ফাইভার গিগ র্যাংকিং এবং ইম্প্রেশন বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ ট্রিকস :
Created by UY LABin Freelancing24 Mar 2024
ফাইভার বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম। অনেক দেশি-বিদেশি ফ্রিল্যান্সার ফাইভার ব্যবহার করে তাদের ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছে।
ফাইভারে একজন নতুন সেলার হিসাবে, আপনি অবশ্যই আপনার গিগ র্যাংকিং করাতে চান।
আপনার রেটিং যত বেশি হবে, প্রজেক্ট বা জব পাওয়ার সম্ভাবনা তত দ্রুত বাড়বে।
কিন্তু ফাইভারে আপনার গিগ র্যাংক করা কখনও কখনও সময় সাপেক্ষ এবং ধৈর্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় ।
কিন্তু আপনি যদি কয়েকটি বিশেষ বিষয়ের দিকে বাড়তি মনোযোগ দেন, তাহলে আপনার গিগকে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পেজে নিয়ে আসতে পারবেন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গিগকে কীভাবে র্যাংক করানো যায় সে বিষয়ে কিছু টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গিগ র্যাংকিং কি?
গিগ মূলত এক ধরণের পরিষেবা বা সার্ভিস এর নাম। একজন ফ্রিল্যান্সার ফাইভারে তাদের সার্ভিসগুলি সেল করার জন্য যে সুবিধা প্রদান করে এবং বায়ারের প্রজেক্ট কতো দিনের মধ্যে সাবমিট করতে পারবে তার বিস্তারিত লিখা সম্মিলিত পেজকে গিগ বলা হয়।
আর গিগ র্যাংকিং হল অনলাইন মার্কেটপ্লেসে এই গিগগুলো র্যাংকিং অনুযায়ী একদম টপ পজিশনে থাকা ।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে র্যাংক পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেই কাজে এক্সপার্ট হতে হবে,মানে আপনি যে সার্ভিসটি প্রোভাইড করবেন।
আপনি আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী একটি ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে নিন।
এরপর আপনার স্কিল অনুযায়ী যতটা সম্ভব বেশি ইনফরমেশন দিয়ে গিগ প্রস্তুত করুন।
একটি গিগ তৈরি করতে কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়
০১। কম্পিটিটর অ্যানালাইসিস
০২। গিগের জন্য আকর্ষণীয় এবং ইউনিক SEO বন্ধুত্বপূর্ণ টাইটেল
০৩। ইউনিক ডেস্ক্রিপশন
০৪। গিগের প্যাকেজ
০৫। গিগের ট্যাগ
০৬। গিগের জন্য ছবি (থাম্বনেইল)
০৭। গিগের জন্য ভিডিও
০৮। FAQ
ইম্প্রেশন ক্রিয়েট :
কীভাবে ফাইবার গিগ এ ভালো ইম্প্রেশন পেতে পারেন এর আলোকে নিচে কিছু মতামত শেয়ার করছি আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে :
০১. আপনি যেই সার্ভিস প্রোভাইড করবেন সেই বিষয়ে কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে নিন ।
০২. গিগ এর টাইটেল যেন SEO ফ্রেন্ডলি হয় যাচাই করে নিন ।
০৩. URL যেন SEO ফ্রেন্ডলি হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন ।
০৪. গিগ এর ইমেজ প্রফেশনালি ক্রিয়েট করুন ।
০৫. গিগ এর ইমেজ অপ্টিমাইজ করে নিন।
০৭. সুন্দর একটি কি-ওয়ার্ড দিয়ে ভালোভাবে কনটেন্ট লিখুন ।
০৮. রিলেটেড কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করুন ।
০৯. অন্যরা কী একই মূল্যে একই সার্ভিসটা অফার করছে কিনা তা পরীক্ষা করে আপনি আপনার সার্ভিস এর মূল্য নির্ধারণ করুন।
১০. প্রয়োজন হলে প্রথম-প্রথম কিছু দিন তুলনামূলক অল্প রেট এ কাজ করুন ।
যখন অনেকগুলো কাজ করবেন তখন আপনার দক্ষতা বাড়বে এরপর আপনি চাইলে আপনার সার্ভিস প্রাইস বাড়াতে পারবেন ।
১২. আপনাকে অবশ্যই প্রতিদিন কমপক্ষে 20 ঘণ্টা অনলাইন থাকতে হবে। কারণ যারা অনলাইনে বেশি থাকে অধিকাংশ তাদের মেসেজ পাঠিয়ে থাকে।
১৩. Fiverr এর ফোরাম এ প্রতিদিন পোস্ট করুন ।
১৪. প্রতিদিন বায়ারদের রিকুয়েস্ট পাঠান ।
১৫. Facebook, Linkedin, Pinterest, Instagram এ আপনার কাজ সম্পর্কে পোস্ট করবেন । এবং আপনার গিগ শেয়ার করুন ।
১৬. ক্লায়েন্ট মেসেজ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তার মেসেজ এর রিপ্লাই দিতে হবে ।
কীভাবে ফাইভার গিগ র্যাঙ্ক করবেন?
সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করার মাধ্যমে ফাইভারের গিগ র্যাংকিং করানো সম্ভব, তবে এই কাজটি করার জন্য আপনাকে কয়েক ধাপে কাজটি করতে হবে।
নিম্নে ধাপে-ধাপে কীভাবে ফাইভার গিগ র্যাঙ্ক করবেন তা বর্ণনা করা হলো-
ফাইভার গিগের এসইও :
ফাইফার গিগের জন্য SEO খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি আপনার গিগগুলির জন্য ভাল SEO করেন তবে আপনার গিগগুলি অনুসন্ধান ফলাফলে টপে প্রদর্শিত হতে পারে।
এসইও করার জন্য আপনাকে প্রথমে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে এবং টার্গেটেড কিওয়ার্ডগুলো দিয়ে ভালোভাবে অপ্টিমাইজ করার মাধ্যমে আপনার গিগের এসইও এর কাজ সম্পন্ন করতে হবে ।
গিগে ভিডিও সংযুক্ত করা :
ফাইভারের মতে, ভিডিও আপনার গিগ এ 40% পর্যন্ত ট্রাফিক বাড়ায়।
এর থেকে বোঝা যায় ভিডিও ডেসক্রিপশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই ভিডিও বিবরণ আপনার গিগের আস্থা বাড়ায়।
আপনি সহজেই গ্রাহকের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন।
ভিডিও বর্ণনা করার সময় আপনাকে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
০১. নিজের পরিচয় দিন এবং অডিয়েন্সকে ধন্যবাদ দিন।
২. বায়ারকে আপনি বলে সম্বোধন করুন।
৩. আপনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন।
৪. আপনার সার্ভিস অন্যদের থেকে কিভাবে আলাদা তা ফুটিয়ে তুলুন।
৫. যারা আপনাকে দেখছেন তাকে অর্ডার দিতে বলুন।
এসইও ফ্রেন্ডলি গিগ টাইটেল :
এসইওর ক্ষেত্রে শিরোনামটি ফোকাস করা এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আপনাকে আপনার গিগের শিরোনামে কি-ওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কারণ সার্ভার যখন কোন কি-ওয়ার্ড সার্চ করে, তখন রোবট প্রথমে শিরোনাম পড়ে তারপর ফলাফল প্রদর্শন করে।
তাহলে বুঝতেই পেরেছেন আপনার জন্য SEO অপটিমাইজড শিরোনাম কতটা কার্যকর।
গিগের আকর্ষণীয় ছবি :
যে কোন বায়ার টাইটেল পড়ার পরেই গিগের ছবি দেখে থাকেন,যদি ছবি আর টাইটেল বায়ারকে আকৃষ্ট করতে পারে তাহলেই বায়ার সম্পূর্ণ প্রোফাইল দেখার জন্য ক্লিক করে।
তাই আকর্ষণীয় এবং উচ্চ রেজুলেশনের ছবি যুক্ত করুন আপনার প্রোফাইলে এবং সম্ভব হলে একাধিক ছবি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
প্রোফাইল :
ধরুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেতে চান, এবং এই প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তা আপনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
তারপর আপনাকে প্রথমে একটি আকর্ষণীয় জীবন বৃত্তান্ত তৈরি করতে হবে এবং আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার তালিকা করতে হবে।
ঠিক তেমনি আপনি যদি ফাইভারে চাকরি পেতে চান তবে আপনাকে আপনার প্রোফাইলটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
বায়ার গিগ দেখেই আপনাকে কাজ দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এই কারণে আপনার প্রোফাইল যতটা সম্ভব সুন্দর করা উচিত।
যদি একজন বায়ার আপনার প্রোফাইল দেখেন এবং বুঝতে পারেন যে আপনি একজন পেশাদার, তারা আপনাকে নিয়োগ দেবে।
অন-টাইম ডেলিভারি :
সঠিক সময়ে কাজ হ্যান্ডওভার দেওয়া যে কোনো ফ্রিল্যান্সার এর কাজের মর্যাদার চাবিকাঠি।
ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই ফ্রিল্যান্সারদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী যারা সময়মতো তাদের কাজ সাবমিট করতে পারে।
কাজের কোয়ালিটি :
কাজের মান নিশ্চিত করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Fiverr একটি রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে, তাই আপনার কাজের গুণগতমান ক্রেতাদের দ্বারা একটি রেটিং প্রদান করা হয়ে থাকে।
আপনি যদি সময়মতো ডেলিভারি এবং মানসম্পন্ন কাজ বজায় রাখতে পারেন, তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে 5Rating র্যাংকিং বজায় রাখা সহজ হবে ।
পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট :
আপনি যদি নিজেকে একজন দক্ষ এবং মানসম্পন্ন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে উপস্থাপন করতে চান তাহলে একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকা অপরিহার্য।
কারণ আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে আপনি নিজেকে ক্রেতাদের কাছে আরও পেশাগতভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন।
ওয়েবসাইটে আপনার কাজকে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, অথবা ওয়েবসাইটে আপনার কাজের একটি স্যাম্পল রাখতে পারেন।
বায়ার নতুন ফ্রিল্যান্সারদের কাছে কাজ আউটসোর্স করতে চায় না, তবে এই ক্ষেত্রে আপনার যদি একটি সুন্দর এবং প্রফেশনাল মানের ওয়েবসাইট থাকে পেশাদার ওয়েবসাইট থাকে এবং আপনি আপনার ওয়েবসাইটে আপনার পোর্টফোলিওকে ভালোভাবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করে সাজাতে পারেন তবে শুরুর দিক থেকেই কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
ডেসক্রিপশন :
গিগ এর বর্ণনা এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। আপনি যদি আপনার গিগ বিবরণে আপনার পরিষেবাগুলির বিশদ বিবরণ না দেন, তাহলে আপনার ক্লায়েন্টদের হারানোর একটি ভাল সুযোগ রয়েছে এখানে।
তাই আপনি যখন গিগ দিবেন সেই সময় আপনার সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত এবং সহজ ভাবে সবকিছু উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন।
ডেসক্রিপশনে কোন রকম কঠিন শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ট্যাগ :
ট্যাগ ফাইভারের গিগ র্যাঙ্ক করার পেছনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। ফাইভার গিগে ট্যাগ মূলত এসইও এর কাজ করে থাকে।
সার্ভারের নিকট সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শনের জন্য রোবট ট্যাগকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
তাই ট্যাগ ব্যবহারের সময় ট্যাগের মধ্যে অবশ্যই আপনার টার্গেটেড কিওয়ার্ড যুক্ত করুন।
অ্যাক্টিভ থাকুন :
আপনার তৎপরতা এবং সক্রিয় ব্যস্ততা শুধু কাজের প্রতি ডেডিকেশন এবং কমিটমেন্ট সম্পর্কে ধারণা দেয় না।
এটি আপনার সেলার লেভেল বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে।
ক্লায়েন্টের ম্যাসেজের দ্রুত রেসপন্স না করলে আপনার অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। তাই ফাইবারে সব সময় অ্যাক্টিভ থাকা উচিত।
ফাইবারে নিজের গিগ র্যাংক করানোর জন্য ধৈর্যের থেকে বড় কিছু নেই।
ফাইবারে টাকা ইনকাম করা সহজ হলেও একজন ফ্রিল্যান্সারকে ধৈর্য ধরে তার অ্যাকাউন্ট গড়ে তুলতে হবে।
ফাইবারে গিগ র্যাংক করা সম্পর্কিত আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারবেন।
নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক আর্টিকেল এবং নানা ধরনের টিপস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে।
সোশ্যাল শেয়ার :
আপনি চাইলে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক শেয়ারের মাধ্যমে আপনার গিগের র্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে পারেন।
তাই সমস্ত সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আপনার গিগের লিংক শেয়ার করুন।
এটি আপনাকে নতুন ক্লায়েন্ট আনতে সাহায্য করবে, এবং আপনার গিগের ইম্প্রেশন ও ক্লিক বৃদ্ধি পাবে।
উক্ত আর্টিকেলে ফাইভার গিগ র্যাংকিং এ আনার মোটামুটি সকল কৌশল তুলে ধরা হয়েছে, আমি আশা করি আপনি এই আর্টিকেল থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন কীভাবে ফাইভার গিগ এর র্যাঙ্ক বাড়ানো যায়।
মনে রাখবেন ফাইবার একজন সক্রিয় এবং সব সময় অ্যাক্টিভ সেলারকে সবসময় প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
আপনার কাছে আসা সকল ধরনের মেসেজ এবং অর্ডার রিকুয়েস্ট এ সব সময় দ্রুততার সাথে রেসপন্স করার চেষ্টা করুন।
ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ এর ক্ষেত্রে ভদ্রতা এবং প্রফেশনালিজম ফলো করুন।
ক্লায়েন্টের প্রয়োজন সম্পর্কে সর্বদা অবগত থাকুন এবং আপনি যখন কোনো কাজ হাতে নিবেন তাহলে সেই কাজ সম্পর্কে আপনার ক্লায়েন্টের সাথে নিয়মিত কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করুন।
আশাকরি উপরিউক্ত সাজেশনগুলো ফলো করলে আপনি আপনার গিগ র্যাংকিং এ আনতে আপনার জন্য সহজ হবে।
তাই দেরি না করে আজই শুরু করে দিন আপনার ফ্রিল্যান্সিং জার্নি ফাইভার মার্কেটপ্লেসে।