সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রকার মার্কেটিংঃ
১. ঘরে বসেই যে কোন জিনিসের promotion সম্ভব :
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বা ব্যবসা সম্পর্কে ঘরে বসেই লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে মার্কেটিং করতে পারবেন।
আপনার পণ্য যে রকমই হোক একজন ক্রেতা আপনার পণ্য সম্পর্কে বিশদ ধারণা পাবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
এত করে আপনার মনটা খুব দ্রুত মার্কেটে ছড়িয়ে পড়বে এবং কাস্টমারের কাছে চাহিদা বাড়বে।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য ক্রয় করে ঘরে বসেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে,
বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে এবং সেগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্নভাবে পার্সেল করে দিচ্ছে। এবং এটি একটি লাভজনক ব্যবসা।
২. কম খরচে বিজ্ঞাপন paid advertisement :
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ আপনি চাইলে খুব অল্প খরচে পেইড বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন। যেটা অন্য কোন ভাবে দেওয়া সম্ভব নয়।
আপনি আপনার বিজ্ঞাপনটি এক লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নরমালি যতটুকু খরচ হবে সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে এক লক্ষ লোকের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে তার দশ ভাগের এক ভাগ খরচ হবে।
এবং আপনি চাইলে ফ্রিতে ও লক্ষ লক্ষ লোকের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনটি পৌঁছাতে পারবেন।
অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি ফ্রিতে বা অল্প খরচে খুব সহজে আপনার পণ্যের প্রচার প্রসার বা প্রমোশন করতে পারছেন।
৩. Targeted promotion বা marketing :
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেটেড কাস্টমারদেরকে টার্গেট করে আপনার বিজ্ঞাপনটি পৌছে দিতে পারবেন খুব সহজেই। যেটা সরাসরি মার্কেটিং এ কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
আপনার সাথে সরাসরি মার্কেটিং করেন এবং আপনার পণ্যটি 500 জন লোকের কাছে পৌঁছে দেন সেখান থেকে আপনার পণ্যটি বিক্রি হওয়ার চান্স হলো 30 টি।
কিন্তু যখন আপনি কোন কাস্টমারকে টার্গেট করে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন তাদের কাছে পৌঁছাবেন সেক্ষেত্রে প্রতি 500 থেকে আপনার পণ্য সেল হবে 70 টি।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন সরাসরি মার্কেটিং এর চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে পণ্য বিক্রয় করা সম্ভব।
৪. সহজেই ভোক্তা (consumer) বা ক্রেতা (Buyer) পাবেন :
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই ক্রেতা পাওয়া সম্ভব। যেটা সরাসরি মার্কেটিং এর মাধ্যমে সম্ভব নয়।
কেননা যখন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ টার্গেটেড কাস্টমারদেরকে টার্গেট করবেন তখন শুধুমাত্র আপনার বিজ্ঞাপন বা আপনার পণ্যের লিংকটি যারা এই সমস্ত প্রোডাক্ট খুজছেন তাদের প্রোফাইলে দেখাবে।
তাহলে বুঝতে পারছেন সেখানে আপনার পণ্য সেল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেটা সরাসরি মার্কেটিং করে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
৫. কোন ব্রান্ডিং প্রমোশন করাঃ
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একটি কোম্পানির ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্টকে যত দ্রুত প্রমোশন করা সম্ভব সরাসরি একটি কম্পানির প্রডাক্ট বা ব্র্যান্ডকে প্রসার করা কোনভাবেই সম্ভব নয়।
সুতরাং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোন ব্র্যান্ডকে খুব দ্রুত মার্কেটে প্রসার করা সম্ভব।
৬। ঘরে বসেই মার্কেটিংঃ
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মূলত ঘরে বসেই করা সম্ভব এতে করে আপনার সময় এবং বিভিন্ন খরচ বেঁচে যাবে।
আপনার যদি এই মার্কেটিং টি সরাসরি করতে হতো তাহলে এর জন্য বিভিন্ন জায়গায় আপনাকে যেতে হতো।
বিভিন্ন কি আপনাকে হায়ার করতে হতো সেক্ষেত্রে আপনার অনেক টাকা এবং যাতায়াত খরচ হতো,
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করলে আপনার এই সমস্ত খরচ থেকে বেঁচে যাবেন।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিংঃ
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ ধরণের মার্কেটিং।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর মূল বিষয় হলো, জনসাধারণের কাছে পরিচিত এবং জনপ্রিয় এমন কাউকে দিয়ে পণ্যের প্রচারণা চালানো।
হতে পারে তিনি কোনো বিখ্যাত খেলোয়াড়, সেরা কোনো অভিনেতা কিংবা জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী।
মূল কথা হলো এমন কাউকে দিয়ে প্রচারণা করা যার কথা সবাই শুনে এবং বিশ্বাস করে।
তখন অনেকের মনে এই ধারণা জন্ম নেয় যে, “আমার প্রিয় তারকা এই পণ্যটি ব্যবহার করে।
তাহলে আমিও এই পণ্যই কিনবো।” মূলত এই ধরণের মানসিকতা তৈরি লক্ষ্যই হলো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং।
কন্টেন্ট মার্কেটিং -এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংঃ
এখন প্রায়ই দেখা যায় যে, বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো অনলাইন পত্রিকায় কিংবা ব্লগ সাইটে প্রোমোশনাল ব্লগ লেখা হচ্ছে।
সেই ব্লগ পড়ে মানুষজন সেই প্রতিষ্ঠানে কী রকম সেবা দেয় তা জানতে পারছে। এগুলো হলো কন্টেন্ট মার্কেটিং।
মার্কেটিং এর জগতে নিজের ঢোল নিজে পিটানো তো লাগবেই,
সেই সাথে অন্যদের হাতেও ঢোল দিতে হবে একটু পিটিয়ে দেয়ার জন্য।
নিজের প্রতিষ্ঠানের সেবার ব্যাপারে মানুষজনকে জানানোর জন্য এরকম মার্কেটিং এখন বেশ কার্যকরী।
নিজে লিখতে না পারলে কোনো পেশাদারী ব্লগ লেখককে দিয়েও নিজেদের ব্যাপারে কন্টেন্ট লিখিয়ে নেয়া যায়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং -এর মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংঃ
এটি অনেকটা ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর অনুরূপ। তবে এখানে জনসাধারণের পরিচিত মুখ থাকাটা তেমন জরুরি না।
ধরো তোমার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। সেখানে তুমি যা কিছু করো না কেনো, তার জন্য সবসময় নির্দিষ্ট একটি ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারের কথা উল্লেখ করো।
তোমার যদি একটি রান্নার চ্যানেল থাকে, তাহলে সেখানে একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্য সামগ্রীর ব্যাপারে সবাইকে বলতে পারো।
এর বিনিময়ে সেই ব্র্যান্ড তোমাকে একটি সম্মানি প্রদান করে থাকে।
এখানে তুমি সেই ব্র্যান্ডের অ্যাফিলিয়েট হিসেবে কাজ করছো।
অর্থাৎ, তুমি তোমার কাজের মাধ্যমে সবাইকে সেই ব্র্যান্ডের ব্যাপারে বলছো।
অনেক সময় অ্যাফিলিয়েটদের জন্য আলাদা প্রোমো কোড দেয়া হয়,
যার মাধ্যমে ক্রেতারা কোনো পণ্যের উপর বিশেষ ছাড় পেতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সঃ
বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে এক সময় পুরো পৃথিবী ছেয়ে যাবে।
মানুষের কাজ তখন প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
২০২২ সালে এসে মার্কেটিং-এর বাজারে একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI, যা ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
উদারহণ হিসেবে ফেসবুকের মেসেঞ্জার এর কথাই ধরো।
কোনো সেলিং কোম্পানিকে তুমি যদি মেসেঞ্জারে নক করো, তাহলে তারা প্রায় সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে থাকে।
আর তোমার চাহিদা অনুযায়ী যদি তাদের কাছে পণ্য চাও, তাহলে তোমার পছন্দমতো পণ্যও তারা দেখাতে পারে।
এমনকি তোমার কেমন চাহিদা তার উপর ভিত্তি করে তারা পরবর্তীতেও তোমার সামনে তাদের পণ্য প্রদর্শন করে।
তুমি যদি শার্ট কিনতে পছন্দ করো, তাহলে তাদের কালেকশনে নতুন শার্ট আসলে তা তোমাকে জানানো হবে। এরকম সুবিধা কে না পছন্দ করে?
চ্যাটবটসঃ
ফেইসবুকে বর্তমানে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো এই চ্যাটবট।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা পরিচালিত এই চ্যাটবট ব্যবহারকারীর যে কোনো চাহিদা সহজেই অনুধাবন করে সেই অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
মূল উত্তরদাতার তুলনায় চ্যাটবট অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে বলে ব্যবহারকারীরা এই চ্যাটবট ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের DUmamabot নামের চ্যাটবটের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা সহজেই বাস ছাড়ার সময় ও পরবর্তী বাস কখন আসবে তা জানতে পারে।
এ রকম চ্যাটবট এখন প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহার করা হয়।
এগুলো হলো বর্তমান যুগের ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা।
পরবর্তী পর্বে আমরা আলোচনা করবো ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ কিছু ট্রিকস নিয়ে।
ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রিকস অ্যান্ড ট্যাক্টিকসঃ
এগুলো ছিলো বর্তমান সময়ে প্রচলিত বেশ কিছু ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেন্ড।
এবার আসি এমন কিছু ট্যাক্টিকস নিয়ে যা যে কোনো ছোট-খাটো ব্যবসায় মার্কেটিং-এর কাজে ব্যবহার করা যাবে।
এই ট্যাক্টিকসগুলো ব্যবহার করে সহজেই ডিজিটাল মার্কেটিং করে আয় করা সম্ভব।
১. টার্গেট গ্রুপ কী পছন্দ করে তা খেয়াল করাঃ
সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন ভালো যে কোনো পোস্ট হলে তা শেয়ার করার হিড়িক পড়ে যায়।
মার্কেটিং-এর জন্য তুমি এই জিনিসটি কাজে লাগাতে পারো।
অনেক নামী রেস্টুরেন্ট এই বুদ্ধিটি কাজে লাগিয়ে তাদের পপুলারিটি বাড়িয়ে নিচ্ছে।
অনেক সময় দেখা যায় দু’টি নির্দিষ্টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে এক প্রকার সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ লেগে যায় এই নিয়ে যে, কে কার চেয়ে মজার পোস্ট তৈরি করতে পারে।
সাধারণ মানুষজন তা দেখে মজা পায় এবং শেয়ারও করে।
এভাবে নিছক মজার ছলেই নিজেদের মার্কেটিং করে ফেলা যায়।
২. গ্রাহক যাতে একই সাথে মোবাইল ও ডেস্কটপ ব্যবহার করে সুবিধা নিতে পারে তার ব্যবস্থা করাঃ
বর্তমানে প্রায় সব ধরণের ব্যবসার জন্য একটি নিজস্ব ওয়েব সাইট ডেভলপ করা হয়।
ধরে নিলাম তুমি অনলাইনে পণ্য বিক্রি করার জন্য একটি ওয়েব সাইট বানাবে।
এখন তোমার দেখতে হবে গ্রাহকরা কোন মাধ্যমে তোমার ওয়েব সাইটে বেশি এক্সেস করতে পারে।
তুমি যদি কেবল ডেক্সটপের জন্য সাইট ডেভলপ করো, তাহলে দেখা যাবে খুব একটা গ্রাহক পাবে না।
কারণ বেশিরভাগ গ্রাহক এখন মোবাইল ফোন ব্যবহারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
তাই দেখা যাবে ব্যবসার শুরুতেই তুমি গ্রাহকদের একটি বড় অংশ হারিয়ে ফেলছো যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এজন্য তুমি মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের জন্য আলাদা ওয়েব ডিজাইন অথবা একটি অ্যাপের ব্যবস্থা করে ফেলতে পারো।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে বেশি গুরুত্ব দাওঃ
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি বড় অংশে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
যেহেতু মানুষজন এখন দিনের একটা বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে দেয় তাই এর মাধ্যমে তাদের কাছে নিজেদের মার্কেটিং করা তুলনা মূলক অনেক সহজ।
অনেক সময় দেখা যায় মাঠ পর্যায়ে প্রচারণার চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো অনেক বেশি কার্যকরী।
সেই সাথে নিজদের সমস্ত কাজ আপডেটেড রাখার জন্যও মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এতে গ্রাহকরা অনেক বেশি আকৃষ্ট হয়।
৪. ওয়েবসাইট ডেভলপ করার সময় গ্রাহকের সাথে সরাসরি কথা বলার ব্যবস্থা রাখো।
যে কোনো ব্যাপারে গ্রাহকদের মতামতে গুরুত্ব দেয়া বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
গ্রাহকরা তাদের মতামত যাতে তুলে ধরতে পারে সে জন্য যে কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ডেভলপ করার সময় তা খেয়াল রাখতে হবে।
তাছাড়া গ্রাহকদের সাথে সরাসরি কথা বলারও ব্যবস্থা থাকা উচিত।
তাহলে গ্রাহকদের যদি তাৎক্ষণিক কোনো জিজ্ঞাসা থাকে তা করতে পারবে।
এজন্য তুমি চাইলে একটি মেসেঞ্জার বটেরও ব্যবস্থা করতে পারো।
৫. একটি টার্গেট ই-মেইল গ্রুপ রাখোঃ
যখন তুমি নতুন কোনো পণ্য আনবে তা সাথে সাথে তোমার প্রিয় গ্রাহকদের জানানোর সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী উপায় হলো তাদেরকে ই-মেইল অথবা মেসেজের মাধ্যমে জানানো।
এতে করে যে সকল গ্রাহক তোমার থেকে নিয়মিত পণ্য কেনে তাদের সাথে যোগাযোগ বেশি হবে এবং ঘনিষ্ঠতা বাড়বে আগের থেকে।
নিজের সফলতার জন্য এ ধরণের গ্রাহকের তালিকা রাখা অত্যন্ত জরুরি।