কলেরা কি? কলেরার লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ। – What is Cholera

Vibrio cholerae নামক ব্যাকটেরিয়া কোনো ভাবেই মুখ দিয়ে পরিপাক তন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করলে সুস্থ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়। সুস্থ লোকের পেটে জীবাণু না যাওয়া পর্যন্ত এ রোগ হয় না। সুস্থ লোক আক্রান্ত লোকের মলের উপর দিয়ে হেঁটে গেলে বা আক্রান্ত রোগীর মল বা বমি শরীরে মেখে গেলেও এ রোগ হয় না।

দূষিত খাবার, পানি, মাছি দিয়ে সংক্রমিত খাবার এবং অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে রোগ ছড়ায়।

কলেরার লক্ষণ (Symptoms of cholera)

হঠাৎ প্রথমে চাল ধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা (watery stool) আরম্ভ হয় । পায়খানার সাথে কোন ব্যথা থাকে না । কখনও কখনও মলের সাথে রক্তও দেখা যায়। পানি পান না করেও বার বার বমি বমি ভাব (nausea) এবং বমি হতে থাকে (পরিমাণ কম)। মলে কখনো মলের রং থাকবে না। প্রথম ২/১ বার থাকলেও তার পর আর থাকে না। পিত্ত রস থাকে না বলে এর রং এমন হয়। দেহের জলীয় পদার্থ বের হয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) দেখা দেয় এবং মূত্র শূন্যতা ঘটে। পেটে ব্যথা থাকে না তবে তল পেটে জ্বালা ভাব হতে পারে। দেহের মাংস পেশি গুলোর সংকোচন (cramp) হলো এ রোগের একটি প্রধান লক্ষণ।

দেহের তাপ মাত্রা কমে যায়–৯৬° বা ৯৫° ফারেন হাইটে নেমে আসে। জিহ্বায় হাত দিলে ঠান্ডা অনুভব হয়। পায়ুতে তাপ বেশি থাকে। আঙ্গুলের মাথা নীলাভ হয়ে যায়। চোখ কোটরগত ও ফ্যাকাসে হয়।
তীব্র পানি পিপাসা দেখা যায়। রক্তের চাপ কমে ৯০/৭০ মিলিমিটারে এসে দাঁড়ায়। দেহে খনিজ পদার্থের বিশেষ করে সোডিয়াম আয়নের অভাব দেখা দেয়। এ অবস্থায় রোগীর ইলেকট্রো লাইট ভারসাম্য হারানোর ফলে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে রক্ত সংবহন তন্ত্র বন্ধ হয়ে রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীরের খিচুনী সহ হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কলেরার প্রতিকারঃ
রোগীকে আরাম দায়ক শয্যায় এমন ভাবে রাখতে হবে যেন তার দেহ উষ্ণ থাকে। এ রোগের মারাত্মক অবস্থা হচ্ছে দেহে পানি স্বল্পতা। তাই রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রচলিত লবণ, পানি ও চিনি দিয়ে তৈরি খাবার স্যালাইন (oral Saline) খাওয়াতে হবে অথবা বাজারে তৈরি সহজলভ্য স্যালাইনের প্যাকেটে ব্যবহার করতে হবে।

রোগী যাতে দুর্বল না হয়ে পড়ে এবং রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগী খাবার স্যালাইন খেতে অপারগ হলে জরুরি ভিত্তিতে শিরার মাধ্যমে আইভি ফ্লুইড (intravenous fluid) প্রয়োগ করতে হবে। তীব্র আক্রান্ত রোগীকে আইভি ফ্লুইডের সাথে অথবা আলাদা ভাবে টেট্রাসাইক্লিন, এরিথ্রোমাইসিন বা সিপ্রোফ্ল- ক্সাসিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। তবে এসব কাজ চিকিৎসা কেন্দ্রে করানোই ভালো।

 কলেরার প্রতিরোধঃ
কলেরা একটি পানি বাহিত রোগ, তাই বিশুদ্ধ খাবার পানি পানের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে বা , uv- ফিল্টারে পরিশ্রুত পানি পান করতে হবে। পঁচা বাসি খাবার, রাস্তার পাশে খোলা খাবার, অপরিশোধিত কাঁচা শাক সবজি খাওয়া পরিহার করতে হবে।

খাবার স্পর্শ করার আগে হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। রোগীর ভেদ বমি থেকে মাছির সাহায্যে গৌণ সংক্রমণ ঘটে, তাই খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে। রোগীর জামা কাপড়, বিছানা-পত্র পুকুর বা খাল-বিলে না ধুয়ে সিদ্ধ করে রোদে শুকাতে হবে। রোগীকে সুস্থ ব্যক্তি থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। রোগীর মল মূত্র যথাযথ ভাবে শোধন করতে হবে। কোনো এলাকায় কলেরা দেখা দিলে ঐ এলাকার সবাইকে কলেরা ভ্যাক্সিন দিতে হবে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *