ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাস

যাঁরা মোটা অবস্থায় জিমে গিয়ে পেশি গঠন করতে চান, তাঁদের জন্য থাকে এক ধরনের খাবার তালিকা । আবার ওজন কম হলেও থাকে আলাদা খাবার তালিকা।

প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গুলোতে প্রশিক্ষক পরীক্ষা করে নানা ধরনের ব্যায়াম করতে বলবেন
তা নিয়ম অনুযায়ী করে যেতে হবে ।

সকালেঃ

রুটি ২টা, সবজি এবং ডিম একাধিক।

দুপুরেঃ

ভাত, মাছ বা মুরগি, শাকসবজি ।

বিকেলেঃ

হালকা নাশতা -এখানে থাকতে পারে চা-বিস্কুট ও ফলমূল।

রাতেঃ

রাতের খাবারে ভাতের সঙ্গে মাছ বা মাংস। তবে পরিমিত ভাত খেতে হবে । এ ছাড়া ব্যায়াম শুরু করার আগে বা মাঝে একাধিক কলা খেতে পারেন।

সপ্তাহে দুই দিন মাংস খাওয়া যেতে পারে।ওজন ও উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে তালিকা পরিবর্তন হতে পারে।

তবে যাঁদের উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি, তাঁরা অবশ্যই লাল মাংস, কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড, তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন।

এ ছাড়া সকালে চিরতা ভেজানো পানি, বিকেলে পানির সঙ্গে লেবু চিবিয়ে এবং বেশি করে শসা খেতে পারেন। ডিম খেলে কুসুম ছাড়া খেতে হবে।

বডিবিল্ডার হওয়ার জন্য খাবারের প্রয়োজনীয়তাঃ

বডি বিল্ডিং এর জন্য খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক খাদ্য এবং সবুজ ফল মূল শাক সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
 
বাহিরের খাবার খাওয়া একে বারেই বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ বাহিরের খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট থাকে এবং এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতি কর।
 
এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। একজন পরিশ্রম করা ব্যক্তির পানির চাহিদা একজন সাধারণ ব্যক্তি থেকে বেশি থাকে।
 
এজন্য আপনি যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন তাহলে অবশ্যই একটু বেশি পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।

প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানি পান আপনার কোষগুলো বৃদ্ধিতে সহায়ক
হবে।
 
বডি বিল্ডিং সফল করতে বিশ্রাম এর প্রয়োজনীয়তাঃ

যদি বডি বিল্ডিং করতে চান তাহলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।

কারণ ব্যায়াম করার পর শরীর খুবই ক্লান্ত থাকে এজন্য বিশ্রাম নেওয়া খুবই দরকার। বিশ্রামের ফলে আপনার কোষগুলো সহজেই বৃদ্ধি পায় ।
 
প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন । ব্যায়াম করার পর সঠিক পরিমাণে বিশ্রাম না নিলে পরের দিন ব্যায়াম করার আগ্রহ থাকে না।

তাই অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
 
ব্যায়াম করার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া এবং পরিমিত পরিমাণে ঘুমালে আস্তে আস্তে আপনার শরীরের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করবে। এজন্য ধৈর্য ধারণ করে নিয়ম গুলো মেনে এগিয়ে চলুন।
 
কারণ পরিবর্তনটা আপনি দু’একদিন বা দু’এক সপ্তাতে বুঝতে পারবেন না। এজন্য অবশ্যই স্থির মনোভাব নিয়ে নিয়মিত শরীর চর্চা করতে থাকুন।
 
একটা সময় পূর্বের তুলনায় আপনার শরীরে অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ করতে পারবেন।

দু’একদিন ব্যায়াম করে অলসতা ঢেকে আনবেন না তাহলে কখনোই পেশী বহুল দেহের অধিকারী হতে পারবেন না।
 
এক্ষেত্রে অলসতা ব্যায়াম করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা । তাই অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করুন এবং নিয়মিত ব্যায়াম অনুশীলন করুন। আপনার শরীরের পরিবর্তন নিশ্চিত ঘটবে।

পুশ-আপঃ

 ছোটবেলা থেকেই এই ব্যায়ামের সঙ্গে আমরা পরিচিত। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে নিজেদের শরীরের ক্ষমতা বুঝে এটা করতে পারেন।

হাতের আর পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে শরীরটাকে এক বার তুলুন আর এক বার নামান।

রোয়িংঃ

ডাম্বেলের বদলে আপনি হাতে নিতে পারেন দুটি দু’ লিটারের জলের বোতল। এর পর মেরুদণ্ড টান টান রেখে হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে সামনের দিকে ঝুঁকুন ।

যেন মাটি থেকে কিছু তুলছেন, ঠিক সেই ভঙ্গি। এর পর জলের বোতল ধরা হাত দু’টিকে মাটির দিক থেকে আপনার শরীরের দিকে টানুন।

সিটেড রাশিয়ান টুইস্ট (২)

শোল্ডার প্রেসঃ

জলের বোতল ধরা হাত দু’টিকে সোজা মাথার উপর তুলে দিয়ে শরীরটা ব্যালান্স করুন।

সাইড বেন্ডঃ

হাতে ধরা থাকা জলের বোতল দু’টি, পা
দু’টি সামান্য ফাঁক করে হাত দু’টিকে মাথার উপরে তুলে, শরীরটাকে একবার বাঁ দিকে আনত করুন আর একবার ডান দিকে করুন।

শরীরের নীচের অংশের জন্যঃ

এখানেও সেই একই কথা। রোজ রোজ না করে একটা দিনের বিরতি দিয়ে করাই শ্রেয়। প্রতিটা ব্যায়াম দশবার করে তিন রাউন্ড।

স্কোয়াটঃ
 
এই ব্যায়াম খালি হাতে বা হাতে কোন ভারী জিনিস নিয়ে করতে পারেন। হিপের উপর জোর দিয়ে চেয়ারে বসার মতো করে মেঝেতে অর্ধেকটা বসুন।

লাঞ্জঃ

একটা পা সামনে, একটা পা পিছনে ; দু’টি পায়ের মধ্যে দূরত্ব রাখুন তিন ফুট । মেরুদণ্ড সোজা রেখে হাঁটুকে ৯০ ডিগ্রি ভাঁজ করে মাটি স্পর্শ করান।

ব্রিজঃ

দু’পাশে হাত রেখে মেঝের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাঁটু দুটি ভাঁজ করে কোমরের দিকে টেনে আনুন। পায়ের পাতায় ভর দিয়ে হাঁটু-বুক এক সরল রেখায় রাখুন।

স্টেপ আপঃ

হাতের কাছে একটা ছোট টুল রাখুন। এক বার ডান পা দিয়ে উঠুন আর নামুন আর এক বার বাঁ পা দিয়ে উঠুন-নামুন।

পেটের ব্যায়াম বা কোর এক্সারসাইজঃ

এগুলি চাইলে কিন্তু আপনি রোজ করতে পারেন।

প্ল্যাঙ্কঃ

কনুই আর দু’পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে শরীরটাকে শূন্যে এক সরলরেখায় রাখার নাম প্ল্যাঙ্ক। এ ক্ষেত্রে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে থাকবে শরীর।

সাইড প্ল্যাঙ্কঃ

একটা হাত থাকবে কোমরে। আর একটা হাত মাটিতে। এর পর এক পাশ ফিরে প্ল্যাঙ্ক করলে, বলা হয় সাইড প্ল্যাঙ্ক।

সিটেড রাশিয়ান টুইস্টঃ

হিপের উপর ভর দিয়ে মেঝেতে বসতে হবে। হাঁটু টাকে ভাঁজ করে কোমরের কাছে এনে শূন্যে ধরুন।

পর্যায়ক্রমে শরীরটাকে এক বার বাঁ দিকে আর এক বার ডান দিকে ঘোরান।

কার্ডিওঃ

এই ধরনের ব্যায়াম পরিমিত হারে করাই ভাল । রোজ রোজ করার চেয়ে মাঝে এক দিনের বিরতি দিতে পারলে ভাল।

স্কোয়াট রানিংঃ 

সামনে হাত দু’টিকে রেখে দৌড়নোর ভঙ্গি করা । শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী ৪০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট পর্যন্ত এটা অভ্যাস করতে পারেন । ১ মিনিটের বিশ্রাম নিয়ে অন্তত তিন-চার দফা করুন।

জাম্পিং জ্যাকঃ

পা দুটি ফাঁক করে মাথার উপর হাত তোলা, নামানো।

স্টেয়ার ক্লাইম্বিংঃ

 দশটি সিঁড়ি চিহ্নিত করে নিন , তার পর
যত দ্রুত সম্ভব সিঁড়ি দিয়ে উঠুন আর
নামুন ; অন্তত পাঁচ বার এ রকম করুন ।

পাওয়ার ওয়াকিংঃ

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জলের বোতল হাতে নিয়ে হাঁটার ভঙ্গি করা ।
মনে রাখবেন, প্রতিটি ব্যায়ামের ক্ষেত্রে মেরুদণ্ড সোজা রাখা খুব জরুরি ।

অন্যথায় কোমরে চোট পেতে পারেন।
যাঁদের ফিটনেস লেভেল মোটামুটি
পর্যায়ের, উল্লিখিত প্রতিটি ব্যায়াম
তাঁদের জন্যই।

আত্মবিশ্বাস থাকলে এই ব্যায়ামগুলোর পরের ধাপগুলোও চেষ্টা করতে পারেন ।

খুব সহজ কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করলে শারীরীক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক দিক দিয়েও চাঙ্গা থাকবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *