ফেসবুক থেকে অর্থ উপার্জনের ৬ উপায়
মনে রাখবেন, ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৯০ কোটি।
যেখানে ইনস্টাগ্রামের ১৩০ কোটি, টিক টকের ১০০ কোটি এবং টুইটারের ৩৯ কোটি ৬০ লাখ।
অর্থাৎ অন্যান্য সব প্লাটফর্মের তুলনায় ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকম বেশি ।
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অর্থ উপার্জনের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন।
সে গুলোর মধ্যে রয়েছে- ফেসবুকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, মেসেঞ্জারে বিজ্ঞাপন ও মার্কেটপ্লেসে পণ্য বিক্রির মতো বিষয়।
তবে বর্তমানে সামগ্রিকভাবে ফেসবুকে অর্থ উপার্জন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে । এখনকার একটি পেজের কোনো অর্গানিক পোস্টের গড় রিচ সাধারণত মোট ফলোয়ারের প্রায় ৫ শতাংশ।
২০১৮ সালেও যেটি ছিল ৭ শতাংশ। আর যারা বিজ্ঞাপন এবং স্পন্সর করা বিষয়ের মাধ্যমে পে-টু-প্লে করেন; সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রিচ আরও হ্রাস পেয়ে যায়।
তবে ভালো খবর এই যে, ফেসবুক তার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের জন্য নতুন এবং চমৎকার কিছু উপায় তৈরি করছে।
যদিও সে গুলো মূলত উদ্যোক্তা এবং ফেসবুকে বিপুল সংখ্যক ফলোয়ার আছে এমন সব পেজের জন্য।
ইউটিউবে প্রতি ১০ লাখ ভিউয়ে আয় কত :
আপনার যদি বেশ ভালো সংখ্যক ফলোয়ারযুক্ত পেজ থাকে এবং সেখান থেকে কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে চান অথবা বিদ্যমান কোনো ব্যবসার জন্য আরও গ্রাহক পেতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ৬টি উপায়।
যে গুলোর মাধ্যমে আপনি ফেসবুক থেকে আয় করতে পারবেন।
পাশাপাশি আপনাকে যে সব প্রয়োজনীয়তা মেনে চলতে হবে সে সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে।
ফেসবুক মনিটাইজেশন :
আপনার ফেসবুক পেজের মনিটাইজেশনের যোগ্যতা রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখুন।
আপনার ফেসবুক পেজে যে কনটেন্ট পোস্ট করবেন সেগুলো অবশ্যই প্লাটফর্মের প্রয়োজনী শর্ত মেনে পোস্ট করতে হবে।
যা সাধারণত ৩টি বিভাগে বিভক্ত।
প্রথমত, ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড। এ গুলো হলো প্ল্যাটফর্মের এক বারে মৌলিক নিয়ম।
উদাহরণ স্বরূপ, কোনো বিভৎস বা নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু পোস্ট করা যাবে না।
দ্বিতীয়, পার্টনার মনিটাইজেশন পলিসি। এই নিয়মগুলো সামগ্রিকভাবে আপনার ফেসবুক পেইজের জন্য।
সেই সঙ্গে আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট কীভাবে তৈরি করেন এবং শেয়ার করেন সেগুলোর জন্য।
এ ছাড়া আপনি কীভাবে অনলাইনে অর্থ প্রদান করেন এবং গ্রহণ করেন তার জন্য।
সব শেষে রয়েছে কনটেন্ট মনিটাইজেশন পলিসি। এগুলো বিশেষত কনটেন্ট সম্পর্কিত নিয়ম। যা আপনার পোস্ট করা প্রতিটি কনটেন্টের জন্য প্রযোজ্য।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো হিংসাত্মক বা অনিরাপদ কনটেন্ট আপলোড না দেওয়া।
আপনার মনিটাইজেশনের যোগ্যতা যাচাই করতে আপনার ফেসবুকের ক্রিয়েটর স্টুডিওতে যান।
সেখানে মনিটাইজেশন ট্যাবে ক্লিক করুন। কোনো পেজের জন্য আপনার মনিটাইজেশনের যোগ্যতা দেখতে চান তা নির্বাচন করুন।
এ ছাড়া সেখানে আপনাকে পেজ সম্পর্কে মনিটাইজেশনের অন্যান্য তথ্যও দেওয়া থাকবে।
একবার যদি আপনি ফেসবুকে কনটেন্ট মনিটাইজেশনের জন্য যোগ্য হয়ে যান।
তারপর আপনার আয় নিয়মিত বজায় রাখতে সেই যোগ্যতা ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ফেসবুক ভিডিও ডাউনলোড করবেন যেভাবে :
এর জন্য নিয়মিতভাবে প্লাটফর্মের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডগুলো পর্যালোচনা করুন, উচ্চমানের কনটেন্ট দিয়ে ডোমেইন পরিষ্কার রাখুন এবং কনটেন্ট পোস্ট করার অধিকারটি নিশ্চিত রাখুন।
যদি কোনো কারণে আপনার পেইজটি অযোগ্য হয়ে যায়। তাহলে ফেসবুক আপনাকে আপনার ক্রিয়েটর স্টুডিওতে মনিটাইজেশন ট্যাবের মাধ্যমে সেটি জানিয়ে দেবে।
সেই সঙ্গে কী কারণে আপনি আর যোগ্য নন সেটিও তারা জানিয়ে দেবে।
ফেসবুকে অর্থ উপার্জনে বেছে নিতে পারেন ৬ উপায় :
ইন-স্ট্রিম অ্যাড
ভিডিওর মধ্যে থাকা বিজ্ঞাপন কিংবা ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপনগুলো বেশ চমৎকারভাবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
যখন একজন ব্যবহারকারী একটি ফেসবুক ভিডিও দেখতে থাকেন। তখন যদি ভিডিওটির মধ্যে একটি বিজ্ঞাপন আসে; তাহলে বিজ্ঞাপনটি দর্শকদের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা সব চেয়ে বেশি থাকে।
এর কারণ তার মূল ভিডিওটির বাকি অংশ দেখার আগ্রহ, তাই তিনি ওই ভিডিওটি দেখতে থাকেন। তাই এটি ফিডের একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপনের চেয়ে কার্যকর।
কারণ ব্যবহারকারীদের ফিডের স্বতন্ত্র বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
যেভাবে করবেন-
ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে আপনাকে ভিডিওটি গল্প আকারে উপস্থাপন করতে হবে। ভিডিওতে ইতোমধ্যে আগ্রহী দর্শকদের মনোযোগ ধরতে ইন-স্ট্রিম অ্যাডগুলো খুবই কার্যকরী।
তবে ফেসবুকের শর্তগুলো পূরণের পাশাপাশি ভিডিওগুলো অবশ্যই এক মিনিটের বেশি দৈর্ঘ্যের হতে হবে।
সেই সঙ্গে ইন-স্ট্রিম বিজ্ঞাপন চালানোর জন্য আপনার পেজে কমপক্ষে ১০ হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে।
পেজে পেইড সাবস্ক্রিপশন যোগ :
পেইড বা অর্থের বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন তৈরি করে মাসিক আয় বাড়ানো সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ফলোয়াররা অর্থপ্রদানের মাধ্যমে পেজে সাবস্ক্রিপশন নিয়ে বিশেষ বা এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট, ছাড়সহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
এ রকম পেইড সাবস্ক্রিপশনের ব্যবহার করে থাকে ভেগান বেকার নামের একটি ব্র্যান্ড। তারা তাদের ব্র্যান্ডের ফলোয়ারদের জন্য একটি আলাদা ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করেছে।
যেখানে তাদের বিশেষ কনটেন্ট এবং বিভিন্ন ছাড় পেতে ফলোয়ারদের প্রতি মাসে প্রায় ৫ ডলার প্রদান করতে হয়।
এ ছাড়া ফেসবুকের ‘স্টার’ ফিচার দিয়ে ফলোয়াররা স্টারের একটি প্যাক কিনতে পারে। যা তারা তাদের প্রিয় নির্মাতাদের অতিরিক্ত আয়ের জন্য টিপস হিসেবে পাঠাতে পারে।
যেভাবে করবেন-
সাবস্ক্রিপশনের এই সুবিধাটি এখন শুধু ফেসবুকের ইনভাইটেশন ফিচারের ভিত্তিতে পাওয়া যায়।
ব্যবহারকারীরা ফ্যান সাবস্ক্রিপশন আনলক করতে পারে যখন তাদের ১০ হাজার ফলোয়ার বা ২৫০ জনের বেশি রিটার্ন ভিউয়ার থাকে কিংবা ৫০ হাজার পোস্ট এনগেজমেন্ট বা ১ লাখ ৮০ হাজার ওয়াচ মিনিট থাকে।
ইনভাইটেশনের ফিচারটি পেয়ে গেলে সাবস্ক্রাইবাররা সেটি থেকে কী কী সুবিধা পাবেন তা আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কোলাবরেশন :
আপনার পেজের রিচ বাড়াতে এবং কনটেন্টকে বৈচিত্র্যময় করতে প্রাসঙ্গিক কারও সঙ্গে কনটেন্ট তৈরি করুন।
নতুন দর্শকের কাছে পৌঁছাতে এবং ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে অনেক নির্মাতা, কোম্পানি, ব্র্যান্ড আছে; যারা বেশ ভালো ফলোয়ার রয়েছে এমন কারও সঙ্গে কাজ করতে চান।
এ ক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে তাদের সঙ্গে কোলাবরেশন কিংবা একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া এটি আপনার নিজের ফলোয়ার সংখ্যা বাড়াতেও সাহায্য করবে।
যেভাবে করবেন-
আপনার পোস্টে ব্যবসায়িক পার্টনারদের ট্যাগ শুরুর আগে আপনাকে প্রথমে তাদের কাছে অ্যাক্সেসের জন্য অনুরোধ করতে হবে।
একবার সেটি হয়ে গেলে আপনি পেজের ব্র্যান্ড কোলাবস ম্যানেজারের মাধ্যমে কোলাবরেশনের বিভিন্ন বিষয় সেখানে দেখতে পারবেন।
ফলোয়ারদের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ উপার্জন :
ফেসবুক সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, এটি তাদের প্লাটফর্মের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা অর্গানিক ভিডিও কনটেন্টের ওপর আরও গুরুত্ব দেবে।
যাতে করে ব্যবহারকারীরা যেন ফেসবুকে শুধু টিক টকের পোস্টই শেয়ার না করে।
ফেসবুকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং ইনফ্লুয়েন্সাররা কিছু ধারাবাহিক ‘চ্যালেঞ্জ’ যেমন, রিলে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউ তৈরির মতো একটি সিরিজ সম্পূর্ণ করে মাসে ৪ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত আর্থিক পুরস্কার পেতে পারবেন।
যেভাবে করবেন-
চ্যালেঞ্জ ফিচারটি এই মুহূর্তে শুধু ইনভাইটেশনের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ফেসবুক বর্তমানে যাদের ফলোয়ার সংখ্যা মিলিয়নের কাছাকাছি বা অধিক তাদের লক্ষ্য করছে৷
ইনভাইটেশনটি পেলে প্রথম চ্যালেঞ্জটি অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে হবে। আর না হলে ফিচারটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
অনলাইনে পেইড ইভেন্ট :
আপনি আপনার ফেসবুক পেজে অর্থের বিনিময়ে ইভেন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
ফেসবুকের ইভেন্ট ফিচারটির মাধ্যমে আপনি আপনার পেজ দিয়ে ইভেন্টের সময়সূচি তৈরি, সেটি সাজানো এবং তা চালাতে পারবেন।
জ্যাসপার’স মার্কেট তাদের ফেসবুকের বিজনেস পেজের মাধ্যমে বেশ কিছু ইভেন্ট হোস্ট করে এবং সেগুলোর বিজ্ঞাপন দেয়।
সেখান থেকে ভক্তরা ইভেন্টের একটি তালিকা দেখতে পারে এবং ব্র্যান্ডের পেজ থেকে সরাসরি ইভেন্টের প্রবেশাধিকার কিনতে পারে। ইভেন্টটি অনলাইনে ফেসবুকেই অনুষ্ঠিত হয়।
যেভাবে করবেন-
আপনার ফেসবুক পেজে পেইড অনলাইন ইভেন্টস-এর ফিচারটি চালু করুন। একটি নতুন ইভেন্ট তৈরির জন্য ইভেন্ট ট্যাবে ক্লিক করুন৷
সেখানে ‘পেইড’ অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর আপনার ইভেন্ট, মূল্য এবং যদি কোনো সহ-হোস্ট থাকে তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন।
তবে পেইড কিংবা অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে ইভেন্টগুলো তৈরি করতে হলে, আগে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং পেইজটি তাদের মনিটাইজেশন যোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হবে।
ফলোয়ারদের আপনার অনলাইন স্টোরে নিয়ে যান :
ফেসবুকের সোশ্যাল কমার্স ফিচারটির মাধ্যমে আপনার ফেসবুক পেজ থেকে ক্রেতাদের সরাসরি আপনার অনলাইন স্টোরে নিয়ে যেতে পারবেন।
যে সব ব্র্যান্ডের ইতোমধ্যে ফেসবুকে একটি ছোট ব্যবসা রয়েছে তাদের জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উপায়।
যা স্ক্রল করে বেড়ানো ব্যবহারকারীদের বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে পণ্যটি কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
যেভাবে করবেন :
আপনার ফেসবুক পেজের ক্যাটালগ ম্যানেজারে আপনার পণ্যের ক্যাটালগ যোগ করুন। তারপর আপনি যখন একটি ছবি বা ভিডিও পোস্ট করবেন, তখন প্রাসঙ্গিক পণ্যটির সঙ্গে তা লিংক করে দিন।
লাইভস্ট্রিম চলাকালীনও আপনি একটি পণ্য লিঙ্ক করতে পারবেন।
সবশেষে আপনার উপার্জনকে বৈচিত্র্যময় করুন। আপনি চাইলে এর জন্য ফেসবুকে একটি ই-কমার্স ব্যবসা শুরু, বিভিন্ন পরিষেবা বিক্রি, ডিজিটাল পণ্য তৈরির মতো আরও বিভিন্ন বিষয় করতে পারেন।
আর এ সবে সাফল্য পেতে হাতিয়ার হিসেবে ফেসবুকের বিপুল সংখ্যক ফলোয়ারকে ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখবেন, ফেসবুকের মাসিক সক্রিয় ব্যবহার- কারীর সংখ্যা প্রায় ২৯০ কোটি।
যেখানে ইনস্টাগ্রামের ১৩০ কোটি, টিক টকের ১০০ কোটি এবং টুইটারের ৩৯ কোটি ৬০ লাখ।
অর্থাৎ অন্যান্য সব প্লাটফর্মের তুলনায় ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকম বেশি।
তাই এই বিশাল সংখ্যক ব্যাবহারকারীর এই প্লাটফর্ম থেকে অর্থ উপার্জনের পদ্ধতি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।