স্মার্টফোনে ছবি যাচাইয়ের চারটি সহজ পদ্ধতি :
লিখেছেন রেমন্ড জোসেফ • 24 আগস্ট 2021
কয়েক বছর আগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি ভাইরাল হয়; যেখানে দেখা যায়: একটি বেজি মাছরাঙার পিঠে চড়ে উড়ে যাচ্ছে।
এতে ভুয়া বা কারসাজি করা ছবির সব লক্ষণ ছিল। কিন্তু গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ থেকে দেখা যায়: ছবিটি সত্যিই আসল।
এটি একটি সিরিজের অংশ হিসেবে তুলেছিলেন এক শখের ফটোগ্রাফার, মার্টিন লি-মে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া কোনো ছবি আসল কি না, তা স্মার্টফোনে যাচাইয়ের জনপ্রিয় স্টেপ-বাই-স্টেপ গাইডটি হালনাগাদ করেছে জিআইজেএন।
অনলাইনে এখন এত ভুয়া ছবি যে সেগুলো দ্রুত যাচাইয়ের পদ্ধতি জানা আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
সুখবর হলো, এ জন্য টিনআই, গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ, ফটো শার্লক ও ফেক ইমেজ ডিটেকটরের মতো বেশ কিছু ফ্রি টুল আছে, যা দিয়ে হাতের স্মার্টফোনে যাচাই করে নিতে পারবেন, ছবিটির উৎস কী এবং এতে কোনো কারসাজি করা হয়েছে কি না।
ভুয়া ছবি শেয়ার ছাড়াও মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য ছড়ানোর অনেক উপায় আছে।
মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটি পদ্ধতি হচ্ছে, ফটোতে ডিজিটাল কারসাজি।
প্রায়ই দেখা যায়, রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা সামনে রেখে এমন কারসাজি করা হয়।
যেমন, ২০০৬ বা ২০০৭ সালের দিকে বেলজিয়াম ভিত্তিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস লাইবেরিয়াতে একটি বিলবোর্ড স্থাপন করেছিল।
এর লক্ষ্য ছিল: ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের দ্রুত চিকিৎসাসেবা নেওয়ার স্থান কোথায়, তা জানানো।
কিন্তু সম্প্রতি, সেই বিলবোর্ডের একটি সম্পাদিত ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যায় এফএফপি ফ্যাক্ট চেকের বরাতে।
কারসাজি করা ছবিটিতে বলা হয়েছে: দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানুষেরা, শ্বেতাঙ্গদের খুন করে ফেলতে পারে, কোনো শাস্তি ছাড়াই।
এটি তারা করছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের সহযোগিতায়।
এই ছবিকে এভাবে সম্পাদনা করে বদলে ফেলার ঘটনা অবশ্য এটিই প্রথম নয়।
২০১৬ সালে এই একই বিলবোর্ড নিয়ে লিখেছিল স্নুপস।
বিলবোর্ডের সেই ছবিতে ধর্ষণের শিকার হিসেবে দেখানো হচ্ছিল একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে, যিনি কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
এই ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছিল: ফিনল্যান্ডের গ্রিন লিগ পলিটিক্যাল পার্টি এমন এক বিপজ্জনক, অভিবাসী বান্ধব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, ফলে শ্বেতাঙ্গ নারীদের এভাবে বিদেশিদের আক্রমণের শিকার হতে হবে।
একই রকম কারসাজি করা বিলবোর্ডের ছবি ছড়িয়েছে সুইডেনের অভিবাসী বিরোধী গ্রুপ- গুলোতেও।
এখানেও ভিকটিমের বর্ণ পরিবর্তন করে শ্বেতাঙ্গ বানানো হয়েছে, এবং এখানেও ফিনল্যান্ডের বিলবোর্ডের মতো একই ধরনের বার্তা লেখা হয়েছে।
ফলে, আমরা একই রকম একটি প্রতীকের জন্য চারটি ভিন্ন ভিন্ন বার্তা পাচ্ছি।
কিন্তু আপনি যদি বিলবোর্ডটির বাইরে এর পেছনের জিনিসপত্রের দিকে লক্ষ করেন, তাহলে স্পষ্ট বুঝতে পারবেন: সব কটি ছবিতে অভিন্ন কিছু জিনিস আছে।
মূল চরিত্র ও বার্তা বদলে গেলেও তাদের পেছনের মানুষ, যানবাহন এবং ডান দিকের ইলেকট্রিক পোল—সব একই রকম আছে; এবং চারটি আলাদা বিলবোর্ডের ছবিতেই স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
প্রশ্ন হলো: এগুলোর মধ্যে আসল কোনটি, তা যাচাই শুরু করবেন কীভাবে?
