ফাইভার মার্কেটপ্লেস পরিচিতি
ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। এই মুক্ত পেশায় তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বেশি।
ঘরে বসে বিদেশের তথ্য প্রযুক্তির নানা কাজ করে আয় করেন ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীরা।
কিন্তু শুরুটা কীভাবে করতে হবে, ফ্রিল্যান্সার হতে কী জানতে হবে—এ নিয়ে দ্বিধা অনেকের।
অনেকে সঠিক দিক নির্দেশনাও পান না। ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, এ ব্যাপারে আগ্রহ আছে, এমন পাঠকদের জন্য শুরু হলো ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ ‘ফ্রিল্যান্সিং যেভাবে।’ আজ থাকছে ১১তম পর্ব।
পর্ব-১১
ফাইভার (fiverr.com) মার্কেটপ্লেসটি ৫ ডলার মার্কেটপ্লেস হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টদের জন্য অন্যতম নির্ভরযোগ্য একটি মার্কেটপ্লেস হিসেবে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিয়েছে।
বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় এই মার্কেটপ্লেসটি হাজারো ফ্রিল্যান্সারকে ফ্রিল্যান্স কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
আজকে আমরা ফাইভারের কাজের পদ্ধতি, কাজ করার সুবিধা, নতুন ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে মার্কেটপ্লেসটিতে সফল হবে, তা নিয়ে আলোচনা করব।
ফাইভার কীভাবে কাজ করে :
আপওয়ার্ক মডেলের অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে ফাইভার সম্পূর্ণ আলাদাভাবে কাজ করে।
ফাইভার ফ্রিল্যান্সারদের তৈরি করা গিগ বা সেবা প্যাকেজ আকারে বিক্রির সুযোগ করে দেয়। গিগ বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলছি।
আপওয়ার্কে আমরা জেনেছি ক্লায়েন্টরা এসে জব পোস্ট করে এবং ফ্রিল্যান্সাররা বিড করে কাজটি পাওয়ার চেষ্টা করেন।
ফাইভারের ক্ষেত্রে বিষয়টা হয় ঠিক উল্টো। মার্কেটপ্লেসটিতে ফ্রিল্যান্সাররা তাঁদের তৈরি বিভিন্ন লোগো বা ডিজাইন প্রদর্শনের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ডিজাইনের লোগো তৈরির জন্য কত ডলার খরচ হবে, তা উল্লেখ করে দেয়।
ফলে কোনো বায়ারের লোগো দরকার হলে তিনি ফ্রিল্যান্সারদের সার্ভিস প্যাকেজগুলো (গিগ) দেখার পর নির্দিষ্ট গিগ কিনলেই ফ্রিল্যান্সারের কাছে কাজের অর্ডার চলে যাবে।
তখন গিগটির নির্মাতা ফ্রিল্যান্সার ক্লায়েন্টের পাঠানো নির্দিষ্ট নকশার লোগো তৈরির কাজ বিশ্লেষণ করে বা সরাসরি কথা বলে লোগো তৈরি করে দেবে।
নির্দিষ্ট সময়ে বায়ারদের চাহিদামতো লোগো জমা দিলেই অর্থ পাবেন ফ্রিল্যান্সারা। ফলে আপওয়ার্কের মতো কাজ পাওয়ার জন্য বিড করতে হবে না।
সুন্দর ও ভালো রেটিং পাওয়া গিগগুলো ফাইভার নিজেই বায়ারদের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে।
ফলে সুন্দর করে গিগ তৈরি করতে পারলে ফাইভারে ভালোভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করা সম্ভব।
আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলবেন যেভাবে:
ফাইভারে কাজ করার সুবিধা :
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের বেশ সহায়তা করে ফাইভার। মার্কেটপ্লেসটির অ্যালগরিদম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের তৈরি করা বিভিন্ন কাজ মাঝে মধ্যেই সার্চ ফলাফলের ওপরের দিকে দেখা যায়।
ফলে বায়াররা সহজেই নতুন ফ্রিল্যান্সারদের তৈরি করা বিভিন্ন গিগ দেখতে পারেন।
কি–ওয়ার্ড এবং ভালোমতো গিগ বানাতে পারলে নিজ থেকেই কাজের অর্ডার আসতে থাকে ফাইভারে।
আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস পরিচিতি :
ফাইভারের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে, আপনি যতটুকু কাজ পারেন, ঠিক ততটুকুই কাজের অর্ডার নিতে পারবেন।
অর্থাৎ আপনার দক্ষতা অনুযায়ী গিগ তৈরি করে প্রদর্শন করতে পারবেন মার্কেট প্লেসটিতে।
কোনো বায়ারের যদি সেই গিগ পছন্দ হয়, তবে আপনি টাকা পাবেন।
ফলে আপনাকে দক্ষতার অতিরিক্ত কোনো কাজ করতে হবে না।
যেমন অনেকেই আছেন বিজ্ঞাপন তৈরির খুঁটিনাটি পদ্ধতি না জানলেও শুধু ফেসবুক পেজের বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারেন।
সমস্যা নেই, তিনি চাইলেই ফেসবুক পেজের বিজ্ঞাপনের উপযোগী একটি গিগ তৈরি করতে পারেন, যা কোনো বায়ারের পছন্দ হলে টাকা আয় করা যাবে। এ সুবিধা অন্য কোনো মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায় না।
ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা এবং বায়ারদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে ‘লেভেল ১ ’, ‘লেভেল ২ ’, ‘টপ রেটেড সেলার’ ইত্যাদি লেভেল রয়েছে ফাইবারে।
ফলে বায়াররা সহজেই ফ্রিল্যান্সারদের কাজের দক্ষতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে থাকেন।
অনেক সময় এমন হতে পারে যে ফ্রিল্যান্সারদের তৈরি গিগের চেয়েও বেশি কাজ দরকার বায়ারের।
সমস্যা সমাধানে বায়ারদের সরাসরি গিগ নির্মাতা বা সেলারদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিলে থাকে ফাইভারে।
কখন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করবেন :
ফাইভারে বায়ার রিকোয়েস্ট নামে একটি বিভাগ আছে, যেখানে বায়াররা নিজেদের চাহিদা মতো কাজের তথ্য জমা দিতে পারে।
শুধু তা–ই নয়, চাইলে ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে কথা বলে কাজের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি দরও ঠিক করতে পারে।
একটি বিষয় মনে রাখা ভালো, ফাইভারে বায়ারদের রক্ষার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা রয়েছে।
ফলে বায়ররাও নিশ্চিন্তে কাজের অর্ডার দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও ফাইভারের রয়েছে একদল সহায়তাকারী।
ফলে তাঁরাও স্বচ্ছন্দে মার্কেট প্লেসটিতে কাজ করতে পারেন।
বিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্স কাজ শিখবেন যেভাবে :
ফাইভারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বাংলাদেশে পেওনিয়ার পেমেন্ট গেটওয়ে থাকায় সহজেই মার্কেট প্লেসটি থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যায়।
পাশাপাশি একই গিগে একই সময়ে একাধিক অর্ডার পাওয়া যায়। ফলে চাইলে একসঙ্গে একাধিক অর্ডার নিয়েও কাজ করা সম্ভব।
এতে আপনার আয়ের পরিমাণও বেশি হবে। বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ফাইবার ব্লগে বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার সুযোগ থাকায় নতুন ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকেন।
ফ্রিল্যান্স কাজের জন্য কেমন কম্পিউটার প্রয়োজন :
এত সুবিধার পাশাপাশি ফাইভারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে ব্যবহারকারীদের। অনেকের মতে, ফাইভার পুরোপুরি বায়ারকেন্দ্রিক মার্কেটপ্লেস।
অর্থাৎ ফাইভার ফ্রিল্যান্সারদের তুলনায় বায়ারদের কথাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ জন্য কোনো অর্ডার নিয়ে সমস্যা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বায়ারদের পক্ষেই অবস্থান নেয় ফাইভার।
মার্কেট প্লেসটিতে কাজের খরচও অনেক বেশি। আপনি যত ডলারই আয় করেন না কেন, আয়ের ২০ শতাংশ দিতে হয় ফাইভারকে।
এ ছাড়া কোন গিগের র্যাংক একবার হারিয়ে গেলে সেটিকে আবার সামনে আনা বেশ কষ্টকর।
আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারব :
ভালো দক্ষতা অর্জন ছাড়া কোনো মার্কেট প্লেসেই দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়।
আর তাই ফাইভারে ভালো করতে হলে আপনার দক্ষতাকে সব সময় হালনাগাদ করতে হবে।