ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেয়া যায়।

কারা মূলত ফাইবার ব্যবহার করেন এখন আমরা সেটি জানবো। 

–> ফ্রিল্যান্স লেখক : 

ফাইবার ফ্রিল্যান্স লেখকদের জন্য দুর্দান্ত একটি প্লাটফর্ম।

এখানে একজন ফ্রিল্যান্স লেখক তার ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী যে কোনো বিষয়ের উপর ব্লগ , আর্টিকেল , কনটেন্ট লিখে টাকা ইনকাম করতে পারেন। 

–> উদ্যোক্তা এবং ছোট ব্যবসার মালিক :

ফাইবার হলো উদ্যোক্তা এবং ছোট ব্যবসার মালিকদের জন্য সেরা একটি প্লাটফর্ম এখান থেকে তারা কম দামে নিজের ব্যবসার জন্য বিভিন্ন ডিজাইন , লোগো , ভিডিও , ডিজিটাল মার্কেটিং, বিজনেস ওয়েবসাইট ইত্যাদি তৈরি করে নিতে পারে। 

–> ফ্রিল্যান্সার : 

ফ্রিল্যান্সিং এর পরিধি অনেক বড় আপনি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত যে কোনো একটি কাজ শিখে ফাইবারে চলে আসতে পারেন।এ

খানে ফ্রিল্যান্সিং এর সব ধরণের কাজই আপনি পাবেন।

আপনার ডিজিটাল স্কিল থাকলেই আপনি ফাইবারে কাজ করতে পারেন।

এখানে কাজ করতে আপনাকে কোনো ধরনের টাকাও খরচ করতে হবে না আপনি যা ইনকাম করবেন তার থেকে ২০% টাকা ফাইবার চার্জ করে। 

ফাইবারে কী কী ধরনের কাজ পাওয়া যায় ?

ফাইবার একটি সবার জন্য উন্মুক্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এখানে আপনি অনলাইনের সাথে সম্পর্কিত যে কাজই শিখবেন সে কাজটিই পেয়ে যাবেন।

এখন আমরা যে যে কাজ ফাইবারে পাওয়া যায় সে ক্যাটাগরি ও সাব ক্যাটাগরিগুলো সম্পর্কে জানবো।

–> গ্রাফিক্স এবং ডিজাইন : 

গ্রাফিক্স এবং ডিজাইন সম্পর্কিত যে কোনো কাজ আপনি ফাইবারে করতে পারবেন। যেমন : লোগো ডিজাইন , টি-শার্ট ডিজাইন , ব্যানার ডিজাইন , বিজনেস কার্ড ডিজাইন , ভেক্টর ট্রেসিং, ক্যাটালগ ডিজাইন ইত্যাদি আরো অনেক গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত কাজ ফাইবারে রয়েছে। 

–> ডিজিটাল মার্কেটিং : 

বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং জনপ্রিয় একটি ফ্রিল্যান্সিং স্কিল যার মাধ্যমে আপনি অনলাইনের সকল ধরনের মার্কেটিং করতে পারবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরটিও অনেক বড় আপনি এই সেক্টরের যে কোনো একটি কাজ ভালোভাবে শিখে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে পারেন।

যেমন : ফেইসবুক এডস  , গুগল এডস , ইউটিউব মার্কেটিং , কনটেন্ট রাইটিং, এসইও, ই-মেইল মার্কেটিং, ইত্যাদি আরো অনেক ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত কাজ রয়েছে যা আপনি করতে পারেন। 

–> লেখালেখি এবং ট্রান্সলেশন : 

লেখালেখি এবং ট্রান্সলেশন্স এর কাজ আপনি এখানে পেতে পারেন আপনি যদি আন্তর্জাতিক ভাষাগুলোর মধ্যে কোনো একটি ভাষায় দক্ষ হন তবে আপনি সে ভাষার উপর ট্রান্সলেশন এর কাজ করতে পারেন।

তাছাড়াও আরো অনেক কাজ রয়েছে যেমন : বই এবং ই-বুক রচনা , পডকাস্ট রচনা, পণ্য বিবরণ, স্ক্রিপ্ট লেখা,ই-মেইল কপি, স্পিচ রাইটিং ইত্যাদি আরো এই সক্রান্ত বিভিন্ন কাজ রয়েছে যা আপনি ফাইবারে করতে পারেন। 

–> ভিডিও এবং অ্যানিমেশন : 

ফাইবারে আপনি ভিডিও এডিটিং অ্যানিমেশনের অনেক কাজ পেয়ে যাবেন। যেমন : ভিডিও এডিটিং,অ্যানিমেটেড জিফ, লোগো অ্যানিমেশন , মোশন গ্রাফিক্স, ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন, কার্টুন অ্যানিমেশন, গেম ট্রেলার, ভিডিও আনবক্সিং ইত্যাদি আরো অনেক সাব সেক্টর রয়েছে যেখানে আপনি কাজ করতে পারবেন। 

–> মিউজিক এবং অডিও :

এই ইন্ডাস্ট্রিতেও আপনি কাজ করার জন্য অনেকগুলো সেক্টর খুঁজে পাবেন। যেগুলো আপনি করতে পারেন।

যেমন : ভয়েস ওভার , মিক্সিং, গীতিকার,সাউন্ড ডিজাইন,ভোকাল টিউনিং ইত্যাদি আরো অনেকধরণের কাজ রয়েছে যা আপনি করতে পারেন। 

–> প্রোগ্রামিং: 

একজন প্রোগ্রামার হিসাবে আপনি ফাইবারে অনেক কাজ পেতে পারেন।

যেমন: ওয়ার্ডপ্রেস,ওয়েব প্রোগ্রামিং,ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন,চ্যাটবটস,সাইবার সিকিউরিটি ইত্যাদি ছাড়াও আরো রয়েছে যা আপনি করতে পারেন ।

–> ডাটাবেজ এবং প্রসেসিং : 

ডাটাবেজ ও প্রসেসিং এর বিভিন্ন কাজও আপনি ফাইবারে পাবেন।

যেমন :ডেটা অ্যানালিটিক্স, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, তথ্য বিজ্ঞান, ইত্যাদি রয়েছে যা করতে পারেন। 

–> বিজনেস : 

বিজনেস সক্রান্ত অনেক কাজও আপনি করতে পারেন এই প্লাটফর্মে।

যেমন : ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট, গেমিং, মডেলিং ও অভিনয়, ভ্রমণসহ ইত্যাদি আরো বিভিন্ন রকমের কাজ রয়েছে। 

এই সমস্ত ক্যাটাগরিগুলোর মধ্যে যেসব সাব ক্যাটাগরি রয়েছে তার মধ্যে যে কোনো একটি স্কিল শিখেই আপনি ফাইবারে কাজ করতে পারেন।

আশা করি আপনারা বুঝতে পারছেন যে ফাইবারে কত ধরনের কাজ করে আপনি ইনকাম করতে পারেন।

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে চান তবে ফাইবার হতে পারে আপনার জন্য সঠিক একটি গন্তব্য।

আপনার যদি ভালো স্কিল থাকে এবং ধৈর্য ধরে কাজ করতে পারেন তবে আপনি অবশ্যই ফাইবার মার্কেটপ্লেস এ ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারেন। 

ফাইবার মার্কেটপ্লেস তাই আজকে ফ্রিল্যান্সিং জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠছে যা ফ্রিল্যান্সদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *