শরীরচর্চা বন্ধ করে দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে ?
শরীর সুস্থ রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা (physical exercise) । নিয়মিত ব্যায়াম এবং সুষম আহার শরীরকে একা- ধিক রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
বিশেষজ্ঞরা তাই নিয়মিত ব্যায়াম (exercise) করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত শরীরচর্চা (work out) করলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ যেমন সুস্থ থাকে
তেমনই তা শরীরে মেদের আধিক্য
কমায়।
পাশাপাশি হাড়ের কোনও সমস্যা হলে
তা-ও সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আমরা
প্রত্যেকেই জানি নিয়মিত শরীর চর্চা করলে শরীরের সমস্ত কাজ কর্ম সঠিক ভাবে
সম্পন্ন হয় এবং সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভাল থাকে।
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন প্রতিনিয়ত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট শরীরচর্চা করা প্রয়োজন।
কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁরা কোন দিন ই শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করেন না। এমনকী, অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রথম দিকে শরীর চর্চা শুরু করলেও তা নিয়মিত না
করে মাঝ পথে বন্ধ করে দেন ।
৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে অফিসের কাজ, ডেকে আনে প্রাণ ঘাতী ঝুঁকি।
আমরা প্রত্যেকেই এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, বর্তমান সময়ে আমরা যে ধরনের জীবন ধারণ করি তাতে শরীরে অনেক খারাপ প্রভাব পড়ে।
অত্যধিক বাইরের খাবার খাওয়া, অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ না করা, মদ্যপান, ধূমপান ইত্যাদি
সব কিছুই প্রভাব ফেলে শরীরে।
তাই যদি এর সঙ্গে শরীর চর্চা না করা হয় তাতে শরীর আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত শরীর চর্চার পরামর্শ দিলেও অনেকে তা মানেন না, এমনকী অনেকে একদমই শরীর চর্চা করেন না।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করলে প্রতিটি মানুষকে অত্যন্ত সবল দেখায় এবং বয়স বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে না ।
ল্যানসেটের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, নিয়মিত শরীর চর্চা যাঁরা করেন না তাঁদের আয়ু তুলনা মূলক কম হয়।
এবং বিশ্বের পরিসংখ্যানে জানা যায়, যাঁরা শরীর চর্চা করেন না তাঁদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি।
নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে তার কয়েকটি উদাহরণ-
হার্টের কার্য ক্ষমতা কমে যায়- নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে হার্ট অত্যন্ত সুস্থ থাকে। কিন্তু শরীর চর্চা বন্ধ করে দিলে হৃদ যন্ত্রের কার্য ক্ষমতা কমে যায় ।
যদি নিয়মিত অ্যারোবিক এবং কার্ডিও ব্যায়াম করা যায় তাহলে হার্টের সমস্ত
কাজ কর্ম সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়।
এছাড়াও হার্ট সুস্থ রাখার যে উপাদান গুলি প্রয়োজন হয় সেগুলি সঠিক মাত্রায় থাকে। যদি কেউ নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম না করে তাহলে তিনি লক্ষ করবেন তাঁর হৃদযন্ত্র সঠিক ভাবে কাজ করছে না।
এবং বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
যা দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপক
প্রভাব পড়বে । হার্টরেটের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেওয়ার পাশা-
পাশি কোলেস্টেরল লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে শরীরের বিভিন্ন মাসল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ পেশি সতেজ রাখতে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে দৈনন্দিন শরীর চর্চা।
নিয়মিত শরীর চর্চা না করলে পেশি যে শুধু শিথিল হয়ে পড়ে তা নয়, পেশির ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে । শরীর দুর্বল হতে থাকে।
এক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় সামান্য ওজন তোলার ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয় । পেশির কাজ কর্মের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয় ।
তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যত কাজের চাপ থাকুক না কেন, নিয়মিত শরীরচর্চা করা প্রয়োজন । এতে শরীরের পেশি সুস্থ থাকে।
ঘুমাতে সমস্যা-
অনেকের ঘুমের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যা দেখা দেয় । সারা দিন কাজ কর্ম করার পরেও রাতে ঘুম আসে না অনেকের ।
এই সমস্যা মেটাতে পারে শরীর চর্চা ।
অন্য দিকে, ঘুমের সঙ্গে শরীর সুস্থ রাখার সম্পর্ক রয়েছে । ঘুম পর্যাপ্ত না হলে শরীর সুস্থ থাকে না। এমনকী কাজ করার ক্ষেত্রেও কোন ইচ্ছা থাকে না।
শরীর চর্চার ফলে শরীরের ক্যালোরি খরচ হয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে রাতে অত্যন্ত তাড়া তাড়ি ঘুম হয় । এবং অত্যন্ত ভাল ঘুম হয়।
যা শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এর পাশা পাশি ঘুমের ফলে অন্য কাজ করার ক্ষেত্রেও এনার্জি পাওয়া যায়।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে যে শুধু কাজের ইচ্ছা থাকে না এমনটা নয়, শরীরের বিভিন্ন হরমোনের কার্য কারিতার উপরেও
প্রভাব পড়ে। ওজন বৃদ্ধি, মানসিক
স্বাস্থ্যের সমস্যা সহ একাধিক সমস্যা দেখা দেয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে শরীর
চর্চার ফলে একাধিক হরমোনের ক্ষরণ সঠিক মাত্রায় হয় । যা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন হরমোনের নিঃসরণের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যও ভাল থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপে জর্জরিত।
এবং বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে
যেভাবে মানসিক চাপ বাড়ছে তাতে
রীতিমত আশঙ্কার। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া
হচ্ছে ।
কিন্তু এক্ষেত্রেও শরীর চর্চার ভূমিকা
রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য প্রতিনিয়ত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট শরীর চর্চা করলে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এছড়াও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সমস্যা দেখা যায় । কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা সহ পেশি, হাড় ও বিভিন্ন হাঁটু, কনুই সহ বিভিন্ন স্থানের একাধিক সমস্যা দেখা যায়।
ফলে বসা, ওঠার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব ।
এমন অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র যোগব্যায়াম করে শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা সারানো সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন, শরীর চর্চার জন্য কি জিম বা কোনও যোগ ব্যায়াম সেন্টারে যাওয়া বাধ্যতামূলক? এবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত, এই ধরনের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। বাড়িতেই ফ্রি হ্যান্ড অনুশীলন করা যেতে পারে ।
কারণ শরীর চর্চার শুরুতেই যদি ভারী সামগ্রী তোলা হয় তাহলে তার উল্টো প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। সেই কারণে
ফ্রি হ্যান্ড অনুশীলনে জোর দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।