সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে যা যা দরকার :

আরাফাত রহমান

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০০

বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবাই এখন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার খুঁজছে।

ছবি: পিক্সাবে ডটকমের সৌজন্যে ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে বাবা-মায়ের কাছে বকা শোনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মভগুলোতে সময়ের অপচয় হয়।

কিন্তু এটাই আবার আয়ের মাধ্যম হয়ে উঠছে। বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ছোটখাটো ব্যবসা—সবারই প্রচারের মাধ্যম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া।
তবে এর জন্য শেখা চাই সঠিক ব্যবস্থাপনা।

ব্যবসা বা নিজের উদ্যোগের নামে একটি পেজ করলেই চলে না।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজের ব্যবসাকে লাভবান করতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা শেখা ভীষণ জরুরি। 

সাধারণত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে নিজেদের প্রচার চালাতে একটি পেজ খুলেই কাজ সারে।

এর চেয়ে যারা একটু অগ্রসর, তারা দেখা যায় পেজের প্রচারের জন্য কিছু টাকা ব্যয় করে। এটুকু করেই অনেকে ভাবেন, অনেকটাই করা হলো।

এমন যারা ভাবেন, তারা বলতে হয় বোকার স্বর্গে বাস করছেন। কেন? এই প্রশ্নের উত্তরেই সামনে হাজির হয় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের প্রসঙ্গটি। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে অবশ্যই আপনাকে টার্গেট অডিয়েন্স, কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি, সেলস ফানেল, কাস্টমার জার্নি, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব এলগরিদম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।

এ জন্যই বড় বড় ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী—সবাই সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টে পারদর্শী লোক খোঁজে।

বলা যায়, সময়ের সঙ্গে এই পেশায় দক্ষ লোকের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মূল কাজ হলো একটি ব্যবসাকে অনলাইনে প্রতিষ্ঠা করা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত লোকজন বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখে সেগুলো পর্যালোচনা করে এবং পণ্য কেনে।

এখানকার মার্কেটিংকে বলা যায় ‘রিয়েল টাইম মার্কেটিং’। তাই একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারের মূল কাজ হলো—

কখন কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি) কোন ধরনের কনটেন্ট যাবে, তা নির্বাচন করা।

সোশ্যাল মিডিয়ার তিন-চারটি প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে ব্যবসার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

কোন ধরনের অডিয়েন্স কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, তার ওপর ভিত্তি করে নিজের পণ্যের বাজার তৈরি।

পেজের কমেন্ট, মেসেজের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে ব্যবসা ও ভোক্তাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক তৈরি।

ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ব্র্যান্ডের মেসেজ যথাযথভাবে অডিয়েন্সের কাছে যেন পৌঁছায়, সেদিকে খেয়াল রেখে বিপণনের উদ্দেশে প্রচার কার্যক্রমগুলো ডিজাইন করা।

কনটেন্টগুলো উপযুক্ত অডিয়েন্সের কাছে যাচ্ছে কি না, আপনার কনটেন্ট ক্রেতাদের সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখছে কি না, সেগুলো বিভিন্ন টুলসের মাধ্যমে পরিমাপ করা।

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভাইরাল ও ট্রেন্ডি কনটেন্ট পর্যালোচনা করা এবং সেই অনুযায়ী ক্রিয়েটিভ টিমের সঙ্গে আলোচনা করে আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি।

পেইড ও অরগানিক—দুই ধরনের ক্যাম্পেইন ডিজাইন এবং এতে মানুষের সংযোগ বাড়াতে কার্যকর কৌশল গ্রহণ।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের মূল কাজ হলো একটি ব্যবসাকে অনলাইনে প্রতিষ্ঠা করা।

ছবি: পেক্সেলস ডটকমের সৌজন্যেসোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের আয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট যথাযথভাবে শিখতে পারলে দেশের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানি – গুলোতেও কাজের সুবিধা পেতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনকর্মী হিসেবে আপনি যেভাবে আয় করতে পারেন, তা হচ্ছে—

ফ্রিল্যান্সিং: ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে আমাদের দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আপনি ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সের ডটকম, পিপল পার আওয়ারসহ বিভিন্ন সাইটে নিজের প্রোফাইল খুলে পছন্দের কাজে বিড (কাজের বিপরীতে নিজের মজুরি জানিয়ে কার্যাদেশ পাওয়ার আবেদন) করতে পারবেন বা যোগাযোগ করতে পারবেন বায়ার বা ক্রেতার সঙ্গে।

একজন মোটামুটি দক্ষতা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার প্রতি মাসে ৩০০ ডলার–১০০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। 

দেশীয় প্রতিষ্ঠান: 

বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটার নিয়োগ দিচ্ছে।

কথায় ডিজিটাল মার্কেটিং হলেও মূল কাজ থাকে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষানবিশ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের বেতন ১০,০০০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়।

নির্বাহী পদে প্রতিষ্ঠান ও চাকরির কাজের পরিধি ভেদে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেতন হয়।

বিডিজবসে, ফেসবুকের বিভিন্ন নিয়োগ ভিত্তিক পেজে নিয়মিত এ ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পাওয়া যায়। 

বিদেশি প্রতিষ্ঠান: 

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরির জন্য আবেদন করার আগে আপনার একটি পোর্টফোলিও থাকা প্রয়োজন।

কারণ, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো অভিজ্ঞ লোক নিতে পছন্দ করে।

আপনি দেশে বসেই লিংকডইনের মাধ্যমে চাকরির আবেদন করতে পারেন।

বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ঘণ্টা ভিত্তিতে বা মাসিক চুক্তি—দুভাবেই নিয়োগ করে।

ভালো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ ও দক্ষতার ভিত্তিতে মাসে ৮০০-১৫০০ ডলার আয়ের সুযোগ রয়েছে। 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট যথাযথভাবে শিখতে পারলে দেশের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানি- গুলোতেও কাজের সুবিধা পেতে পারেন।

ছবি: পিক্সাবে ডটকমের সৌজন্যেসোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে হলে একজন দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে।

এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে—

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট কোর্স: 

বর্তমানে বিভিন্ন আইটি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কোর্স অফার করে।

এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগেও বিভিন্ন ধরনের কোর্স করানো হচ্ছে।

এ গুলোর যে কোনো একটিতে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন।

তবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য কোর্স করতেই হবে, তা কিন্তু নয়।

আপনি চাইলে ইউটিউব, ইউডেমি, কোর্সেরসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও কোর্সটি করতে পারবেন। 

পোর্টফোলিও তৈরি করুন ও কনটেন্ট শেয়ার করুন: 

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দুনিয়ায় নিজের অবস্থান তৈরির জন্য একটি ভালো পোর্টফোলিও খুবই দরকার।

প্রথম দিকে কাজ পাওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য। শুরুটা ঠিকঠাক করতে হলে যা করতে পারেন—

  • কাজ শেখার প্রথমদিকে বিভিন্ন ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কয়েক মাসের জন্য তাদের বিনা মূল্যে সেবা দিতে পারেন।

কারণ, প্রথম দিকে আপনার পোর্টফোলিও তৈরি করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়টাকে আপনার বিনিয়োগ হিসেবে ধরতে পারেন। এমনও হতে পারে, আপনি যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন, তারাই আপনাকে পরে নিয়োগ দিতে পারে। 

  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের জন্য ইন্টার্নশিপ নিয়োগ করে।

ইন্টার্নশিপের জন্য সাধারণত ৮০০০-১০,০০০ টাকা দেওয়া হয়।

এই ধরনের ইন্টার্নশিপগুলোতে কাজের চাপ থাকে। ফলে আপনার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা হয়ে যাবে। 

  • বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্ট/ পেজ/চ্যানেল খুলে কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন এবং অরগানিকভাবে ফলোয়ার বাড়াতে পারেন।

ফলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ব্যাপারে আপনার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা হবে।

তা ছাড়া আপনার কনটেন্ট মার্কেটিং নিয়ে ভালো ধারণা হয়ে যাবে। 

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে আমাদের দেশে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ছবি: পিক্সাবে ডটকমের সৌজন্যে যে দক্ষতাগুলো জরুরি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে কিছু বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

এর মধ্যে শুরুতে থাকে লেখার বিষয়টি। এর সঙ্গে ডিজাইন সম্পর্কিত জ্ঞান থাকলে প্রাথমিক কাজটা ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়।

মোটাদাগে বেশ কিছু বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠলে তবেই এ পেশায় ভালো করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে—

কপি রাইটিং: 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য ও সেবা বিপণনে দক্ষ ব্যবস্থাপক হয়ে উঠতে হলে লেখা লেখির অভ্যাস থাকাটা ভীষণ জরুরি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখের সামনে ঘোরা এবং আকর্ষণীয় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ছবি বা ভিডিওর সঙ্গে দেখবেন কিছু লেখা রয়েছে।

এই ক্যাপশনগুলোই কিন্তু পাঠক ও দর্শককে আকৃষ্ট করে।

এর ওপরই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটি ওই বিজ্ঞাপনের ভেতরে ঢুকবেন কিনা।

মানুষকে আপনার বিজ্ঞাপনের সঙ্গে যুক্ত করতে হলে চাই আকর্ষণীয় ক্যাপশন।

ক্যাপশন ভালো ও আকর্ষণীয় হলেই মানুষ পণ্যটি কিনতে বেশি আগ্রহী হবে।

তাই একজন দক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারকে বিজ্ঞাপনী ভাষা রপ্ত করতে হবে।

এই কপি রাইটিং ভালোমতো আয়ত্ত করতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের পেজ ও গ্রুপগুলো ফলো করতে পারেন।

তা ছাড়া নিজের মতো করে একটা কপি লিখে আশপাশের মানুষকে দেখাতে পারেন এবং তাঁদের মতামত নিতে পারেন।

কারণ, আপনার চারপাশে থাকা মানুষদের একজনই আপনার পণ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে কিনবেন। 

গ্রাফিক ডিজাইন: 

সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি ও ভিডিও কনটেন্ট হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ রাখে।

বলা হয়, মানুষের মস্তিষ্কে অন্য কিছুর চেয়ে ছবি ৫০০০ গুণ দ্রুত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

তাই আপনার যদি গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে ধারণা থাকে ও আকর্ষণীয় সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তৈরি করতে পারেন, তাহলে খুব দ্রুতই একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপনি সফল হতে পারবেন।

প্রাথমিকভাবে আপনি ক্যানভা (Canva) দিয়ে শুরু করতে পারেন। পরে এডোবি ফটোশপ ও ইলাস্ট্রেটর শিখে নিতে পারেন। 

কাস্টোমার সাপোর্ট বা কমিউনিটি ম্যানেজমেন্টে দক্ষতা: 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোক্তারা বিভিন্ন সময় ফেসবুক পেজের ইনবক্সে মেসেজ দেন।

তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কাছে পণ্য বা সেবা বিক্রি ও বিক্রয়-পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করতে পারাটা একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। 

বিপণন কৌশল: 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টে দক্ষ হতে হলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বা বিপণন কৌশল নিয়ে ভালো ধারণা রাখতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে একজন ভোক্তাকে সেলস ফানেলের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে হয়।

সেলস ফানেলের ওপরের দিকে থাকে ব্র্যান্ড অ্যাওয়ারনেস।

এই ধাপে আপনি ক্রেতাদের আপনাদের পণ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। তার পরবর্তী ধাপে থাকে ব্র্যান্ড কনসিডারেশন।

এই ধাপে আপনি ক্রেতাদের পণ্যটি ক্রয়ে আগ্রহী করে তুলবেন। আর শেষ ধাপটি হচ্ছে কনভারশন।

এই ধাপে এসে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী চূড়ান্তভাবে আপনার পণ্যের ক্রেতায় পরিণত হবে। 

সেলস ফানেল ছাড়াও কোন ধরনের চ্যানেলে কোন ধরনের অডিয়েন্স পাওয়া যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

যেমন তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ব্যবহার করে।

আবার ফেসবুকে আপনি সব শ্রেণি ও বয়সের লোকেদের পাবেন।

ইউটিউবে ইন্টারেস্ট ভিত্তিক অডিয়েন্সের উপস্থিতি আবার বেশি।

তাই আপনার পণ্যের প্রকরণ বুঝে প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করতে হবে।

এ ছাড়া কোন সময় আপনি আপনার কনটেন্ট আপলোড করবেন, কোন সময় মানুষ বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে—এসব সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে। 

বিশ্লেষণ: 

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টে দক্ষ হতে হলে আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণী বা অ্যানালিটিক্যাল টুলস ব্যবহার করতে জানতে হবে।

আপনি যদি একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে বিভিন্ন রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে কী ধরনের পোস্ট আপনি শেয়ার করছেন, সেগুলো কতজন মানুষের কাছে পৌঁছাল, কতজন পোস্টটির সঙ্গে যুক্ত হলো, পোস্টটির ফলে কতজন মানুষ আপনার ওয়েবসাইটে এসেছে, কোন পণ্যটি অর্ডার করেছে, কখন ক্রেতারা বেশি সক্রিয় থাকে—এই বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে প্ল্যাটফর্ম- গুলোয় আপনার কার্যক্রম সাজাতে হবে।

এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব অ্যানালিটিকস আছে।

যেগুলোর বিভিন্ন মেট্রিক্স নিয়ে আপনার অবশ্যই ধারণা থাকতে হবে। 

ব্যয় নির্ধারণ: 

সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যবসার পেইড মার্কেটিং করতে হয়। অর্থাৎ আপনার ব্যবসা বা পণ্যকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিতে হবে। অবশ্যই এই বিনিময় হবে ডলারে।

আর বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ তৈরি, টুলস কেনাসহ নানা খরচ তো আছেই।

সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে যেন আপনার বিনিয়োগ উঠে আসে, সে হিসাব করা এবং এর বাজেট নির্ধারণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে কিছু বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে।

ছবি: পিক্সাবে ডটকমের সৌজন্যে কোন কোন প্ল্যাটফর্মে কাজ করা শিখবেন।

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট শিখতে হলে প্রথমে আপনাকে কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে চিহ্নিত করতে হবে, যেগুলোর আপনি কাজ করবেন।

প্রধানত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডিন, টুইটার, পিন্টারেস্ট, টিকটক, কোরা—এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখাটা বাঞ্ছনীয়।

কারণ, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতেই অধিকাংশ ব্যবহারকারীরা থাকে।

ভিডিও নিয়ে কাজ করলে অবশ্যই ইউটিউব সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।

এই প্ল্যাটফর্মগুলো কিন্তু আবার একটি থেকে অন্যটি আলাদা।

ফলে এ গুলোয় কাজের জন্য চাই আলাদা আলাদা প্রস্তুতি।

একেক প্ল্যাটফর্মে একেক বয়স, শ্রেণি ও পেশার লোকেরা থাকে।

আবার ভিন্ন ভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের কনটেন্টের ভিন্নতাও পাওয়া যায়।

যেমন ইনস্টাগ্রাম বর্তমানে ছবিনির্ভর, আবার ইউটিউব পুরোপুরি ভিডিও নির্ভর।

আবার টিকটক ভিডিওনির্ভর হলেও সেখানকার ভিডিওগুলোর দৈর্ঘ্য কম।

কম দৈর্ঘ্যের ভিডিওর ফিচার নিয়ে অবশ্য ইউটিউব, ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও হাজির হয়েছে।

তাই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং এ সবের নতুন নতুন সব ফিচার সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। 

বর্তমান সময়কে বলা হয় চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের যুগ। এই সময় গতানুগতিক চাকরির পেছনে না ছুটে দক্ষতা অর্জন করলে খুব সহজেই সম্মানজনকভাবে আয় করতে পারবেন।

আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়ছে ; সামনে আরও বাড়বে।

ফেসবুক নিজেদের মূল কোম্পানির নাম এরই মধ্যে ‘মেটা’ রেখেছে। তারা মেটাভার্সের কথা বলছে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও বসে নেই। মেটাভার্সের যে বাস্তবতা আসছে সামনে, তাতে ব্যবসা বা যে কোনো ধরনের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।

তাই এই খাতে দক্ষ জনবলের চাহিদা দিন দিন বাড়বে।

ফলে নতুন এই দুনিয়ায় নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে এখন থেকেই লেগে পড়ুন। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *