হরমন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি ), যা মেনোপজাল হরমোন থেরাপি বা পোস্ট মেনোপজাল হরমোন থেরাপি নামেও পরি- চিত, এটি এক ধরণের হরমোন থেরাপি যা মহিলাদের মেনোপজের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণগুলির চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
০১) এই উপ সর্গগুলির মধ্যে গরম ঝলকানি, যোনি অ্যাট্রোফি, ত্বকের দ্রুত বার্ধক্য , যোনিপথের শুষ্কতা পেশীর ভর কমে যাওয়া , যৌন কর্মহীনতা এবং হাড়ের ক্ষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে । এগুলি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌন হরমোনের হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত যা মেনোপজের সময় ঘটে।
০২) মেনোপজের লক্ষণগুলির জন্য এইচ আরটি-তে ব্যবহৃত প্রধান হরমোনের ঔষধগুলি হল ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টো- জেন , যার মধ্যে প্রোজেস্টেরন হল প্রধান প্রাকৃতিক ভাবে ঘটে যাওয়া মহিলা যৌন হরমোন এবং মেনোপজ হরমোন থেরাপিতে ব্যবহৃত একটি তৈরি ঔষধও ।
০৩) যদিও উভয় শ্রেণীর হরমোনের লক্ষণ- গত সুবিধা থাকতে পারে, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের বর্ধিত ঝুঁকি এড়াতে যখন জরায়ু উপস্থিত থাকে তখন ইস্ট্রোজেন রেজিমেনে প্রজেস্টোজেন বিশেষভাবে যোগ করা হয় ।এর কারণ হল অপ্রতি দ্বন্দ্বী ইস্ট্রোজেন থেরাপি এন্ডোমেট্রিয়াল ঘনত্বকে উৎসাহিত করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় , যখন প্রোজেস্টোজেন এই ঝুঁকি কমায়।
০৪) কখনও কখনও টেস্টোস্টেরনের মতো অ্যান্ড্রোজেনও ব্যবহার করা হয়।
০৫) HRT বিভিন্ন রুটের মাধ্যমে পাওয়া যায়
হরমোনের শেষ শারীরবৃত্তীয় এক্সপোজারের পর থেকে বেশিরভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এইচ- আরটি-এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব গুলি বয়স এবং সময়ের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয় , এবং পৃথক পদ্ধতিতে বড় পার্থক্য থাকতে পারে, যে কারণগুলি প্রভাব বিশ্লেষণকে কঠিন করে তুলেছে।
০৬) উইমেনস হেলথ ইনিশিয়েটিভ (WHI) হল 27,000-এরও বেশি মহিলার উপর একটি চলমান অধ্যয়ন যা 1991 সালে শুরু হয়েছিল, সব চেয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলি প্রস্তাব করে যে, যখন মেনোপজের 10 বছ- রের মধ্যে শুরু করা হয় , তখন HRT সার্ব- জনীন মৃত্যুহার হ্রাস করে ।এবং করোনারি রোগ, অস্টিওপরোসিস এবং ডিমেনশি- য়ার ঝুঁকি; ১০ বছর পরে মৃত্যুহার এবং করো- নারি হৃদরোগের উপর উপকারী প্রভাবগুলি আর স্পষ্ট নয়, যদিও মৌখিকভাবে নেওয়া হলে নিতম্ব এবং মেরুদণ্ডের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি কমে যায় এবং শিরাস্থ থ্রম্বোইম্বোলি- জমের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
০৭) “বায়োআইডেন্টিকাল” হরমোন প্রতি- স্থাপন ২১ শতকের একটি উন্নয়ন এবং “মানুষের দেহে উৎপাদিত হরমোনগুলির মতো ঠিক একই রাসায়- নিক এবং আণবিক গঠন” সহ উৎপাদিত যৌগ গুলি ব্যবহার করে৷
০৮) এগুলি প্রধানত গাছপালা থেকে উদ্ভূত স্টেরয়েড ।
০৯) এবং রেজিস্টার্ড ফার্মাসিউটিক্যাল বা কাস্টম- তৈরি যৌগিক প্রস্তুতির একটি উপা- দান হতে পারে , পরেরটি সাধারণত তাদের প্রমিতকরণ এবং আনুষ্ঠানিক তদারকির অভাবের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি দ্বারা সুপারিশ করা হয় না
১০) বায়োআইডেন্টিকাল হরমোন প্রতি – স্থাপনের 2017 সালের হিসাবে এর নিরা পত্তা এবং কার্য – কারিতা নির্ধারণের জন্য অপর্যাপ্ত ক্লিনিকাল গবেষণা রয়েছে। ইউ- নাইটেড স্টেটস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনি- স্ট্রেশন (এফডিএ) থেকে ব্যবহারের জন্য বর্তমান ইঙ্গিতগুলির মধ্যে রয়েছে মেনো- পজের লক্ষণগুলির স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা , যেমন ভাসোমোটর হট ফ্ল্যাশ বা ভ্যাজাই- নাল অ্যাট্রোফি এবং অস্টিওপোরোসিস
প্রতিরোধ ।
বিষয়বস্তুঃ
০১) মেডিকেল ব্যবহার
০২) মেনোপজের লক্ষণ
০৩) হৃদরোগ
০৪) রক্ত জমাট
০৫) স্ট্রোক
০৬) এন্ডমেট্রিয়াল ক্যান্সার
০৭) স্তন ক্যান্সার
০৮) ওভারিয়ান ক্যান্সার
০৯) অন্যান্য ম্যালিগন্যান্সি
১০) যৌন ফাংশন
১১) নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার
১২) পেশী এবং হাড়।
ক্ষতিকর দিকঃ
০১) সাধারণ
০২) অস্বাভাবিক
০৩) বিপরীত
০৪) সম্পূর্ণ contraindications
০৫) আপেক্ষিক contraindications
০৬) ইতিহাস ও গবেষণা
০৭) বিচার
উপলব্ধ ফর্মঃ
০১) ক্রমাগত বনাম চক্রীয়
০২) প্রশাসনের রুট
০৩) বায়োআইডেন্টিকাল হরমোন থেরাপি
সমাজ এবং জনসাধারণের উপলব্ধিঃ
০১) Wyeth বিতর্ক
০২) জনপ্রিয়তা
চিকিৎসা ব্যবহার (সম্পাদনা):
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে HRT – এর অনুমোদিত ব্যবহার গুলির মধ্যে রয়েছে মেনোপজের লক্ষণগুলির স্বল্পমেয়াদী চিকিত্সা যেমন হট ফ্ল্যাশ এবং যোনি অ্যাট্রোফি, এবং অস্টিও- পোরোসিস প্রতিরোধ।
১১) আমেরিকান কলেজ অফ অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনোকোলজি (ACOG) মেনোপ- জের লক্ষণগুলির লক্ষণীয় উপশমের জন্য এইচআরটি অনুমোদন করে,
১২) এবং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে 65 বছর বয়সের পরেও এর ব্যবহার সমর্থন করে।
১৩) নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটি (NAMS) ২০১৬ বার্ষিক সভায় উল্লেখ করা হয়েছে যে HRT ৬০ বছর বয়সের আগে মহিলাদের ঝুঁকির চেয়ে বেশি সুবিধা থাকতে পারে।
দ্য এন্ডোক্রাইন সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত একটি ঐক্যমত্য বিশেষজ্ঞ মতামত জানিয়েছে যে পেরিমেনোপজ বা মেনোপজের প্রাথমিক বছরগুলিতে নেওয়া হলে, HRT পূর্বে প্রকাশিত হওয়ার তুলনায় কম ঝুঁকি বহন করে এবং বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে মৃত্যুহার হ্রাস করে।
১৪) আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রিনোলজিস্ট (AACE) উপযুক্ত হলে হড়ট- এর অনুমোদনের অবস্থান বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
১৫) এই চিকিৎসা গ্রহণকারী মহিলারা সাধা- রণত মেনোপজ -পরবর্তী , পেরিয়ে – বা অস্ত্রোপচার করে । মেনোপজ হল ডিম্বাশয়ের ফলিকুলার কার্যকলাপের ক্ষতির ফলে ঋতুস্রাব স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া , যা চূড়ান্ত প্রাকৃতিক মাসিক চক্রের বারো মাস পরে শুরু বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই বারো মাসের সময় বিন্দুটি মেনোপজকে ‘পেরিমেনোপজ’ এবং ‘পোস্টমেনোপজ’ নামে পরিচিত প্রাথমিক এবং দেরী ট্রানজি- শন পিরিয়ডে ভাগ করে।
১৬) অকাল মেনোপজ ঘটতে পারে যদি ডিম্বাশয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয় , যেমনটি ডিম্বাশয় বা জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য করা যেতে পারে ।
জন সংখ্যাগতভাবে, উপলভ্য বেশিরভাগ ডেটা মেনোপজাল আমেরিকান মহিলাদের সমকালীন পূর্ব-বিদ্যমান অবস্থা এবং গড় বয়স 60 বছরের বেশি।
মেনোপজের লক্ষণঃ
HRT প্রায়ই পেরিমেনোপজের সময় মেনোপজের লক্ষণগুলি থেকে স্বল্পমেয়াদী ত্রাণ হিসাবে দেওয়া
হয় ।
মেনোপজের সম্ভাব্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
হট ফ্ল্যাশ – ভাসোমোটর লক্ষণ;
ডিসপারেউনিয়া – যোনি অ্যাট্রোফি এবং তৈলাক্তকরণের অভাবের কারণে বেদনা- দায়ক যৌন মিলন ;
হাড়ের ক্ষয় – হাড়ের খনিজ ঘনত্ব হ্রাস , যা শেষ পর্যন্ত অস্টিওপেনিয়া , অস্টিওপোরো- সিস এবং সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাকচার হতে পারে
যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়াঃ
Defeminization – হ্রাস করা মেয়েলি চর্বি বিতরণ এবং ত্বরান্বিত ত্বক বার্ধক্য ;
ঘুমের ব্যাঘাত এবং জয়েন্টে ব্যথা ;
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল যৌন ড্রাইভ কমে যাওয়া এবং যোনিপথের শুষ্কতা ।
হৃদরোগঃ
এইচআরটি সহ করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি মেনোপজের পর থেকে বয়স এবং সময়ের উপর নির্ভর করে।
মেনোপজে এইচআরটি- এর প্রভাব ভিন্ন বলে মনে হয়, পাঁচ বছরের মধ্যে শুরু হলে হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে , কিন্তু দশের পরে কোনো প্রভাব পড়ে না।
মেনোপজের পর বিশ বছর পর HRT দিলে হৃদরোগ বাড়তে পারে। এই পরিবর্তনশীলতা অসুস্থতার উপর উল্লেখ যোগ্য প্রভাবের অনুপস্থিতির পরামর্শ দেওয়ার জন্য কিছু পর্যালোচনার নেতৃত্ব দিয়েছে ।
গুরুত্বপূর্ণভাবে, বয়স নির্বিশেষে এইচআরটি থেকে দীর্ঘমেয়াদী মৃত্যুর কোনো পার্থক্য নেই। একটি Cochraneপর্যালোচনা পরামর্শ দিয়েছে যে মেনো- পজের ১০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে HRT শুরু করা মহিলাদের মৃত্যুহার এবং করোনারি হার্ট ডিজিজ কম ছিল, স্ট্রোক এবং পালমোনারি এমবোলিজমের ঝুঁকিতে কোন শক্তিশালী প্রভাব ছাড়াই। যারা মেনোপজের ১০ বছরেরও বেশি সময় পরে থেরাপি শুরু করে তারা মৃত্যুহার এবং করোনারি হৃদরোগের উপর সামান্য প্রভাব দেখায় , কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। উভয় থেরাপির শিরাস্থ ক্লট এবং পালমো- নারি এমবোলিজমের সাথে একটি সম্পর্ক ছিল।
ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরনের সাথে এইচআরটিও কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করে । মেনোপজের সাথে, এইচডিএল হ্রাস পায়, যখন এলডিএল , ট্রাইগ্লিসারাইড এবং লাইপোপ্রোটিন বৃদ্ধি পায়, যা ইস্ট্রো- জেনের সাথে বিপরীত হয় । এর বাইরে , এইচআরটি হৃৎপিণ্ডের সংকোচন, করো- নারি রক্তের প্রবাহ, চিনির বিপাককে উন্নত করে এবং প্লেটলেট একত্রিত করণ এবং প্লেক গঠন হ্রাস করে।
এইচআরটি কোলেস্টেরল এবিসি ট্রান্সপো- র্টারদের আনয়নের মাধ্যমে বিপরীত কোলেস্টেরল পরি – বহনকে উন্নীত করতে পারে ।
এছাড়াও এইচআরটি প্রো-থ্রম্বোটিক লাই- পোপ্রোটিন একটি বড় হ্রাসের ফলে।
টেস্টোস্টেরন ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল ফাংশনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা যায় যে কম টেস্টোস্টেরনযুক্ত মহিলাদের হৃদ- রোগের ঝুঁকি বেশি হতে পারে।
রক্ত জমাট বাঁধাঃ
বৃহত্তর saphenous শিরা মধ্যে জমাট ; মৌখিক ইস্ট্রোজেন ভিটামিন কে – নির্ভর জমাট বাঁধার কারণগুলির যকৃতের গঠন বৃদ্ধির কারণে শিরাস্থ রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির সাথে যুক্ত ।
শিরাস্থ রক্ত জমাট বাঁধার উপর হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপির প্রভাব এবং পালমো- নারি এমবোলি – জমের সম্ভাবনা বিভিন্ন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টোজেন থেরাপির সাথে এবং বিভিন্ন ডোজ বা ব্যবহারের পদ্ধতির সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রশাসনের রুটের মধ্যে তুলনা করে দেখা যায় যে, যখন ত্বক বা যোনিতে ইস্ট্রোজেন প্রয়োগ করা হয়, তখন রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কম থাকে, যেখানে মুখে মুখে ব্যবহার করা হলে রক্ত জমাট বাঁধা এবং পালমো- নারি এমবোলিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায় । হরমোন থেরাপির ত্বক এবং যোনি পথগুলি প্রথম পাস বিপাকের বিষয় নয়, এবং তাই মৌখিক থেরাপির ভিটামিন কে -এর যকৃ- তের সংশ্লেষণে অ্যানাবলিক প্রভাবের
অভাব রয়েছে ।
যদিও 2018 সালের একটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে প্রোজেস্টেরন এবং ইস্ট্রো- জেন একসাথে গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি হ্রাস পেতে পারে, অন্যান্য পর্যালোচনায় ইস্ট্রো- জেন এবং প্রোজেস্টোজেন একত্রিত হলে রক্ত জমাট বাঁধা এবং পালমোনারি এমবো- লিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায় , বিশেষ করে যখন মেনোপজের ১০ বছর বা তারও বেশি সময় পরে চিকিৎসা শুরু হয় এবং যখন মহিলারা ৬০ বছরের বেশি বয়সী ছিল।
* বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু হয়ঃ
সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষ গড়ে তুলনামূলক বেশি সময় বেঁচে থাকছে। ১৯৫০ সালে, বিশ্ব ব্যাপী মানুষের গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬বছর। ২০১৫ সালের মধ্যে এটি বেড়ে ৭১ বছরে দাঁড়ায়।
কিছু দেশের পক্ষে এই অগ্রগতি এতোটা সহজ ছিল না। নানা ধরণের রোগ, মহামারী এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকের এই গড় আয়ুর ওপরে প্রভাব ফেলেছে।
সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কার- ণেও অকালে মৃত্যু দেখা দিতে পারে। বিশ্বে যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ০.৫% এর
পেছনে এসব কারণ দায়ী।
কিন্তু সারা বিশ্বে এখনও অল্প বয়সেই অনেকে মৃত্যুবরণ করছে। তাও আবার এমন সব কারণে যেগুলো চাইলেই প্রতি- রোধ করা যেতো।
মানুষ যখন মারা যায় তখন সে আসলেই কীভাবে মারা যায় সেই গল্পটা সময়ের
সাথে সাথে বদলাতে থাকে।
বিশ্বে মৃত্যুর কারণঃ
২০১৭ সালে বিশ্বের প্রায় পাঁচ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যান । ১৯৯০ সালের তুলনায় এই সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।
কারণ বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মানুষ গড়ে বেশি সময় ধরে বাঁচছে। যারা মারা গেছেন তাদের ৭০% এর ও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক অথচ জটিল নানা রোগ। এসব রোগ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে না ছড়ালেও ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে।
মানুষের এই মৃত্যুর এখন সব চেয়ে বড় একটি কারণ হল হৃদ যন্ত্র-জনিত রোগ বা কার্ডিও-ভাসকু-লার ডিজিজ।
বর্তমানে প্রতি তিন জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর পেছনে হার্টের সমস্যা দায়ী।জাপানের মানুষের গড় আয়ু সব চেয়ে বেশি।
হার্টের সমস্যা ক্যান্সারের ঝুঁকিও দুই গুন বাড়িয়ে দেয়, যেটা বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ।
বর্তমানে প্রতি ছয় জনের মধ্যে এক জন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ঝুঁকিপূর্ণ রোগের তালিকায় অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগও রয়েছে।
বিশেষ করে ডায়াবেটিস, শ্বাস যন্ত্রের কয়ে কটি রোগ এবং ডিমেনশিয়া অর্থাৎ স্মৃতি ভ্রংশ রোগ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
প্রতিরোধ করা যেতো এমন কারণে মৃত্যু
অনেক বেশি হতাশার কারণ হল , এখনও অনেক মানুষের রোগ প্রতিরোধ করা যেতো এমন রোগেও মারা যাচ্ছে।
২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ডায়রিয়া জনিত রোগে মারা গেছে। ডায়রিয়া হল বিশ্বে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে একটি। কিছু দেশে, ডায়রি- য়াই মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।
নব জাতকের নানা ধরণের অসুখের কারণে তাদের জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে মারা যাওয়ার হার ২০১৭ সালে ১৮ লাখে দাঁড়ি- য়েছে। এই মৃত্যুর হার আবার একেক দেশে একেক রকম। জাপানে, ১০০০ শিশুর মধ্যে এক জনেরও কম তাদের জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায়।
অথচ বিশ্বের অনেক দারিদ্র্য -পীড়িত দেশে প্রতি ২০০ নব জাতকের মধ্যে এক জন ২৮ দিন না পেরুতেই মারা যাচ্ছে।এভাবে আরও নানা প্রতিরোধ যোগ্য রোগে মানুষের মৃত্যু তালিকা বাড়ছেই।
অন্য দিকে ধনী দেশ গুলোর পাশা পাশি দরিদ্র দেশ গুলোতে ও মানুষের মৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। ২০১৭ সালে বিশ্ব ব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে গবেষণায় দাবি করা হয় । সাম্প্রতিক দশক গুলোতে উচ্চ আয়ের অনেক দেশে সড়কে মৃত্যুর হার উল্লেখ যোগ্য হারে কমেছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাপী সড়কে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাটি এখনও প্রায় একই রকম।
এদিকে, বিশ্ব ব্যাপী অনেক মানুষ আত্মহত্যা ও হত্যার শিকার হয়ে মারা যাচ্ছে।যুক্তরাজ্যে আত্ম- হত্যার হার ১৬গুণ বেড়েছে। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা।
মৃত্যুর কিছু ধরণঃ
মানুষ কি কারণে মারা যায় সেটা একটি দেশের সাথে সাথে সময়ের পরিক্রমায় বদলে যায় । আগে সংক্রামক রোগে বহু মানুষ মারা যেত, যেটা এখন তুলনামূলক কম।
১৯৯০ সালে , তিনটি মৃত্যুর মধ্যে একটি হতো ছোঁয়াচে ও সংক্রামক রোগের কারণে।
কিন্তু ২০১৭ সাল নাগাদ পাঁচটি মৃত্যুর মধ্যে একটি এই সংক্রামক রোগের কারণে হয় । বিশেষ করে শিশুরা সংক্রামক রোগে সব চেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক কালে অর্থাৎ ১৯ শতকে পৃথিবীর প্রতি তিন জন শিশুর মধ্যে এক জন নিজে- দের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায় বলে জানা গেছে।
মৃত্যুহার কমেছেঃ
বর্তমানে স্বাস্থ্য,পুষ্টি,স্বাস্থ্য সেবা এবং পরিচ্ছন্ন পানির ব্যবহার এবং টিকার কারণে শিশু মৃত্যুহার উল্লেখ যোগ্য ভাবে কমে গেছে। ধনী দেশ গুলোতে শিশু মৃত্যুর ঘটনা এখন বিরল ,সেই সঙ্গে দরিদ্র দেশ – গুলোতেও শিশু মৃত্যুর হার যুক্ত রাজ্য বা সুই – ডেনের মতোই।
বিশ্ব ব্যাপী শিশু মৃত্যুর হার এভাবে কমে আসা আধুনিক স্বাস্থ্য সেবার সর্বাধিক সাফল্য-গাঁথা। সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কারণে প্রতি বছর মারা যাওয়া শিশুর হার সাম্প্রতিক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
একই চিত্র বয়স্ক মানুষের বেলায়ও। তাদের অ সংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ও নেমে এসেছে । অনেক দেশের জন্য এটা এখন বলতে গেলে চিন্তার কারণ।
কেননা বয়স্কদের দীর্ঘ মেয়াদী অসুস্থতার মধ্যেও আয়ুষ্কাল বাড়ায় সেটা আত্মীয় স্বজন ও স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উপর এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে।
তবে যে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এই চিত্র পুরো পুরি উল্টে দিতে পারে । ১৯৮০ এর দশকে এইচ আই ভি / এইডস সংকট হতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
এই মহামারী গোটা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল। বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকার দেশ গুলোয় মানুষের গড় আয়ুষ্কালের ওপর ইহার প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মতো।বেঁচে থাকার প্রবণ তায় কয়েক দশক ধরে উন্নতির পথে থাক- লেও পরে তা উল্লেখযোগ্য-ভাবে হ্রাস পায়।
এন্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি, চিকিৎসা এবং এই রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে শিক্ষা বিস্তার হওয়ায় বিশ্ব ব্যাপী এইডসের কারণে মৃত্যু মাত্র এক দশকের মধ্যেই হ্রাস পেয়েছে – ২০ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখে।
তখন থেকেই দেশ গুলো তাদের আয়ুষ্কালের চিত্র পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে । অগ্রগতি হয় ধনী দেশগুলোতেও।