WordPress কী? WordPress শেখার এবং ক্যারিয়ার গড়ার খুঁটিনাটি

এই ব্লগের মাধ্যমে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস শেখার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করা এবং শেখার এ টু জেড গাইডলাইন পাবেন।

বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ। এই যুগে মানুষ তাই প্রথাগত চাকরিতে বিশ্বাসী নয়। বরং প্রথাগত চাকরির বাইরে গিয়ে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইনকামের পথে ছুটে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে তাই বাড়তি আয়ের নেশায় অনেকেই চাকরির পাশাপাশি আয়ের বিকল্প পথের সন্ধান করছে। আর যারা চাকরির পাশাপাশি কোন স্কিল রপ্ত করে নিজের মেধাকে সঠিক স্থানে কাজে লাগাতে চান তাদের জন্য একটি উত্তম মাধ্যম হল ওয়ার্ডপ্রেস শেখা।

ওয়ার্ডপ্রেস কি?

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি অন্যতম শাখা হল ওয়ার্ডপ্রেস। এটি ওয়ার্ডপ্রেস ফাউন্ডেশনের দ্বারা ডেভেলপ হয়ে ২০০৩ সালে সর্ব প্রথম টেক বাজারে প্রবেশ করে। প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ পিএইচপি (PHP) দ্বারা এর পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইহা বিভিন্ন জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম যেমন ইউনিক্স, মাইএসকিউএল (MySQL) ডাটাবেইজ এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে পরিচালিত। ইহা মূলত ব্লগিং এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম।

ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে কন্টেন্টকে ম্যানেজ করে নানান রকম ফিচারের মাধ্যমে ডেভেলপ করে কন্টেন্টকে আরও বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইনবিল্ট টেমপ্লেট সিস্টেম। যা একজন ব্যবহারকারীকে স্মুথলি ব্লগ লেখার ক্ষেত্রে এবং ওয়েবসাইটে যে কোনো ধরণের থিম তৈরি করার ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে। একজন গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে অনেক ধরণের থিম এখানে রয়েছে— যা ব্লগ এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যবহার করা হয়। ওয়ার্ডপ্রেসে প্লাগিন আর্কিটেকচার রয়েছে— যা একটি ব্লগের এক্সটেনশন এর সাথে মিলিতভাবে বিভিন্ন ফিচার অনুযায়ী কার্যাবলী সম্পন্ন করে।

ওয়েব ডিজাইন শেখার জন্য ঘুড়ি লার্নিং এর অসাধারণ কোর্স—

Web Design Basic+

Responsive Web Design With 3 Live Projects

ওয়ার্ডপ্রেস কেন শিখবেন?

বর্তমান সময়ে সব চেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হল যে “ওয়ার্ডপ্রেস কেন শেখা উচিত”। যারা ওয়ার্ডপ্রেসে একেবারেই নতুন তাদের কাছে এই প্রশ্নটির উত্তর জানা আবশ্যক। এছাড়াও যারা কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে ওয়েব ডিজাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন তাদের জন্যও আবশ্যিক একটি বিষয় হল ওয়ার্ডপ্রেস।

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ওয়ার্ডপ্রেস। ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ তা একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ব্লগিং প্লাটফর্মে ওয়ার্ডপ্রেস অবিচ্ছেদ্য অংশ— বর্তমান প্রায় ৩৪% ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে তৈরি।

তাই আপনি যদি যুগের চাহিদা-বহুল ক্ষেত্র কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে জ্ঞান আরোহণ করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ধাপে ধাপে এ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শেখার-পূর্বে আপনাকে অবশ্যই এই সেক্টরের টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতেও পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস একই সাথে নানান ধরণের ফিচার, মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট, এসইও অপটিমাইজেশন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

তাই চলুন কেন আপনার ওয়ার্ডপ্রেস শেখা উচিত তা নিয়ে কয়েকটি পয়েন্ট জেনে নেওয়া যাক –

১. ওয়ার্ড প্রেস হল একটি ওপেন সোর্স মাধ্যম

ওয়ার্ডপ্রেস শেখার সব চেয়ে বড় সুবিধা হল ইহা সম্পূর্ণ রূপে ফ্রি এবং ওপেন সোর্স মাধ্যম। এর অর্থ হল আপনি চাইলে যখন তখন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ফ্রিতে নতুন নতুন ফিচারসমুহ যুক্ত করতে পারবেন, সেই সাথে আপনার ব্যবহৃত বর্তমান ওয়েবসাইটকে আরও বেশি ইউজার-ফ্রেন্ডলি করতে পারবেন। একজন বিগিনার হিসেবে কিংবা একজন মিডিয়াম লেভেল ওয়েব প্রোগ্রামার হিসেবে, ওয়ার্ডপ্রেস শেখা এখন আশীর্বাদ স্বরূপ।

কারণ আপনি যদি প্রোগ্রামার হন তাহলে আপনি ওয়ার্ড- প্রেসের মাধ্যমে ওয়েবসাইট তৈরির পাশাপাশি নতুন নতুন আকর্ষনীয় ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রায় ৬১.৮% জায়গা জুড়ে আছে ওয়ার্ডপ্রেস। তাই আপনি যদি সামান্য টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের হয়ে থাকেন, খুব সহজে আপনার পিসিতে ওয়ার্ডপ্রেসের লোকাল ভার্সন ডাউনলোড করে কাজ শুরু করতে পারেন।

২. ওয়ার্ডপ্রেস ফ্লেক্সিবিলিটি মেইনটেইন করে :

ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি খুবই ফ্লেক্সিবল একটি মাধ্যম। এর মূল সুবিধা হল আপনার যদি কোডিং এ শূন্য জ্ঞানও থাকে তবুও আপনি ওয়ার্ড- প্রেসে কাজ শুরু করতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপ- মেন্ট শিখে আপনি খুব সহজে ই-কমার্স ওয়েবসাইট, বিজনেস ওয়েবসাইট, কিংবা ডাইনামিক ব্লগিং সাইট তৈরি করতে পারবেন।

৩. খুব সহজে এসইও অপটিমাইজেশন :

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম মাধ্যম হল এসইও (SEO)। এছাড়া ই-কমার্স বিজনেস থেকে শুরু করে আপনি যদি ইন্টারনেট ব্রান্ডিং এর মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে চান আপনাকে সবার আগে এসইও নিয়েই ভাবতে হবে। তাই আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখেন সেক্ষেত্রে আপনি সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র‌্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে আপনার ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে থাকতে পারবেন। টাইটেল, হেডিং, মেটা ডেসক্রিপশন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেস সাইট অপটিমাইজ করতে পারবেন। ফলস্বরুপ অধিক ট্রাফিক আপনার সাইটে এংগেজ করতে পারবে।

গ্রাফিক ডিজাইন শেখার জন্য ঘুড়ি লার্নিং এর কিছু অসাধারণ কোর্স—

Basic Graphics Design Course

Advanced Graphics Design Course

Graphics Design A to Z

৪. প্লাগিন (Plugin) এবং Widgets

আপনার যদি কোডিং এ শূন্য জ্ঞানও থাকে তবুও আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল করে খুব সহজে নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য এড করতে পারবেন কোন ঝামেলা ছাড়া। একই সাথে আপনি ই-কমার্স শপ, ডিজিটাল এনালিটিক্স, এসইও ,সোশ্যাল শেয়ারিং সহ গ্রাহকদের জন্য নানা ধরনের ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। তাই আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চান তাহলে আপনাকে থিম এবং প্লাগিন সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা নিয়েই কাজে নেমে পড়তে হবে। তাহলেই আপনি যেকোনো ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

৫. কাস্টম ডিজাইন ফ্লেক্সিবিলিটি:

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসাবে ওয়ার্ডপ্রেস শেখা যথেষ্ট সহজ বলে আপনি খুব সহজে ওয়েবসাইট কাস্টমাইজড করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ডিজাইনের ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন। এর সহজ ইন্টারফেসকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজে নিজের আইডিয়া জেনারেট করে আপনার নিজস্ব ব্রান্ড বিল্ড-আপ করতে পারবেন।

তাই আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের কিংবা আপনার ক্লায়েন্টদের ইউনিক ওয়েবসাইট উপহার দিতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখে বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।

৬. ইহা ইন্সটল করা বেশ সহজ

ওয়ার্ডপ্রেসে খুব সহজে আপনি প্লাগিন ইনস্টলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ফিচার যুক্ত করতে পারবেন। বিগত দিনে কোন রকম জটিল কোড ব্যবহার করা ছাড়াই যেমন এমএস অফিস ব্যবহার করা যেত, ওয়ার্ডপ্রেসও অনেকটা সেরকম। তাই আপনি যদি এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সে ক্ষেত্রে আপনি খুব সহজে ওয়ার্ডপ্রেস কোন হোস্টিং এ বা লোকাল হোস্টের মাধ্যমে আপনার পিসিতে ইনস্টল করে ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শেখা শুরু করতে পারেন।

৭. সব ধরণের মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট করে

ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন ধরণের মাল্টিমিডিয়া যেমন ভিডিও, অডিও কিংবা ইমেজ যুক্ত করতে পারেন। আপনি হাইপার-লিংক ডকুমেন্ট যুক্ত করতে পারেন। ওয়ার্ডপ্রেস শুধুমাত্র আপনার ওয়েবসাইটে ডাটা স্টোর করতে সাহায্য করে তা কিন্তু নয় বরং একই সাথে আপনার ওয়েবসাইটকে বেশ আকর্ষণীয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলতে সাহায্য করে। তাই এই প্রযুক্তির অগ্র যাত্রায় নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে হবে।

৮. হেল্প-ফুল লার্নিং কমিউনিটিতে শেখার সুযোগ :

ওয়ার্ডপ্রেস বিষয়টা অতটা জটিল না হলেও অনেকেই প্রথম দিকে শিখতে গিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু আপনি যদি অনলাইন কিংবা অফলাইনে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখতে চান সে ক্ষেত্রে এর হেল্প-ফুল লার্নিং কমিউনিটি আপনাকে এই যাত্রায় আনন্দের সাথে শেখার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। তাছাড়া যত ধরণের সহজ কিংবা জটিল সমস্যা আছে তা আপনি ওয়ার্ডপ্রেস সাপোর্ট সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করে তার উপযুক্ত সমাধান পেয়ে যাবেন। লিংক -www.wordpress.org. তাছাড়া ঘুড়ি লার্নিং এরও দারুণ সব কোর্স আছে সহজে ঘরে বসে ওয়ার্ডপ্রেস শেখার জন্য।

৯. ওয়ার্ডপ্রেস ১০০ এর অধিক ভাষা সাপোর্ট করে:

কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ওয়ার্ডপ্রেস একই সাথে ১০০ এর অধিক ভাষা সাপোর্ট করে। তাই আপনি সারা বিশ্বের যে কোনো ওয়েবসাইট আপনার ভাষায় ট্রান্সলেটের করতে পারবেন খুব সহজে। সুতরাং আপনার লোকাল ভাষায় ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেও ওয়ার্ডপ্রেস খুব কার্যকরী। পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে সাপোর্ট দিতে পারবেন।

১০. অসাধারণ ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ :

আপনি যদি এই টেক দুনিয়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চান সে ক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট শিখে ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে আত্ম প্রকাশ করতে পারেন বেশ সহজে। সুতরাং আপনি যদি অনলাইনে নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আপনি যেমন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন, পাশাপাশি আপনি প্লাগিন ডেভেলপমেন্টেও কাজ করতে পারবেন।

এছাড়াও আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে নিজের কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলতে পারবেন। আপনি যদি নিজেকে একজন ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন সে ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনি প্রতি মাসে ৫০ হাজারের বেশি টাকা আয় করতে পারবেন, যা বাংলাদেশে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে করছেও।

.

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *