সেনসেটিভ দাঁতের ব্যথায় কী করবেন?
দাঁতের সমস্যা দেখা দিলে দারুন বিপাকে পড়তে হয়। আর দাঁতের সমস্যাটি যদি হয়,
সেনসেটিভ দাঁতের ব্যথা, তবে ভুগতে হয় অনেক বেশি।
কেন দেখা দেয় সেনসেটিভ দাঁতের সমস্যা?
সেনসেটিভ কিংবা সংবেদন শীল দাঁতের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে,
বেশ কিছু কারণে। তার মাঝে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো-
১. দাঁতের এনামেল ক্ষতি গ্রস্থ হওয়া।
২. অ্যাসিডিক ও বেভারেজ জাতীয় পানীয় অতিরিক্ত পানের ফলে দাঁতে ক্ষয় হওয়া।
৩. দাঁতের ক্ষয় রোগ দেখা দেওয়া।
৪. দাঁতের পূর্বের ফিলিং খুলে আসা।
৫. ভাঙ্গা দাঁত।
৬. দাঁতের গামের সমস্যা দেখা দেওয়া এবং
৭. রাতের ঘুমের ভেতর দাঁত কিড় মিড় করা।
কী লক্ষণ দেখা দেয় এই সমস্যায়?
সেনসিটিভ দাঁতের সমস্যায় ঠাণ্ডা, গরম কিংবা যে কোন ধরণের অ্যাসিডিক,
পানীয়তে তীব্র শির শিরে ভাব দেখা দেয়। এই শির শিরে অনুভূতির মাত্রা,
তীব্র হবার ফলে প্রবল ব্যথা ভাব তৈরি করে।
এমনকি ঠাণ্ডা বাতাসেও দাঁতে এই শির শিরে অনুভূতি দেখা দেয়।
সাথে দাঁতের মাড়ির অংশ লাল হয়ে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি হয়।
কী ব্যবহারে কমবে সেনসিটিভিটির সমস্যা?
সঠিক চিকিৎসা ও যত্ন দাঁতের সেনসিটিভিটি দূর করতে পারে।
তবে কষ্ট দায়ক সমস্যার সমাধান পেতে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহারেও দারুন ইতি বাচক ফলা ফল পাওয়া যায়।
জেনে নিন এমন চমৎকার কিছু উপাদান ও তার ব্যবহার।
নারিকেল তেলঃ
প্রতি দিন সকালে এক বারে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল মুখে নিয়ে,
দশ মিনিট সময়ের জন্য কুলকুচি করতে হবে। এরপর হারবাল পেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলতে হবে।
নারিকেল তেলের অ্যানালজেসিক ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান সেনসেটিভ দাঁতের ব্যথা কমায়।
পেয়ারা পাতাঃ
দাঁতের ব্যথা কমাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার নতুন কিছু নয়।
বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের দিকে দাঁতের ব্যথার জন্য পেয়ারা পাতা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
পেয়ারা পাতা ব্যবহার করার জন্য আলাদা কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।
কয়েকটি পাতা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে অন্তত পাঁচ মিনিটের জন্য চাবাতে হবে।
এর পর নরমাল পানিতে কুল কুচি করে নিতে হবে।
প্রতি দিন দুই বার এই ভাবে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করলে ভালো ফলা ফল পাওয়া যাবে।
পেয়ারা পাতা কেন কাজ করে জানেন?
পেয়ারা পাতাতে আছে ফ্ল্যাভনয়েড, যা বিশেষ এক ধরণের প্রদাহ বিরোধী উপাদান।
এই উপাদান খুব দ্রুত দাঁতের ব্যথা কমাতে কাজ করে।
রসুনঃ
ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন হবে এক কোয়া রসুন, কয়েক ফোঁটা পানি ও এক চিমটি লবণ।
প্রথমে রসুন পিষে, এর সাথে পানি ও লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত দাঁতে এপ্লাই করতে হবে।
১০-১৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করে নরমাল পানিতে কুলি করে নিতে হবে।
প্রতি দিন এক বার রসুন ব্যবহার করলেই হবে।
রসুনে আছে প্রদাহ বিরোধী ও অ্যান্টি মাইক্রো বিয়াল উপাদান সমূহ।
যা সেনসেটিভিটির জন্য দেখা দেওয়া দাঁতে ব্যথা কমায়।
টি ট্রি অয়েলঃ
ছয় ফোঁটা টি ট্রি অয়েল ও এক চা চামচ নারিকেল তেল এক সাথে মিশিয়ে,
আক্রান্ত দাত মাড়ির অংশে প্রয়োগ করতে হবে। ৫-১০ মিনিট পর কুলি করতে হবে।
প্রতিদিন তেলের এই মিশ্রণটি দুই বার ব্যবহার করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, তেলের এই মিশ্রণটি গিলে ফেলা যাবে না।
অন্যান্য সকল এসেন শিয়াল অয়েলের ভেতর টি ট্রি অয়েল সব চেয়ে পরিচিত।
যে কোন ব্যথা নিরাময়ে টি ট্রি অয়েলের প্রশান্তি দায়ক উপাদান কার্যকরী।
এছাড়া অ্যান্টি মাইক্রো বিয়াল ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান থাকার ফলে মুখের ভেতরের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
এই সকলই ঘরোয়া উপায়ে প্রতিকার ও ব্যথা কমানোর উপায়।
তবে দাঁতের সেনসেটিভিটি যেন দেখা না দেয়, তার জন্য মানতে হবে কিছু নিয়ম।
১. সফট টুথ ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।
২. দাঁত ব্রাশ করতে হবে সযত্নে।
৩. দাঁত কিড় মিড় করার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। ঘুমের ভেতর দাঁত কিড় মিড় করার,
অভ্যাস থাকলে তা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪. অ্যাসিডিক ঘরানার পানীয় ও খাবার পরিহার করতে হবে।
৫. নিয়মিত দাঁতের ডাক্তারের কাছে দাঁতের চেক আপের জন্য যেতে হবে।
এছাড়া যে সকল খাবারে দাঁতে সমস্যা দেখা দেয়, সেই খাবার গুলো গ্রহণ করা থেকে,
বিরত থাকতে হবে। এতে শুধু দাঁতের ব্যথাই কমবে না, দাঁতের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।