ব্যায়ামের আগে ও পরে কী খাবেন?
ব্যায়াম শরীরকে ফিট রাখতে সাহায্য করে। একটি ভালো ব্যায়াম অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাওয়া-দাওয়া।
কেননা এই বিষয়ে ভালোভাবে খেয়াল না করলে ব্যায়াম কার্যকর না-ও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে ব্যায়ামের আগে ও পরে কী খেতে হবে তাঁরা জানিয়েছেন।
ব্যায়ামের আগেঃ
জিমে বা ব্যায়ামে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে কাবোর্হাইড্রেট জাতীয় খাবার খেতে হবে।
ফল খেতে পারেন ব্যায়ামের আগে । ব্যায়ামের আগে খাওয়ার জন্য আপেল বেশ আদর্শ ফল।
এর পাশাপাশি টোস্ট, কর্নফ্লাকস এগুলোও খেতে পারেন। এ ছাড়া জটিল কার্বোহাইড্রেট হিসেবে কলাও খেতে পারেন।
এই খাবারগুলো হজম হতে কম সময় লাগে এবং ব্যায়ামের আগে শরীরে শক্তি জোগাবে।
এ ছাড়া ব্যায়ামের আগে অবশ্যই এক গ্লাস পানি পান করে নেবেন। এর ফলে শরীর ভালো ভাবে আর্দ্র থাকবে।
কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না। ব্যায়ামের ফলে যে চাপ পড়বে সেটি শরীরের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পার।
যার ফলে হাইপোগ্লেসিমিয়া হয়ে শরীর অবসন্ন হয়ে যেতে পারে। তাই কখনোই খালি পেটে ব্যায়াম করতে যাবেন না।
ডায়াবেটিক হলে ভারি খাবারের পর ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
তবে সাধারণ লোকের জন্য ভারি খাবারের দুই তিন ঘণ্টা পর ব্যায়াম করলে ভালো হয়। এতে দেহের শর্করার মাত্রা ঠিক থাকে।
ব্যায়ামের পরঃ
ব্যায়ামের পর শরীরের করটিসলের (এটি এক ধরনের ধ্বংসাত্মক হরমোন) মাত্রা বেড়ে যায়।
এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
ব্যায়ামের পরের সময়টিকে ‘ওইনডো পিরিয়ড’ বলা হয়।
এ সময় শরীরে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। তাই এই অবস্থা প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব খাবার খান।
শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যায়ামের পর পানি পান করুন।
দেহের শক্তির জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন আছে। তবে প্রোটিন হজম করা একটু কঠিন; এটি কিডনিতে চাপ ফেলে।
তাই প্রোটিনের পাশাপাশি আঁশ জাতীয় খাবার এবং সবুজ শাকসবজি খান।
পেশি বাড়াতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। এর জন্য অনেকে প্রোটিনের সাপলিমেন্ট খেয়ে থাকেন।
তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি কলা এবং আপেল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন। এটা প্রোটিন এবং কাবোর্হাইড্রেট দুটোরই চাহিদা পূরণ করবে।
ব্যয়াম করার পর কী খাওয়া উচিত?
যদি নিয়মিত ব্যায়াম করেন, লক্ষ্য করলে দেখবেন, ব্যায়াম করার পর খুব খিদে পায়।
আর সে সময়ে সাধারণতঃ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াটাই নিয়ম ।
বলা হয়, ব্যায়াম করার আধঘণ্টার মধ্যেই মাসলের পুষ্টির জন্য প্রোটিন খাওয়া উচিত, তাতে শক্তি বাড়ে।
মাসলে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন এনার্জির অনেকটাই ব্যয় হয় ব্যায়ামের সময়।
যাঁরা স্ট্রেংথ ওয়ার্কআউট করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাসল প্রোটিনও।
দেখবেন, ব্যায়াম করার পর খুব ক্লান্তও লাগে। এই ক্লান্তির মাধ্যমেই শরীর আপনাকে বুঝিয়ে দেয় যে তার ভাঁড়ার
শেষ হয়ে গেছে ।
এবার আপনাকেই এমন কিছু খেতে হবে যাতে জ্বালানির জোগান মেলে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থায় কেবল প্রোটিন খেলেই কি কাজ হবে?
এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে না, হবে না। তার কারণ, আমাদের শরীর পূর্ণ পুষ্টি পায় একমাত্র সুষম ডায়েট থেকে।
তার মধ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, মিনারেল সব থাকা আমাদের জন্য প্রয়োজন।
একমাত্র তা হলেই আপনার গ্লাইকোজেনের ভাঁড়ার পূর্ণ হবে, মাসলের রিপেয়ারও সম্ভব হবে।
বিশেষ করে ফ্যাট খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিলে যে সব ভিটামিন ও মিনারেল ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়েই কার্যকর হয়, সেগুলি মোটেই কাজ করবে না।
তার মধ্যে ভিটামিন ডি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও আছে। যাঁরা সাঁতার কাটেন, দৌড়োন বা সাইকেল চালান, তাঁদের বেশি কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন।
যাঁরা ইনটেন্স স্ট্রেংথ ট্রেনিং করেন, তাঁরা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট মিলিয়ে মিশিয়ে খান।
আরও একটা কথা, এক্সারসাইজ় শেষ করার পরেই যে খেতে হবে, তার কোনও মানে নেই।মোটামুটি ৪৫ মিনিট থেকে আরম্ভ করে দু’ ঘণ্টার মধ্যে খেলেই চলবে।
তবে খুব বেশি খিদে পেয়ে গেলে তখনই খেয়ে নিন খালি পেটে থাকবেন না। সেই সঙ্গে জল খেতে ভুলবেন না যেন!
আদর্শ পোস্ট ওয়ার্কআউট খাবারের তালিকাঃ
কার্বোহাইড্রেটঃ
ফল (যে কোনও মউশুমি ফল চলতে পারে)
ওটস, কিনওয়া, বাজরা, হোল গ্রেন পাউরুটি, রুটি, লাল চালের ভাত।
প্রোটিনঃ
দুধ, ছানা, দই, ডিম, চকোলেট দেওয়া দুধ,
চিকেন, মাছ, টোফু, পিনাট বাটার।
ফ্যাটঃ
অ্যাভোকাডো, বাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড, যে কোনও বাদাম।
সারাদিন মোটামুটি ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করলেও সব মাটি হয়ে যাচ্ছে বিকেলের দিকে এসে।
সত্যি বলতে কী, আমরা যে সময়ে দুপুরের খাবার খাই, তার চেয়ে অনেকটা দেরিতে রাতের খাবার পায় আমাদের শরীর।
তাই এই সময়টা প্রবল খিদে পায়, আর সেই ফাঁকেই অনাহুতের মতো ঢুকে পড়ে কেক- পেস্ট্রি, রোল, ন্যুডলস বা মুড়ি-তেলেভাজা।
কিন্তু এর কোনওটাই স্বাস্থ্যকর অপশন নয়, তাই হাতের কাছে এমন কিছু রাখুন যা খিদেও মেটাবে, স্বাস্থ্যও ভালো রাখবে।
স্যালাডঃ
ব্যাপারটা শুনতে যতটা কঠিন, কার্যত তৈরি করা মোটেই তত কঠিন নয়।
স্যালাড আপনি নানাভাবে তৈরি করতে পারেন, তা খেতেও চমৎকার লাগবে।
যেমন ধরুন হালকা সেদ্ধ করা বিট বা গাজর কুরে নিয়ে জল ঝরানো টক দই, চাট মশলা, লবণ-মরিচ মিশিয়ে খেতে তোফা লাগে।
আর দইয়ে যদি সামান্য হিং, জিরে, সরষে, কারিপাতার ফোড়ন দেন, তা হলে তো কথাই নেই!
ডিম সেদ্ধ, শসা, টোম্যাটো, লেটুস, লবণ-মরিচ-লেবুর রস মিশিয়ে বানানো যায় এগ স্যালাড।
ডিম বাদ দিয়ে চিনেবাদাম ভাজা বা ছোলা সেদ্ধ মেশালেও চমৎকার লাগবে খেতে।
বেশ কয়েক রকম তাজা ফলের কুচি আর সামান্য চাটমশলা দিয়েও ফ্রুট স্যালাড বানানো যায়।
ফলঃ
আপেল বা শসা সুন্দর করে কেটে নিন। সঙ্গে রাখুন পিনাট বাটার বা জল ঝরানো দই। দুটো মিশিয়ে খেলে দারুণ লাগবে।
তা ছাড়া, যে কোনও গোটা ফলও খেতে পারেন। সন্ধাবেলা ফল খেলে মোটেই অ্যাসিড হয় না।
বাদামের মিশ্রণঃ
আখরোট, আমন্ড, সূর্যমুখির বীজ আর ফ্ল্যাক্স সিড শুকনো তাওয়ায় ভেজে নিয়ে ঠান্ডা করুন।
তার মধ্যে শুকনো ক্র্যানবেরি, কালো আঙুর, কিশমিশ মেশান।
এই মিশ্রণ একটি বোতলে পুরে রেখে দিন ব্যাগে। বিকেলে খিদে পেলে এক মুঠো খেলেই পেট ভরে যাবে।
ভুট্টা সেদ্ধ/ ছোলা মাখাঃ
সামান্য লবণ মরিচ-কাঁচালঙ্কা-ধনেপাতা- লেবুর রস দিয়ে যদি ভুট্টা বা ছোলা সেদ্ধ মেখে নিতে পারেন, তা হলে দারুণ স্বাদবদল হবে।
এর সঙ্গে খুব অল্প করে মুড়ি মিশিয়েও খেতে পারেন।
সেদ্ধ চিকেন/ ডিমঃ
অল্প চিকেন সেদ্ধ করে সামান্য অলিভ অয়েলে একটু রসুন, চিলি ফ্লেক্স দিয়ে সাঁতলে রাখুন। সন্ধেবেলা খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরে থাকবে।
সতর্কীকরণঃ
বিকেলে যাই খান না কেন, তাতে যেন অতিরিক্ত লবণ না থাকে তা লক্ষ্য রাখবেন।
বাড়তি লবণ শরীরে জল ধরে রাখে। তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও খুব ভালো নয়।