বুকে জমে থাকা কফ দূর করুনঃ

ঋতু বদলের পরিক্রমায় প্রকৃতিতে বয় শীতের হাওয়া। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসে কিছু রোগ। সর্দি-কাশি ও জ্বর তখন থাকে ঘরে ঘরে।  সর্দি-কাশি ও বুকে কফ বা শ্লেষ্মা জমার সমস্যা আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ সমস্যা বলে মনে হলেও সময়মতো-এর চিকিৎসা করা না গেলে এটি শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে শ্বাসযন্ত্রে । বুকে জমে থাকা কফ দূর করার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ঘরোয়া ছয় পদ্ধতিতে কফ দূর করার উপায় নিয়ে এ ফিচার।
 ১. আদাঃএক টেবিল চামচ আদা কুচি এক গ্লাস জলে মেশান। এবার এটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা হলে এতে সামান্য মধু দিন। দিনে অন্তত তিনবার এ পানীয়টি পান করুন। দেখবেন কফ দূর হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক চা চামচ আদা কুচি, গোলমরিচের গুঁড়ো এবং লবঙ্গের গুঁড়ো দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি দিনে তিনবার পান করুন। আপনি চাইলে এক টুকরো আদা নিয়ে মুখে চাবাতে পারেন। আদার রস বুকের কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করবে।
 ২. লবণ জলঃ বুকের সর্দি ও কফ দূর করতে সবচেয়ে সহজ আর সস্তা উপায় হল লবণ জল। লবণ শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ জলের সঙ্গে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে দিনে দুই তিনবার গারগেল করুন।
 ৩. লেবু ও মধুঃ লেবু জলে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। মধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এমনকি এটি বুক থেকে কফ বা শ্লেষ্মা দূর করে গলা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
 ৪. হলুদঃ হলুদে থাকা কারকুমিন নামের উপাদান বুক থেকে কফ ও শ্লেষ্মা দূর করে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমিয়ে দেয়। এর অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গলা ও বুকের খুসখুসে অস্বস্তি, জ্বালা, ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ পানিতে এক চিমটে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এটি দিয়ে প্রতিদিন গারগোল বা কুলকুচি করুন।
 এ ছাড়া এক গ্লাস দুধে আধা চা চামচ হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। সম্ভব হলে এর সঙ্গে দুই চা চামচ মধু এবং এক চিমটে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে এ দুধ দিনে দুই থেকে তিনবার পান করুন।
৪. পেঁয়াজঃ একই পরিমাণের পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এভাবে সামান্য উষ্ণ এই জল দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার পান করুন।
 ৬. আপেল সাইডার ভিনেগারঃ এক কাপ সামান্য উষ্ণ জলে দুই চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে এই পানীয়টি দিনে অন্তত দুই-তিনবার পান করুন। মোটামুটি ৮-১০ দিন পান করুন। দ্রুত শ্লেষ্মার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
শুষ্ক কফ জমে থাকা বেশ বিরক্তিকর একটি সমস্যা। এটি বিপদেরও কারণ হতে পারে। খুব বেশি কফ জমে থাকলে শ্বাসকষ্ট হয়। আর এই শ্বাসকষ্ট কখনো কখনো মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই যারা এই সমস্যায় ভুগছেন, আজ থেকেই এই সমস্যাকে নির্মূল করার চেষ্টা করুন। আর এই জমে থাকা কফের সমস্যা দূর করার কিছু সহজ উপায় আছে।
লবণপানিতে গার্গল শুধু যে কাশি, গলা ব্যথা কমায় তা না, এটি বুকে জমা কফ দূর করার জন্য খুব উপকারী। হালকা গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে নিন। ব্যাস, এটা দিয়েই দিনে তিনবার গার্গল করুন। তাহলেই দেখবেন বুকে জমা কফ কেমন উঠে যাচ্ছে। এটি খুব ভালো একটা উপায় এবং তাড়াতাড়ি কাজ করে।
গরম পানির ভাপঃ
গরম পানির ভাপ নিলে বুকে কফ জমতে পারে না। পানি খুব গরম করে এর ভাপ নিন। এই ভাপ নেয়ার সময় ঘরের জানালা দরজা বন্ধ করে ভাপ নিন। তাহলে ভালো কাজ হবে। নাহলে ভাপ বেরিয়ে যাবে। আর এর সাথে ওই পানিতে একটু কর্পূর মিশিয়ে নিন। দিনে দুইবার কর্পূরের ভাপ নিয়ে নিন। দেখবেন কেমন ম্যাজিকের মতো বন্ধ নাক কেমন ছেড়ে গেছে। আর বুকে জমে থাকা কফও উঠে আসছে সহজেই। এটি দিনে একবার করলেই কাজ হবে।
শীতে সবার অবস্থা একেবারেই খারাপ। ঠাণ্ডায় থরথর। শীত অথবা ধুলাবালির কারণে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি কাশি ও বুকে কফ জমার মতো সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই।
খুব বেশী কফ জমে থাকার কারণে শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। তবে শুধু বড় মানুষরা না, বাচ্চারাও এই সমস্যার ভুক্তভুগী।
এ সমস্যা থেকে সমাধান পেতে অনেক মা- বাবা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে হাই-এন্টি- বায়োটিক ও ঠাণ্ডার ওষুধ খাওয়ান শিশুকে। তবে এসব হালকা বিষয়ে শিশুকে কড়া পাওয়ারের ওষুধ না খাওয়ানোই ভালো।
ফুটন্ত গরম পানিতে মেন্থল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। চুলা থেকে পানি নামিয়ে একটি বড় তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে নিন এবং ঘন ঘন শ্বাস নিন। এভাবে অন্তত ১০ মিনিট করে দিনে ২ বার ভাপ নিন। এতে বন্ধ থাকা নাক খুলে যাবে এবং বুকে জমে থাকা কফ বের হয়ে আসবে।
কাশি হলে কিছু খাবারও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে-
প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ
প্রক্রিয়াজাত খাবার কাশি চলাকালীন একেবারেই ঠিক নয়। কাশি বাড়বে। ব্রেড, পাস্তা, বেকড খাবার, চিপস বা সুগারি ডেসার্টে কাশি বাড়ে। এর পরিবর্তে শাক- সবজি বা পুষ্টিকর খাবারে মন দিন। বিশেষ করে ভিটামিন সি যে খাবারে রয়েছে সে খাবার খান ।
ডিহাইড্রেশনঃ
কাশি হলে গলা শুকনো একেবারেই রাখা ঠিক নয়, তরল খাবার যেমন স্যুপ খেতে পারেন।
দুধঃ
কাশি হলে অনেকেই বলেন, গরম দুধ খেতে। গলায় আরাম হয় ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে দুধ ফুসফুস ও গলায় মিউকাস প্রোডাকসন বাড়িয়ে দেয়। কাশি হলে তাই দুধ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
টক জাতীয় ফলঃ
টক জাতীয় ফল, যাতে সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে, কাশি হলে খাওয়া যাবেনা। সাইট্রিক অ্যাসিড গলায় সংক্রমণ ঘটায় ও কফ বাড়িয়ে দেয়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *