কীভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয় ?
নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করার পিছনে আপনার আগ্রহ শেয়ার করা, কমিউনিটি গড়ে তোলা অথবা ব্যবসার প্রচার করার মতো অনেক কারণই থাকতে পারে ।
আপনি হয়ত আগে থেকেই ভাবছেন যে সাইটটি দেখতে কেমন হবে, কোন ধরনের ফিচার থাকবে ও কন্টেন্ট পরিবেশন করা হবে।
ডেভেলপমেন্টের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগেই প্রধান ধাপগুলি কী কী, কীভাবে শুরু করা যেতে পারে এবং আপনার আইডিয়া বাস্তবায়িত করতে কত খরচ হতে পারে তা দেখে নেওয়া যাক।
আপনার লক্ষ্য সেট করে শুরু করুন :
আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য কী? শুধু ব্লগ লেখার জন্য হলে, সেই অনুযায়ী সাইটের লেআউট ও নেভিগেশন ডিজাইন করতে হবে।
অথবা আপনি প্রোডাক্ট বা পরিষেবা বিক্রি করার কথা ভাবলে নিরাপদ, সহজে নেভিগেট ও নতুন ইনভেনটরি দিয়ে আপডেট করা যায় এমন সাইট তৈরি করতে হবে।
ভেবেচিন্তে বাজেট ঠিক করুন :
ওয়েবসাইট তৈরি করতে আপনার প্রায় কিছু খরচ নাও হতে পারে বা কয়েক লক্ষ টাকাও খরচ হতে পারে।
কত খরচ হবে সেটি আপনি কী ধরনের সাইট ও সেটি নিয়ে কী করতে চান সেগুলির উপর নির্ভর করে।
আপনি সাধারণ ব্লগিংয়ের জন্য সাইট তৈরি করতে চাইলে অসংখ্য ফ্রি টুলের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারবেন।
অধিকাংশ টুল খুব সহজ এবং কোডিং বা ডিজাইনের ব্যাপারে কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।
আপনি খুব দ্রুত ব্লগিং শুরু করে দিতে পারবেন এবং সাইট ডেভেলপ করার জন্য আপনাকে ডিজাইনার বা ডেভেলপার নিয়োগ করে অর্থ খরচ করতে হবে না।
সঠিক ওয়েবসাইট প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন :
পুরো ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য যতটা সময় দেওয়া ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন তা অধিকাংশ লোকজনের থাকে না। সেই জন্য ওয়েবসাইট বিল্ডারের দরকার।
আপনার হয়ে সব কোডিং করে দেওয়া হয়, তাই আপনাকে শুধু একটি টেমপ্লেট বেছে নিয়ে সেটিতে নিজের টেক্সট ও ছবি যোগ এবং অন্যান্য পরিবর্তন করে কাস্টমাইজ করে নিতে হয়।
ওয়েবসাইট বিল্ডার ব্যবহার করার সবচেয়ে কঠিন অংশ হল কোনটি ব্যবহার করা হবে সেটি ঠিক করা।
অসংখ্য ওয়েবসাইট বিল্ডার আছে এবং এক ঝলকে এগুলিকে দেখলে মনে হবে যেন সবকটি একই বা অনুরূপ পরিষেবা প্রদান করে।
কোনও প্রদানকারী বেছে নেওয়ার আগে নিজেকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করুন:
এটিতে কি নিরাপদ URL প্রদান করা হয় বা পরে যোগ করার সুবিধা দেওয়া হয়?
এটি কি সহজে ব্যবহার করা যায়?
আপনি কি এটি সহজে নিজের প্রয়োজনমতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন?
এটি করতে কত খরচ হবে? এখানে একবার নাকি মাসিক পেমেন্ট করতে হয়?
বেছে নেওয়ার জন্য কি অনেক টেমপ্লেট আছে?
এই প্ল্যাটফর্মে কি প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হয়? সেটি কি ফ্রিতে পাওয়া যায়?
সেটি কি ইমেল, ফোন বা চ্যাটবটের মাধ্যমে প্রদান করা হয়?
এই প্ল্যাটফর্মে ভিডিও বা নিউজলেটার সাইন-আপের মতো প্লাগ-ইন বা এক্সটেনশন প্রদান করা হয়?
আপনি সাইটটি কী কাজে ব্যবহার করবেন সেটির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।
Google Blogger-এর মতো টুল উপযোগী হতে পারে।
এখানে বিভিন্ন টেমপ্লেট ও ডিজাইন স্টাইলের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে।
এছাড়াও Google Sites আছে। এটি ব্যবহার করে ছোট ব্যবসা, ইভেন্ট বা কাজের পোর্টফোলিওর প্রচার করা যেতে পারে ।
এই দ্রুত গাইডে অনেক তথ্য আছে যা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
আপনার ডোমেন নেম সেট-আপ করুন :
অনেক ফ্রি ওয়েব বিল্ডারে নিজের ডোমেন নেম কেনার জন্য খরচা না করেই একটি সাধারণ ব্লগ তৈরি করা যায়।
আপনি ব্যবসায়িক কারণে ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করলে, আপনি যা অফার করছেন সেটি অনুযায়ী আপনাকে কাস্টমাইজ করতে হতে পারে।
এছাড়াও, কোন টপ-লেভেল ডোমেন (TLD) আপনি ব্যবহার করবেন সেটি আপনাকে ভাবতে হবে।
যেমন, আপনার ওয়েবসাইট কোনও নির্দিষ্ট দেশের দর্শকের জন্য তৈরি হলে আপনি .uk, .fr, .de ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
অথবা আপনার দর্শকরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকলে আপনি .com ব্যবহার করতে পারেন।
TLD বেছে নেওয়ার সময় এগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন:
খরচ বাড়ার কথা ভুলে যাবেন না। কিছু প্রদানকারী শুরুতে ছাড় দিলেও পরে রেট বাড়িয়ে দেয়।
আপনার ডোমেন নেম আগে থেকেই ট্রেডমার্ক করা আছে কিনা দেখুন।
আপনার সাইটের ডোমেন নেম অন্য কোনও ব্র্যান্ডের কপিরাইট লঙ্ঘন করলে, আপনাকে সেটি পরিবর্তন করতে এবং জরিমানা পেমেন্ট করতে হতে পারে।
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখুন। আপনি ডোমেনের জন্য সাইন-আপ করলে আপনার তথ্য ICANN-কে প্রদান করতে হবে।
এটি স্ক্যামার ও স্প্যামাররা সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
আপনি এই তথ্য ব্যক্তিগত করে রাখার বিকল্প বেছে নিতে পারেন, কিন্তু এটি করার জন্য কিছু রেজিস্ট্রার আপনাকে চার্জ করবে। তাই, এটি শুরুতে চেক করে নিতে ভুলবেন না।
ডোমেন নেম বেছে নেওয়ার জন্য Google Domains ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
এটি ব্যবহার করলে কোন ডোমেন উপলভ্য আছে, সেটির জন্য কত খরচ হবে এবং কোনও সম্ভাব্য সুবিধা বা অসুবিধা (যেমন, এটি উচ্চারণ করা শক্ত বা অন্য কোনও শব্দের মতো শুনতে লাগে) আছে কিনা সেগুলি দ্রুত দেখতে পাবেন।
কন্টেন্ট তৈরি করা :
আপনি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছেন ও ডিজাইন করেছেন, এবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় কাজ শুরু হবে:
দর্শকরা পছন্দ করবেন এমন কন্টেন্ট তৈরি করা। এখানেও কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই আপনি সময় ও খরচ বাঁচাতে পারবেন এবং সাইটের দর্শকরাও আরও দেখতে বারবার ফিরে আসবেন।
এই সেরা পরামর্শগুলি প্রয়োগ করে দেখুন।
লোকজন কী সার্চ করছেন এবং নির্দিষ্ট শব্দ বা শব্দ গুচ্ছের জনপ্রিয়তা সময়ের সাথে কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলি Google Trends থেকে জানতে পারবেন।
এছাড়াও, বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে আপনার কন্টেন্টের ব্যাপারে আগ্রহ সম্পর্কে জানতে এবং বিশ্বের কোথায় আপনার সম্ভাব্য দর্শক রয়েছেন তা শনাক্ত করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, বর্তমান ও আসন্ন ট্রেন্ড সম্পর্কে জানতে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা অন্যান্য অনলাইন কমিউনিটি গ্রুপে যে কোনও সময় ভোটের ব্যবস্থা করতে পারেন।
কন্টেন্ট জেনারেট করার আগেই আপনি কত ঘনঘন প্রকাশ করতে চান সেটি ঠিক করুন এবং সেই শিডিউল মেনে চলুন।
মনে রাখবেন, অতিরিক্ত কন্টেন্টের চেয়ে ভাল কন্টেন্ট প্রকাশ করা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, সকলে যে একই ধরনের কন্টেন্ট পছন্দ করেন না তা ভুলে যাবেন না।
কোনও ব্যবহারকারী হয়ত শুধু টেক্সট পছন্দ করেন, অন্য কেউ ভিডিও বা ইনফোগ্রাফিক থেকে দ্রুত তথ্য সংগ্রহের সুবিধা উপভোগ করেন।
কোন ধরনের কন্টেন্ট দর্শকরা বেশি পছন্দ করছেন সেটি আপনি সময়ের সাথে বুঝে যাবেন।
কন্টেন্ট প্রকাশ করা শুরু করলে দর্শকরা কোথা থেকে আসছেন, তারা কীভাবে আপনার সাইট খুঁজে পাচ্ছেন এবং কোন পৃষ্ঠাগুলি তাদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করছে এগুলি জানতে চাইবেন।
এগুলি জানার একটি উপায় হল Google Analytics ব্যবহার করা।
সেটি আপনি ব্লগে সরাসরি লিঙ্ক করে রিয়েল-টাইম ফলাফল পেতে পারেন।
এই গাইড থেকে আপনার দর্শকদের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করার ব্যাপারে আরও পরামর্শ ও টুল ছাড়াও প্রেরণাদায়ক সাফল্যের গল্প জানতে পারবেন।
নিজের ওয়েবসাইট থাকলে সেটি দর্শকদের সাথে যোগাযোগ করা এবং ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক লক্ষ্য পূরণ করার একটি মজাদার ও লাভজনক উপায় হতে পারে।
এই গাইডে উল্লেখ করা টুল ও পরামর্শ আপনাকে শুরু করতে এবং ব্যয়বহুল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়ার কাজে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, অনলাইন উপস্থিতি থেকে উপার্জন করার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা এবং ব্যবহারকারীদের আরও ভাল অভিজ্ঞতা প্রদান করার জন্য আমাদের রিসোর্স সেন্টার দেখতে পারেন।