হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি: স্বাস্থ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে রুটিন চেক আপ কেন জরুরি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদ রোগ ও স্ট্রোকের কারণে।
প্রশ্ন আসে – একজন মানুষের কোন সময় হৃদ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা কীভাবে অনুমান করা সম্ভব।
আপাত দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের উত্তরটা সহজ –
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই মানুষের স্বাস্থ্যের সামগ্রিক চিত্রের একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব।
কিন্তু কোন সময় ঠিক কোন পরীক্ষাটি করা উচিত? – সেটি কীভাবে নির্ণয় করা সম্ভব?
বিবিসি বাংলা’র সাথে এ বিষয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মিঃ শোয়েব মোমিন মজুমদার ‘রুটিন চেকআপ’ বা নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে কিছু খুঁটিনাটি তথ্য জানান।
মি. মজুমদারের মতে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা মূলতঃ দুই ভাবে হয়ে থাকে। যথা – রোগের লক্ষণ ভেদে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা (বয়স ভেদে শারীরিক পরিবর্তন বিচারে)।
বয়স ৪০ হওয়ার পর সাধারণতঃ, হৃদ রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের মত দেশে শহুরে জীবনে সাধারণতঃ যথেষ্ট পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম করা হয়ে ওঠে না, যার ফলে ডায়বেটিস, হার্টের রোগ, স্ট্রোক, প্যারালাইসিসের ঝুঁকি বাড়ে এবং শরীরে কোলস্টোরেলের মাত্রা বেড়ে যায়।
“এ কারণে চল্লিশোর্ধ প্রত্যেক ব্যক্তির নিয়মিত কিছু রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।”
এ রকম ক্ষেত্রে নিয়মিত ভাবে কয়েকটি বিশেষ ধরণের পরীক্ষা করা উচিত বলে জানান মি. মজুমদার।
চিকিতৎকদের মতে, চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের নিয়ম মাফিক ভাবে কয়েকটি পরীক্ষা করা উচিত।
প্রাথমিক ভাবে সবার যে সব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিতঃ
“চল্লিশোর্ধ সব ব্যক্তির নিয়মিত বিরতিতে কয়েকটি বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন”,
“যে গুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো রক্তের সিবিসি পরীক্ষা।”
হিমোগ্লোবিনসহ রক্তের অন্যান্য কণিকা গুলো সঠিক অনুপাতে আছে কিনা – তা দেখা হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমে।
বয়স চল্লিশ পার হওয়ার পর ক্যান্সার বা হৃদ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যার প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রায় তারতম্য দেখা দিতে পারে।
এছাড়া রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে কিডনির ‘ক্রিয়েটিনিন’ পরীক্ষা এবং লিভারের ‘এএলটি বা এসজিপিটি’ পরীক্ষাও গুরুত্ব পূর্ণ।
আর বয়স চল্লিশ পার হওয়ার পর সাবরই ডায়বেটিস এবং কোলস্টোরেলের মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
হার্ট অ্যাটাক: যে বিষয় গুলো কখনো উপেক্ষা করবেন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সব চেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে
দূষণ জনিত রোগের সতর্কতাঃ
ক্রম বর্ধমান মাত্রায় দূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকম রোগের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।
“অতি মাত্রায় শব্দ দূষণের কারণে বয়সের সাথে সাথে অপেক্ষাকৃত তাড়া তাড়ি মানুষের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পাওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।”
এ ছাড়া বায়ু দূষণের কারণে শ্বাস কষ্ট জনিত এবং ফুস ফুসের রোগ বেড়ে যাওয়া, এমনকি ফুস ফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন মি. মজুমদার।
তিনি বলেন, এরকম ক্ষেত্রে ব্যক্তি ভেদে রোগের লক্ষণ অনুমান করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ভেজাল যুক্ত খাবার গ্রহণ করার কারণেও বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি । তাই সে বিষয়টিও বিবেচনায় রেখে নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“তবে প্রাথমিক কয়েকটি পরীক্ষা বাদে অন্যান্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবাইকেই রোগের লক্ষণ যাচাই করে স্বাস্হ্য পরীক্ষা করা উচিত।”
ধূম পানের ঝুঁকিঃ
“ধূম পানের কারণে বিবিধ প্রকার রোগ হয়ে থাকে। তাই ধূম পায়ীদের অবশ্যই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।”
ধূম পানের কারণে খাদ্য নালী, জিহ্বা, ফুস ফুস, বৃহদান্ত্রে ক্যান্সারের ঝুঁকি সহ মস্তিষ্কের রক্ত নালী ব্লক হয়ে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
“এ ছাড়াও ধূম পানের কারণে রক্ত নালী ব্লক হতে পারে। হাত বা পায়ের রক্ত নালী ব্লক হয়ে ঐ অঙ্গ অকেজো হওয়া থেকে শুরু করে অঙ্গ হানিও হতে পারে।”
এসব কারণে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে অধূম পায়ীদের চেয়ে ধূম পায়ীদের আরো বেশি নিয়মিত ও সচেতন হওয়া উচিত।