ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় : আইডি, পেজ ও গ্রুপ দিয়ে আয়
ফেসবুক তো ব্যবহার করা হয় বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ কিংবা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে।
এখান থেকে আবার টাকাও আয় করা যায় নাকি?
হাঁ, এ রকম প্রশ্ন অনেকের মনে উকি দেয়।
ছাত্র-ছাত্রীরা অথবা বেকার ভাই বোনেরা আপনারা তো বেশির ভাগ সময় ফেসবুক আইডি, পেজ কিংবা গ্রুপ এ সময় কাটান।
তাহলে চলুন না জেনে নেই, এ গুলো দিয়েই বৈধ ভাবে ঘরে বসে কিভাবে টাকা আয় করা যায়।
আজকে আমি ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় এ বিষয়ে খুব মৌলিক কয়েকটি ধারণা দেব।
ফেসবুক বন্ধুদের ছবিতে লাইক-কমেন্ট আর ম্যাসেঞ্জারে তুমুল আড্ডা পাশা পাশি চাইলেই গড়ে তোলা যায় ছোটখাটো একটা অনলাইন ইনকাম উৎস।
আর এটি শুরু করতে পারেন বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, ফ্যানপেজ ও গ্রুপ তৈরি করা, ভিডিও বানানো, ফেসবুক গেম ডেভেলপ কর ।
অনলাইন শপের মত হাজারো পদ্ধতির মাধ্যমেই ফেসবুক হয়ে উঠতে পারে আপনার আয়ের বিকল্প উৎস।
ফেসবুক আইডি দিয়ে আয়
শুরুতে আসি ফেসবুক আইডি কি ? ও এটা দিয়ে কীভবে আয় করা যায় এই বিষয়ে।
মূলত: ফেসবুক আইডি হল ফেসবুক ব্যবহার কারীর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান জিনিস।
এটি সাধারণত ব্যাক্তির নামে খুলতে হয়। আপনার প্রতি দিনের কাজ-কর্ম গুলো আপনার আইডিতে প্রকাশ করতে পারেন।
এখানে যত ফ্রেন্ড থাকবে তত বেশি প্রচার হবে।
তবে ফেসবুক আইডিতে ৫০০০ হাজারের বেশি বন্ধু বানানো যায় না।
এর পরও যদি কেউ আপনার বন্ধু হতে চায় তবে সে হতে পারবেনা কিন্তু আপনার ফলোয়ার হতে পারবে।
এই আইডির মাধ্যমেই আপনি আপনার বা অন্যের জন্য বিজনেস পেজ বা গ্রুপ তৈরি করতে পারবেন।
এবং সেটি যত ইচ্ছা তত সংখ্যক করতে পারবেন। তবে যদি কোন কারণে ফেসবুক কতৃপক্ষ আপনার আইডি বাতিল করে দেয় তা হলে কিন্তু আপনার পেজ ও গ্রুপ গুলোও বাতিল হয়ে যাবে। তাই ফেসবুক আইডির গুরুত্ব অপরিসীম।
এবার আপনার প্রশ্ন হতে পারে, বুঝলাম ফেসবুক আইডি খুব গুরুত্ব পূর্ণ কিন্তু এ দিয়ে আয় করব কীভাবে?
তাহলে এবার বলি, ধরুন আপনার আইডিতে ৫০০০ ফ্রেন্ড আছে। এবং আপনি তাদের কেই বেছে বেছে বন্ধু বানিয়েছেন যারা বেশি বেশি ফেসবুকে একটিভ থাকে।
এখন আপনি নিজের বা অন্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে মার্কেটিং করতে পারেন। বিনিময়ে ফিক্সট টাকা বা
কমিশনও নিতে পারেন।
এ ছাড়াও যেহেতু একটি আইডির আন্ডারে অনেক ফেসবুক পেজ বা ফেসবুক গ্রুপ থাকে তাই একটি শক্তিশালী আইডির মার্কেটিং ভ্যালু অনেক।
আর আপনিও একটি আইডি তৈরি করে ফেসবুকের কাছে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন এনআইডি বা পাসপোর্ট দিয়ে আইডি ভেরিফাই করে নিতে পারেন।
অত:পর চাইলে এ রকম একটি ভেরিফাইড আইডিতে নিজের দরকারী পেজ ও গ্রুপ গুলো রাখতে পারেন বা অনেক মার্কেট প্লেস আছে যেখানে সেটি বিক্রিও করতে পারেন।
ফেসবুক পেজ থেকে আয় :
সত্যি কথা বলতে কি, ফেসবুক থেকে আয় করার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হল পেজ থেকে আয়।
কেন না সকল বিজনেসের জন্যই একটি ভালো ফেসবুক পেজের দরকার হয়। যেখানে থাকবে অনেক গুলো লাইক, কমেন্ট ও ভালো পেজ রিভিউ।
আর পেজ রিভিউ হচ্ছে, এই ব্যবসাটি কেমন সে সম্পর্কে সেবা গ্রহীতা বা ক্রেতাদের নিজস্ব মতামত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এখান থেকে কিভাবে আয় করবেন? ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার অনেক গুলো উপায় আছে, উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে, আপনি একটি পেজ খুলে নিয়মিত পোস্ট দিয়ে নিজের বা অন্য কারো সেবা বা প্রডাক্ট কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করতে পারেন ।
বা বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে ফেসবুক পেজটি বিক্রিও করতে পারেন।
একটি ৫০ হাজার লাইক সমৃদ্ধ পেজের মূল্য ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। আজকাল ফেসবুকে অনেক গ্রুপ আছে যেখানে এ গুলো কেনা বেচা হয়।
ফেসবুক গ্রুপ দিয়ে আয় করার উপায় :
ফেসবুক গ্রুপ থেকে টাকা ইনকাম করার নিয়ম এ প্রথম ধাপ হলো ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলে নেওয়া ।
এ ক্ষেত্রে আপনার নিজের আগ্রহের পাশাপাশি গ্রাহকরা কি ধরনের বিষয় পছন্দ করে সেদিকে খেয়াল রেখে গ্রুপ তৈরি করা ভালো।
ধরুন ফেসবুক গ্রুপ হতে পারে এরকম- ফুড রিভিউ, ট্রাভেল পেজ, নিউজ পোর্টাল কিংবা ট্রেন্ডি কোনো ট্রল পেজ ইত্যাদি।
তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন এটি কোনো নির্দিষ্ট জন গোষ্ঠীকে আঘাত না করে বা কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করে।
গ্রুপ গুলো ফেসবুক আইডি বা পেজ থেকে আলাদা এ জন্য যে এখানকার মেম্বাররা নিজেকে গ্রুপের একজন মেম্বর বা মালিক মনে করে ।
এবং সেখানে সে তার নিজ মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। যেটি অন্যের আইডি বা পেজে যায় না। তাই গ্রুপ গুলো ব্যবসায়িক ভ্যালূ অনেক বেশি।
এখন প্রশ্ন হল এই গ্রুপ থেকে আপনি কীভাবে আয় করতে পারেন?
ব্যাপারটা খুবই সহজ। আপনার গ্রুপ মেম্বার যত বেশি আপনার আয়ের সম্ভাবনা তত বেশি।
ধরুন একটি গ্রুপে আপনার ১০ লক্ষ মেম্বার আছে। এবার আপনি কোন কোম্পানিকে বল্লেন আমার গ্রুপে প্রতিদিন ১০ টি করে পোস্ট করার সুযোগ দেব এর বিনিময়ে আমাকে মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।
এ রকম কয়েকটা কোম্পনি ধরলেই তো হল। আর না হলে নিজেরই সেবা বা পণ্যও বিক্রি করলেন।
এছাড়াও অনেকেই গ্রুপ থেকে ওয়েবসাইটে বা ইউটিউব চ্যানেলে ভিজিটর বিক্রী করছে।
বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শিখুন!!!
যারা ফ্রিতে ডিজিটাল মার্কেটিং/ ফ্রি ল্যান্সিং করে প্রতি মাসে নিশ্চিত আয় করতে চান তাদের জন্যই মূলত এ কোর্সটি।
ফেসবুক গ্রুপ :
বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে বা ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে নানা প্রশ্নের সামাধান পেতে মেম্বার হতে পারেন “ডিজিটাল মার্কেটিং হেল্পলাইন” ফেসবুক গ্রুপটিতে।
গ্রুপ লিংক https://www.facebook.com/groups/digitalhelp
ফেসবুক কন্টে বিক্রি :
ধরুন উপরের একটিও আপনার ভালো লাগে না তবে আপনি লিখতে বা ভিডিও বানাতে অথবা ছবি ইডিট করতে ভালো বাসেন।
তাহলেও আপনি ফেসবুকের মাধ্যমে আয় করতে পারেন । এ গুলোকে বলে কন্টেন্ট।
ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার, এসইওক্লার্ক, ফুড লিকং বিডি নামক ওয়েবসাইটে আপনার ফেসবুক কন্টেন্ট বিক্রি করতে পারেন।
এ ছাড়াও ফেসবুক এ্যান্ড ইউটিউব হেল্প বিডি এর মত অনেক গ্রুপ আছে যেখানে ফেস বুকের জন্য কন্টেন্ট বিক্রি করতে পারেন।
অনেক লোক বা প্রতিষ্ঠান আছে যারা আপনাকে নির্দিষ্ট অর্থ দিয়ে এসব পোস্ট ক্রয় করবে।
যারা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন প্রদান করে এসব পোস্ট, পোস্টের ছবি তারা আপনার কাছ থেকে কিনে নেবে।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং :
ইনফ্লুয়েন্সার বিষয়টা অনেকটা আধুনিক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এর মত বিষয়।
নামকরা কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা প্রচারণার জন্য স্বনামধন্য ও খ্যাতিমান ব্যক্তিদেরকে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিযুক্ত করে থাকে।
ফেসবুকে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ফেসবুকে কাজ করতে হলে প্রথমেই আপনাকে প্রোফাইল বা আইডিতে মানসম্মত কন্টেন্ট ও যথেষ্ট সংখ্যক ফ্রেন্ড-ফলোয়ার থাকতে হবে।
অত:পর Hireinfluence, BlogMint, Fromote এর মত ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেট এজেন্সির ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনি কোনো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিটি পোস্টের জন্য নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ ঐ সব ব্র্যান্ডের পোস্ট প্রচার করার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও ফেসবুকে যেভাবে আয় করা যায় :
এফ কমার্স তো বর্তমান সময়ের সব চেয়ে লাভজনক ব্যবসা। নিজস্ব কোন ওয়েবসাইট ছাড়াই ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকেই প্রচুর আয় করছেন ।
এর জন্য নিজের আইডি, শপের নামে একটি পেজ, একটি নিজস্ব গ্রুপ সেই সাথে বিভিন্ন গ্রুপের মেম্বার হতে পারেন।
ফেসবুকে কেনাবেচা অর্থাৎ Buy and Sell এর অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে। এখানে নতুন বা পুরাতন যে কোন জিনিসের বেচা কেনা করতে পারেন।
ফেসবুকে প্রাইভেট গ্রুপ খুলে আপনার পছন্দের বিষয়ে ট্রেনিং দিয়েও আয় করার সুযোগ আছে।
অন্যের পেজ বুস্টিং ও করে দিতে পারেন। অথবা এ রকম হাজারও বিজনেস আইডিয়া আছে যে গুলো ফেসবুকের মাধ্যমে করা যায়।
তরুণ বেকার কথা কি ভাবা জায় না?
এমন কিছু লোক দরকার যারা মানুষকে একটু গাইডলাইন দিতে পারবে ।
যারা সমাজের, দেশের মানুষদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও ভাববে।
জ্বি হ্যাঁ YouTube + Facebook এর মাধ্যমেও দেশের অর্থ নীতিতে ভুমিকা রাখা যায়।
প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আসছে, সেটা বহু বহু গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব, সফলরা যদি একটু এগিয়ে আসেন, যারা জানেন তারা যদি অন্যদের গাইডলাইন দেন।
যে যতটুকু জানেন সেটাই যদি অন্যদের জানান।
আমরা সবাই শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, আপনার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, আপনার সমাজ, এলাকা এবং দেশের মানুষদের জন্যও একটু ভাবুন।
আমরা অনেকেই মনে করি অন্যদের জানালে তারা হয়ত আমার মার্কেট দখল করে নিবে।
কিন্তু Youtube, Facebook একটি বিশাল বড় প্লাটফর্ম, এখানে লাখ লাখ ধরনের কনটেন্ট তৈরির সুযোগ আছে।
আমরা বেশিরভাগ কনটেন্ট ক্রিয়েটর ত এখনো দেশের গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ । অথচ দেশের বাহিরের বিশাল একটা জগতে আমাদের পদচারণা অনেক কম।
যে খানে বহুগুন বেশি আয়ের সুযোগ আছে। ইউরোপ আমেরিকার মানুষদের মার্কেটে প্রতিযোগিতার সময় এসেছে, অনেকে শুরু করেছেন অন্য দেরকেও সহযোগিতা করুন।
কত মানুষ আছে যাদের মধ্যে অনেক ধরনের Creativity আছে কিন্তু তারা সঠিক গাইডলাইন পায় না।
অনেকে ত জানেই না কিভাবে YouTube / Facebook কে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করা যায়।
যারা কিভাবে অনলাইনে ইনকাম করা যায়, তা খুঁজতে গিয়ে না বুঝে বিভিন্ন সাইটে গিয়ে বা ইনভেস্ট করে ধরা খায়।
অনেক ছেলে মেয়ে শিক্ষার্থী আছে যার পরিবার বহু কষ্টে তার লেখা পড়ার খরচ দিচ্ছে, সে নিজে কিছু করতে হন্যে হয়ে খুঁজছে।
কত পরিবার আছে যাদের সংসার টাকার অভাবে দিনাতিপাত করছে।
কত নারী আছে যারা গৃহে থেকেই স্বামীর পাশাপাশি নিজেও আয়-উপার্জনে একটা ভূমিকা রাখতে চাইছে।
তাদেরকে একটু সহযোগিতা করুন। আপনার প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, এলাকার মানুষকে গরীব রেখে শুধু নিজে লাখপতি / কোটিপতি হলেই খুব সুখী হতে পারবেন না।
আপনার চার পাশটাকেও উন্নত হতে হবে। দেশের প্রতিও আপনার দায়বদ্ধতা আছে।
পরিশেষে বলা যায় ফেসবুক তরুণ প্রজন্মের জন্য যেমন বিনোদন বা যোগাযোগের মাধ্যমে তেমনি ঘরে বসে আয় করারও একটি ভালো সোর্স।
শুধু চাই ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। আর তা হলে সফলতা ধরা দেবেই ।
আজকে ফেসবুকে কিভাবে টাকা আয় করা যায় বিষয়ক আলোচনাটি এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।