ব্লগ তৈরি , গোগল ব্লগার এর সুবিধা, ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেসের মধ্যে পার্থক্য ইত্যাদি :
আপনি যদি স্রেফ শখের বশে ব্লগ তৈরি করতে চান তাহলে WordPress.com ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানাতে পারেন। কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু যদি প্রফেশনালি একটি ব্লগ আপনি বানাতে চান তাহলে অবশ্যই WordPress.org ব্যবহার করবেন। ওয়েবসাইটের সম্পূর্ণ মালিকানা থাকবে আপনার হাতে কিছু টাকা খরচ হলেও এবং আপনি যা খুশি তাই ওয়েবসাইটে করতে পারবেন।
ব্লগার এর পরিচয়:
ব্লগার একটি উম্মুক্ত প্লাটফর্ম ব্লগ তৈরির জন্য । ইহা গুগলের একটি পণ্য যার মাধ্যমে বাণিজ্যিক অথবা ব্যক্তিগত ব্লগ তৈরি করা যায়। প্রথমে পায়রা ল্যাব দ্বারা ডেভেলপ করা হয়েছিল ব্লগার । কিন্তু পরে ইহাকে গুগল কিনে নেয় ২০০৩ সালে এবং তাদের নিজস্ব সার্ভারে হোস্ট করে। একজন ইউজার একটি একাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১০০টি ব্লগ তৈরি করতে পারবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ।
তবে অবশ্যই সাবডোইন ব্যবহার করতে হবে বিনামূল্যে ব্লগ তৈরি করতে হলে । ব্লগার-এর স্বয়ংক্রিয় সাব-ডোমেইন হচ্ছে.blogspot. com. অর্থাৎ আপনি ব্লগের জন্য যে নাম দিবেন তার পরে অবশ্যই .blogspot.com যুক্ত হবে। তবে চাইলে একটি কাস্টম ডোমেইনও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। সে জন্য একটি ডোমেইন কিনে নিতে হবে এক্সট্রা টাকা খরচ করে ।
ওয়েব ডেভেলপ সম্পর্কে আপনি যদি দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে ব্লগার ব্যবহার করে ফ্রিতে যেকোন ধরণের ওয়েব সাইট বানাতে পারবেন।
ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেসের মধ্যে পার্থক্য:
ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ফ্রি প্লাটফর্ম ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস দুটিই । এ দুটির মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্যও আছে। আজ এখানে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গুগল ব্লগার,
ওয়ার্ডপ্রেস,
মালিকানাগত দিক থেকে পার্থক্য।
গোগলের একটি ফ্রি ব্লগিং সার্ভিস ব্লগার ডট কম। শুধুমাত্র গোগলের হাতে ইহার মালিকানা এবং কন্ট্রোল ক্ষমতা । একজন প্রকাশক মাত্র আপনি অথবা আমি । অপর দিকে ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress.org) ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানালে সেটির মালিকানা এবং ক্ষমতা, কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ আপনার হাতেই থাকবে।
ওয়েবসাইট গোগলের সার্ভার থেকে অন্য সার্ভারে ট্রান্সফার করতে পারবেন না ইচ্ছা করলেই । যে কোন সার্ভারে সাইট হোস্ট করতে পারবেন আপনার পছন্দ মত এবং যে কোন সময় ট্রান্সফার করতে পারবেন।
খরচের দিক থেকে পার্থক্য:
আপনার ব্লগ লঞ্চ করতে পারবেন একটি সাবডোমেইন ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি সাবডোমেইন ব্যবহার করে এখানেও আপনার ব্লগ লঞ্চ করতে পারবেন। তবে অনেক সীমীত এখানে আপনার ক্ষমতা । ব্যবহার করতে পারবেন কাস্টম ডোমেইন। সে ক্ষেত্রে শুধু ডোমেইনের দাম বহন করতে হবে।
এ ছাড়া আর কোন প্রকার খরচ করতে হবে না। ডোমেইনের সাথে হোস্টিংও আপনাকেই কিনতে হবে ওয়ার্ডপ্রেস অর্গ ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানালে এবং যত খুশি তত স্পেস বাড়িয়ে নিতে পারবেন।।
ক্ষমতায়ন এর দিক থেকে পার্থক্য:
প্রকাশক হিসেবে আপনার ক্ষমতা সীমীত থাকবে ব্লগার ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানালে। তিন ধরণের ব্লগ আপনি বানাতে পারবেন।
০১) ব্যক্তিগত ব্লগ (একমাত্র প্রকাশক ছাড়া অন্য কেউ ব্লগ ভিজিট করতে পারবে না।),
০২) নির্দিষ্ট পাঠক ব্লগ (আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন কারা কারা আপনার ব্লগ ভিজিট করতে পারবে।)
এবং ০৩) সার্বজনিন (সবাই আপনার ব্লগ ভিজিট করতে পারবে।)
সম্পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে আপনার হাতে ওয়ার্ডপ্রেস অর্গ ব্যবহার করে ওয়েবসাইট বানালে । চাইলে যে কোন পোস্ট আপনি এখানে অথবা পেজ আলাদা আলাদা ভাবে ব্যক্তিগত, নির্দিষ্ট পাঠক অথবা সার্বজনিন করতে পারবেন।
তাহলে আপনার ওয়েবসাইট সবাই ভিজিট করতে পারলেও ঐ পোস্টটি কেউ দেখতে পারবে না। আপনি যদি কোন একটি পোস্ট Visibility: Privet করে রাখেন আপনি ইচ্ছা করলে এখানে যেকোন পোস্ট অথবা পেজ পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড করেও রাখতে পারবেন । যে কোন ধরনের কোডিং যুক্ত এবং এডিটিং করতে পারবেন।
ব্লগ ডিজাইনগত পার্থক্য:
আপনি যে কোন ধরণের কাস্টম ডিজাইন করার সুবিধা পাবেন ব্লগারে । ওয়ার্ডপ্রেসেও ডিজাইন যুক্ত করতে পারবেন যে কোন ধরণের । বিশেষ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন ধরণের পেজ বিল্ডারগুলো । Variable ব্যবহার করার মাধ্যমে থিম ডিজাইন ও পরিবর্তন করতে পারবেন । যেগুলো সাহায্যে ড্রাগ এন্ড ড্রপ করে ডিজাইন করতে পারবেন ওয়ার্ড- প্রেসেও বিভিন্ন ধরণের পেজ বিল্ডার প্লাগিন আছে।
প্লাগইন এবং থিম:
বিভিন্ন ধরণের টেম্পলেট আছে ব্যবহার করতে পারবেন যেগুলো । কিন্তু প্লাগইন ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। যে গুলো আপনি ইচ্ছা মত ব্যবহার করতে পারবেন ওয়ার্ডপ্রেসে হাজার হাজার ফ্রি এবং পেইড থিম ও প্লাগিন আছে । ব্লগারে শুধুমাত্র গুটি কয়েক Gadget ব্যবহার করতে পারবেন।কিন্ত ওয়ার্ডপ্রেসে আপনার ইচ্ছামত যেকোন ফাংশনালিটি এড করতে পারবেন
মনিটাইজেশন:
সুযোগ রয়েছে Google Adsense ব্যবহার করার । এখানেও সুযোগ রয়েছে Google Adsense ব্যবহার করার । যে কোন ধরনের এ্যাড মনিটাইজ করার সুযোগ রয়েছে।
সিকিউরিটিগত পার্থক্য:
অনেক বড় একটা বিষয় ব্লগের তথা ওয়েব- সাইটের জন্য সিকিউরিটি । ব্লগার যেহেতু গোগলের একটা সার্ভিস এবং গোগলের নিজস্ব সার্ভার। আপনার ব্লগ ৯৯.৯৯% সিকিউর যদি আপনার পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত কোন দূর্বলতা না থাকে তাহলে বলা যায় ।
সে ক্ষেত্রে আপনার ব্লগ হ্যাক করতে হলে প্রথমে গুগলের সার্ভার হ্যাক করতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস যেহেতু সেলফ হোস্টেড ওয়েবসাইট সেহেতু এটির সিকিউরিটি এবং রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্ব কেবল প্রকাশকের উপরে বর্তায়। ওয়ার্ডপ্রেস বেশ সিকিউর একটা প্লাটফর্ম হলেও এখানে বিভিন্ন ধরণের থিম এবং প্লাগিন ব্যবহার করার ফলে মাঝে মাঝে এটি সিকিউরিটি ঝুকির মুখে পড়তে পারে। সিকিউরিটি বাড়ানো যায় ওয়ার্ডপ্রেসে বিভিন্ন ধরনের প্লাগইন ব্যবহার করে ।
ভবিষ্যৎ
ব্লগার যেহুতু সম্পূর্ণরূপে গোগলের নিজস্ব সম্পত্তি কাজেই ইহার ভবিষ্যৎ গোগলের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। প্রকাশকের যে কোন পোস্ট এমনকি সম্পূর্ণ ব্লগ মুছে ফেলার অধিকার আছে গোগলের ।
প্রকাশকের সম্পূর্ণ নিজস্ব সম্পত্তি ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে বানানো ওয়েবসাইট । এই ওয়েবসাইট ভবিষ্যতে চালু কিংবা বন্ধ থাকবে সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে প্রকাশকের ইচ্ছার উপর।
গোগল ব্লগার এর সুবিধা:
আপনাকে একটি টাকাও খরচ করতে হচ্ছে না ব্লগারের সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে । সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একাদিক ব্লগ বানাতে পারবেন।
একটি ব্লগ রেডি করে ফেলা যায় কয়েকটি মাত্র ক্লিকের মাধ্যমেই ।
ইহার সিকিউরিটি, ব্যাকআপ নিয়ে ভাবতে হয় না গোগল সার্ভার ব্যবহার করার কারণে । ব্লগারে বানানো ওয়েবসাইট তুলনামূলক দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ওয়েব ডেভেলপমেন্ট সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলেও ওয়েবসাইট বানানো যায়।
আপনার ব্লগের কার্য ক্ষমতা বাড়াতে পারবেন
আপনি চাইলে অল্প টাকায় বিভিন্ন ধরণের এক্সট্রা ফাসালিটি সম্পন্ন প্রিমিয়াম টেম্পলেট কিনে ।
ব্লগ হ্যাক বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার চান্স একেবারেই কম।
ব্লগার গোগলের নিজস্ব প্রডাক্ট হওয়াতে ডিফল্ট ভাবেই এটি এসইও ফ্রেন্ডলি।
স্মার্ট ফোনের জন্য আছে বিশেষ অ্যাপ। যার সাহায্যে ফোনের মাধ্যমেই পোস্ট লিখতে এবং পাব্লিশ করতে পারবেন।
গোগল ব্লগার এর অসুবিধা
ইহার মালিকানা যেহেতু গোগলের হাতে সেহেতু একটু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে গোগল আপনার ওয়েবসাইট মুছে ফেললে আপনার কিছুই করার থাকবে না।
ইচ্ছা মত প্লাগিন ব্যবহার করা যায় না।
বাইডিফল্ট এসইও ফ্রেন্ডলি হলেও এডভান্স এসইও ব্লগারে সম্ভব না।