ওপরের সব কটি ছবিরই উৎস একটি বিলবোর্ড। যেটি আদিতে বেলজিয়ামভিত্তিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস লাইবেরিয়াতে স্থাপন করেছিল যৌন নিপীড়ন বিরোধী ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে।
ওপরে বাম থেকে ঘড়ির কাঁটার ক্রমানুসারে: লাইবেরিয়ার আসল বিলবোর্ডটির ছবি; সাব-সাহারান আফ্রিকায় বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়েছে এই কারসাজি করা ছবি;
নিচের কারসাজি করা দুই ছবির মাধ্যমে বর্ণবাদী, অভিবাসীবিরোধী বার্তা ছড়ানো হয়েছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে।
কখনো কখনো সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো ছবি, ভিডিও বা পোস্ট যাচাই করা অনলাইন সার্চের মতোই সহজ-সাধারণ হতে পারে।
ভাগ্য ভালো হলে আপনি হয়তো দেখবেন: বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য-যাচাইয়ের সংগঠন এরই মধ্যে কাজটি করে রেখেছে।
পরামর্শ: শুরু করুন সাধারণ গুগল সার্চ দিয়ে। আপনি যে বিষয়টি যাচাই করবেন, সেই কি-ওয়ার্ডটির সঙ্গে “ফ্যাক্ট-চেক” যুক্ত করে সার্চ করুন।
টিনআই :
টিনআই একটি বিনা মূল্যের শক্তিশালী রিভার্স ইমেজ সার্চ টুল।
এর মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন: অনলাইনে একই বা সমজাতীয় ছবি আর কোথায় কোথায় থেকে পোস্ট হয়েছে।
এটি আমার খুবই পছন্দের টুল; কারণ, এখানে আপনি একই ছবি দিয়ে “মোস্ট চেঞ্জড”, “ওল্ডেস্ট” ও “নিউয়েস্ট” ক্যাটাগরিতে বাড়তি সার্চের সুবিধা পাবেন।
যেটি অন্যান্য সমগোত্রীয় রিভার্স ইমেজ সার্চ টুলে পাবেন না।
“মোস্ট চেঞ্জড” ক্যাটাগরি ব্যবহার করে লাইবেরিয়ার সেই আসল বিলবোর্ডটি সার্চ করা হয়েছিল।
সেখান থেকে পাওয়া গিয়েছিল বিলবোর্ডটির অন্য বেশ কিছু সংস্করণ।
সেগুলো পরে তুলনা করে দেখতে পারবেন আপনার অনুসন্ধানের ছবিটির সঙ্গে।
“ওল্ডেস্ট” দিয়ে সার্চ করলে আপনি শনাক্ত করতে পারবেন যে, ছবিটি প্রথম কোথায় ব্যবহৃত হয়েছিল।
যদি প্রথম বা অন্যান্য জায়গায় ব্যবহৃত ছবিটির বয়স আপনার অনুসন্ধানের ছবিটির চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বুঝবেন: কোনো গোলমাল আছে।
এটি মাথায় রাখাও জরুরি যে, অন্যান্য রিভার্স ইমেজ সার্চ টুলের মতো, টিনআই-ও শুধু অনলাইনে পোস্ট করা ছবিই খুঁজে পেতে পারে।
ফলে কেউ যদি একটি ছবি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপের মতো কোনো জায়গায় পোস্ট করে, এবং কখনোই অনলাইনে শেয়ার না করে, তাহলে আপনি সেই ছবির খোঁজ পাবেন না।
টিনআইয়ে যেভাবে সার্চ করবেন :
০১. আপনার ফোনের ব্রাউজারে টিনআই ওপেন করুন।
গুগল ক্রোম ও ফায়ারফক্সের মোবাইল ভার্সনে, স্ক্রিনের ওপরে বা নিচের ডান দিকে থাকা তিন- বিন্দুতে ক্লিক করুন।
ড্রপডাউন মেনু থেকে “অ্যাড টু হোম স্ক্রিন” বাছাই করুন।
শিরোনাম এডিট করে “টিনআই” লিখে দিন, এবং অ্যাড বাটনে ক্লিক করুন।
এবার আপনি আপনার ফোনের হোম স্ক্রিনে টিনআইয়ের একটি শর্টকাট পেয়ে যাবেন।
নোট: আইফোন বা আইপ্যাডে সাফারি ব্যবহার করে কীভাবে হোম স্ক্রিনে ওয়েবসাইট যোগ করতে হয়, সে-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাবেন এখানে।
অ্যাপলের কোনো ডিভাইসে গুগল ক্রোম ব্যবহার করলে, সেই সংক্রান্ত নির্দেশনা পাবেন এখানে।
০১. যে ছবিটি আপনি যাচাই করতে চান, সেটি সেভ বা ডাউনলোডের জন্য ছবিটিতে চাপ দিয়ে ধরে থাকুন ড্রপডাউন মেনু না আসা পর্যন্ত।
তারপর সেভ অপশনে ক্লিক করুন। ছবিটির একটি স্ক্রিনশট নিয়েও আপনার ফোনের ফোল্ডারে সেভ করতে পারেন।
অথবা ছবিটিতে ক্লিক করে এটির ওয়েব অ্যাডড্রেস (ইউআরএল) কপি করে রাখতে পারেন।
মনে রাখবেন, ইউআরএলটি অবশ্যই সেই ছবিটির হতে হবে।
যে ওয়েবপেজ থেকে ছবিটি পেয়েছেন, সেই পুরো পেজের ঠিকানা নয়।
০২. এবার আপনার হোম স্ক্রিন থেকে টিনআই ওপেন করুন। এখানে আপনি দুটি অপশন পাবেন।
হয় আপনি “আপলোড ইমেজ” সিলেক্ট করবেন এবং ফোনের পিকচার গ্যালারিতে সেভ করা কোনো ছবি বাছাই করবেন, অথবা টিনআইয়ের সার্চ বারে ছবিটির ইউআরএল পেস্ট করবেন।
০৩. সার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, ওপরে বাম দিকে থাকা “সর্ট বাই” আইকনে ক্লিক করুন এবং ড্রপডাউন থেকে ওল্ডেস্ট, মোস্ট চেঞ্জড ইত্যাদি অপশন বাছাই করুন।
বিলবোর্ডের ছবিটির উদাহরণ দিয়ে “মোস্ট চেঞ্জড” অপশন বাছাই করলে আপনি দেখতে পারবেন লাইবেরিয়ার জনস্বার্থ মূলক বিলবোর্ডটির ছবি কীভাবে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার হয়েছে।
এবার আপনি ছবিগুলো নিয়ে কাজ করুন, এবং যে ছবিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, সেটিতে ক্লিক করুন।
০৪. “ইওর ইমেজ” ও “ইমেজ ম্যাচ” এর মধ্যে পার্থক্য খেয়াল করে দেখুন যে ছবিটির কোথায় কোথায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।