ইন্টারনেট ঝুঁকি সম্পর্কে বাড়াতে হবে সচেতনতাঃ
শুরু হলো ই-অ্যাওয়ারনেস অলিম্পিয়াড –
রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে ই-অ্যাওয়ারনেস অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ – সমকাল
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়ছে, একে ঘিরে তত অপরাধও বাড়ছে।
এ জন্য ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রসারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেক নিউজের সঙ্গেও এক ধরনের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
তবে পরিস্থিতি এখন দুই-তিন বছর আগের চেয়ে ভালো।
রাজধানীর ছায়ানট ভবনে ডিনেট আয়োজিত ‘উগ্রবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের জন্য ই-সচেতনতা’ প্রকল্পের ‘সাইবার চ্যাম্প’ ই-অ্যাওয়ারনেস অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ইন্টারনেটে ঝুঁকি সম্পর্কে স্কুল-কলেজের নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে অলিম্পিয়াড শুরু হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জিয়া রহমান, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, ইউএসএইডের গভর্ন্যান্সবিষয়ক উপদেষ্টা রুমানা আমিন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসান এবং অলাভজনক সামাজিক উদ্যোগ প্রতিষ্ঠান ডিনেটের প্রধান নির্বাহী এবিএম সিরাজুল হোসাইন।
এ সময় রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তাৎক্ষণিক- ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার-সংক্রান্ত সমস্যা ও সমাধান নিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত পরিবেশনায় সবাইকে মুগ্ধ করে ।
সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় এই অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে ডিনেট।
আয়োজনে আরও সহায়তা করেছে সমকাল, প্রথম আলো ডটকম, কিশোর আলো, ঢাকা ট্রিবিউন, জিডিজি ক্লাউড বাংলা, বেসিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব বিভাগ এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
উদ্বোধনের সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাবেক সচিব বলেন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারকে নিরাপদ করতে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে, তা সময়োপযোগী।
এ আইনের অধীনে পৃথকভাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং এজেন্সি হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, শুধু আইন দিয়ে ডিজিটাল অপরাধ ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি।
এ জন্যই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এ আয়োজনে সহায়তা করছে ।
ড. জিয়া রহমান বলেন, আধুনিক সময়ে আধুনিক অপরাধ প্রবণতাও বেড়েছে।
এখন অনেকে ভেতরে থাকা প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে নিজের অজান্তেই অপরাধে জড়িয়ে যায়। তাই প্রশ্ন করতে হবে।
ভালো-মন্দের বিষয়টি যুক্তি দিয়ে বিচার করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন করতে গিয়ে কোনোভাবেই উগ্র আচরণ করা যাবে না। বিনয়ের সঙ্গেই প্রশ্ন করতে হবে।
মুস্তাফিজ শফি বলেন, ফেসবুক কিংবা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন গণমাধ্যম অনেক বেশি সতর্ক।
খবরের মূল উৎস পর্যন্ত না গিয়ে তা আর প্রকাশের জন্য বিবেচনা করা হয় না।
তিনি বলেন, এখনকার তরুণরা বিতর্ক করে, প্রশ্ন করে। এটাই শুভ লক্ষণ।
প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে, বিতর্কের মধ্য দিয়ে যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে।
আর যুক্তিবাদী সমাজ গঠিত হলে ঘৃণা, বিদ্বেষ, ব্যক্তি আক্রমণের মতো ঘটনাগুলো এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
সমকাল মুক্তবুদ্ধির চর্চা ও যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যই কাজ করছে।
তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি সুস্থ প্রতিযোগিতার চর্চার ভেতরে থাক, যদি ভালো কাজ কর, তাহলেই সমাজ ও দেশ এগিয়ে যাবে।
রুমানা আমিন বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া এখন সব কিছুই অচল।
কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন না হলে বিপদের আশঙ্কাও প্রবল।
এ ক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টির মতো জন গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের সঙ্গে ইউএসএআইডি আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
মুনীর হাসান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা অ্যাকাউন্ট নিজের একটা ঘর।
নিজের ঘরের দরজায় কেউ কড়া নাড়লে তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে যেমন দরজা খোলা ঠিক না,
তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেই তা গ্রহণ করা ঠিক হবে না।
বন্ধু নির্বাচন সঠিক হলে বিপদের আশঙ্কাও কমে যাবে।