মহামারি কীভাবে শেষ হয়
করোনা ভাইরাস মহামারির আগে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমরা মোটেই ভাবতাম না যে আমাদেরও এই রোগ হতে পারে। কিন্তু আমাদের পূর্ব পুরুষ যে সব ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে ছিলেন তার কিছুটা আমাদের মধ্যে এখনও রয়ে গেছে।
নীচে স্ক্রল করে দেখুন এসব মহামারির অবসান কীভাবে হয়েছিল। ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে এ থেকে সেই ধারণাও আপনি পেয়ে যাবেন।
জ্যাসমিনঃ
আমাদের মতোই তার পূর্বপুরুষও বেশ কয়েকটি মহামারি জয় করে বেঁচে ছিলেন।
চলুন অতীতে ফিরে গিয়ে দেখা যাক কোন্ ধরনের অসুখ-বিসুখ তাদের মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
বিউবনিক প্লেগ – ভয়ানক এই রোগ এখনও আমাদের মাঝে আছে ।
তিন বার মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রথম মহামারি হয় ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে।
প্রায় ৬০ পুরুষ আগে প্রাচীন যুগে জ্যাসমিনের পূর্ব পুরুষ বেশ কয়েকটি বিউবনিক প্লেগ মহামারির সম্মুখীন হন।
ইঁদুরের দেহ থেকে এক ধরনের মাছির মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের জলীয় কণিকার মাধ্যমে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষ সংক্রমিত হন । এর প্রভাব ছিল ভয়াবহ।
ইয়েরসিনিয়া পেসটিস ব্যাকটেরিয়া বিশেষ প্রজাতির ইঁদুরের দেহে বংশবিস্তার করে।
পরবর্তী ২,০০০ বছর ধরে এই প্লেগের কবলে পড়ে কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারান।
বিশেষভাবে ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের ‘ব্ল্যাক ডেথ’ মহামারি ছিল সব চেয়ে মারাত্মক।
এক সময় বহু মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল এই প্লেগ। কিন্তু এখন মৃত্যুর হার খুব কম।
সর্ব মোট মৃত্যু:সর্বোচ্চ ২০ কোটি
*২০১০ থেকে ২০১৫র হিসেব নোট:
বিশ্বের জন সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগের মহামারিগুলো যদি এখন হতো তাহলে তার প্রভাব হতো অনেক বেশি মারাত্মক।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং অন্যান্য গবেষণাপত্র।
ধারণা করা হয়, বিউবনিক প্লেগ হলে দেহের ‘লিম্ফ’ বা লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়, যাকে ‘বিউবস’ বলে। কঠোর কোয়ারেন্টিন বিধি নিষেধ আরোপ করে, উন্নত পয়োনিষ্কাশন এবং অন্যান্য ব্যবস্থার মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত এই মহামারিকে পরাস্ত করা হয়।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের সংক্রামক ব্যধি-বিস্তার বিভাগের অধ্যাপক স্টিভেন রাইলি বলছেন, এই রোগ কীভাবে ছড়ায় এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা তৈরি না হলে ইহা করা সম্ভব হতো না। এই ব্যাপারটা এখনকার মহামারির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
“সংক্রমণের ব্যাপারে আপনার ধারণা যখন পরিষ্কার হবে, সবাই যখন ব্যাপারটা সম্পর্কে জানতে পারবে, শুধু তখনই সংক্রমণ কমানোর লক্ষ্যে আপনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।”
এখনও কোন কোন দেশে প্লেগ রোগ দেখা দিতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে, জ্যাসমিন এখনও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
প্লেগ রোগের ঘটনা ইদানীং কম। এখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সফলভাবে প্লেগ-এর চিকিৎসা সম্ভব।
গুটি বসন্ত – বিজ্ঞান যে ভাইরাসকে নির্মূল করেছে:
ব্যাপক মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে বেশ কয়েক বার। সর্ব প্রথম দেখা যায় ১৫২০ সালে।
এর কয়েকশো বছর পর, জ্যাসমিনের পূর্ব পুরুষ মুখোমুখি হন গুটি বসন্ত মহামারির।
ভ্যারিওলা মাইনর নামে ভাইরাস থেকে এই রোগ হয়। মানব সমাজের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী যে ক’টি রোগ রয়েছে, ‘স্মলপক্স’ বা গুটি বসন্ত তার অন্যতম।
এই রোগে আক্রান্ত হলে সারা শরীর জুড়ে তরল-ভর্তি ছোট ছোট গুটি দেখা যায়। এবং এই মহামারি যখন তুঙ্গে তখন গুটি বসন্তে আক্রান্ত প্রতি ১০জন রোগীর মধ্যে তিন জনই প্রাণ হারাত।
সংক্রমিত রোগীর নাক, মুখ কিংবা গুটির খোসা থেকে এটা ছড়ায়।
ভ্যারিওলা মাইনর ভাইরাস পশুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয় না ।
প্লেগের মতোই, গুটি বসন্ত কোটি কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছে। শুধু মাত্র বিংশ শতাব্দীতেই এই রোগে মারা গেছে ৩০ কোটি মানুষ।
গুটি বসন্ত হয়ে বিশ্ব ব্যাপী অন্তত ৩৫ কোটি মানুষ মারা গেছে – কিন্তু আজকাল এতে কেউ মারা যায় না।
বর্তমান মৃত্যু:০
সর্বমোট মৃত্যু:অন্তত ৩৫ কোটি
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এবং অন্যান্য গবেষণাপত্র।
কিন্তু ১৭৯৬ সালে ব্রিটিশ ডাক্তার এডোয়ার্ড জেনার এবং গবেষকরা যে ভ্যাকসিন তৈরি করেন তার ব্যবহারে গুটি বসন্ত সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে। তবে এটা ঘটতে সময় লেগেছে আরও প্রায় ২০০ বছর।
গুটি বসন্ত হচ্ছে একমাত্র রোগ যা এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দূর হয়েছে। অধ্যাপক রাইলি মনে করেন এটি চাঁদে অবতরণের মতোই মানব সভ্যতার এক অসাধারণ অর্জন।
এই রোগের অবর্তমানে বিশ্বের যে আর্থিক সঞ্চয় হয়েছে তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয়ের এক রেকর্ড সুফল হিসেবে একে দেখা যেতে পারে।”
বিজ্ঞানের এই অর্জনের সুবাদেই আমরা এবং জ্যাসমিন এখন ঝুঁকিমুক্ত।
কলেরা – নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে স্থানীয় পর্যায়ে মহামারি।
বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা দেশে এর প্রকোপ। বড় ধরনের মহামারি দেখা গিয়েছিল ১৮১৭ সালে।
এরপর প্রায় আট পুরুষ আগে জ্যাসমিনের পূর্ব পুরুষকে কলেরার প্রকোপ মোকাবেলা করতে হয়।
দূষিত খাদ্য কিংবা পানীয় জলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ পর্যন্ত মোট সাতটি কলেরা মহামারি হয়েছে। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গেছে।
ভিবরিও ম্যালেরি ব্যাকটেরিয়া জল এবং খাদ্যকে দূষিত করে।
উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলি থেকে কলেরার ঝুঁকি দূর হয়েছে। কিন্তু অনেক নিম্ন আয়ের দেশে এই রোগ এখনও ‘এনডেমিক’ বা স্থানীয় পর্যায়ের মহামারি হিসেবে রয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, এখনও প্রতি বছর এক লক্ষ থেকে এক লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ কলেরা হয়ে মারা যায়।
কলেরা কোটি কোটি মানুষের প্রাণ নিয়েছে। এখনও হাজার হাজার মানুষ কলেরা হয়ে মারা যায়।
সর্বমোট মৃত্যু:প্রায় ৪ কোটি
*প্রতি বছরের হিসেব সূত্র:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আলী এম, নেলসন এ আর, লোপেজ এ এল, স্যাক ডিএ (২০১৫) গ্লোবাল বার্ডেন অফ কলেরা ইন এনডেমিক কান্ট্রিজ।
“জল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি কলেরার প্রকোপ দূর করতে পারেন,” অধ্যাপক রাইলি বলছেন, “কিন্তু এতে কোন রকম ভুল হলে কলেরা আবার দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
শুধুমাত্র এই কারণে ভ্যাকসিন এবং সহজ চিকিৎসা থাকার পরও জ্যাসমিনের যেখানে বাড়ি সেখানে কলেরা রোগ দেখা দিতে পারে এবং সে দ্রুত প্রাণ হারাতে পারে।
জ্যাসমিনের পরিবার কয়েকটি ফ্লু মহামারির কবল থেকেও প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে সব চেয়ে ভয়ংকর মহামারি দেখা গেছে যখন তার ‘গ্রেট-গ্রেট গ্র্যান্ড-প্যারেন্ট’ অর্থাৎ তার বৃদ্ধ প্রপিতামহ/ প্রমাতামহী বেঁচে ছিলেন।
স্প্যানিশ ফ্লু নামে পরিচিত ইনফ্লুয়েঞ্জার সব চেয়ে প্রাণঘাতী মহামারি দেখা দেয় ১৯১৮ সালে। এতে সারা বিশ্বে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।
অনেকটা আজকের এই নতুন মহামারি করোনা ভাইরাসের মতোই রোগীকে আলাদা করে রাখা কিংবা কঠোর কোয়ারেন্টিনের মাধ্যমে এই ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার কমিয়ে আনা সম্ভব।
স্প্যানিশ ফ্লু’র মূল কারণ H1N1 ভাইরাস
১৯১৮ এবং ১৯২০ সালের মধ্যে পর পর দুটি মহামারির পর H1N1 ভাইরাসের প্রকোপ কমে আসে । কিন্তু এর একটি কম মারাত্মক জীবাণু এখনও প্রতি বছর বহাল তবিয়তে ছড়িয়ে পড়ে।
স্প্যানিশ ফ্লু-তে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে। এই মৌসুমি বালাই এখনও মানুষের মৃত্যুর কারণ
সর্ব মোট মৃত্যু:স্প্যানিশ ফ্লুতে ৫ কোটিরও বেশি
*প্রতি বছরের হিসেব নোট:
মৌসুমি ফ্লু-তে মৃত্যুর হিসেব, যেটা ফ্লু মহামারি থেকে আলাদা।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন
কিন্তু অন্যান্য ফ্লু মহামারি এখনও চলছে।
১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে প্রাণ হারায় এক লক্ষ মানুষ। ইহা এখনও প্রতি মৌসুমেই দেখা দেয়। সোয়াইন ফ্লু H1N1 ভাইরাসের একটি রূপ। ২০০৯ সালে ইহা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৯% লোককে সংক্রমিত করেছে।
অধ্যাপক রাইলি বলছেন, এসব ফ্লু থেকে ‘প্যানডেমিক’ অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী মহামারির ঝুঁকি রয়েছে। এসব ফ্লু থেকে জ্যাসমিন কিংবা আমরাও আরেক বার মহামারির মুখোমুখি হতে পারি।
এছাড়াও আমরা মৌসুমি ফ্লু-তে আক্রান্ত হতে পারি। এখনও প্রতি বছর এতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।
এইচআইভি/এইডস – যে মহামারি এখনও চলছে।
প্রায় চার দশক আগে, জ্যাসমিনের বাবা-মা এইচআইভি/এইডস মহামারির মুখে পড়েন।
হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) মানব দেহের তরল পদার্থ যেমন রক্ত, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়ায়। সারা বিশ্বে এই রোগে এ পর্যন্ত ৩.২ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
এইচআইভি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়
অধ্যাপক রাইলি বলছেন, এইচআইভি হচ্ছে ‘সব চেয়ে নিকৃষ্ট পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী এক ভাইরাস।’ কারণ দীর্ঘ দিন ধরে ইহা বিস্তার লাভ করে এবং এতে মৃত্যুর হার খুবই উঁচু। ইহা খুব দ্রুত ছড়ায় কারণ মানুষ জানতেই পারেনা যে তার এইচআইভি হয়েছে।
তবে এই রোগ চিহ্নিত করার পদ্ধতি উন্নত হওয়ায় এবং বিশ্ব ব্যাপী জন সচেতনতা বাড়ার ফলে মানুষের যৌন আচরণে পরিবর্তন ঘটেছে এবং মাদক ব্যবহারকারী- দের মধ্যে নিরাপদ ইনজেকশন ব্যবহারও বেড়েছে । এর ফলে এইচআইভির বিস্তার কমিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এরপরও শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই এইডস হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬,৯০,০০০ মানুষ প্রাণত্যাগ করেছে।
এইচআইভি/ এইডসে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনও হাজার হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায়।
সর্ব মোট মৃত্যু:৩.২ কোটি
*২০১৯ সাল থেকে সর্বশেষ হিসেবসূত্র:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
যদিও এইচআইভির কোন প্রতিকার নেই, কিন্তু কেউ যদি এমন দেশে থাকেন যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত এবং যেখানে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ঔষধ সহজলভ্য সেখানে জ্যাসমিনের মতো কেউ এতে আক্রান্ত হলেও দীর্ঘ জীবন পেতে পারবেন এবং সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।
তবে যে দেশে এসব সুবিধে নেই সেখানে তারা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে থাকবেন।
সার্স এবং মার্স – যে করোনা ভাইরাস সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২০০২-২০০৩ এবং ২০১২ – বর্তমান সময়।
এর পর দুই থেকে তিন দশক পর জ্যাসমিন তার নিজের জীবনেই সার্স এবং মার্স ভাইরাসের হুমকির মুখে পড়েন।
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেসি সিনড্রোম (সার্স) প্রথম কোন করোনা ভাইরাস যা প্রাণ ঘাতী এক মহামারির রূপ নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, ২০০২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে এতে ৮০০-রও বেশি লোক মারা যায়।
সার্স করোনাভাইরাস (সার্স-কোভ) প্রথম চিহ্নিত হয় ২০০৩ সালে
তবে ২০০৩ সালের শেষ নাগাদ নতুন কোন কেস ধরা না পড়ায় এই মহামারির অবসান ঘটেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করে।
এর কিছু দিন পর দেখা যায় মার্স বা মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। এটাও এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এ পর্যন্ত এতে ৯১২ জন মারা গেছে। এই রোগটি মূলতঃ দেখা দেয় আরব উপ দ্বীপের দেশগুলিতে।
কিন্তু ধরুন, ব্রিটেনের মতো দেশে মার্স-কোভ -এর ঝুঁকি কম হলেও মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলিতে এর ঝুঁকি অনেক বেশি। এই ভাইরাস মূলতঃ উট থেকে ছড়ায়।
সার্স হয়ে এ পর্যন্ত ৮০০রও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
সর্ব মোট মৃত্যু:৮১৩
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
জ্যাসমিনের নিজের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও বেশিরভাগ দেশে এর ঝুঁকি বেশ কম।
কোভিড-১৯: মহামারির যে রূপ আগে কেউ দেখেনি
২০১৯ – বর্তমান সময়।
এখন জ্যাসমিন এবং আমরাও নতুন ধরনের এই সার্স ভাইরাসের কবলে পড়েছি । এই ভাইরাস মানুষের শ্বাস যন্ত্রে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ঘটায়।
সার্স-কোভ-২ নামের এই ভাইরাস আসলে ২০০২ সালের সার্স ভাইরাসের একটি বিশেষ রূপ। রোগ তত্ত্ববীদরা বলেন, এটা এমন এক মহামারি যা আগে থেকে ধারণা করা যায়নি । কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এর লক্ষণ আগে থেকে ধরা পড়ে না, কিংবা লক্ষণ ধরা পড়ার আগেই ইহা অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর নানা ধরনের প্রভাব দেখা যায় – খুব সামান্য থেকে মৃত্যু পর্যন্ত।
অধ্যাপক রাইলি বলছেন, “সেই জন্য এই মহামারিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না।”
সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সাথে ২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে
কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে।
নতুন এই করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত ১০ লক্ষেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
এর ভ্যাকসিন এবং কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কারের লক্ষ্যে বিশ্ব ব্যাপী প্রয়াস চলছে। কিন্তু বিশ্ব জন সংখ্যার এক বিরাট অংশ এখনও চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জ্যাসমিন, আমি, আপনি – আমাদের কারও বিপদ এখনও কাটেনি।
এরপর কী ঘটবে?
নতুন নতুন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে অতীতে একের পর এক বিশ্ব ব্যাপী যে সব মহামারি হয়েছে তারই পথ ধরে সর্ব শেষ এই করোনা ভাইরাসও আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
সব চেয়ে মারাত্মক মহামারি গুলিতে কোটি কোটি লোকের প্রাণহানি হয়েছে
গুটি বসন্ত অন্তত ৩৫ কোটি;
প্লেগ সর্বোচ্চ ২০ কোটি;
কলেরা প্রায় ৪ কোটি;
ইনফ্লুয়েঞ্জা স্প্যানিশ ফ্লুতে ৫ কোটিরও বেশি
এইচআইভি/এইডস৩.২ কোটি ;
সার্স ৮১৩
কোভিড-১৯?
নোট: বিশ্বের জন সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। আগের মহামারিগুলো যদি এখন হতো তাহলে তার প্রভাব হতো অনেক বেশি মারাত্মক।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন, গবেষণাপত্র, জনস্ হপকিন্স ইউনিভার্সিটি।
পূর্ববর্তী মহামারি গুলোকে বশীভূত করার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে: সংক্রমণের বিস্তার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা, জন স্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রচারণা এবং নতুন ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা পদ্ধতি। অতীতের মতো এসব কিছুর সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়েই করোনা ভাইরাসের বর্তমান মহা- মারিকে জয় করা সম্ভব হবে।
অধ্যাপক রাইলি বলছেন, যদিও একটি ‘নিরাপদ ও কার্যকর’ ভ্যাকসিন বর্তমান সঙ্কটের সমাধান করতে পারে। কিন্তু সেই ভ্যাকসিন খুঁজে পাওয়া ব্যাপারটা “এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।” এর পরিবর্তে, জনগণের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে করোনা ভাইরাসের সাথে বসবাসের উপায় খুঁজে বের করাই হবে সব চেয়ে ভাল পথ।
” আশা করছি পাঁচ বছর, কিংবা হয়তো তার আগেও, আমরা নিশ্চিতভাবে এমন একটি ভাল ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবো যেটা সারা বিশ্বে ব্যবহার করা যাবে। সেটা সম্ভব না হলে এই সময়ের মধ্যে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে থাকবে এবং কোথাও ইহা সীমিতভাবে দেখা গেলে তার সাথে আমরা বসবাস করতে শিখবো,” তিনি বলেন।
এবং গুটি বসন্তের নির্মূল প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে যে বিশ্বের বিজ্ঞানী সমাজ যখন এক হয় তখন তাতে অনেক সাফল্য আসে।
নতুন করোনা ভাইরাসের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি জটিল, কারণ উপসর্গ দেখা যায় না এমন রোগীদের মাধ্যমে ইহা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরও অধ্যাপক রাইলি আশা করছেন, এই সঙ্কট সমাধানে বিশ্বব্যাপী যে ’অসাধারণ প্রচেষ্টা’ চলছে তা একদিন সাফল্য বয়ে আনবেই।
“বিশ্ব ব্যাপী এই মাত্রার সহযোগিতা এর আগে কখনও দেখা যায়নি,” তিনি বলছেন, “আশা করা যায় যে সাফল্য আমরা অর্জন করবো সেটাও আমরা এক সময় ভাগ করে নিতে পারবো।” তবে একথা ভুলে গেলে চলবে না যে অতীতে মহামারির কারণ হয়েছে যেসব রোগ-জীবাণু সেগুলো এখনও আমাদের মধ্যে রয়েছে। মহামারির অবসান হয়তো ঘটেছে, কিন্তু সেই ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি এখনও কমেনি।