সেরা ৭ টি বিটকয়েন ওয়ালেট!
সোহানুর রহমান
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা
আসসালামু আলাইকুম টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভাল আছেন।
বরাবরেই মত আজকেও চলে এসেছি নতুন টিউন নিয়ে।
বর্তমানে বেশিরভাগ লোক বিটকয়েনে ইনভেস্ট করতে আগ্রহী।
প্রচলিত ধারণা মতে বিটকয়েনে ইনভেস্ট লোভনীয় মনে হলেও, বিভিন্ন বিষয়াদি রয়েছে যেগুলোর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় কোন ওয়ালেট কার জন্য ভাল হবে।
একজন ব্যক্তি যে ওয়ালেটেই ইনভেস্ট করুক, আগে দেখতে হবে এর সিকিউরিটি সিস্টেম কেমন শক্তিশালী এবং নিরাপদ।
বিটকয়েন ওয়ালেট মূলত একটা স্টোরেজ মিডিয়াম যা কোড অথবা প্রাইভেট কি গুলোর সেইফ-গার্ড হিসেবে কাজ করে।
যে কোনো ধরনের ট্রেডে এই কোড গুলোর দরকার হয়।
এই মুহূর্তে বিভিন্ন বিটকয়েন ওয়ালেট রয়েছে। যারা নতুন বিনিয়োগকারী তারা প্রথমেই বুঝতে পারে না কোন ওয়ালেট তাদের জন্য ভাল হবে। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্যই এই টিউন।
আজকে আমরা সেরা কিছু বিটকয়েন ওয়ালেট নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো বিনিয়োগ কারীদের জন্য নিরাপদ হবে।
বিটকয়েন ওয়ালেট কী?
বিটকয়েন ওয়ালেট, ক্রিপটোকারেন্সি অ্যাক্সেস এবং স্থানান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্রিপ্টোগ্রাফিক কী সেভ রাখে।
এই ধরনের আলফানিউমেরিক স্ট্রিং গুলো আপনার অর্থ বা সম্পদের পাসওয়ার্ড হিসাবে কাজ করে।
আপনি এই কী গুলো হারিয়ে ফেললে টোকেন ব্যবহার করতে পারবেন না।
মূলত তিন ধরনের বিটকয়েন ওয়ালেট রয়েছে,
Hot Wallets: এই ধরনের ওয়ালেট স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। থার্ডপার্টি সার্ভিস বা অ্যাপ এর ক্ষেত্রে দরকার পড়ে।
এই ওয়ালেটের মাধ্যমে ক্রিপ্টো গ্রাফিক কী (Key) স্টোর করা সহজ।
তবে সাইবার হ্যাক বা সার্ভিস ব্রিচের মত ঘটনায় আপনি আপনার কী হারাতে পারেন ফলাফল সরূপ আপনার সব সম্পদ হারাবে।
Cold Wallets: এই ধরনের স্টোরেজ ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট থাকে না যা সাইবার এটাকে সম্পদ হারাতে বাধা দেয়।
এটার মাধ্যমে আপনি আপনার কী পিসিতে সেভ রাখতে পারবেন।
এটি Hot Wallets থেকে নিরাপদ তবে সব ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে খুব একটা সুবিধাজনক নয়।
Hardware Wallets: এটা এমন ডিভাইস যা ক্রিপ্টো কি ফিজিক্যাল মিডিয়ামে সেভ থাকে।
এর একটি সুবিধা হচ্ছে চাইলে এটি ইন্টারনেটে কানেক্ট করা যায়। এটি কী গুলোকে নিরাপদ রাখে এবং ব্যবহারযোগ্যতা বাড়ায়।
সেরা ক্রিপটোকারেন্সি ওয়ালেট :
০১. Exodus
Exodus, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি Hot Wallet। এটি ১০০ টিরও বেশি ভিন্ন কারেন্সি সাপোর্ট করে, এর মাধ্যমে ইউজাররা কারেন্সি স্টোর, সেন্ড এবং রিসিভ করতে পারে।
এ ছাড়া এর মাধ্যমে ওয়ালেট থেকে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ করা যায়।
QR কোডের মাধ্যমে সহজেই ক্রিপ্টো সেন্ড এবং রিসিভ করা যায়।
বর্তমানে Exodus এর সাথে Trezor Harware ওয়ালেটের ইন্টিগ্রেশন রয়েছে, যার মাধ্যমে উভয় ওয়ালেটে আপনার ক্রিপ্টো ম্যানেজ করতে পারবেন।
ডেক্সটপ অ্যাপ থেকে Trezor Bridge এনেভল করলে আপনি সহজেই বিটকয়েন Hot Wallet থেকে Cold Wallet এ স্থানান্তর করতে পারবেন।
Exodus, অ্যাপটি আপনি Windows, Mac, Linux, Android, এবং iOS ডিভাইসে ইন্সটল করতে পারবেন। নতুনদের জন্য এই ওয়ালেটটিকে সেরা বলা যায়।
০২. Coinbase
Coinbase একটি জনপ্রিয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্ম যারা আপনাকে ফ্রিতে একটি ওয়ালেটের প্রদান করবে।
এটি একটি Hot wallet যার মানে আপনি পাবলিক ওয়েবে আপনার কী সেভ করে রাখতে পারবেন।
এটা যথেষ্ট সিকিউর একটা ওয়ালেট যাতে ইউজারের সাইন আপ এর প্রয়োজন নয় তাছাড়া বড় বড় ব্যাংক গুলোর সাথে এই ওয়ালেট কানেক্ট করতে পারবেন।
বর্তমানে এই ওয়ালেটটি বৃহৎ মার্কেট ক্রাশের প্রেশারে আছে।
তারপর কোম্পানি তাদের উদ্ভাবন অব্যাহত রেখেছে। ২০২২ সালে কোম্পানি এখানে একাধিক DeFi ফিচার ইন্টেগ্রেট করেছে।
এটি বিটকয়েনের জন্য ভাল একটি ওয়ালেট, দ্রুত ক্রিপ্টো কেনাবেচার জন্য এটি ভাল।
দুর্ভাগ্য বশত, Coinbase এর কোন ডেক্সটপ অ্যাপ নেই।
আপনাকে ওয়েবঅ্যাপ অথবা ফোন অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে তবে এর একটি গুগল ক্রোমের এক্সটেনশন আছে।
০৩. Mycelium
Mycelium একটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি বিটকয়েন ওয়ালেট, এটা বিশেষ করে নতুনদের টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছে।
এখানে চমৎকার সব ফিচার এবং ইউজাররা ট্রানজেকশন ফি এর উপরে কন্ট্রোল রাখতে পারবে।
ফিজিক্যাল ডিভাইসে কী স্টোর করলেও Cold Wallet হিসেবে কাজ করে। এখানে টোকেন হারানোর ভয় থাকে না।
তাদের চমৎকার ব্যাকআপ ব্যবস্থায় ডিভাইস হারিয়ে গেলেও আপনি টোকেনে এক্সেস করতে পারবেন।
এটা শুধু মাত্র Bitcoin এবং Ethereum ট্রেডিং এর জন্য উপযুক্ত।
যারা তাদের ক্রিপ্টো এসেস্ট ডাইভারসিফাই করতে চান তাদের জন্য পছন্দের নাও হতে পারে।
০৪. Ledger Nano X
সহজে হার্ডওয়্যার ওয়ালেট এ ক্রিপ্টো রাখতে ভাল একটি ওয়ালেট হচ্ছে Ledger Nano X। এটি প্রায় ৮ ঘণ্টা ব্যাটারি লাইফ প্রোভাইট করতে পারে।
এটিকে Cold Storage হিসেবে আপনি সহজেই পিসি অথবা স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করতে পারেন।
ডাইভারসিফাই পোর্টফলিও এর জন্য এর ব্লটুথ ফিচারটি বেশ কাজের।
Ledger Live সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনি ডিভাইসে কী এবং অ্যাপ স্টোর করতে পারবেন। এর ইউজার ইন্টারফেস বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং সহজেই ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ করা যায়।
আপনি সলিড হার্ডওয়্যার ওয়ালেট খুঁজলে আমাদের রেকোমেন্ডেড ওয়ালেট হবে Nano X।
০৫. Electrum
এডভান্সড ক্রিপ্টো ট্রেডারদের জন্য ফিচার সমৃদ্ধ বিটকয়েন ওয়ালেট হচ্ছে Electrum। এটি ফ্রিতে ব্যবহার করা যায় এবং একই সাথে Cold এবং Cloud স্টোরেজ অফার করে।
ওপেন সোর্স কোডবেসের সাথে এটি অত্যন্ত সিকিউর সার্ভিস প্রোভাইট করে। এটি সময় সময় বাগ খুঁজে বের করে এবং ফিক্স করে।
এখানে ইউজাররা চাইলেই তাদের টোকেনের জন্য ট্রানজেকশন ফি কাস্টমাইজ করতে পারে। তবে বলে রাখা ভাল এটি বিটকয়েন বাদে অন্য কোন কারেন্সি সাপোর্ট করে না।
এটা সব সময় সিকিউর এবং নিরাপদ লেনদেনের জন্য ট্রেডারদের আমন্ত্রণ জানায়।
০৬. Trezor Model T
ক্রিপ্টো ও অন্যান্য ডিজিটাল এসেস্ট স্টোর করার জন্য একটি হার্ডওয়্যার ওয়ালেট হচ্ছে Trezor Model T। এটি টাচ স্ক্রিন ডিসপ্লে দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে যার মাধ্যমে ইউজাররা সহজে বিটকয়েন স্টোর করতে পারবে।
এর U2F (Universal 2nd-Factor) হার্ডওয়্যার টোকেন এক্সেস কন্ট্রোলকে শক্তিশালী করবে।
বিভিন্ন ফিচার থাকার ফলে Trezor Model T বেশ ব্যয়বহুল এবং এটা Ledger Nano X থেকেও ব্যয়বহুল।
যদি প্রাইজ আপনার জন্য ইস্যু না হয় তাহলে Trezor Model T ওয়ালেট আপনার জন্য সেরা হতে পারে।
০৭. Wasabi Wallet
Wasabi একটি ফ্রি এবং ওপেন সোর্স বিটকয়েন ওয়ালেট যার সাথে রয়েছে বিল্ডইন Tor ইন্টিগ্রেশন।
এখানে তিন ধরনের CoinJoin ট্রানজেকশন হয় যেমন, Minimize costs, Maximize speed, অথবা Maximize privacy। রয়েছে বিভিন্ন কয়েন কন্ট্রোল ফিচার।
২০২২ সালে Wasabi তাদের ওয়ালেটকে Wasabi Wallet 2.0 তে আপগ্রেড করেছে।
দেয়া হয়েছে নতুন লগইন, ওয়ালেট লোডিং স্ক্রিন এবং আরও বেশির প্রাইভেসি ফিচার।
Wasabi এর সকল নেটওয়ার্ক কানেকশন মাল্টিপল Tor ব্রিজের মধ্য দিয়ে যায় যা ইউজারদের আরও বেশি প্রাইভেসি প্রদান করেন।
যারা ফ্লেক্সিবল কিন্তু সিকিউর ওয়ালেট খুঁজছে তাদের জন্য এটি দারুণ হতে পারে।
Wasabi এর রয়েছে ন্যাটিভ Windows, Mac OS, এবং Linux ক্লাইন্ট অ্যাপ। এর মাধ্যমে ইউজাররা সহজে ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসে ট্রেডিং করতে পারবে।
শেষ কথা
বিটকয়েন ওয়ালেটের মাধ্যমে নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত উপায় BTC ম্যানেজ করা যায়।
আপনি নতুন বা পুরনো যেমন বিনিয়োগকারীই হোন না কেন হাই কোয়ালিটি ওয়ালেট ছাড়া আপনি পোর্টফলিও ম্যানেজ করতে পারবেন না।
ব্যবহারে সুবিধার কথা বললে Hot Wallet হিসেবে Exodus এবং Coinbase সেরা।
তাছাড়া হ্যাকারের আক্রমণ থেকে বাচতে হার্ডওয়্যার বেসড ওয়ালেট ভাল কাজ করতে পারে।
তো আজকে এই পর্যন্তই আশা করছি এই টিউনটি আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে।
কোন মতামত থাকলে টিউমেন্ট করুন। পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।