UX (User Experience) এবং  UI ( User Interface) সম্পুর্ণ  ভিন্ন জিনিস


User experience  সংক্ষেপে UX, খুবই পরিচিত একটা টার্ম কিন্তু আমরা অনেকেই UI এবং UX কে গুলিয়ে ফেলি বা মনে করি দু’টো একই জিনিস অথবা একটা অপরটার মতই এক’ই ধরনের কিছু।

কিন্তু বাস্তবতা হলো দু’টো পুরো’ই ভিন্ন জিনিস। অনেকেই UX এর বিস্তারিত না জেনেই কিছুটা UI এর কাজ জেনেই নিজেকে UI, UX ডিজাইনার বলে দাবি করে থাকে, যেটা একদম ভুল একটা ব্যাপার।

আপনি UI জানলেই আপনি যে UX পারবেন ব্যাপারটা তা নয়। বা UI জানেন দেখেই যে খুব সহজে UX শিখে ফেলতে পারবেন সেটা’ও নয়।

কারন দু’টো ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। লিখে এ ব্যাপারটা কতটুকু বুঝাতে পারবো আমি জানি না তবুও চেষ্টা করছি।

০১) UI হলো ডিজাইন এর সাথে কানেক্টেড, মানে যা আপনি চোখের সামনে দেখছেন, একটা মোবাইল এপ এর ন্যাভিগেশন, বাটন, ছবি, লেখা ইত্যাদি জিনিসপত্র।

অন্যদিকে UX এই যে প্রতিটা কম্পোনেন্ট আপনি দেখছেন এ গুলো কিভাবে সেই এপ’এ সাজাবেন, কোনটা কোনটা দরকার, কোনটা দরকার নেই বা কি কি রাখলে একজন ইউজার সেই এপটা সবচেয়ে ভালভাবে ব্যবহার করতে পারবে সেটা নিয়ে গবেষণা করাটাই হলো UX এর কাজ।

এটা চোখে দেখার সৌন্দর্যের সাথে কানেক্টেড নয়, বরং এটা পুরোটাই ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যতার উপর নির্ভরশীল।

খুব সিম্পল একটা এক্সাম্পল দেই, আপনি একটা সাইটকে সুন্দর করতে গিয়ে করলেন কি একগাদা হাই রেজ্যুলেশনের ছবি দিয়ে ভরিয়ে ফেললেন, অথবা একগাদা jQuery ইফেক্ট দিয়ে রাখলেন।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো সেই সাইট লোড হতে আপনার সময় লেগে যাচ্ছে মিনিট খানেক, আর ছবি লোড হতে হতে সেটার জন্য ইউজার অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন ।

তাহলে কি দাড়ালো ?

আপনি চাইলেন সুন্দর করতে যেন ইউজার সেটা ব্যবহার করে আনন্দ পায়, বা বেশী বেশী করে ব্যবহার করে, কিন্তু বাস্তবতা হলো ইউজার আসলে বিরক্ত হচ্ছে।

এইযে ইউজার কি ধরনের এক্সপেরিয়েন্স চায় সেটা বের করার প্রসেসটাই UX এর মূল কাজ।

০২) UX মুলত:  এনালাইটিক্যাল ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করে। যেখানে UI হলো যা দেখবেন সেটা নিয়ে কাজ করে।

০৩) UI বা UX শুনলেই শুধু টেকনোলজি ধরে নিবেন না, সেটা যে কোন পন্যের ক্ষেত্রেই হতে পারে।

একটি কেটলির হাতল এবং যেখান দিয়ে চা ঢালা হবে সেটা একই দিকে দেয়া। এখন যে চা ঢালবে সে কি সেটা কাপে ঢালতে পারবে? নাকি সেটা তার নিজের হাতেই পড়বে?

এটা হলো একটা বাজে UX ডিজাইন। কিন্তু দেখতে কিন্তু ছবিটি সুন্দর’ই লাগছে। মানে UI সুন্দর মনে হলেও UX এর দিক থেকে এটি পেল শুন্য।

যার ফলাফল এই কেটলি আসলে কেঁউ কিনবে না, মানে আপনি অনেক সময় অপচয় করে ডিজাইন সুন্দর করলেন কিন্তু UX ঠিকমত না করাতে পন্যটির সব ইনভেস্টমেন্ট’ই শেষ হয়ে গেল।

এই উদাহরনটি দিলাম দু’টো কারনে, প্রথম কারনটি আগেই বলেছি, UX যে কোন পন্যের জন্যই হতে পারে সেটি হাতে কলমে দেখানোর চেষ্টা করলাম। আর দ্বিতীয়টি হলো, UX এর গুরুত্ব বুঝাতে।

০৪) এখন দেখুন আপনারা যারা নিজেদেরকে UI ডিজাইন জেনেই UX জানেন বলে দাবি করে আসছিলেন তারা কি ভুলটা’ই না করছিলেন।

UX এর জন্য দরকার রিসার্চ এবং এর জন্য অনেকগুলো পদ্ধতি এবং ধাপ অতিক্রম করে সিদ্ধান্তে আসতে হয়।

এ ধাপ নিয়ে কথা বলতে গেলে কয়েকটি সিরিজ এর বই লিখতে হবে বা বেশ কয়েক ঘন্টার ভিডিও করতে হবে।

পড়তে ইচ্ছা হচ্ছেনা? তাহলে এই টপিকে আমার করা পডকাস্টটি শুনে ফেলতে পারেনঃ

০৫) UX আপনার তৈরী করা পন্যটিকে ব্যবহারকারির কাছে এমনভাবে প্রেজেন্ট করবে যে, ব্যবহারকারী সেটা ব্যবহার করে আরাম পাবে এবং সাচ্ছন্দে সেটা ব্যবহার করতে পারবে।

আপনি যে বয়সের ব্যবহারকারির জন্য পন্য তৈরী করছেন, তারা যেন সেটা ব্যবহার করে আরাম পায়, সেটা সবসময় মনে রাখতে হবে।

এবং সেটা বের করার জন্য UX এর কোন বিকল্প নেই। ধরে নেই, আমি ৬০ বছরের বয়স্ক কারো জন্য টিভির রিমোট ডিজাইন করবো।

এখন আমি যদি তাদেরকে রেগুলার রিমোটের মত সব ফাংশন দিয়ে দেই, তাহলে তারা খেই হাড়িয়ে ফেলবে।

আমাকে চিন্তা করতে হবে এবং রিসার্চ করতে হবে আসলে তারা রিমোটের কোন কোন বাটনগুলো বেশী ব্যবহার করে।

এজন্য তাদের সাথে কথা বলতে হবে, তাদের লাইফস্টাইল আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

রিসার্চে বা ফিল্ড ওয়ার্কে গিয়ে দেখা গেলো, তারা শুধু চ্যানেল পরিবর্তনের আপ-ডাউন এবং ভলিউম এর আপ-ডাউন বাটন ব্যবহার করে।

এর বাইরে টিভি অন এবং অফ করার বাটন। এই তাদের দৌড়। এর বেশী কিছু লাগলে তারা বাসার অন্য কারো হেল্প নেয়।

মানে এই বাটনের বাইরের ব্যবহার তারা জানেই না এবং জানতেও চায়না। তো আমি যদি আমার ডিজাইনে এই বাটনগুলো বড় বড় করে দেই। 

তাদের বুঝার সুবিধার জন্য সেখানে বড় করে লিখে দেই বা এনগ্রেভ করে দেই, তাহলে তাদের ব্যবহারের সুবিধা হবে ।

এ গুলোকে রিমোটের একপাশে রেখে অন্য বাটনগুলো আমি আলাদা সেকশনে রাখতে পারি অথবা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে পারি।

এতে করে তাদের ব্যাবহারের এক্সপেরিয়েন্স আরো ভাল হবে। আর এটাই UX এর লক্ষ্য।

ফটো ক্রেডিটঃ  arthritissupplies

০৬) UX এর আওতাধীন ব্যাপারগুলো হলোঃ

পুরো প্রজেক্টের একটা ছক তৈরী করা, এবং সে অনুযায়ী কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করা।

গবেষণা করা, UX এর যে টুলস বা নিয়ম আছে সেগুলো এপ্লাই করে সিদ্ধান্তে আসা।

প্রজেক্টের wireframe, prototype তৈরী করা।

এনালাইটিক্যাল ড্যটা নিয়ে কাজ করা, এবং এই প্রসেস একটি চলমান প্রসেস।

০৭) UI যে ব্যাপারগুলো নিয়ে কাজ করেঃ

প্রোডাক্টটি দেখতে কেমন হবে সেটা।

অডিও বেজড ইন্টারফেস :

প্রতিটা স্টেপ কিভাবে ইউজার আর সাথে কম্যুনিকেট করবে, যেমন একটা বাটন প্রেস করলে কিভাবে সেটা ইউজারকে ফিডব্যাক দিবে সেগুলো।

প্রোডাক্টটি কেমন ফিল করবে, বা অডিও বেজড ইন্টারফেস হলে সেটা শুনতে কেমন হবে।

UI সাধারনত লেয়ার এর মত কাজ করে যা ইউজারদের সাথে ইন্টার‍্যাক্ট করতে সাহায্য করে।

সাধারনত UI ডিজাইনার সরাসরি ডেভেলপার দলের সাথে কাজ করে।

UI ডিজাইনারের সবচেয়ে বড় চ্যলেঞ্জ হয় ব্রান্ড এর ভ্যালু ধরে রেখে কাজ করা।

০৮) UX এর ধাপগুলো শেষ হলে শুরু হয় UI নিয়ে কাজ করা। UX কে ধরে নেয়া যায় ব্যসিক স্ট্রাকচার ঠিক কঙ্কালের মত, আর UI সেটাতে চামড়া, কাপড় চোপড় পরিয়ে সুন্দর করে প্রেজেন্ট করবে।

UI নিয়ে আমি খুব বেশী ডিটেইলস বলিনি কারন এ ব্যাপারটা মোটামুটি সবাই বুঝতে পারে বা চারপাশে দেখতে দেখতে আইডিয়া হয়ে গেছে বলেই ধরে নিয়েছি।

UI জানাটাই যে UX নয় সেটা বুঝানোই আসলে মূল লক্ষ্য ছিলো এই লেখার।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *