হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে করণীয়
শরীরের স্বাভাবিক কার্যাবলী ঠিক রাখতে হরমোন,
অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্সুলিন, ইস্ট্রোজেন, ডোপামিন,
এফএসএইচ, টিএসএইচ ইত্যাদি জৈবিক রাসায়নিক উপাদান মেজাজ, চুলের বৃদ্ধি,
ওজন, প্রজনন ক্ষমতা, মানসিক অবস্থা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
হরমোনের সঠিক সরবরাহ বজায় রাখতে শরীরের,
সকল গ্রন্থি একই তালে তাল মিলিয়ে কাজ করে।
আর এর সামান্য ঘাটতিই স্বাস্থ্যগত জটিলতা ডেকে আনতে পারে,
যার জন্য ছুটতে হয় চিকিৎসকের কাছে, খেতে হয় ঔষধ।
এই ঔষধেরও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যা বয়ে আনতে পারে আরও বড় বিপদ।
তবে প্রাকৃতিক উপায়েও হরমোনের ভার সাম্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য-বিষয়ক একটি ওয়েব সাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন,
অবলম্বনে জানানো হলো সেই উপায়- গুলো।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যা-ভ্যাসঃ
স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে তার প্রভাব শরীরে চোখে পড়বেই,
আর অ স্বাস্থ্যকর খাদ্যা-ভ্যাসে সব চাইতে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত হবে শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থি।
তাই গ্রন্থি গুলোর সক্রিয়তা যাতে অতিরিক্ত বা অতি সামান্য না হয়,
সেজন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সেখানে থাকতে হবে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভোজ্য আঁশ আর কমাতে হবে,
কার্বো-হাই-ড্রেট এবং চিনির পরিমাণ। সেই সঙ্গে,
হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে চাই স্বাস্থ্যকর চর্বি।
‘ক্যাফেইন’ ও দুগ্ধজাত খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে,
হরমোনের ভার-সাম্য-হীনতা দেখা দিতে পারে।
অপরদিকে ‘গ্রিন টি’ শরীরে ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’
সরবরাহের মাধ্যমে ‘ঘ্রেলিন’, ‘ইন্সুলিন’- এর মাত্রা কমায়,
এবং শরীরে ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
কম কিংবা বেশি খাওয়াঃ
শরীরের চাহিদার তুলনায় কম কিংবা বেশি খাবার খাওয়ার কারণেও,
হরমোনে ভার সাম্য নষ্ট হতে পারে। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল,
অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা অতি সামান্য খাওয়ার কারণে ‘ইন্সুলিন’ -এর মাত্রা,
বেড়ে যাওয়া, ‘কর্টিসল’ -এর উৎপাদন বেড়ে যাওয়া,
ইত্যাদি; যা, শরীরের বিপাক ক্রিয়ার উপর ক্ষতি কর,
প্রভাব ফেলে। আর তাই লিঙ্গ, বয়স এবং স্বাস্থ্য,
বিবেচনা করে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চাঃ
ব্যায়াম করলে শুধু শরীর গঠনই হয় না সঙ্গে হরমোনের ভার সাম্যও বজায় থাকে।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে থাকলে শরীর,
সুঠাম হওয়ার পাশা পাশি ঝরবে, বাড়তি চর্বি, উৎপাদন বাড়বে,
প্রদাহ রোধক হরমোনের এবং ‘ইন্সুলিন’য়ের সংবেদন-শীলতা বাড়বে।
‘অ্যারো-বিকস’, ‘স্ট্রেংথ ট্রেইনিং’, ‘এন্ডুরেন্স ট্রেইনিং’
ইত্যাদি হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্য কর।
মানসিক চাপ সামলানঃ
ব্যস্ত জীবন যাত্রা, সময়ের সামঞ্জস্য-তার অভাব,
ইত্যাদি মানসিক চাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর শরীর যখন চাপে থাকে,
তখন হরমোনের উৎপাদন প্রক্রিয়াও শৃঙ্খলা হারায়।
‘কর্টিসল’ এবং ‘অ্যাড্রেনালিন’ হল জরুরি পরিস্থিতিতে,
শরীরকে মোকাবিলা করার শক্তি সরবরাহ-কারী দুটি গুরুত্ব পূর্ণ হরমোন।
মানসিক অশান্তিতে থাকলে তাদের ভারসাম্যও নষ্ট হয়,
যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ধ্বংসাত্বক হতে পারে।
ধ্যান, যোগ ব্যায়াম, ‘অ্যারোমা-থেরাপি’ কিংবা সাধারণ ব্যায়াম,
যাহোক, নিয়মিত শরীর চর্চা হরমোনের লাগাম টেনে রাখতে সহায়ক হবে।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
ঘুমের অভাব থাকলে মেজাজ খারাপ
থাকে,
তার পেছনে একটি বড় কারণ হরমোন-জনীত সমস্যা।
ঘুমানোর সময় শরীর তার বিষাক্ত উপাদান অপসারণ করার সুযোগ পায়,
পরের দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে। আর ঘুম,
পর্যাপ্ত না হলে সব কাজই অসম্পুর্ণ থেকে যায়।
তাই সব কিছুর চাইতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করাকে মূল্যায়ন করা জরুরি।