বার্ধক্য

মার্কিন বিজ্ঞানী ড. ডেভিড সিনক্লেয়ার মতে বার্ধক্য একটি ‘ রোগ ‘, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

আমরা জানি বার্ধক্য ঠেকানো যায় না, বার্ধক্য একটা প্রাকৃতিক নিয়ম এবং প্রত্যেকেরই নিয়তি।

আমরা বেশিরভাগ মানুষ জীবনকে এভাবেই দেখি। কিন্তু জেনেটিক বিজ্ঞানী ডেভিড সিনক্লেয়ার তা মনে করেন না।

দুই দশকের ওপর এ বিষয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তিনি বলছেন যে , বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব – দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন শুধু কিছু সহজ অভ্যাস।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন, এমন দিন খুব দূরে নেই যখন ঔষধের সাহায্যে বার্ধক্য সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে।

এসব ঔষধ এখন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে এবং এই ঔষধ গুলো দিয়ে বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়া আসলেই আটকে রাখা যাবে বলে তিনি বলেছেন ।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ‘দীর্ঘ রোগমুক্ত জীবন’ নিশ্চিত করে।

কে এই বিজ্ঞানী ডেভিড সিনক্লেয়ার?

বিজ্ঞানী ড. ডেভিড সিনক্লেয়ার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন এবং পরবর্তীতে গবেষণা করেছেন আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস্ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে।

বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি ল্যাবরেটোরির প্রধান, যেখানে তাঁর গবেষ- ণার বিষয় – ‘কেন আমরা বুড়ো হই’।

তাঁর গবেষণার জন্য তিনি বিজ্ঞান জগতের বহু পুরস্কার পেয়েছেন । তিনি একজন সেলিব্রিটি ও ।

টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০জনের তালিকায় তিনি নির্বাচিত একজন ব্যক্তিত্ব এবং টুইটারে
তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখ ।

তাঁর ৩৫টি গবেষণার সত্ত্বাধিকারী তিনি নিজে। তিনি বেশ কয়েকটি জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয় প্রতিষ্ঠাতা , নয়তো সে গুলোর কাজের সাথে সম্পৃক্ত ।

এই প্রতিষ্ঠান গুলোর বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্র হল বার্ধক্য বিলম্বিত করা বা ঠেকানো।

মেরিল লিঞ্চ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বার্ধক্য সংক্রান্ত কাজে বর্তমানে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার কোটি ডলার, যা ২০২৫ সালে গিয়ে পৌঁছবে ৬০ হাজার কোটি বা ৬০০ বিলিয়ন ডলারে ।

বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি ঘাটতি যে বইটির, সেটি ড. সিনক্লেয়ারের লেখা – ‘লাইফস্প্যান-হোয়াই উই এইজ-অ্যান্ড হোয়াই উই ডোন্ট হ্যাভ টু’ ? (কেন আমরা বৃদ্ধ হই-আর কেন আমরা বৃদ্ধ হবো না)।

এই বইয়ে তিনি প্রচলিত বিশ্বাস ভাঙার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন – কেন বার্ধক্য একটা অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়া নয় ।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন বৃদ্ধ হওয়া নিয়ে যেভাবে আমরা ভাবি, সে ভাবনাতে আমাদের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে বার্ধক্য একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম নয় ।

আমাদের এটাকে একটা ‘অসুখ’ হিসাবে দেখতে হবে – অর্থাৎ রোগ হিসাবে এর চিকিৎসা সম্ভব এবং এর নিরাময়ও সম্ভব।

তিনি বলেছেন, বৃদ্ধ বয়স নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা একে বারে পাল্টে ফেলতে পারি, তাহলে মানব জাতির আয়ু উল্লেখ যোগ্য ভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে ।

অন্যথায়, তিনি বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে আমাদের আয়ু আরও বছর দু’য়েক হয়ত বাড়ানো যাবে: ” আমাদের লক্ষ্য সেটা আরও অনেক বাড়ানো। “

আমরা বৃদ্ধ হই কেন?

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ বুড়ো হওয়ার নয়টি প্রধান কারণ চিহ্ণিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত ২৫ বছরে আমার চালানো গবেষণায় আমরা প্রমাণ পেয়েছি ।

এগুলোর মধ্যে একটি হল বৃদ্ধ হওয়ার পেছনে অন্য সব গুলো কারণ এর জন্য দায়ী, এবং এর ফলে শরীর তার সব তথ্য হারিয়ে ফেলে।

আমাদের শরীরের দুই ধরনের তথ্য মজুত থাকে – এর মধ্যে এক ধরনের তথ্য আমরা বংশগত ভাবে পাই ।

আমাদের বাবা মায়ের কাছ থেকে, আর অন্য ধরনের তথ্যগুলো শরীরে তৈরি হয় সময়ের সাথ সাথে পরিবেশ গত নানা কারণে।

এর একটি হল “ডিজিটাল” তথ্য – অর্থাৎ যেগুলো জেনেটিক সূত্র এবং অন্যটি হল “অ্যানালগ” তথ্য ।

যাকে বলা হয় ‘এপিজিনোম’, যেটি কোষের ভেতরকার একটা পদ্ধতি, অর্থাৎ কোন জিন চালু রাখতে হবে, কোনটা বন্ধ করে দিতে হবে সেটা যে পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে।

একটা কোষের ভেতর যে ২০ হাজার জিন থাকে, সেগুলোর মধ্যে কোনটি সক্রিয় থাকবে, আর কোনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে ।

সেটাই কোষটিকে বলে দেয় সে কে- অর্থাৎ ওই কোষের পরিচয় কী হবে এবং কীভাবে সেই কোষটি কাজ করবে।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই এপিজিনোম পদ্ধতি তথ্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করে ।

ধরুন ঠিক যেভাবে আপনার গানের একটা সিডিতে আঁচড় লেগে গেলে সিডি সেখান থেকে গানের অংশটা আর খুঁজে বের করতে পারে না।

ফলে তথ্যের অভাবে কোষগুলোও ঠিক সময়ে সঠিক জিনকে চালু করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে – তাদের কার্য ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আমার মতে, এ কারণেই আমরা বুড়ো হই।

কেন বলছেন আমাদের বৃদ্ধ হওয়ার যুক্তি নেই?

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ কারণ জীব বিজ্ঞানে কোথাও লেখা নেই যে আমাদের বুড়ো হতে হবে ।

আমরা জানি না ঠিক কীভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হয়। যদিও এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার বিষয়টা আমরা ক্রমশ শিখেছি ।

আমাদের ল্যাবে আমরা বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়াটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি।

আমার বক্তব্য, এই প্রক্রিয়া – যেটাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এপিজিনোম বলে – সেটা বদলানো সম্ভব ।

যেটাকে আমি সিডিতে আঁচড় লাগার সাথে তুলনা করেছি , সেটা আমাদের জীবনকে বিশাল ভাবে প্রভাবিত করে।

আমরা কিছু জিনিস ঠিকভাবে করতে পারলে আমাদের বয়সের ঘড়িটায় জোরে সোরে রাশ টানা সম্ভব।

আজকের দিনে এই ঘড়ির দমটা মাপাও যায় – রক্ত এবং থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে।

ইঁদুর, এমনকি তিমি. হাতি আর মানুষের ওপর আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি একেকটা প্রাণীর জীবন যাত্রা একেক
রকম – ফলে তাদের প্রত্যেকের বয়স
বাড়ে ভিন্ন গতিতে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল, ভবিষ্যতে আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা কী হবে, তার ৮০ শতাংশের বেশি নির্ভর করে আপনার জীবন যাত্রার ওপর, আপনার ডিএনএ’র ওপর নয়।

যারা বহু দিন বাঁচেন, তাদের ওপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন । এখানে জীবন যাত্রার মধ্যে রয়েছে আপনি সঠিক খাবার খাচ্ছেন কিনা ।

যেমন ধরুন ভূমধ্য সাগরীয় এলাকার মানুষ যে ধরনের খাবার খায়, সেটা খুবই ভাল । কম ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া, বার বার
না খাওয়া ; শারীরিক ব্যায়ামও সাহায্য করে।

অনেকে আবার মনে করে বরফ বা ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা কমানোও উপকারী।

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ বিজ্ঞানীরা মনে করেন জীবন যাত্রার বিভিন্ন অভ্যাস এবং শরীর ভাল রাখতে অভ্যাসের যেসব পরিবর্তন আমরা করি।

সেগুলো রোগব্যাধি এবং বার্ধক্যের বিরুদ্ধে শরীরের একটা স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

গরম বা ঠাণ্ডা বোধ, ক্ষুধা বোধ, দমের অভাব – এসব অনুভূতি শরীরের এই প্রতিরোধী প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে।

এই প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূলে রয়েছে মাত্র গুটি কয় জিন । আমরা এগুলোর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছি।

এই জিন গুলো এপিজিনোমকে নিয়ন্ত্রণ
করে । ক্ষুধা এবং ব্যায়াম এগুলোকে সক্রিয় করে তোলে।

এ কারণেই আমরা মনে করি, সঠিক খাবার খাওয়া এবং উপোষ করা বয়সের ঘড়িকে ধীরে চলতে সাহায্য করতে পারে।

বার্ধক্য বেশিরভাগ রোগের কারণ। হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রম এবং ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ বার্ধক্য ।

কাজেই বার্ধক্য ঠেকাতে পারলে অনেক রোগ ঠেকানো সম্ভব, শরীরে জোর আনা এবং দীর্ঘায়ু হওয়া সম্ভব।

নেচার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা অবশ্যই বৃদ্ধ হয়।

সেটা কি আপনার গবেষণার উল্টো নয়? ওই গবেষণা অনুযায়ী বার্ধক্য তো ঠেকানো বা বিলম্ব করা সম্ভব নয় ?

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ  দুশো’ বছর আগে একজন মানুষ সব চেয়ে দ্রুত ভ্রমণ করতে পারতো, একটা ঘোড়া যত জোরে ছুটতে পারে সেই গতিতে ।

এখন নতুন প্রযুক্তি অনেক কিছু বদলে দিচ্ছে । এমনকি জীব বিজ্ঞানও বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে। প্রযুক্তি অনেক সমস্যার সমাধান করছে, অনেক উন্নতি আনছে।

মানব জাতির সৃষ্টির ক্ষমতা তাকে উন্নত জীবন দিয়েছে। প্রযুক্তি ছাড়া আমরা বাঁচতাম না।

ব্যায়াম বার্ধক্য আনে দেরিতে, বার্ধক্যকে জয় করতেও আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করব। সহস্রাধিক বছর ধরে সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা প্রযুক্তির দ্বারস্থ হয়েছি ।

এটাই হবে পরের ধাপ – অর্থাৎ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের সীমাবদ্ধ- তাকে আমরা অতিক্রম করব।

আমরা প্রতিদিন কিন্তু এই কাজটা করি । আমরা শরীরে বদল আনতে ঔষধ খাই, আমরা পরিবেশ বদলাতে পদক্ষেপ নেই । একই ভাবে আমরা শরীরের রসায়নও বদলাব ।

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ রোগ কিন্তু হুট করে হয় না। এটা শরীরের ভেতর বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে তার উপসর্গ, লক্ষণ প্রকাশ পায় । মৃত্যুও আসে সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে । বুড়ো হবার প্রক্রিয়াটাও একই রকম।

বার্ধক্য একটা রোগ। এটা সবার হয়। যেহেতু এটা সবার হয় এবং আমরা মনে করি এটা প্রাকৃতিক নিয়ম, তার মানে এই নয় যে এটাকে মেনে নিতেই হবে ।

আমরা প্রমাণ করেছি যে, এই রোগও সারানো যায়, এই রোগ ঠেকানো যায়, এই রোগের প্রকাশ বিলম্বিত করা যায় ।

ড. সিনক্লেয়ারের ব্যাখ্যায় বার্ধক্য একটা অসুখ – যে কারণে এর চিকিৎসা সম্ভব।

বর্তমানে যেহেতু বার্ধক্যকে আমরা রোগ হিসাবে দেখি না, তাই ডাক্তাররা বার্ধক্যের চিকিৎসা করার জন্য কোন ঔষধ দিতে
দ্বিধা বোধ করেন।

কিন্তু কিছু ঔষধ একজন মানুষকে বহু বছর সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

অতএব, বার্ধক্যকে অসুখ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে – অথবা অন্তত বলতে হবে যে, এটা চিকিৎসা করা যায় এমন একটা স্বাস্থ্য সমস্যা ।

কিন্তু বুড়ো হওয়া বলতে আমরা যা বুঝি
এটা তো তার থেকে অনেক আলাদা । বার্ধক্য আমরা মনে করি অবশ্যম্ভাবী একটা
প্রক্রিয়া ।

আমরা চাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে উল্লেখ যোগ্য অগ্রগতি অর্জন – আমরা চাই দীর্ঘ আয়ু । এমনকি আমরা যদি সব রোগ নিরাময়ের পথ আজ পেয়ে যাই ।

তাহলেও মানুষের আয়ু আমরা গড়ে মাত্র বছর দু’য়েকের বেশি বাড়াতে পারব। কিন্তু আমরা তো আরও অনেক বেশি চাই ।

ড. সিনক্লেয়ারঃ এপিজিনোম প্রক্রিয়াকে কীভাবে মুছে ফেলা যায় আমরা সেটা উদ্ভাবনের কাজ করছি – অনেকটা সিডিতে লাগা আঁচড় পরিষ্কার করে ফেলার মত ।

আমরা অনেক জিনের ওপর কাজ করেছি দেখার জন্য যে, বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়া নিরাপদে আটকে দেয়া যায় কিনা ।

অনেক বছর এ কাজে আমরা সফল হইনি । এমনকি গবেষণা গারের এই কাজ করতে গিয়ে আমরা কোষের বদল ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করে ফেলেছি ।

অব শেষে আমরা তিনটে জিনের সন্ধান পাই, যে গুলোকে বলে ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরস। এই জিন গুলো কোষের পরিচয় বদলায় না, কিন্তু বুড়ো হওয়া আটকে দেয়।

এই কাজ আমরা করি মানুষের ত্বকের কোষ এবং স্নায়ুর কোষে।

এরপর আমরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালাই। ইঁদুরগুলোর চোখের স্নায়ু নষ্ট হয়ে গিয়ে- ছিল। আমরা তাদের চোখের স্নায়ুতে প্রাণ ফিরিয়ে তাদের দৃষ্টি শক্তি পুনঃ রুদ্ধার করেছি।

ড. সিনক্লেয়ারঃ দেখুন, এমন মানুষ আছেন যারা এটা বিশ্বাস করেন এবং গবেষণায় অর্থ লগ্নী করতে চান। তাদের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে।

তারা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালাতে দু’বছরের জন্য অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ।

আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমরা মানুষের ওপর প্রথম ট্রায়াল শুরু করব । আমরা দেখব এই প্রক্রিয়ায় মানুষের অন্ধত্ব নিরাময় করা যায় কি-না।

ড. সিনক্লেয়ারঃ কিছু অণু আমরা খুঁজে বের করেছি – প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়, আবার রসায়নাগারে তৈরি করা যায় । দু’রকমই ।

এগুলো বুড়ো হবার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে এবং আয়ু বাড়াতে কাজ করবে এমন প্রতি শ্রুতি আমরা দেখতে পেয়েছি।

প্রাণী দেহে এমনকি মানুষের শরীরেও এগুলো কাজ করবে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

এর মধ্যে অন্তত দু’টি ঔষধ ইতোমধ্যেই বাজারে পাওয়া যায়।

এ ধরনের একটা ভাল ঔষধের উদাহরণ
হল – মেটফরমিন, যা টাইপ-টু ডায়বেটিস রোগীদের দেয়া হয়।

ডায়বেটিস রোগী, যারা মেটফরমিন খাচ্ছেন, তারা ডায়বেটিস হয়নি এমন মানুষের চেয়ে বেশিদিন বাঁচছেন এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

হাজার হাজার যেসব মানুষ মেটফরমিন খান তাঁদের ওপর চালানো গবেষণার তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ক্যান্সার, হৃদরোগ, আলঝাইমার এবং এই ঔষধের গুণাগুণ যাচাই করে দেখা
হচ্ছে ।

পার্থক্যটা হল – আমরা চাইছি রোগ দেখা দিলে ব্যান্ডেজ না বেঁধে, আগেই রোগের শিকড়টা খুঁজে বের করা।

সেটা করতে পারলে তার ফল অনেক ভাল হবে । আর গোটা শরীর তাতে উপকার পাবে।

আমরা চাই না যে হার্টের বয়স কমুক, কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষয় হোক, মস্তিষ্কের বয়স বাড়ুক। সেটা হলে মানুষের হার্টের অসুখ কমবে, কিন্তু আরও মানুষ আলঝাইমার রোগে ভুগবেন ।

আমাদের এমন পথ বের করতে হবে যেখানে শরীরের সব অংশ সুস্থ থাকবে। আমি সেই পথেই এগোচ্ছি ।

এই উদ্ভাবন সামগ্রিক ভাবে সমাজকে কীভাবে উপকৃত করবে?

ড. সিনক্লেয়ার বলেনঃ  ধরুন, আপনার বয়স ৯০-এর বেশি । আপনি ব্যক্তিগত
ভাবে উপকৃত তো হবেন ।

আপনি নানা ধরনের কাজ করতে পারবেন – ধরুন আলাদা কেরিয়ার, আপনার নাতি পুতিদের সাথে খেলা করতে পারবেন । আপনার সন্তানদের বোঝা হয়ে থাকতে হবে না।

এরপর রয়েছে অর্থকরী সুবিধা।

আমি, আমার সহকর্মীরা এবং লন্ডনের
কিছু অর্থনীতি বিদের আনুমানিক হিসাব হল, মানুষের গড় আয়ু মাত্র দু’বছর বাড়াতে পারলে, শুধু মাত্র আমেরিকাতেই আগামী কয়েক দশকে দেশটির অর্থনীতিতে ৮৬ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হবে।

আর মানুষকে যদি আরও দশ বছর স্বাস্থ্যকর জীবন দেয়া যায়, তাহলে এই মূল্য দাঁড়াবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *