ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে – নতুনদের জন্য গাইডলাইন
How-to-start-Freelancing-in-Bangladesh
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে?
যারা নতুন ফ্রিল্যান্সার আছেন বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই একটি ব্যাপার মাথায় আসে আর সেটা হলো ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে!
আসলেই আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের ফ্রিল্যন্সিং নিয়ে এখনো পর্যাপ্ত ধারণা নেই। আর তাই তারা বিশ্বাস করতে পারেন না যে, ঘরে বসে আসলেই অনলাইনে উপার্জন করা সম্ভব!
কিন্তু আসলেই বাংলাদেশের অনেক মানুষ ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করছেন, আর ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হয়েছেন!
তাই, অবশ্যই আমাদেরকে প্রথমে মাথায় রাখতে হবে, ফ্রিল্যান্সিং করেও উপার্জন করা যায়, এবং এই উপার্জন অন্য যেকোন ১০ টা চাকরির থেকে নেহাত কম নয়!
আর এই কারনে প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্তরা ধীরে ধীরে ফ্রিল্যাস্নিং এর প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন এবং ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন।
কিন্তু নতুন দের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বাধা হলো, তারা প্রথমে বুঝতে পারে না যে আসলে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হয় কিভাবে।
আজকের এই ব্লগে আমরা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার খুঁটিনাটি বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং বলতে আসলে বাংলায় মুক্তপেশাকে বোঝায়!
মুক্তপেশা মানে হচ্ছে, আপনি যে কাজ আপয়ার ইচ্ছামতো করতে পারবেন। অর্থাৎ, ধরুন আপনাকে একজন বায়ার বলল তার একটি ওয়েবসাইট লাগবে।
এখন, আপনার কোন সমস্যার জন্য বা যে কোন কারনেই হোক না কেন, আপনি যদি তার অর্ডার না নিয়ে থাকেন তাহলে বায়ার কি আপনাকে জোর করে কাজ দিবে? অবশ্যই নয়! তাহলে আপনার কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আছে না?
কিংবা ধরুন, আপনাকে বায়ার ৩ দিন সময়ের একটি কাজ দিল। আপনি সেটা সকালে করবেন নাকি রাতে করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আপনি তাকে ৩ দিনের মধ্যে কাজ করে দিতে পারলেই হচ্ছে। তাহলে আপনার কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আছে না?
আর এই কারনেই ফ্রিল্যান্সিং কে মুক্ত পেশা বলা হয়!
তবে পুরো ব্যাপারটা এতটাও সহজ নয়! যারা নিয়মিত ফ্রিল্যান্সিং করেন তারা বুঝতে পারেন।
কিন্তু, আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাচ্ছেন তাদের অনেক বড় একটি প্রশ্ন হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে?
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের এই প্রশ্নের একদম ব্যসিক লেভেলের উত্তর দেওয়া হয়েছে। ভালোভাবে জানতে পুরো আর্টিকেলটি সুন্দর ভাবে পড়ুন।
Freelancing শুরু করার জন্য কি কি জিনিস দরকারঃ
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আবশ্যই আপনাকে basic কিছু ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে।
freelancing শুরু করার জন্য যে বিষয় গুলো আপনার দরকার পড়বে তা হলোঃ
কম্পিউটার,
ইন্টারনেট কানেকশন,
English এ পর্যাপ্ত দক্ষতা,
কাজের প্রতি দক্ষতা,
প্রশ্ন করতে পারেন, মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা সম্ভব কিনা? আসলে, মোবাইল দিয়ে আপনি প্রোফেশনাল ভাবে কোন কাজ করতে পারবেন না ! কারণ, মোবাইলে যদি কম্পিউটারের কাজ করা যেত, তাহলে মানুষ আর কম্পিউটার কিনত না, সবাই মোবাইল কিনতেন।
আসলে, মোবাইলের ডিসপ্লে ছোট, ফাংশন কম, এক সাথে একাধিক কাজ করা সীমাবদ্ধতা, স্টোরেজ কম, ইত্যাদি কারণে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসের প্রোফেশনাল কোন কাজ করা যায় না!
এ ছাড়াও আরও বেশ কতগুলো জিনিস আছে, যা Freelancing করার জন্য আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে কি কি জিনিস দরকার, সেই সংক্রান্ত তথ্য পেতে নিচের লিংক এ ক্লিক করুনঃ
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবেঃ
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনাকে ৪ টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আসলে, এই ৪ টি ধাপের মধ্যে আরও অনেক ভাগ রয়েছে।
অবশ্যই এই চারটি ধাপ follow করে কাজ করলে আপনার পক্ষে freelancing করা অনেক সহজ হয়ে যাবে । তো চলুন সেই চারটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
০১। পছন্দের বিষয় বেছে নিনঃ
Freelancing শুরু করার সর্বপ্রথম ধাপ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নেওয়া! মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি জব সেক্টর। আর একটি জব সেক্টরে অনেক ধরনের কাজ থাকে।
আপনি যদি শিক্ষকতা পেশার দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন, আমাদের স্কুল কলেজে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক থাকেন।
যিনি physics বা পদার্থ ——– শিক্ষক, তিনি শুধু– physics পড়ান, যিনি chemistry বা রসায়নের শিক্ষক, তিনি রসায়ন পড়ান। একই ভাবেঃ
ICT এর শিক্ষক ICT পড়ান।
Math বা অংক এর শিক্ষক অংক করান।
English এর স্যার English পড়ান।
Accounting এর শিক্ষক শুধুমাত্র accounting পড়ান, ইত্যাদি।
অর্থাৎ একজন শিক্ষক তিনি ওই একটি বিষয়ে বেশ দক্ষ আর তাই তিনি ওই একটি বিষয় পড়িয়ে থাকেন। একই ভাবে মার্কেট প্লেসে কাজের ক্ষেত্রেও আপনাকে একটি নির্দিষ্ট কাজ বেছে নিতে হবে।
মার্কেটপ্লেসে চাহিদা আছে এমন কতগুলো সেক্টর হচ্ছেঃ
Web Development – ওয়েব ডেভেলপমেন্ট,
Graphics Design – গ্রাফিক্স ডিজাইন,
SEO – এসইও,
Digital Marketing – ডিজিটাল মার্কেটিং,
Facebook Marketing – ফেসবুক মার্কেটিং,
Affiliate Marketing – এফিলিয়েট মার্কেটিং,
CPA marketing – সিপিএ মার্কেটিং,
Content writing – কন্টেন্ট রাইটিং,
Video editing – ভিডিও এডিটিং,
Data Entry – ডাটা এন্ট্রি,
Virtual assistant – ভার্চুয়াল এসিস্টেন্ট, ইত্যাদি।
আসলে মার্কেটপ্লেসে এত এত কাজ রয়েছে যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। তাই, আমাদেরকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিতে হবে। আর এই বিষয় টি বেছে নেওয়াও অনেক কঠিন একটি কাজ!
কেননা, আপনি এই সেক্টরে যদি সম্পুর্ণ নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে বুঝে শুনে আপনার আগ্রহের দিক বেছে নিয়ে কাজ করাটা একটু কষ্ট হয়ে যাবে স্বাভাবিক!
মার্কেটপ্লেসে কি কি কাজ করা যায় আর সেই সব কাজের বিস্তারিত জানতে আমাদের নিচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ
০২। পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করুনঃ
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রথম ধাপ ছিল নির্দিষ্ট বিষয় বা সেক্টর বেছে নেওয়া। আর দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করা!
অর্থাৎ, আপনি যে বিষয়টি বেছে নিয়েছেন সেই বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে আপনি মার্কেটপ্লেসে কিভাবে ভালো সার্ভিস দিবেন?
মার্কেটপ্লেস হচ্ছে একটি প্রতিযোগীতা মূলক জায়গা, যেখানে আপনাকে সব সময় প্রতিযোগীতা করে টিকে থাকতে হবে।
আর আপনি যদি প্রতিযোগীতায় টিকে থাকার মতো পর্যাপ্ত দক্ষ না হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে এই সেক্টর থেকে ছিটকে পড়তে হবে স্বাভাবিক!
তাই, অবশ্যই প্রথমে নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো ভাবে দক্ষ হতে হবে। তবে দক্ষতার ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় মাথায় রাখবেনঃ
নির্দিষ্ট সেক্টরে পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করুন।
মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ নিতে পারার মতো দক্ষতা অর্জন করুন।
অনেকেই শুধু নির্দিষ্ট কাজ শিখেই মার্কেটপ্লেসে আসেন, আর কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পরবর্তীতে মার্কেটপ্লেস ছেড়ে চলে যায় !
মনে রাখবেন, কাজ করতে পারা যেমন একটি দক্ষতা, তেমনি মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ নিতে পারাটাও একটি দক্ষতা।
আপনি কাজ করতে পারলেও আপনি যদি কাজ নিতে পারার দক্ষতা অর্জন না করেন, তাহলে আপনি মার্কেটপ্লেস কিংবা মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকে কাজ নিতে পারবেন না !
সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মার্কেটপ্লেস কিংবা মার্কেটপ্লেসের বাইরে থেকে কাজ নিতে পারার মতো দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
০৩। নির্দিষ্ট মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট তৈরি করুনঃ
একটি নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নেবার পরে এবং সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করার পরে আপনাকে এবার মার্কেটপ্লেসে একটি একাউন্ট খুলতে হবে। মার্কেটপ্লেস হচ্ছে কাজের ক্ষেত্র!
ধরুন, আপনি একটি চাকরি করেন। তাহলে, চাকরির জন্য অবশ্যই আপনার একটি অফিস থাকবে। কিন্তু আপনি যখন ফ্রিল্যান্সিং করছেন তখন আপনার অফিসটি আসলে কোথায়?
এই মার্কেটপ্লেস গুলোকে আপনি আপনার অফিস হিসাবে বা কার্যালয় হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন!
মার্কেটপ্লেস হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যেখানে আসলে কিছু ক্রেতা আর বিক্রেতা থাকে! তবে, আমাদের লোকাল যে বাজার রয়েছে, এই মার্কেটপ্লেস গুলো আসলে তেমন হয়!
কেননা, আমাদের লোকাল বাজার গুলোতে পণ্য বিক্রয় করা হয়, কিন্তু এই মার্কেটপ্লেস গুলোতে বিভিন্ন service বা সেবা দেওয়া হয়।
এই সেবা বিক্রি করেন একজন ফ্রিল্যান্সার বা সেলার! আর সেবা কিনেন একজন বায়ার বা ক্রেতা!
বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত যেসব ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে তা হলোঃ
আপওয়ার্ক,
ফাইবার,
ফ্রিল্যান্সার ডট কম,
গুরু ডট কম,
পিপল পার আওয়ার, ইত্যাদি।
এ ছাড়া আরও অনেক ধরনের ফ্রিল্যান্স সাইট রয়েছে। আপনি চাইলে এখানে আপনি প্রতিদিন ফ্রিতে ১০ টি করে বিড করতে পারবেন!
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে এই প্রশ্নেরতীয় ধাপে আপনারা যেকোনে একটি মার্কেটপ্লেস বেছে নিবেন আর সেই মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোফাইল তৈরি করবেন।
মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করার সময় যে বিষয় গুলো জেনে নিতে হবে, তা সম্পর্কে জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেনঃ
০৪। নিয়মিত বিড করতে থাকুনঃ
আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং শব্দটির সাথে নতুন তাদের ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে? এই প্রশ্নের জন্য আমাদের চতুর্থ point হচ্ছে, নিয়মিত বিড করা!
আপনি মার্কেটপ্লেসে আপনার একাউন্ট খোলার পরে আপনি আপনার প্রোফাইলটা ভালো করে সাজাবেন! আপনার profile ready করার পরে আপনি এবার থেকে বায়ারের বিভিন্ন জব পোস্ট দেখতে পাবেন, আপনি সেই সব জবের বিপরীতে বিড করতে থাকুন!
বিড করা বলতে আসলে এটাই বোঝায় যে, আপনি বায়ারের একটি কাজ ঠিক কি ভাবে করে দিবেন, কত দিন সময় নিয়ে করে দিবেন, কত টাকা নিবেন এই সব কিছু দিয়ে তাকে একটি proposal পাঠানো!
আপনি এবং আপনার মতো অনেকেই বায়ারকে এই ভাবে proposal পাঠাবে! বায়ার আপনাদের থেকে যার proposal পছন্দ করবে, বায়ার তাকেই কাজ দিবেন!
তাই, বিড করার সময় অবশ্যই ধীরে, এবং বুঝে শুনে বিড করবেন! মনে রাখবেন, এক একটি বিড মানে হচ্ছে এক একটি সম্ভাবনা!
এবার আপনি ধরুন, প্রথম ১০ টি বিডে কোন কাজ পেলেন না, তাহলে অবশ্যই ১১ নম্বর বিডে কাজ পাবেন!
ধরলাম আপনি প্রথম ৫০ বিডে কোন কাজ পেলেন নাহ, তাহলে ৫১ নম্বরে তো অবশ্যই পাবেন, নাকি?
তবে, বিড করার সময় কাজ বুঝে শুনে, ঠিকঠাক ভাবে proposal লিখলে, আপনার কাজ পাবার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে! তাই অবশ্যই আপনি বুঝে শুনে বিড করবেন, যেন বায়ার আপনাকেই কাজ দেয়!
Freelancing এর সব থেকে চাহিদাসম্পন্ন কাজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে Web Development.
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে? – কিছু Advanced কথাঃ
“ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে?” নামক আর্টিকেল টিতে আমরা মূলত একদম নতুন ফ্রিল্যান্সার দের নিয়ে কথা বলেছি! এই আর্টিকেলটি তাদের জন্যই যারা আসলেই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না!
আসলেই যারা একদম নতুন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যাচ্ছেন তারা যেহেতু এই সেক্টর সম্পর্কে জানেন না! তাই তারা বারবার এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে থাকেন যে, ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো কিভাবে? বা কোন কোন পদ্ধতি গুলো মেনে আমরা ফ্রিল্যান্সার হতে পারি?
আর তাই, নতুন দের এই সমস্যা সমাধানের জন্যই আমাদের এই আর্টিকেল লেখা হয়েছে! এবার, আপনারা যখন freelancing শুরু করবেন, তখন সময়ের সাথে সাথে আরও নানা পদ্ধতির বা ধাপের মুখোমুখি হবেন!
যেমনঃ নিজের পোর্টফোলিও তৈরি, self branding, দক্ষতা বৃদ্ধি, নিজেকে সব সময় up to date রাখা, ইত্যাদি বিষয় থাকেই! তবে, সে গুলো আপনারা আপনাদের কাজ শেখার সাথে সাথে জেনে যাবেন।