নেটওয়ার্ক টপোলজি কি? (What is Network Topology)
আমরা জানি প্রত্যেকটি নেটওয়ার্ক কিছু কম্পিউটার বা হোস্ট এর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে যারা একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে তথ্য আদান প্রদান করে ।
নেটওয়ার্ক টপোলজি হল এমন একটি বিষয়, যাতে নেটওয়ার্ক প্রত্যেকটি হোস্ট বা ডিভাইস সমুহ কিভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকবে সেই সিস্টেমকে বুঝায় ।
টপোলজিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় যথা:
বাস টপোলজি (Bus Topology)
স্টার টপোলজি (Star Topology)
রিং টপোলজি (Ring Topology)
মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
ট্রি টপোলজি (Tree Topology)
হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology).
নিন্মে এই টপোলজি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
বাস টপোলজি (Bus Topology):
বাস টপোলজিতে একটি ব্যাকবোন ক্যাবল থাকে এবং এই ব্যাকবোন ক্যাবল এর সাথে সকল হোস্ট সমুহ যুক্ত থাকে ।
এই প্রকার নেটওয়ার্ক গঠন করা থুব সহজ এবং এত থরচ কম হয় ।
এই প্রকার নেটওয়ার্কে যখন কোন কম্পিউটার ডাটা পাঠায় তখন, যে কম্পিউটার এর কাছে ডাটা পাঠানো হয়েছে, সে ডাটা গ্রহন করবে।
এই সময় অন্য কোন কম্পিউটার ডাটা আদান প্রদান করতে পারবে না ।
এই ব্যাকবোন ক্যাবল এর দুই পাশে দুটি টারমিনেশন ব্যবহার করা হয় যাতে করে ডাটা কলিশন না ঘটে।
স্টার টপোলজি (Star Topology):
স্টার টপোলজিতে একটি কেন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রয়ন অংশ থাকে যাকে বলা হয় হাব বা সুইচ। এ্রর সাথে সকল হোস্ট সমুহ যুক্ত ।
স্টার টপোলজিতে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ বা বর্ধিত করা সহজ কিন্তু কেন্দ্রিয় ডিভাইসটি নষ্ট হয়ে হয়ে গেলে সমস্ত নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে পড়ে ।
রিং টপোলজি (Ring Topology):
রিং টপোলজিতে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি বৃত্তের ন্যায় একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে ।
এখানে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একে অপরের সাথে এমন ভাবে যুক্ত থাকে যে তারা একটি রিং বা লুপের সৃষ্টি করে । এই টপোলজিতে কোন শুরু বা শেষ প্রান্ত থাকে না ।
এই নেটওয়ার্কে হোস্ট সমুহ একটি বৃত্তকার পথে পরস্পর এর সাথে যুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গঠন করে ।
এখানে কোন হোস্ট অন্য কোন হোস্ট এর কাছে ডাটা পাঠালে পরের হোস্ট এর কাছে যাবে, ডাটাটি যদি তার কাছে না পাঠানো হয় তবে সে ডাটাটিকে পরের হোস্ট এর কাছে পাঠায়ে দিবে ।
এভাবে ডাটাটি প্রত্যেকটি হোস্ট এর কাছে যেতে থাকবে যতক্ষন না তা নির্ধারিত হোস্ট এর কাছে না যায় ।
মেশ টপোলজি (Mesh Topology):
মেষ টপোলজিতে নেটওয়ার্কে যুক্ত প্রত্যেকটি হোস্ট একে অপরের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে ।
যে কোন হোস্ট সরাসরি যে কোন হোস্ট এর কাছে ডাটা পাঠাতে পারে ।
এই ধরনের টপোলজি ইন্সটলেশন ও কনফিগারেশন বেশ জটিল। ব্যস্তবে এই ধরনের টপোলজি থাকে না বললেই চলে ।
ট্রি টপোলজি (Tree Topology):
স্টার টপোলজির সম্প্রসারিত রূপ হচ্ছে ট্রি টপোলজি।
এই টপোলজিতে একাধিক কানেক্টিং ডিভাইস হিসেবে হাব বা সুইচ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কভুক্ত সকল কম্পিউটারকে একটি বিশেষ স্থানে সংযুক্ত করা হয়। একে বলা হয় সার্ভার ভা রুট।
ট্রি সংগঠনে এক বা একাধিক স্তরে নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারগুলো রুট এর সাথে যুক্ত থাকে।
হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology):
হাইব্রিড টপোলজি হল বিভিন্ন ধরনের টপোলজির সংমিশ্রন । এই টপোলজি স্টার, রিং, বাস ইত্যাদি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত হয় বলে একে হাইব্রিড টপোলজি বলে।
ইন্টারনেট একটি হাইব্রিড নেটওয়ার্ক, কেননা এতে প্রায় সব ধরণের নেটওয়ার্কই সংযুক্ত আছে।
নেটওয়ার্ক ডিভাইস (Network Device):
একটি নেটওয়ার্ক গঠন করতে অনেক ধরণের ডিভাইস ব্যাবহার করা হয়।
এ সকল ডিভাইস একসাথে সংযুক্ত হয়ে নেটওয়ার্ক গঠন করে।
নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কিছু প্রধান ডিভাইস নিম্নরূপ-
কম্পিউটার
সার্ভার
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট
হাব
সুইচ
রাউটার
মডেম (মডেম)
রিপিটার
নেটওয়ার্কের ব্যবহার :
বর্তমান সময়ে নেটওয়ার্ক এর ব্যবহার অনেক বিস্তৃত। তবে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজের জন্য নেটওয়ার্ক এর ব্যবহার করা হয়-
নেটওয়ার্কের সাহায্যে, একটি কম্পিউটার সহজেই অন্য কম্পিউটারের সাথে ডেটা বিনিময় করতে পারে।
নেটওয়ার্ক ব্যবহারে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
দূরে বসে থাকা ব্যক্তির সাথে আমরা এমনভাবে কথা বলতে পারি যেন সে আমাদের কাছাকাছি।
নেটওয়ার্কের সাহায্যে আমরা তথ্যের পাশাপাশি সম্পদও ভাগ করতে পারি।
নেটওয়ার্কের সাহায়্যে আমারা সফ্টওয়্যার ভাগ করে ব্যবহৃত করতে পারি।
নেটওয়ার্কের সুবিধা :
একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের অনেক সুবিধা রয়েছে যা নিম্নরূপ:
নেটওয়ার্কের সাহায্যে যোগাযোগ করা খুবই সহজ। মানুষ সহজেই অন্য গ্রুপের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারে ।
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই যে কোনো ফাইল আদান প্রদান করতে পারি।
নেটওয়ার্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল –
আমরা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার দুটোই শেয়ার করতে পারি।
উদাহরণস্বরূপ, প্রিন্টারগুলি একটি নেটওয়ার্কে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ভাগ করা যেতে পারে।
নেটওয়ার্কে ডেটা স্থানান্তরের গতি খুব দ্রুত।
আমরা একটি পাসওয়ার্ড দিয়ে নেটওয়ার্কের যে কোনো সংবেদনশীল ফাইল রক্ষা করতে পারি।
নেটওয়ার্কের অসুবিধা :
একটি মুদ্রার যেমন দুটি দিক থাকে, তেমনি নেটওয়ার্কের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
নেটওয়ার্কের কিছু অসুবিধা নিচে দেওয়া হল-
নেটওয়ার্কে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিও রয়েছে।
কম্পিউটার ভাইরাস সহজেই একটি নেটওয়ার্কে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
একটি বড় নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা খুবই জটিল এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে, নেটওয়ার্ক ক্যাবলিং এবং ফাইল সার্ভারের খরচ ব্যয় বহুল হতে পারে।
নেটওয়ার্ক সর্ম্পকিত কিছু প্রশ্ন
নেটওয়ার্ক কি?
যখন দুই বা ততোধিক কম্পিউটার একে অপরের সাথে ওয়্যার বা বেতার মাধ্যমে সংযোগ করে, যোগাযোগ স্থাপন করে এবং তথ্য ও সম্পদ বিনিময় করে, তখন তাকে নেটওয়ার্ক বলা হয়।
আমরা নেটওয়ার্ককে বলি শুধুমাত্র কম্পিউটারের আন্তঃসংযোগ।
বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্ক কোনটি?
ARPANET হল বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্ক যা 1960-এর দশকে তৈরি হয়েছিল।
নেটওয়ার্ক টপোলজি কি?
একটি নেটওয়ার্ক টপোলজি একটি নেটওয়ার্কের বিন্যাস বর্ণনা করে।
নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ডিভাইস কিভাবে সংযুক্ত আছে, তারা কিভাবে যোগাযোগ করছে ইত্যাদি তথ্য রাখাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে।
কম্পিউটার যেভাবে একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে নেটওয়ার্ক টপোলজি বলে।
নেটওয়ার্ক কত প্রকার?
নেটওয়ার্কগুলি তাদের নকশা, কার্যকারিতা এবং শৈলীর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরণের হতে পারে।
কিছু প্রধান হল – PAN (পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক), LAN (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক), MAN (মেট্রোপলিটন এরিয়া নেটওয়ার্ক), WAN (ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক)।
কোন নেটওয়ার্ক ডিভাইসে সবচেয়ে ধীর সংযোগ আছে?
ডায়াল-আপ মডেম একটি নেটওয়ার্ক ডিভাইসের সাথে সবচেয়ে ধীর সংযোগ।
উপসংহার
এই নিবন্ধটির মাধ্যমে, আমরা আপনাকে খুব সহজ ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে নেটওয়ার্ক কি, যা পড়ে আশা করি আপনি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
নেটওয়ার্ককে বলা হয় দুই বা ততোধিক কম্পিউটারের আন্তঃসংযোগ, যার মাধ্যমে আমরা যোগাযোগ করতে পারি, ডেটা এবং সংস্থানগুলি আদান-প্রদান করতে পারি।
আশা করি আপনি অবশ্যই আমাদের দ্বারা লেখা এই নিবন্ধটি পছন্দ করেছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার বন্ধুদের সাথে এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন এবং এই ধরনের তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ পড়তে হাবপেজ এর সাথেই থাকুন।