ফাইভারে শুরু হোক ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার
ByMoshiur
ফাইভার কি?
ফাইভার হচ্ছে একটি জনপ্রিয় অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস। এটি এমন একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস আপনি সেল করতে পারবেন।
যেমনঃ ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং এছাড়াও অসংখ্য ধরনের সার্ভিস আপনি ফাইভারে সেল করতে পারবেন।
গিগ কি ?
গিগ হল আপনি যে সার্ভিসটি সেল করবেন তার অফারের নাম। অর্থাৎ সকল ধরনের সার্ভিসের অফারকে গিগ বলে।
ফাইভার মার্কেটপ্লেসে গিগ রেট ৫ ডলার দেখে অনেকে কাজ করতে কম উৎসাহিত হয়। আসলে বিষয়টি এই রকম না।
আপনি ৫ ডলার থেকে শুরু করে ১০০০০ ডলার এর প্রোজেক্ট ফাইভারে করতে পারবেন।
এই মার্কেটপ্লেসে কাজ করে অনেকে প্রতিমাসে গড়ে ১০০০ ডলারও আয় করছে।
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কি জানতে হবে ?
ফ্রিল্যান্সিং করে যদি আপনি ভালো উপার্জন করতে চান প্রথমেই আপনাকে স্কিল এর উপর ফোকাস করতে হবে।
আপনি যত বেশী কাজ জানবেন এবং সময় দিবেন সেই অনুযায়ী আপনার আয় হবে।
আপনার যদি ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়ার্ডপ্রেস শেখার আগ্রহ থাকে তাহলে কিভাবে শুরু করবেন জানতে “ওয়েব ডিজাইন পরিচিতি” এই পোস্টটি পড়তে পারেন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে অসংখ্য ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে যেইগুলো সম্পূর্ণ ফ্রি এবং বাসায় নিয়মিত প্র্যাকটিস করে আপনি মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
ফাইভারে কেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন ?
অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে ফাইভারে নতুনদের কাজ শুরু করাটা তুলনামূলক ভাবে সহজ।
ফাইভারে প্রতি ৪ সেকেন্ডে একটি গিগ কোন না কোন বায়ার অর্ডার করছে।
আপনি যদি খুব সুন্দরভাবে নিজের সার্ভিসগুলো উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত অর্ডার পেতে পারেন।
০১) অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে যেমন কাজ শুরু করার জন্য অ্যাকাউন্ট তৈরি থেকে শুরু করে প্রোফাইল ও পোর্টফোলিও সাজানোর প্রক্রিয়াটি তুলনামূলক জটিল ও সময়সাপেক্ষ , সেখানে ফাইভারে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে মোটামুটি কিছু বেসিক অ্যাকাউন্ট সেটিংস করে নিয়েই কাজ শুরু করা যায়।
০২) প্রায় সকল ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসেই ক্লায়েন্টরা তাদের নিজেদের কাজের প্রয়োজনীয় সার্ভিসটি প্রজেক্ট আকারে পোস্ট করে থাকেন এবং ফ্রিল্যান্সাররা কাজটি পাওয়ার জন্য ঐ জব পোস্টে অ্যাপ্লাই বা প্রপোজাল সাবমিট করে।
সে ক্ষেত্রে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার আবেদন করে থাকেন এবং ক্লায়েন্ট বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষন করে পছন্দমত কিছু আবেদনকারির ইন্টারভিউ নিয়ে এদের মধ্যে একজনকে হায়ার করে ঐ প্রজেক্টটি দিয়ে থাকেন।
সে জন্য এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া তুলনামূলক ভাবে বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়।
অন্যদিকে ফাইভার মার্কেটপ্লেসের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্স প্রফেশনালরা নিজেরাই কোনো বিষয়ে তাদের দক্ষতাকে নির্দিষ্ট মূল্যের ছোট ছোট গিগ আকারে সাজিয়ে ক্লায়েন্টের কাছে উপস্থাপন করেন এবং ক্লায়েন্ট তার প্রয়োজনীয় গিগটি অর্ডার করেন।
০৩) অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে একটি প্রজেক্ট শেষ হওয়ার পর তার আর কোনো কার্যকারিতা থাকেনা, কিন্তু ফাইভারে একটি গিগ একই এবং ভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে একাধিকবার বিক্রি হয়ে থাকে।
কিভাবে একটি গিগ এসইও অপ্টিমাইজড করে সার্চ রেজাল্টে প্রথমে নিয়ে আসবেন ?
কোন বায়ারের যখন কোন সার্ভিস দরকার হয়, তখন ফাইভারে গিয়ে সার্চ করে।
তখন সার্চের প্রথম দিকে আপনার গিগটিকে পাওয়া গেলে বিক্রির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
গিগটিকে সার্চের ফলাফলের প্রথমে আনার জন্য এই টিপসগুলো আপনি ফলো করতে পারেন।
০১) যেই বিষয় নিয়ে আপনি গিগ তৈরি করবেন সেই বিষয়ের উপর ফাইভারে সার্চ করে প্রথমে দেখতে হবে ঐ ধরনের কাজের মার্কেটপ্লেসে চাহিদা রয়েছে কিনা।
অন্যান্য সেলারদের গিগ এর রিভিও দেখলেই সহজেই বুঝতে পারবেন বায়াররা ঐ সকল সার্ভিস অর্ডার করছে কিনা।
আপনি এমন একটি গিগ তৈরি করলেন যেটির মার্কেটপ্লেসে কোন চাহিদা নেই সেক্ষেত্রে আপনার অর্ডার পাবার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।
এইজন্য প্রথমেই সময় নিয়ে রিসার্চ করে কাজ পাবার জন্য চেষ্টা করা উচিৎ।
০২) বায়াররা সার্চবক্সে যে কিওয়ার্ড লিখে সার্চ দেয় ওই কিওয়ার্ড যদি আপনার গিগের টাইটেল, ট্যাগ এবং ডেসক্রিপশনে থাকে তাহলে আপনার গিগের সঙ্গে বায়ারের সার্চ ইনপুট বা কিওয়ার্ড ম্যাচ করে সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকে আসতে পারে।
তাই এমন ভাবে আপনার গিগ খোলা উচিত যেগুলো বায়াররা ফাইভারের সার্চবক্সে সার্চ করে ।
০৩) গিগ হতে হবে সাজানো , গোছালো , যেনও দেখলেই পড়তে মন চায় ।
গিগের ডেসক্রিপশন সুন্দর করে লেখার জন্য নিচের টিপস গুলো ফলো করতে পারেনঃ
প্যারাগ্রাফ লেখার সময় খুব বেশী বড় করবেন না। ছোট ছোট করে প্যারাগ্রাফ লিখে আপনার সার্ভিস উপস্থাপন করুন।
সার্ভিস বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন।
লেখার সময় খেয়াল রাখবেন গ্রামার এবং স্পেলিং যেন নির্ভুল হয়।
গ্রামার চেক করার জন্য “Grammarly” অ্যাডঅন ব্রাউজারে অ্যাড করে নিতে পারেন।
আপনি যে বিষয়ের উপর গিগ তৈরি করবেন ঐ বিষয়ের উপর টপ রেটেড গিগ গুলো দেখে আইডিয়া নিতে পারেন কিভাবে আরও সুন্দর করে লেখা যায় কিন্তু অন্য কারো লেখা কপি করবেন না।
নিচের ছবিটি দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন ভালো গিগের বর্ণনা কেমন হওয়া উচিতঃ
০৪) ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন কাউকে হঠাৎ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, এ রকম কিছু ব্যবহার করুন।
গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করলেই সেটি মানুষকে আকর্ষণ করে।
সময় নিয়ে সুন্দর একটি ছবি তৈরি করে তারপর অ্যাড করুন।
ছবিটি দেখলেই যেন স্পষ্টভাবে বোঝা যায় আপনি কি ধরনের সার্ভিস দিচ্ছেন।
ছবি তৈরি করার জন্য “Canva” ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।
এই ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই সুন্দর ব্যানার ডিজাইন করতে পারবেন।
০৫) গিগে যদি ভিডিও ব্যবহার করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে বিক্রির সম্ভাবনা ৬০% বেড়ে যায়। এটা ফাইভার অথোরিটি থেকেই বলা আছে।
সুতরাং চেষ্টা করুন, ফাইভারের নিয়ম মেনে ভিডিও তৈরি করে সেটি গিগে ব্যবহার করার জন্য।
ভিডিও অবশ্যই ৭৫ সেকেন্ড বা তার কম হতে হবে।
“Exclusively on Fiverr” এই কথাটা অবশ্যই গিগে থাকতে হবে। সেটা লিখে, মুখে বলে, বা ছবির মাধ্যমে যে ভাবে হোক।
তিনবার ভিডিও রিজেক্ট হলে আর কখনই গিগে ভিডিও যুক্ত করতে পারবেন না।
একই ভিডিও একধিক গিগে যুক্ত করতে পারবেন।
ভিডিও যুক্ত করার সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মাঝেই গিগে শো করে।
“ Call to Action” ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন । মানে যেগুলি দেখলে একজন বায়ার গিগ কিনার ব্যাপারে উৎসাহিত হয়।
“If you are not happy with our work, then I will redesign it for you until you are 100% satisfied”
নোটঃ সঠিকভাবে গিগ তৈরি করতে পারলে কোন মার্কেটিং ছাড়াই কাজ পাওয়া সম্ভব।
আমি নিজে ১০০০ প্লাস প্রোজেক্ট ফাইভারে কমপ্লিট করেছি আমার নিজের কোন গিগ মার্কেটিং করার প্রয়োজন হয়নি।
২০১৫ সাল থেকে আমি ফাইভারে ওয়েব ডিজাইনার এবং ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছি।
ফাইভার মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমেই আমার অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার এর যাত্রা শুরু হয়।
আমাদের ‘প্রফেশনাল ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট‘ নামে একটি অনলাইন প্রিমিয়াম কোর্স রয়েছে যেখানে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট শিখে ফাইভার মার্কেটপ্লেসে কিভাবে ক্যারিয়ার গড়বেন একদম শুরু থেকে সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। কোডারস ফাউন্ডেশন এর সাথে আপনার শেখা আনন্দময় হোক।