ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাঃ
ভূমিকা
ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এটির প্রয়োজনীয়তাই বা কি? এই প্রশ্নটি এখন সবার।
উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সবাই এখন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে চায়।
বর্তমান যুগ ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ।
এখন ঘরে বসে অনলাইনে কেনা কাটা থেকে শুরু করে, অনলাইনে ইনকাম করা সবটাই এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভর করে।
ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে মানুষ মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় পন্যের বিজ্ঞাপনকেই বুঝে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কি তাই?
আসুন আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করি, ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এর সাথে আরো কি কি ব্যাপার জড়িত আছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপগুলোই বা কি? কি কি উপায়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যায়?
এই সব বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।
কথা না বাড়িয়ে আসুন জেনে নেই ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং মানে অনলাইনে পন্য বা সার্ভিসের বিজ্ঞাপন প্রচার করাকেই বুঝায়।
এখন সেটা হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, হতে পারে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর মাধ্যমে, হতে পারে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে, আবার হতে পারে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া যেমন, টিভি, রেডিও ইত্যাদির মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করাটাও এক ধরণের ডিজিটাল মার্কেটিং।
এ ছাড়া মোবাইলে ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জিং, ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড, মোবাইল এপ্লিকেশনের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণাকেও ডিজিটাল মার্কেটিং বলা যেতে পারে।
বুঝতেই পারছেন, আধুনিক বিশ্বে নিজেকে ও নিজের ব্যবসার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার কোনো বিকল্প নেই।
এতো গেল ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে আমরা কি বুঝি। কিন্তু এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপগুলো কি কি?
কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই ধাপগুলো কি হতে পারে?
আসুন আমরা এবার এই ধাপগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকগুলো ধাপ আছে। যেগুলো প্রয়োগ করে মূলত ডিজিটাল মার্কেটাররা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকেন।
নিচের লিস্টে আপনি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো ধাপ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আসুন লিস্টটা দেখে নেই।
এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
এসইএম বা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা এসএমএম
এফিলিয়েট মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং
ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং
সিপিএ মার্কেটিং।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন ?
বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য অংশ।
কারণ মানুষ এখন যে কোন পণ্য ক্রয় করার আগে ইন্টারনেটে ওই পন্য সম্পর্কে জেনে বুঝে তারপর ক্রয় করে।
তাছাড়া মানুষ এখন দোকানে ঘুরে ঘুরে না কিনে, অনলাইন থেকেই বেশিরভাগ কেনা কাটা করে থাকে।
তাই আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হন, তাহলে আপনার উচিত ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া।
আসুন আমরা বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাগুলো জেনে নেই।
সমগ্র বিশ্বে মোট প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। আর এই সংখ্যাটি নিয়মিতভাবে বেড়ে চলেছে।
মানুষ যত বেশি ইন্টারনেটে ব্যবহার করবে তত বেশি মানুষের সামনে আপনি আপনার পণ্যের মার্কেটিং করতে পারবেন।
আর ইন্টারনেটে পণ্যের মার্কেটিং এ ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব কতখানি তা আপনি আমাদের উপরের আলোচনা পড়লেই বুঝতে পারার কথা।
বর্তমান বিশ্বে মোট প্রায় ৫.১১ বিলিয়ন মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর এই সংখ্যা খুবই দ্রুত গতির সাথে বেড়ে চলেছে।
এখন অনেক মানুষ আছে যারা একাধিক মোবাইল ব্যবহার করেন তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্যে।
আর এই মোবাইল ফোন হচ্ছে ক্রেতার তথ্য কালেকশনের অন্যতম মাধ্যম।
কারণ প্রায় সকল মোবাইল ব্যবহারকারীই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত।
তাই এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে।
আপনি জেনে অবাক হবেন যে, একটা স্ট্যাটিস- টিক্সের মাধ্যমে ইউজার সার্ভে রিপোর্ট উল্লেখ করেছে যে, প্রায় ৮৪% বিক্রেতা, মার্কেটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ক্রেতার তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে।
এছাড়া আরো একটি সার্ভে রেজাল্ট দেখিয়েছে যে, সারা বিশ্বে ৫৫% মানুষ যেকোন পন্য ক্রয়ের জন্যে সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।
মানে হচ্ছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাদের পছন্দের পণ্য সম্পর্কে তথ্য এবং রিভিউ জানতে পারে।
আর ক্রেতা যার প্রেজেন্টেশন ও পণ্যকে পছন্দ করবে তার কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেই ক্রয় করে ফেলে।
৪৩% ই-কমার্স ক্রেতা গুগলে সার্চ করে তাদের পছন্দের ই-কমার্স ওয়েবসাইটে আসে।
বিশ্বে প্রায় ৫১% ক্রেতা তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা অনলাইন থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করে থাকে। এই সংখ্যাটিও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
৭০% ক্রেতা যে কোন পণ্য কেনার আগে ইন্টার্নেটে সার্চ দিয়ে সেই পণ্য সম্পর্কে যাচাই বাছাই করেন।
পণ্যটি পচ্ছন্দ হলে সাথে সাথেই ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করে ফেলেন।
আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, ৮২% ক্রেতা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই বিক্রেতার সাথে তাদের লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে কথা বলতে চান।
আপনি হয়ত এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন, আপনার ক্রেতারা কিভাবে অনলাইনে তাদের কেনাকাটা সম্পন্ন করেন।
তাই আপনি যদি এই ডিজিটাল যুগে, ডিজিটাল মার্কেটে টিকে থাকতে চান, তাহলে আপনার এখনই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ভাবা উচিত।
কারণ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু বসে নেই, সে কিন্তু তার ব্যবসাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছে।
Coca-Cola, Unilever, Nestlé এর মতো বড় বড় কোম্পানীগুলোও কিন্তু বেশ তোড় জোড়ের সাথেই বর্তমানে ডিজিটাল দুনিয়াতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
আসুন এখন আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কি?
দেখুন, বর্তমান বিশ্বের বাজার ব্যবস্থা যেভাবে ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ নিচ্ছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ আর দোকানে কিংবা বাজারে গিয়ে পণ্য কেনা বন্ধ করে দিবে। তারা সবকিছু অনলাইনেই কিনে নিবে।
কারণ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
আর মানুষ সময় নষ্ট করে বাজারে গিয়ে পণ্য যাচাই বাছাই করার থেকে অনলাইনে যে কোন পণ্য সম্পর্কে সার্চ করে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা জেনে নিতে পারে।
আর পছন্দ হলে সেই পণ্য একটি বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেই কিনে নিতে পারে।
আর এই অনলাইন বাজার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভরশীল।
আপনি যদি এখনই নিজেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ করে না তুলতে পারেন, তাহলে আপনি এই বাজার ব্যবস্থায় টিকে থাকতে পারবেন না।
কারণ আপনার পণ্য সম্পর্কে যদি মানুষ অনলাইনে জানতেই না পারে, কিংবা আপনার পণ্য যদি অনলাইনে কিনতে না পারে, তাহলে কোন ক্রেতাই আপনার পণ্য কিনবে না।
আপনি যদি ভবিষ্যতে আপনার ব্যবসাকে সফল হিসাবে দেখতে চান তাহলে এখনি সময়।
এখনি উত্তম সময়, নিজেকে এবং নিজের ব্যবসাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতায় নিয়ে এসে, ক্রেতার সামনে আকর্ষনীয়ভাবে নিজের পণ্যকে তুলে ধরার।
উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই, ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে রাখাটা এখন সময়ের দাবী।
আপনি যদি ধৈর্য্য এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে নিতে পারেন তাহলে ধরে নিবেন আপনি ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত।
তবে ব্যাপারটা বলা যত সহজ করাটা ঠিক তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কঠিন।
অনেক সময়, অনেক এক্সপেরিমেন্ট, অনেক কিছু বোঝার মাধ্যমে আপনার নিজেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ করে তুলতে হবে।
আপনি যদি কিছুদূর যাওয়ার পর হাল ছেড়ে দেন তাহলে হবে না।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ঘুড়ি লার্নিং এর ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা বিষয়ের ওপর একটি দারুণ কোর্স আছে।
আপনি চাইলে যে কোন সময় কোর্সটিতে ভর্তি হতে পারেন।
এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। আশা করছি, আমাদের আজকের আলোচনা আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আসলে আমাদের উদ্যেশ্য ছিল আপনাদেরকে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে একটি সম্মক ধারণা দিতে, যেন আপনারা আপনাদের ব্যবসাকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে